Breaking News

মিঃ ডেভিল লাভার | হিয়া চৌধুরী । পর্ব -০৬

একটা রুমে গিয়ে ঢকঢক করে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে পিছন ফিরতেই দেখে সাফওয়ান দাঁড়িয়ে আছে। নীলিমা রেগে তেড়ে এসে বললো,
— আমাকে ফলো করতে করতে এখানে ও চলে এসেছেন! রাক্ষুস বন মানুষ, টিকটিকি, হনুমান, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট, তেলাপোকা, আপনাকে তো আমি…
— কী?(ভ্রুঁ কুঁচকে)
— আমাকে ওইদিন শাকচুন্নী বলেছেন! I kill You…
সাফওয়ান হো হো করে হেসে উঠলো। নীলিমা ক্ষিপ্ত হয়ে সাফওয়ানের দিকে এগিয়ে আসে। সাফওয়ান এক পা এক পা করে পিছনে চলে যায়। এক পর্যায়ে সাফওয়ান কে ধরে ফেলে নীলিমা। ওইদিনের রাগ টা প্রতিশোধ করার জন্য সাফওয়ানের বুকে কিল বসিয়ে দেয়। সাফওয়ান হতবাক। অবাক নয়নে নীলিমা কে দেখছে। নীলিমার ঠোঁট টা তাকে খুব আকর্ষণ করছে। কিছু সময়ের জন্য সাফওয়ানের নিজেকে মাতাল মনে হলো। যেনো সে সদ্য এলকোহল খেয়েছে। আচমকা নিজের ঠোঁট দিয়ে নীলিমার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় সাফওয়ান। নীলিমা স্টাচুর মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। বড় বড় চোখ করে। এমন কিছু করবে হয়তো সে ভাবে নি। সাফওয়ান ঠোঁটের কোনে সেই হাসি ফুটিয়ে তোলে। যাকে বলে ডেভিল স্মাইল। কেউ চলে এলে খারাপ কিছু ভাববে তাই সাফওয়ান নীলিমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
— আপনি আমাকে সত্যিই খুন করে ফেলেছেন!এর দায় আপনাকে চোকাতে হবে!
সাফওয়ান চলে যায়। সে চলে যাওয়ার পর হিতাহিত জ্ঞানে ফিরে নীলিমা। অদ্ভুত ভাবে ঠোঁটের দিকে হাত চলে যায়। রাগ তীব্র হয়ে যায়।
— বজ্জাত এলিয়েন ডেভিল তোকে আমি তেলাপোকা ভাজি না না টিকটিকি ভাজি করে খাওয়াবো দেখিস।
নিধি রুমে এসে নীলিমা কে নিজে নিজেই বিড়বিড় করতে দেখে বললো,
— আপু তোমাকে সবাই খুঁজছে আর তুমি এখানে? চলো তাড়াতাড়ি।
— হ.হ্যাঁ চ.চলো!
— আপু এনি প্রবলেম?
— ন.না.না!
নীলিমা আসলে সায়মা আফিকের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। আফিক কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে এটা নীলিমা বেশ ভালো করেই খেয়াল করলো!
— ভাইয়া আপনি এতো হাসছেন কেন বলুন তো!
— আজ নয় অন্য দিন বলবো!
— কবে? না মানে মেঘলা আপুর সাথে আমাকে নিয়ে যাবেন?
— গেলে তো নেওয়া ই যায়। যাবে কিনা বলো বর রেডি!
— কিহ না না একদম না।
সাফওয়ান মাঝখানে ঢুকে আফিকের পাশাপাশি বসে বললো,
— ভাইয়া তুমি কি জানো এখানে ভীতুর ডিম ও পাওয়া যায়!
— কি বলিস!
— হু তবে আর বলছি কি!
নীলিমা দাঁতে কটমট করে আছে। সায়মা নীলিমা কে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
— কিরে প্রেমে পড়ে গেলি নাকি!
