Breaking News

আশে পাশে । পর্ব ০৮

রোদ আস্তে আস্তে জুহির পাশে গিয়ে বসে। কেমন জেনো ঘোর লেগে গেছে তার।
ইচ্ছে করছে জুহির কপালে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে। যেই ভাবা সেই রোদ আস্তে করে জুহির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। কিছু টা কেঁপে উঠলো জুহি।
হঠাৎ করে জুহির ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর দেখতে পায় রোদ তার খুব কাছে।
খুব রেগে যায় জুহি। রোদ কে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে উঠে বসে জুহি।
রোদ তাল সামলাতে না পড়ে যেতেই যেতেই উঠে দাঁড়ায়।
-ছিঃ ভাইয়া আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন? এতো টা নিচে নেমে যাবেন আমি ভাবতে ও পারি নি।
ঘৃণা হচ্ছে আমার। এতো টা জঘন্য আপনি। ছিঃ….
-জুহি আমার কথা টা তো শোন…..
-আমার রুম থেকে চলে যান এক্ষুনি।
-জুহি…..
-যদি আমার খারাপ দেখতে না চান তো চলে যান…. যেতে বলছি না আপনাকে শুনতে পারছেন না আপনি? (চেঁচিয়ে)
রোদ ও রেগে যায়। জুহির হাত বেডের সাথে চেপে ধরে।
-তোর সাথে আমি খারাপ কিছুই করতে আসি নি। জাস্ট তোকে একটু দেখতে এসেছি।
তাই বলে তুই আমাকে এগুলো বললি?
খারাপ কিছু করার থাকলে তোকে এসব বলার সুযোগ ই দিতাম না।
রোদ কিছু না বলে জুহির হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
জুহি তার সাথে এতোটা মিসবিহেভ করবে সে ভাবতে ও পারে নি।
রোদ বুঝতে পারলো তার হয়তো এই কাজ টা ঠিক হয় নি….
কিন্তুু জুহি কিভাবে তাকে এতো বাজে ভাবতে পারলো…?
জুহি বুঝতে চেষ্টা করলো কি ছিলো এটা? রোদ কি করতে যাচ্ছিলো তার সাথে?
হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গার ফলে জুহির সেন্স ঠিক ছিলো না।
জুহি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। রোদ কি ভাবলো তাকে..?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে জুহি আবার ঘুমিয়ে পড়লো সে নিজে ও জানে না।
অন্যদিকে রোদ তার রুমে গিয়ে দেওয়ালে একটা ঘুষি মারে।
-এতো টা বাজে চিন্তা ভাবনা আমাকে নিয়ে জুহির ছিঃ…….
সকালে জুহি ঘুম থেকে উঠে। রাতের বিষয় টা মনে পড়ে যায়।
যেভাবেই‌ হোক রোদ কে সরি বলা প্রয়োজন।
জুহি নিচে এসে জানতে পারে রোদ অনেক আগেই অফিসে চলে গেছে।
এতো তাড়াতাড়ি তো রোদ অফিসে যায় না। তাহলে আজকে…?
হয়তো রাগ করেই এমন করছে রোদ। বুঝতে পারে জুহি। মন টা খারাপ ই হয়ে গেছে জুহির।
জুহি পুরো দিন অপেক্ষা করে রোদের জন্য। কখন রোদ আসবে আর কখন সে সরি বলবে এই ভেবে।
কিন্তুু রোদের আসার নাম গন্ধ ও নেই। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে রোদ।
জুহি ভাবলো এখন বলা ঠিক হবে না আগে কিছু টা রেস্ট নিক।
রোদ ফ্রেশ হয়ে নেয়। সন্ধ্যায় সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে। জুহি শুধু উপরে তার ঘরে ছিলো।
কিছুক্ষণ পর জুহি ড্রয়িংরুমে ওদের সাথে আড্ডা দিতে আসলেই রোদ উঠে চলে যায়।
জুহি কে কোনো পাওাই দিচ্ছে না। জুহির থেকে দূরে দূরে থাকছে রোদ।
যেখানে জুহি আছে সেখান থেকে সে চলে আসে। জুহি রোদ কে তার কথা টা বলতেই পারছে না।
কোনো চান্স ই দিচ্ছে না রোদ তাকে।
রোদ জুহি কে বার বার ইগনোর করছে যেটা জুহির বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
আর সহ্য করতে পারলো না জুহি‌…..
জুহি রোদ কে কোথাও না দেখে ওর রুমে যায়। রোদ জুহি কে দেখতে পেয়ে……
-তুই কেন এসেছিস আমার রুমে?
