Breaking News

প্রথম প্রেম । রাফিন রাফি। পর্ব -০২

রিহান দরজা খুলে নীলাকে দেখে ভয়ের চোটে নীলা কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাস করে আবার দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ভয়ে গলা কাঠ হয়ে গেছে রিহানের। এই মেয়ে এখানে কি করছে? বাড়িইবা চিনলো কি করে? ঐসময়ের জন্য বাড়িতে আবার বিচার নিয়ে আসেনিতো? এতো বারতো সরি বললো, দুইগালে দুইটা চড়ও খেলো তারপরও হয়নি? এখন আম্মু যদি ক্ষুনাক্ষরেও জানতে পারে যে সে স্কুলে গিয়ে একটা কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে প্রপোজ করতে গেছিলো। তাহলে তার হাড়গুর গুড়ো করে হরলিক্সের সাথে মিশিয়ে আবার তাকেই খাওয়াবে।
আর এইদিকে নীলা কি হলো কিছুই বুঝলো না। মানে দরজাটা কেউ একজন খুললো আবার মুখের উপর ঠাস করে বন্ধও করে দিলো।
(দরজা খুলার সময় নীলার চোখ ছিলো তার ফোনের স্ক্রিনে। এইজন্য কে খুললো সেটা জানে না)
নীলা এবার কলিং বেলটা বাজালো কয়েকবার। কলিং বেলের প্রত্যেক ডং এর সাথে রিহানের হৃদপিণ্ডও ডং ডং করছিলো। দরজা কেউ খুলছেনা বলে বারবার বাজাতেই আছে। এতোবার কলিংবেলের আওয়াজ শুনে রান্নাঘর থেকে রিহানের মা বলে উঠলো….
– কিরে দরজা খুলছিস না কেন? কখন থেকে বেল বাজতেছে? মুন্নি… রিহান… (মুন্নি হলো রিহানের ছোট বোন। এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে)
রিহান এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। দরজাও খুলতে পারছে না। আর দরজা না খোলার কারণে বজ্জাত মেয়েটা বেল বাজিয়েই যাচ্ছে। মুন্নিটাও নিশ্চিত ঘুমাচ্ছে এখন। দরজা খুললে এখন রিহানকেই খুলতে হবে। কিন্তু তার এখন ইচ্ছা করছে নিজের ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে তালা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। রিহানের মা রেহানা বেগম আবারও বললেন…
– কিরে দরজাটা খুলছিস না কেন? আমিতো কাজ করছি। ঘরের একটা কাজ যদি কেউ করে? সব আমাকেই করতে হয়।
কথাগুলো বলতে বলতে আর শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে রিহানের মা নিজেই চলে এলেন। এসেই রিহানকে দরজার সামনে কাঠের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলেন…
– কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দরজাটা খুল। বেলটা বাজছে শুনতে পাচ্ছিস না। সর! আমিই খুলছি। আল্লা কি একটা ভোম্বল ছেলে দিলো আমায়?
– আম্মু দাঁড়াও দাঁড়াও। দরজা খুল না।
– কেন?
– না মানে… ঐ আরকি.. ঐ ফকিন্নি! হ্যা একটা ফকিন্নি বেডি ভিক্ষা চাইতে আসছে।
– কিহ! ভিক্ষার জন্য কেউ এভাবে বেল বাজায়? দাড়া দেখাচ্ছি আমি।
এইবলে রিহানের মা রাগে গজগজ করতে করতে দরজার দিকে এগুলেন। রিহান বেচারা পরিস্থিতি কি হবে আন্দাজ করে নিচের ঘরে দৌড় দিলো।
এইদিকে নীলার রাগও প্রায় চৌদ্দ আসমানে উঠে গেছে। একেতো মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো। এখন এতোবার বেল বাজানোর পরও কেউ দরজা খুলছে না। আব্বুকে বলেছিলাম এই কয়দিন আমাকে হোসটেলেই থাকতে দাও। দুই-এক মাসেরইতো ব্যাপার। তা…না ওনার কি না কি পরিচিত কেউ একজন নাকি আছে তার বাড়িতে থাকতে হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষাটা বলে নাহলে কলেজ-টলেজের গুষ্টি উদ্ধার করে সবার সাথেই এখন সে রাজশাহী থাকতো।
(আসলে নীলার বাবা একজন সরকারী চাকরিজীবী। রিসেন্টলি ওনার ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ট্রান্সফার হয়েছে। সেজন্যই সবাই ওখানে চলে গেছে। নীলাও কলেজ থেকে টিসি নিয়ে চলে যেত এতোদিনে। কিন্তু ইন্টার পরীক্ষা চলে এসেছে। আর এ রেজিষ্ট্রেশনের পর তো টিসি নেওয়া যায় না। তাই নীলাকে এখানে থেকেই পরীক্ষাটা দিতে হবে।)
এতোগুলো ব্যাগপত্র নিয়ে কারো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো সাধারণ বিষয় না। এমনিতেই মাথা গরম তারওপর যে আসছে সেই জিজ্ঞেস করছে কিনা কি হেনতেন। নীলা ফুঁসতে ফুঁসতে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বাবা আশরাফুল আলম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো..
– আব্বু এই বাড়িতে কি আধৌ কোন মানুষ থাকে? নাকি যারা থাকে সবই কানে কালা,কিছু শুনতে পায়না। কেউ একজন বাইরে থেকে এতোবার বেল বাজাচ্ছে তারপরও দরজা খুলছে না?