— নিকুচি করেছে তোর প্রেম ডাইনি শেওড়া গাছের পেত্নী। (মনে মনে) আমি এসবে নাই!
— আপনারা কি বিড় বিড় করছেন বলুন তো!‌
— না ভাইয়া কিছু না।
— পরিচিত তো হওয়া বাকি!
— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সায়মা আর ও…(সায়মা কে থামিয়ে দিয়ে)
— নাতাশা!(জোড় করে হেসে)
— ও আচ্ছা বাতাশা!
সায়মা কিছু বুঝতে পারলো না। নীলিমা হুট করে বলে উঠলো,
— আচ্ছা ভাইয়া আমার না এখন যেতে হবে মামনি ডাকছে।
— আরে ডাকুক পরে যাওয়া যাবে!
— এক্ষুনি যেতে হবে! জরুরী তো তাই!
নীলিমা উঠে চলে যায়। সাফওয়ান ও পিছন পিছন আসতে যাবে দিয়া এসে ওদের সাথে এড হয়। দিয়ার জন্য আর সাফওয়ান উঠতে পারলো না। আরহাম নীলিমার কে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান অবশেষে সে নীলিমাকে পেলো। আরহাম নীলিমার সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখ কুঁচকে তাকিয়ে একবার আরহাম কে দেখে নিলো। পথ কেটে চলে যেতে নিবে আরহাম পিছন থেকে ডাক দেয়!
— নীলিমা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে!
— (উফ গড আবার আরেক প্যারা। একে তো ওই খচরু ডেভিল টা আর এখন ইনি। আমার জীবন টা পুরো তেজপাতা হয়ে গেলো রে)মনে মনে!
— কই হারিয়ে গেলেন?
— আ.ব.না.মানে হ্যাঁ ভাইয়া বলেন!
— ভাইয়া?
— হুম!
— আপনার ভাইয়া হতে চাই না। তাছাড়া আমি আপনাকে আমার বোন ভাবতে পারি না। বোনের চোখে দেখি ও না!
— তাহলে খালা টালা কিছু একটা ভেবে নেন!
বেচারা আরহামের মুখের অবস্থা বাংলা পাঁচ। শেষে কিনা খালা? আরহাম কিছু বলছে না দেখে নীলিমা বললো,
— ভাইয়া আমি এখন যাই আপু ডাকছে!
জলদি জলদি কেটে পড়ে নীলিমা। আরহাম হতাশ হয়ে নীলিমার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। চেয়েছিলো নীলিমা কে মনের কথা টা বলতে কিন্তু এটা কি হলো!
আর কারো সামনেই পড়লো না নীলিমা। খুঁজেই পাওয়া গেলো না তাকে। মেঘলার পাশে বসে আছে। সাফওয়ানের মন আনচান করছে! মন টা ভীষণ ব্যাকুল হয়ে পড়েছে হঠাৎ করে! অশান্ত মন বার বার কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছে। নীলিমার সেই রাগি লুক, অদ্ভুত কথা গুলো, আর বুকে কিল বসিয়ে দেওয়া ইত্যাদি সব কিছুই মনে পড়ছে না চাইতেও। ইচ্ছা করছে নীলিমা কে তার পাশে বসিয়ে ইচ্ছা মতো দেখতে। চোখের তৃপ্তি মেটাতে। সাফওয়ান কে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে সায়মা দুষ্টুমি করে বললো,
— কি ব্যাপার ভাইয়া কাউকে খুঁজছেন?
— ক.ক.কই ন.নাতো!
— বুঝেছি বুঝেছি সামথিং সামথিং!
প্রতি উত্তরে সাফওয়ান মুচকি হাসে। সায়মা আবারো বললো,
— যাকে খুঁজেছেন তার নাম আসলে নাতাশা নয় নীলিমা!
— কোথাকার সে আকাশের নীলিমা?
