তুমিময় নেশা | হিয়া চৌধুরী
আমি নাতাশা কে বিয়ে করবো না!”
আচমকা সালিফের এই কথা টা শুনে উপস্থিত সবাই হতবাক শুধু নাতাশা ছাড়া। কারণ সে জানতো শেষ মুহূর্তে সালিফ এটাই বলবে! বসা থেকে উঠে তালি বাজিয়ে নাতাশা বললো,
—“বাহ সালিফ বাহ… আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম ঠিকই তুমি আমাকে বিয়া করবে না! আর দেখো সেটাই হলো!”
—“জানোই যখন তো এখানে ডাকার মানে কি আজিব?”
—“ওহ আচ্ছা এখন আজিব হয়ে গেছে? ৬ মাস আগে থেকেই যে, Engaged হয়ে আছো তা মনে নেই?”
হাতের আঙ্গুলে থাকা আংটির দিকে চোখ যায় সালিফের। এই আংটির জন্য এতো কিছু?
—“সামান্য আংটিটার জন্য বলছো এসব?”
—“এটা তোমার কাছে সামান্য হতে পারে আমার কাছে নয়”
—“তবে ওয়েট…
সালিফ আংটি টা খুলে ফেলে নাতাশার কাছে যায়। ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাতাশা। কি করতে চাচ্ছে সালিফ?
—“কি করতে চাইছো তুমি?”
—“সেটাই যেটা তুমি ৬ মাস আগে করতে বাধ্য করেছিলে যেটা তখন আমার করা উচিত হয় নি!”
—“হোয়াট!”
সালিফ নাতাশার হাত নিজের হাতে কাছে নিয়ে জোড় করে আংটি টা খুলতে যাবে নাতাশা বাঁধা দেয়….. সালিফের সাথে পেরে উথছে না সে।
—“ছাড়ো আমাকে কি করছো এটা তুমি সালিফ…”
উপস্থিত সালিফের বাবা মা আর নাতাশার বাবা মা তাদের বাঁধা দিতে যাবে তখন সালিফ কড়া হুংকারে বললো,
—“তোমরা আমাদের মাঝে আসার চেষ্টা করবে না নয়তো এমন কিছু হবে যা মানতে পারবে না!”
সালিফের রাগ সম্পর্কে সবার ধারণা আছে তাই কেউ এগোলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে থাকলো।
সালিফের মুখে কথা নেই সে তার কাজে ব্যস্ত। নাতাশা তার সাথে শক্তি তে না পেরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সালিফের গালে। থাপ্পড় খেয়ে ভয়ংকর রেগে গেছে সালিফ! এতো বড় সাহস নাতাশার? সেও উল্টো একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নাতাশার গালে। থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে দূরে সরে যায় নাতাশা। ততক্ষণে নাতাশার আংটি সালিফের হাতে চলে এসেছে। সালিফ নাতাশার কাছে গিয়ে বললো,
—“এই যে আমার আংটি আমি নিয়ে নিলাম। আজ থেকে সব শেষ। ভালো করে এটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। এতে তোমার ই ভালো!”
বাবা মা কে নিয়ে হনহন করে চলে যায় সালিফ। নাতাশার বাবা মা নাতাশার কাছে আসে। নাতাশা কান্না করছে। সালিফ এটা কিভাবে করতে পারলো তার সাথে? এমন কখনো করবে কথা তো ছিলো না! সব হয়েছে মিহির জন্য! হ্যাঁ নাতাশা সিউর সব কিছুর পেছনে মিহি ই দায়ী…
মিহির গল্প শুরু হয়েছিলো একমাস আগে…..
সালিফ, নাতাশা, ফারদিন, ইহান আর নাইমা দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে। সিনিয়র হিসেবে raging নেয় তারা। এসব করে ভীষণ মজা পায় তারা। আজকে ও তেমন কিছু ই করার অপেক্ষায় আছে! আর চিন্তা করছে কে হবে সেই ব্যাক্তি।
প্রায় আধঘণ্টা পর সাদা মাটা ড্রেস, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত একটা মেয়ে আসে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বোকা সোকা মেয়ে। তাদের সামনে আসে মিহি। মিহির পথ আটকে দাঁড়ায় ইহান। মিহি চশমা ঠিক করে একবার চোখ তুলে ইহান কে দেখে নিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ইহান মিহির উপর থেকে নিচ ভালো করে দেখে নিয়ে মিহির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—-“নতুন নাকি?”
আঁতকে উঠল মিহি। কেঁপে ও উঠেছে কিছুটা। মিহির এরূপ আচরণ দেখে ৫ জন হো হো করে হেসে উঠে। মিহি ভয় পেয়ে যায়। চুপ করেই আছে সে। যেনো সে কথাই বলতে পারে না! ইহান মিহির থেকে উত্তর না পেয়ে বেশ বড় গলায় বললো,
—“কি হলো কথা কানে যায় না? কানে কালা নাকি!”
এবার একটু বেশি ই ভয় পায় মিহি। কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—“হ্যাঁ আমি নতুন!”
