মনের মতো বউ
সকালবেলা আমার স্ত্রী অপ্সরার সঙ্গে দুষ্টমি ফাজলামো করতেই গিয়ে হঠাৎ তর্কবিতর্ক মাঝে চলে যায়।
এক দুই কথায় রাগান্বিত হয়ে অপ্সরার গালে ঠাসস করে একটা থাপ্পড় মেরে দেই,
থাপ্পড়ের আঘাতটা একটু তীব্র হওয়ায় ও বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কান্না করে উঠলো,
তা দেখে আমি নিজেই ব্যাকুব বন হয়ে যায়।
পাশের রুমে বাবা চা খাচ্ছে আর মনযোগ সহকারে নিউজ পেপার পড়ছে
যদি অপ্সরার কান্নার শব্দ শুনে রুমে আসে তো আমার খবর করে ছাড়বে,
আনমনে ভেবে অপ্সরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না চুপ করানো জন্য কিছু একটা বলতে যাবো
অপ্সরা কারেন্টের গতিতে এক ঝটকানি মেরে আমার
কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কান্না মাখা কন্ঠ বলল”
এই খবরদার তুই আমাকে স্পর্শ করবি না,
অপ্সরার মুখে তুই নামক শব্দ টা শুনে তীব্র গতিতে পুনরায় আবার
রাগ উঠে গেলো রাগান্বিত হয়ে বললাম”
আর একবার আমাকে তুই তংকারি করে বললে বাম গালে কিন্তু আরেকটা থাপ্পড় পড়বে
–“সাহস থাকে তো আর একটা থাপ্পড় মেরে দেখ,
এ বলে অপ্সরা কান্নায় ভেঙে পড়ল, অপ্সরার কান্নার শব্দ পেয়ে বাবা আসতে লেট করলো না,
খুব দ্রুতই আমার রুমে এসে অপ্সরার উদ্দেশ্য বলল ” বউমা কান্না করছো কেন_? অপ্সরা কান্নামাখা কণ্ঠে জবাব দিলো” বাবা দেখুন না সামান্য একটা কথার বলার কারনে ও আমাকে এমনি থাপ্পড় মারল” শুধু আজ না ও হুটহাট করে আমাকে থাপ্পড় মারে
“অপ্সরার অভিযোগ শুনে বাবা রীতিমতো রাগান্বিত হয়ে আমার উদ্দেশ্য বলল “কিরে বউমা কি বলছে তা কি সত্যিই _?
–“না না বাবা ও যা বলছে সব মিথ্যা, ওকে আমি থাপ্পড় ওই মারেনি, অই অপ্সরা বাবাকে এসব কি বলো হ্যা (তুতলিয়ে)
আমার তোতলানো দেখে বাবা রাগান্বিত হয়ে ফুলের টপ আমার কপাল বরাবর সজোরে ঢিল মারল, সরে যাওয়াই দেয়ালে সংঘর্ষ হয়ে ফটাস করে ভেঙে গেলো, আর আমি ভ্রুকুচকে দিলাম এক দৌড়, বাবার সামনে থাকলে নিশ্চিত আমাকে কয়েকটা থাপ্পড় খেতে হতো সেটা নিশ্চিত , চলুন এবার পরিচয় পর্বতে যাওয়া যাক আমি রনি হাসান, বাবা-মার একমাত্র আদরের সন্তান এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি, অপ্সরা ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ছে, স্ত্রী হিসাবে একদম মনের মতো, আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে করাটা কি খুব প্রয়োজন ছিলো_? তার প্রতিউত্তরে বলব” আমার এত জলদি বিয়ে সাধির ব্যাপার কোনো মত ছিলো না। কিন্তু মার অসুস্থতা দেখে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম, সারাদিন বাবা তার কাজে ব্যস্ত থাকেন, আর আমি বন্ধুদের সঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত, এরমাঝে মার টেক কেয়ার করার বিষয়টা কেমন জানি অবহেলায় পড়ে যায়, খালামনি মার অবস্থা দেখে বাবাকে
কি যেনো বুঝালো বাবা খালামনির কথা শুনে আচমকাই আমাকে বিয়ে করানো জন্য চাপ ওই দিচ্ছিলো, তারপর সবদিক থেকে বিবেচনা করে তাদের পছন্দ মতে অপ্সরাকে বিয়ে করি, এই ছিলো ৩ মাস আগের ঘটনা চলুন এবার বর্তমানে ফিরা যাক
সারাদিন কেটে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম, দরজায় পা রাখা মাত্র মা রাগান্বিত হয়ে বলল” কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি
–“এইতো পাশের এলাকায় ক্রিকেট খেলতে গেছিলাম (মিথ্যা কথা)
–“তা নই বুঝলাম কিন্তু সকালে বউমার গায়ে হাত তুলেছিস কেন, সকালে আরেকটু থাকলে নাহ উল্টো থাপ্পড় তোকেও খেতে হতো
–“এতো বড় সাহস কার যে আমাকে মারবে (পাম মেরে)
–“সকালে দৌড়ানোটা না দিলে বুঝতেই পারতি, যাই হক তোর সঙ্গে চাপাবাজি করার সময় আমার নেই, আমি জানি চাপাবাজির দিকে তুই সেরা, খেতে বস
মার কথা মতো টেবিলে খেতে বসে পড়লাম, প্রতিদিন অপ্সরাই আমার খাবার পরিবেশন করে,কিন্তু আজ সকালে থাপ্পড় মারার ঘটনা নিয়ে বড্ড অভিমান করে আছে, তা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছি, আনমনে ভেবে মাকে বললাম ” মা অপ্সরা খেয়েছে _?