— আকাশের না হয়ে কোনো মানুষের নীলিমা হবে বলেই মনে হচ্ছে!
হো হো করে হাসতে থাকে। আফিক ও হাসছে। সাফওয়ান আর বসে থাকতে পারছে না তাই মেঘলা কে দেখবে ভেবে আসতে চেয়েছিলো রুমের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। কারণ নীলিমা ভেতরে সেখানে বসা। তাকে দেখলে সে আর বসে থাকবে না এটা বুঝতে বাকি নেই সাফওয়ানের তাই সে কি যেনো ভেবে নিজের ফোন টা বের করে কয়েক টা ছবি তুলে নেয় নীলিমার। যা সবার চক্ষু অগোচরেই ছিলো! নীলিমা কে বসা অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগছে। ছবি না তুলে পারলো না সাফওয়ান। সদ্য মানুষ টাকে চোখের সামনে না দেখতে পারলো ফোনের স্থির চিত্রে তো দেখতেই পারবে তাই নয় কি? সাফওয়ান নীলিমা কে উদ্দেশ্য করে চুপিচুপি বললো,
— প্রিয় আপনার অনুমতি না নিয়ে পিক তোলার জন্য ক্ষমা প্রার্থী!
হঠাৎ করেই যেনো পরিস্থিতি থমকে গেলো। এতো উৎসব মুখর একটা পরিবেশে নেমে আসলো বিষাদের ছায়া। বিদায় বেলায় মেঘলা কে পাগলের মতো কাঁদতে দেখে সবার চোখে পানি। হয়তো মেয়েদের জীবনের প্রথম ধাপে এই সময় টাই ভীষণ কষ্টের। বাবা মা বোন চিরচেনা পরিবেশ একটা রক্তের বন্ধন সব ত্যাগ করে যখন একটা মেয়েকে আরেক টা অপরিচিত পরিবেশে অপরিচিত মানুষদের মধ্যে চলে যেতে হয় তখন এর থেকে বেশী কষ্টের আর কিছু হয় না!
বিয়ে নামক বন্ধন টাই অদ্ভুত। আপন জন কে ছেড়ে অপরিচিত কে আবার আপন করে নিতে হয়। মেঘলা কে বিদায় দেওয়া হয়। মেঘলার বাবা মা এখনো কান্না করছে। সায়মা নীলিমা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। নীলিমা বুঝতেও পারছে না তাকে কিভাবে শান্তনা দিবে! নীলিমা চুপ করে আছে। সায়মার সাথে বন্ধুত্ব সেই ছোট বেলা থেকে। কতো শত দুষ্টুমি খুনসুটি মিশে আছে এই মতো গুলি বছরে। তাই দুইজন দুজন কে উপর থেকে দেখলেই যেনো মনের কথা টা বলে দিতে পারবে। নীলিমা বুঝতে পারছে বোন কে এভাবে চলে যেতে দিতে সায়মার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তাই সে চায় কান্না করে সায়মা নিজেকে হালকা করুক। ইচ্ছা মতো কান্না করে নিলে মন আপনাআপনি হালকা হয়ে যাবে। তাই আর বাঁধা দিলো না সে সায়মা কে। চুপটি করে সায়মার কে জাপটে ধরে আছে।
আরহাম দৃশ্য টি দেখে ও নির্বাক হয়ে রইলো। তার ও যে কিছু বলার নেই! নেই কোনো ভাষা! নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে রইল সে। অন্যদিকে সাফওয়ান বিদায় বেলায় শুধু একনজর নীলিমা কে দেখতে চেয়েছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত দেখতে পায় নি। এতো মানুষের ভিড়ের মাঝে নীলিমা কে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়লে ও সে চেষ্টা চালিয়েছিলো বটে কিন্তু ব্যর্থ হয়। নীলিমা কে দেখার আফসোস টা থেকেই গেলো!
চলবে..
.

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com