-আসলে আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া…. আমি আসলে বুঝতে পারি নি…. তাই…
-তুই আমার রুম থেকে চলে যা নয়তো আমি ই চলে যাবো!
-আমি তো বলছি আমার ভুল হয়েছে।
রোদ রাগ করে নিজের রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে চলে যায়। জুহির এবার খুব খারাপ লাগলো।
সে নাহয় রাতে ঘুমের ঘোরে উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে তাই বলে এমন করতে হবে…?
জুহি ডিনার না করেই শুয়ে পড়ে। রোদের আম্মু জুহি কে ডাকতে আসলে বলে সে খাবে ক্ষুধা নেই।
রোদের আম্মু জোড় করে ও কোনো লাভ হলো না। জুহির এক কথা সে খাবে না।
রোদ ভালোই বুঝতে পারছে জিত করে জুহি ডিনার করছে না। না করুক তাতে রোদের কি হুহ….
পরের দিন ও যথারীতি নাস্তা সেরে নেয় রোদ। গায়ে ব্লেজার টা জড়িয়ে নেয় সে। এমন সময় জুহির আগমন।
-আবার কেন এসেছিস তুই?
-এতো রাগ করছেন কেন আপনি? আমি বললাম তো সরি।
ঘুমের ঘোরে আমি কি উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি।
চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রোদের।
রোদ জুহির কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে জুহি কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
-শোন তোর এসব শুনার মতো আমার টাইম নাই।
তুই আমাকে কিভাবে এতো টা নিচু স্থানে বসিয়ে দিতে পারলি।
ছিঃ তোর মুখ ও দেখার ইচ্ছা নাই আমার। আর কখনো আমার সামনে ও আসবি না।
রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় জুহি। খুব কান্না পাচ্ছে তার।
নিজেকে সামলাতে না পেরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয় সে।
প্রায় অনেক্ষন কান্না করে জুহি। ফলে চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে।
রোদ যখন আর তার মুখ ও দেখতে চাচ্ছে না তাহলে সে ওই বাড়িতে থেকে লাভ কি?
জুহি ঠিক করে সে তার ফুফির বাসায় চলে যাবে।
জুহি ওয়াশরুমে গিয়ে ভালোভাবে মুখ টা ধুয়ে নেয়।
যাতে কেউ বুঝতে না পারে সে কান্না করেছে। তারপর সব কিছু গুছিয়ে রেডি হয়ে নেয় সে।
-কিরে জুহি এই সকাল বেলায় কোথায় যাচ্ছিস তুই? তাও আবার নাস্তা না করেই? কি হয়েছে তোর জুহি? কোনো সমস্যা।
-না মামনি কোনো সমস্যা না। আমার এমনি ভালো লাগছে না। ফুফুনি ফোন দিয়েছিলো তোমাকে তো কয়দিন আগেই বললাম। আজ আবার বললো তাই ভাবলাম গিয়ে ঘুরে আসি।
-তাই বলে নাস্তা না করে কোথায় যাচ্ছিস?
-না মামনি আমি নাস্তা পরে করে নিবো। এক্ষুনি বের হতে হবে আমাকে প্লিজ।
-রাতে ও না খেয়ে ঘুনিয়েছিস আবার এখনো নাস্তা করছিস না। মানে কি এসবের জুহি? এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবো তুই এটা বুঝিস না!
-ওহহো মামনি বললাম তো আমি যাওয়া আগে রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা করে নিবো এখন আসি কেমন। টাটা।
-তোকে আর কি বলবো। সত্যি করে বল নাস্তা করে নিবি তো?
-হু একদম সত্যি। এখন যাই।
-সাবধানে যাস।
-ওকে।
বেশ হাসিখুশি ভাবেই রোদের আম্মুর থেকে বিদায় নেয়ার জুহি। উনাকে বুঝতেই দিলো না আসলে ঠিক কি হয়েছে? জুহি গাড়ি ড্রাইভার কে কিছু টা পথ যাওয়ার পর বললো।
-ড্রাইভার আংকেল থামুন আমি এখানেই‌ নামবো।
-আরো তো অনেক টা পথ বাকি।
-থাক আমি যেতে পারবো।
-কি বলছেন আপনি ম্যাম সাহেব যদি জানতে পারে আমি আপনাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়েছি তাহলে আমাকে জব থেকেই বের করে দেবেন।
-আরে না কিছু করবেন না। আমি বলছি তো।
-কিন্তুু…….