– এ কি ধরনের কথা মা। কারো সম্পর্কে এভাবে বলতে আছে? ওনারা আমাদের উপকার করেছেন। আর তাছাড়া মানুষের কোন কাজও তো থাকতে পারে।
– তাই বলে বাড়ির সবাই একসাথে কাজ করছে না.. বাবা! বাল!
– নীলু…
– আব্বু আমিতো…
নীলা আর কিছু বলার আগেই দরজাটা খট করে খুলে গেলো।
রেহানা বেগম দরজা খুলে নীলা আর নীলার বাবা আশরাফ সাহেবকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো…
– আরে আসরাফ ভাই আপনি? আর এ সময়ে? আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন? এর এটা…(নীলাকে লক্ষ্য করে)
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি ভালোই তুমি কেমন আছো? সরি আসলে বলেছিলাম যে কালকে আসবো। কিন্তু অফিসে একটা সমস্যা হয়েছে? সেজন্য আমাকে আজ রাতেই চলে যেতে হবে। তাই এই অসময়ে… কিছু মনে করো না।
– আরে না না কিছু মনে করার কি আছে?
– আর এটা হলো আমার মেয়ে নীলা যার কথা তোমদেরকে বলেছিলাম। নীলা মা….?
নীলা নিজের মতো করে দাঁড়িয়ে পা নাচাচ্ছিলো। বাবার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো ওর কি করা উচিত ছিলো। তাই সাথেসাথেই বললো..
– স্লামুআলািকুম আন্টি! কেমন আছেন?
– হ্যা মা ভালো আছি। আর তোমার মা আর ভাই-বোনেরা কেমন আছে?
– জি আন্টি ভালোই।
রেহানা বেগম হঠাৎ করেই ব্যাস্থ হয়ে বললেন,
” আরে দাঁড়িয়ে আছেন ভিতরে আসুন। নীলা তুমিও ভেতরে আসো।” বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন।আর তখনি ব্যস্থ হয়ে রিহানকে ডাকা শুরু করলেন। রিহান নিজের ঘরের দরজা বন্ধ দরজার পাশেই কান পেতে দারিয়েছিলো কি হয় সেটা জানার জন্য। কিন্তুু সে কোনো মেয়ে কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় নি। ওর মায়ের আর যে লোকটা আসছে তারই আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। তাই মা ডাকার সাথে সাথেই প্রায় নিশ্চিত মনেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আর ড্রয়িং রুমে এসেই বললো..
– কি হয়েছে আম্মু?
– কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না। হ্যা এক কাজ কর ওকে মুন্নির ঘরে নিয়ে যা। আর ব্যাগটাও তুলে ঘরে নে।
মা যাকে নিয়ে যেতে বলেছে তাকে দেখতেই রিহানের কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। আর নীলাও কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারা রিহান একেবারে রোবট হয়ে দাড়িয়ে পড়েছে। নীলার দিকে তাকনোর সাহসও হচ্ছে না।
তখন ওর মায়ের ধমক খেয়ে কোনোরকমে ব্যাগটা তুলে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো আসুন। এই মুহূর্তে রিহানের মাথায় একসাথে অনেককিছুই চলছে। সবচেয়ে বেশি যেটা ইচ্ছে হচ্ছে সেটা হলো এখান থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথায় পালাবে? বাড়িটাতো তার নিজেরই।
রিহান মুন্নির ঘরে ডুকার সাথে সাথে ব্যাগটা রেখেই কোনোদিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনি পিছন থেকে নীলা বলে উঠলো…
– আরে তুমিকি আমাকে ভয় পাচ্ছ নাকি?
– ভব..ভয় কেন পাব?
– দেখেতো তাই মনে হচ্ছে।
– আপনি ভুল দেখছেন। আপনাকে আমি ভয় পেতে যাব কেন? আপনি বাঘ না ভল্লুক।
হঠাৎ করে নীলা রাগী গলায় বললো..
– ঐসময় আমার মুখের উপর দরজাটা তুইই বন্ধ করছিলি তাইনা?
– জি না। আমিতো সারাক্ষণ আমার ঘরেই ছিলাম। আপনিইতো দেখলেন আম্মু ডাকার পরই আমি আসলাম।
– ওহ আচ্ছা..? আমার সাথে একদম মিথ্যা বলবি না। আমি এখন গিয়ে কি আন্টিকে বলবো?
– হু! কিক.. কি বলবেন আপনি?
-হুম… সেটাই ভাবছি। দরজা বন্ধের কথাটা বলবো নাকি…
– প্লিজ আপু এমনটা করবেন না। আম্মু আমাকে মেরে ফেলবে।
– তাহলে তো বলতেই হবে। (শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে)
– এটা কিন্তু আপনি ঠিক করছেন না। আমিতো বলেছি ভুল হয়ে গেছে। তখনকার ব্যাপার তো তখনই তো মিটে গেছিলো। আপনি আমাকে এতো জোড়ে জোরে থাপ্পড়ও মারলেন। দেখেন এখনো দাগ আছে। আর তাছাড়া আপনি আমার এতো টাকা দিয়ে কিনা গিফটটাও জোর করে রেখে দিছেন।
– কি বললি?? তুইকি আমাকে খোটা দিচ্ছিস নাকি? আন্টি…
সাথে সাথেই রিহান নিজের অজান্তেই নীলার মুখ চেপে ধরে বসলো। নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে পরমুহূর্তেই আবার ছেড়ে দিলো। আর নীলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো…
– তোর সাহস তো কম না? দাড়া দেখাচ্ছি তকে…
বলেই নীলা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আর ঠিক তখনি রিহান এমন একটা কান্ড করে বসলো যে নীলা একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলো।
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com