–“হুম প্রথমে খেতে চাইনি, কিন্তু তোর বাবা বলাতে খেতে বাধ্য হয়েছে
–“যাক ভালো হইছে,
খাবাবের পর্ব শেষ করে গুটিগুটি পায়ে রুমে দিকে চলে যায়, দরজা একটু ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো, ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে বিছানার দিকে লক্ষ্য করলাম অপ্সরা মুখ ফিরিয়ে কম্বল মুড়িয়ে চোখ বুঝে আছে, ইলেকক্ট্রি বাল্প জ্বালিয়ে বিছানায় বসলাম, সকালে বেলা থাপ্পড় মারার দাগটা ফর্সা গালে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগা অনুভে হচ্ছে, অনিচ্ছায় অপ্সরার গাল স্পর্শ করে ফেলি, হঠাৎ আমার হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে রাগি কণ্ঠে বলল ” এই খবরদার তুমি আমার কাছে আসবা
–“একশবার আসবো তুমি না করার কে হুম
এ বলে অপ্সরাকে বুকের মাঝে খুব শক্ত করে চেপে ধরলাম , আমার স্বাভাবিক আচরণে অপ্সরা রাগে গজগজ করতে করতে ঠোঁট বাকিয়ে ঝাঝালো কণ্ঠে বলল ” তুমি আমায় ছাড়বা না আমি জোরে চিৎকার দিবো
–“আরে অদ্ভুত, চিৎকার কেন দিতে যাবা ভালোবেসেই তো জড়িয়ে ধরেছি
–“আপনার আগলা পিরিত আমার প্রয়োজন নেই
অপ্সরার রাগ অভিমান দেখে বুঝতে বাকি রইলো না, কেন সে এমন বিহেব করছে, অনুশোচনায় নরম কন্ঠে বললাম
–“সকালে থাপ্পড় টা একটু জোরে লেগেছে তাই না
–“যখন থাপ্পড় মারলেন তখন মনে ছিলো না আস্তে লাগবে নাকি জোরে , এখন আমার প্রতি আপনার দরদ উথলায় পড়ছে
–“সরি….. ভুল হইছে নেক্সট টাইম তোমাকে আর আঘাত করবো না প্রমিজ
–“লাগবে না আমার প্রমিজ ট্রমিজ, এখন ছাড়েন তো আমায়
–“ছাড়বো না (আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
–“ছাড়েন বলছি নইলে কিন্তু হাতে কামুড় দিবো
–“হ্যা দাও দেখি
বলতে দেরি হাতে কামুড় বসাতে দেরি করলো না,
এত জোড়ে কামুড় বসিয়েছে মনে হচ্ছিলো সকালবেলার থাপ্পড় মারার প্রতিশোধ নিচ্ছে,
দ্রুত অপ্সরার কাছ থেকে সরে গিয়ে মুখ ফিরিয়ে বাচ্চা ছেলেদের মতো কান্নার অভিনয় করতে লাগলাম,
অপ্সরা তা দেখে সত্যিই সত্যিই ভেবে নিলো যে আমি কান্না করছি,
আহত কন্ঠ বলল ” ব্যথা করছে খুব
–” নিশ্চুপ (হয়ে কান্নার অভিনয় করছি,
ও আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখার জন্য তারদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে যখন দেখল চোখের কোনে অশ্রু কনা নেই,
উল্টো দাত কেলিয়ে হাসতাছি,
ব্যস রাগান্বিত হয়ে বুকে আলতো কিল গুশি মেরে জড়িয়ে ধরে বলল
” শয়তান একটা আমাকে তো সত্যিই সত্যিই ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলে
–“ভয় পাইছো (হেসে)
–“হুম, এখন একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ
অপ্সরা এ বলে আমার বুকের মাঝে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো,
ব্যস সকালবেলার মামলা নিমিষেই ডিসমিস হয়ে গেলো,
মনে এক প্রশান্তি নিয়ে ঘুমের রাজ্যে আমিও হারিয়ে গেলাম
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com