-কোনো কিন্তুু নয়।
এভাবে অনেকক্ষণ পর ড্রাইভার টাকে কোনো ভাবে বুঝ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় জুহি। গাড়ি তে তার ভালোই লাগছে না। হেটে হেটে বেশ লাগছে।
রোদের সেই কথা গুলো ভাবছে জুহি। কিছুই জেনো ভালো লাগছে না। রোদের কথা মতো তো তার মুখ আর রোদ দেখতে পাবে না তবে কি রোদ খুশি হবে? এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকায় জুহি।
একটা গাড়ি এসে সজোরে রাস্তার পাশে থাকা ফুচকা বিক্রেতার ঠেলা গাড়ি কে ধাক্কা দেয়। ফলে সব জিনিস মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাড়ি থেকে একজন লোক নেমে আসে।
লোকটার দোষেই এমন হয়েছে। সে ফুচকা ওয়ালা কে সরি না বলে উল্টো মারতে আসছে। ততক্ষণে রাস্তায় অনেক লোক জমা হয়ে গেছে।
-ছোট লোকের বাচ্চা তোর জন্য আজকে আমার গাড়ির কতো টা ক্ষতি হয়েছে তুই জানিস??……
এ কথাটি বলে গাড়ি থেকে নেমে আসা লোকটি ফুচকা ওয়ালা কে মারতে রেগে তেড়ে আসে। ফুচকা ওয়ালার গায়ে হাত দিতে যাবে জুহি লোকটার হাত ধরে ছিটকে ফেলেন দেয়।
লোকটার ই দোষ। সে উল্টা বিনা দোষে ফুচকা ওয়ালার গায়ে হাত দিবে।
এটা দেখে জুহি রেগে গিয়েছে।
-দোষ টা উনার নয় আপনার। গাড়ি চালাতে না পারলে রাস্তায় নামেন কেন?
নাকি চোখ হাতে নিয়ে গাড়ি চালান।
কতো টাকার মালিক আপনি যার জন্য লোকটা কে ছোট লোক বলছেন?
কিসের এতো অহংকার?
সামান্য আল্লাহর সৃষ্টি জীব হয়ে উনাকে আপনি ছোট লোক বলছেন তাহলে আপনি কি?।।
আপনার গাড়ির ধাক্কায় ক্ষতি আপনার নয় উনার হয়েছে।
আপনি ধন সম্পদের মালিক তাই আপনার কাছে হয়তো দু চার টাকার কোনো মূল্য নেই কিন্তুু এই মানুষটা যে সারাদিন এই কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করে যাচ্ছে!
তার কাছে এই দু চার টাকার মূল্য দু চার লক্ষ কোটি টাকার থেকে ও বেশি মূল্যবান।
দিন উনার ক্ষতিপূরণ দিন।
গাড়ি তে থাকা লোকটির নাম জিসান। সে ও একজন বিজনেসম্যান।
জিসান হা করে জুহির দিকে তাকিয়ে আছে। জুহির কোনো কথাই জেনো তার কান ওবধি পৌঁছাচ্ছে না।
সে তো জুহির রাগি লুক কাঁপা কাঁপা ঠোঁট রেগে লাল হয়ে কথা বলা এসব দেখে পাগল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য জিসান অন্য কোনো এক রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। যেই রাজ্য জুড়ে শুধু জুহির প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান।
-ও হ্যালো আপনাকে কিছু বলছি আমি এভাবে হা করে আছেন কেন?
-হ্যাঁ কিকিকি হয়েছে।
-আপনি উনার অনেক ক্ষতি করেছেন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এখন আপনাকে।
জিসান অনেক গুলা টাকা বের করে লোকটির হাতে ধরিয়ে দেয়।
কিন্তুু লোকটি তার উপযুক্ত টাকা নিয়ে বললো…
-দেখো বাবা আমরা গরীব কিন্তুু লোভী নই।
জুহি ফুচকা ওয়ালা কে জিঙ্গেস করে…
-মামা আপনার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তো?
-হ্যাঁ মা।
জুহি বাকি টাকা গুলো জিসানের হাতে ধরিয়ে দেয়।
-আশা করি নেক্সট টাইম আর এমন কিছু করবেন না।
-হুম।
আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। জিসান এখনো অবাক দৃষ্টিতে জুহি কে দেখছে।
মুগ্ধ হয়ে গেছে জিসান। অন্য সময় হলে জিসান বুঝিয়ে দিতো তাকে অপমান করার মানে কি।
কিন্তুু এবার ঠিক তার উল্টো। জুহির মাথাটা কেমন ঝিম ধরে এসেছে।
হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয় জুহি কিন্তুু তার সামনে থাকা লোকটি তাকে ধরে নেয়।
এরপর আর কিছু মনে নেই জুহির। কারণ সে সেন্সলেচ হয়ে গেছে………
চলবে—

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com