—“আমরা তোমার সিনিয়র। সো এখন তোমার থেকে raging নেওয়া হবে।”
—“মা.মানে?”
—“আমরা এখন যা বলবো তাই তোমাকে করতে হবে!”
মিহির ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ভার্সিটির প্রথম দিনে তাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানা ছিলো না। ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে মিহি। এটা দেখে সবাই হাসছে। পেছন থেকে রাইসা আর তূর্ণা আসে।তাদের ও দাঁড় করায় ফারদিন। মোট ৩ জন হয়েছে এখন। ৩ জনের থেকেই এখন raging নেবে! সালিফ এক নজরে মিহির দিকে তাকিয়ে আছর। নাতাশা ও সেই মজা নিচ্ছে। এক পর্যায়ে ইহান মিহির দিকে সিগারেট এগিয়ে দেয়,,
—“এই নাও!”
—“আমি এসব খাই না!”
—“আমি তোমার থেকে জানতে চাই নি!”
মিহি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে ইহান চেঁচিয়ে বললো,
—“কি হলো টা কি হ্যাঁ?”
৩ জন ই প্রচুর ভতে জর্জরিত এখন। মিহি সিগারেট টা হাতে নেয়। মুখের কাছে নিতেই গন্ধ না সইতে পেরে সিগারেট ফেলে দিয়ে কাশতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে সালিফ বললো,
—“কি শুরু করলি। ছাড় না এসব”
রশগোল্লার মতো চোখ করে ফারদিন আর ইহান সালিফের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে যেনো আকাশ থেকে মানুষ পড়েছে। সালিফ ওদের তাকানো দেখে বিব্রত হয়!
—“সালিফ তুই বলছিস এটা লাইক সিরিয়াসলি?”
—“হ্যাঁ আজ আমার এসবের মুড নাই। চল ওইদিক টায়!”
এক প্রকার জোড় করেই সবাই কে নিয়ে আসে সালিফ। মিহি বেঁচে গেছে তাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এদিকে রাইসা আর তূর্ণা রেগে যায়!
—-“আজব তো এভাবে একটা মানুষ কে দিয়ে যা নয় তা করানো ওদের কাজ নাকি? এখানে পড়তে আসে নাকি গুন্ডামি করতে?”
তূর্ণা মিহির কাছে যায়।
—“তুমি ঠিক আছো?”
—“হ্যাঁ! আসলে এইসব দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারি না!”
—“আরেক বার সামনে আসুক ওই ব্যাটা নাক ফাটিয়ে দিবো যত্তসব।”
রাইসা ব্যাপার টি পাল্টে দিতে বললো,
—“বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি এখানে নতুন?”
—“হ্যাঁ!”
—“আমরাও”
নাতাশার মনে লাড্ডু ফুটছে সালিফের হঠাৎ এই মত কেমন যেনো ঘটকা লাগছে তার কাছে। সেদিনের পর থেকেই নাতাশা আর সালিফের মাঝখানে এই মিহির আগমন ঘটে। সে নিজে আসে নি সালিফ ই তাকে টেনে নিয়ে এসেছে এসবে। বিভিন্ন বাহানায় মিহির সাথে দেখা করতে কথা বলতে বাধ্য করতো। কয়দিন আগ থেকেই সালিফ কে সন্দেহ করে নাতাশা। তাই আজ বিয়ের জন্য সালিফ কে ফোন দিয়ে ডিরেক্টলি বাসায় নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু সে জানতো না সালিফ এই বিহেব করবে! রেগে জিনিস পত্র ভাঙচুর করে নাতাশা। দরজা বন্ধ নাতাশার বাবা মা ও মেয়েকে কিছুতেই থামাতে পারছে না।
সালিফের বাবা কে ফোন দিয়ে ইচ্ছে মতো শাসিয়েছে তারা। কিন্তু কোনো লাভ হয় নি উনারা সালিফের উপরে তার জীবন নিয়ে কিছু বলতে পারবে না। পরে নিজের ছেলে কে হারালে এর দায় কে নিবে! সালিফ খুব রাগী রাগের বশে যেকোনো কিছু করে ফেলবে এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই!
সালিফ কে ড্রিঙ্কস করতে দেখে অবাক না হওয়ার কথা হলে এখন ইহান বেশ অবাক হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ড্রিঙ্কস করছে সালিফ আজ। এতো মদ সে কখনো খায় না। এদিকে থামাতে ও তাকে পারছে না ইহান। নেশার ঘোরে মাতাল অবস্থায় ফিরে ইহান।
পরের দিন রেগে আগুন হয়ে মিহির দিকে তেড়ে আসে নাতাশা। রাগে ক্ষোভে কালকের দিন টা কষ্টে পার করেছে। মিহি কিছুই জানতো না এসবে। রাইসা পর তূর্ণা ও পাশে ছিলো। তারা ৩ জন এখন ভালো বন্ধু ও বটে। নাতাশা সোজা এসে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মিহির গালে…!
চলবে?
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com