Breaking News

মিঃ ডেভিল লাভার | পর্ব -০৪

নীলিমা রেগে আগুন। আরহামের মুখের উপর তুড়ি বাজিয়ে বললো,
— ভারী অসভ্য আর নির্লজ্জ তো আপনি!
— (চুপ)
— আজব তো। স্টুপিড নির্লজ্জ বেহায়া লোক কোথাকার।
আরহাম কোনো রেসপন্স করছে না নীলিমার রাগ আরো চটে যায়। এখানে সিনক্রিয়েট করলে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে তাই নীলিমা বিরক্ত হয়ে ছাঁদে চলে যায়। আরহাম মুচকি মুচকি হাসছে। সায়মা আরহাম কে এক দৃষ্টিতে ছাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
— এভাবে কি দেখছো?
— হু কই কিছু না তো!
— আমাকে খুঁজছিলে তাই না? আরে বাবা আমি ও তো তোমাকে খুঁজছিলাম!
— আমি তো….
— হয়েছে আর বলতে হবে না জলদি আসো।
আরহামের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সায়মা। মেঘলা নীলিমা কে তার পাশে বসায়। নীলিমা ব্যাপার টায় পর মাথা ঘামালো না। সবাই বিভিন্ন স্টাইলে পিক তুলছে নীলিমা ও তুললো সবার সাথে। বাঁধলো আরেক বিপত্তি সায়মা নেই। তাই মেহেদি পড়ানো ও শুরু করা যাচ্ছে না। মেহেদি ডিজাইন ভালো জানে নীলিমা। মেঘলা জানিয়ে দিয়েছে তার হাতে মেহেদি নীলিমা ই দিবে বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে আসতে হবে না।
নিচে লোক পাঠালো সায়মা কে ডাকতে। কিছুক্ষণ পর সায়মা আসলো। আরহাম কে একেবারে চা পানি খাইয়ে তবেই ছেড়েছে। বেচারা হাঁপিয়ে উঠেছে। নীলিমা রেগে বললো,
— সেই যে আমাকে ফেলে গেলি পর এখন আসলি? কই ছিলি তুই?
— মেরি মা সরি। একটু কাজ করছিলাম।
— নীলিমা ছেড়ে দাও এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে তুমি মেহেদি লাগিয়ে দিতে শুরু করো। সবার হাতে কিন্তু তোমাকেই লাগিয়ে দিতে হবে!
— কিহ!
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নীলিমা। বুঝতে পারছে আজ তার হাতের অবস্থা লে হালুয়া হয়ে খান খান হয়ে যাবে। মেঘলার দুহাতে খুব সুন্দর ডিজাইন করে দিলো। লাভ সেইভের ভেতরে “A” লিখে দিয়েছে। প্রায় সবাই কে লাগানো শেষ। নীলিমা নিজেই বাম হাতের উপর পিঠে সিঙ্গেল ডিজাইন করে। মেঘলার পাশে বসে সবাই একসাথে পিক তুলে মেহেদি ডিজাইন গুলা দেখিয়ে। এদিকে সবাই ব্যস্ত কার টা বেশি সুন্দর হয়েছে তা নিয়ে। মেঘলার ফুফাতো ভাই রা এসে বাঁধালো আরো ঝামেলা। তারা এসে বললো তারাও মেহেদি দিবে। নীলিমা অসহায় ভাবে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আপু আমি আর একদমি পারবো না হাত চলছে না!
— একটু কষ্ট করে লাগিয়ে দে সিঙ্গেল করে!আর কেউ তো নেই যে লাগিয়ে দিবে প্লিজ!
মেঘলা এমন ভাবে বললো যে নীলিমা না করতে পারছে না। বায়না মেটাতেই হচ্ছে। ছেলেদের মধ্যে কৌশান নিবিড় নিশাত রয়েছে। সবাই নানান দুষ্টুমি করে হাসছে পাশাপাশি নীলিমা কে রাগান্বিত করছে। অল্প তেই মিশে যায় নীলিমা তাদের সাথে ও মিশতে তেমন সমস্যা হলো না। ওদের ৩ জনের টা শেষ হতেই কেউ একজন নীলিমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
— আমার হাতে ও আপনার সেই স্পেশাল বিখ্যাত মেহেদি ডিজাইন করে দেওয়া যাবে কি ম্যাম?
আহ্লাদি সুরে কথাটা বললো আরহাম। নীলিমার কথা টা দারুন লাগলো মুচকি হেসে কথাটি বলা মানুষটির দিকে তাকাতেই হাসির একেবারে ১৪ গোষ্ঠী ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে গেলো বহুদুর। নীলিমা‌ দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগে সায়মা বললো,
— আরহাম ভাইয়া তোমার হাতে আমি লাগিয়ে দিই?
— তোর হাতের মেহেদি ই তো এখনো শুকালো না!
— সমস্যা নেই সায়মা তুই ই লাগিয়ে দে!
জোড় করে হাসির রেখা টেনে। মনে মনে রাগে ফেটে যাচ্ছে। আরহাম সেটা ভালোই বুঝতে পারছে। তাই সে আবারো বললো,
— সায়মার হাতে অন্যদিন লাগানো যাবে! আপনার এতো নাম ডাক শুনলাম আজ আপনি ই একটু কষ্ট করে লাগিয়ে দিয়ে আমার হাত খানা ধন্য করুন!
নীলিমার একন ইচ্ছা করছে এক ঘুসিতে এই ছেলে নাক ফাটিয়ে দিতে কিন্তু পারছে না। মেঘলা বলে উঠলো,
— আরে আরহাম তুই আবার কবে কবি হয়ে গেলি?
— আর বলো না আপু প্রেমে পড়লে শুনেছি মানুষ কবি হয় আমি ও ট্রাই করি মন্দ হয় না কি বলো!
— তুই আবার কার প্রেমে পড়লি?
আরহাম নীলিমার পানে তাকিয়ে জবাব দিলো,
— পড়িনি পড়তে কতক্ষণ!
— পড়লে উঠার জায়গা আগে থেকেই ঠিক করে রাখিস নয়তো পরে ডুবে মারা যাবি!
সবাই হো হো করে হাসছে। আরহাম হেসে আর জবাব দিলো না এক প্রকার বাধ্য হয়েই নীলিমা আরহামের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেয়। পুরো টা সময় আরহাম তার চোখ নীলিমার দিক থেকে সরালো না। নীলিমা রেগে আছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। আরহাম ভেতরে ভেতরে হাসছে আর নীলিমা ছোঁয়া অনুভব করছে। এতো তাড়াতাড়ি তার ছোঁয়া পাবে ভাবে নি!
এদিকে সাফওয়ান কে দেখে দিয়া ফিদা হয়ে গেছে। চোখ সরাচ্ছে না। আড়শি দিয়ার কান টেনে ধরে বললো,
— চোখ দিয়ে আমার ভাই টাকে গিলে ফেলা প্ল্যান করছিস তাই না! তোর কি নজর লেগে যাবে!
— আহ আড়শি ছাড় না। ব্যাথা লাগছে তো!
–; ওও এখন ব্যাথা লাগছে! প্রেমে টেমে পড়লি নাকি?
— হু!
— ওরে বাবা লজ্জায় তো লাল নীল বেগুনী হয়ে যাচ্ছিস দেখি। কিন্তু তোর কপাল খারাপ!
— কেন কেন?
— ভাইয়া প্রেম টেমে নাই!
দিয়া মুখ গোমড়া করে ফেললো তার পর কি যেনো ভেবে আনন্দে নেচে উঠে বললো,
— নেই তো কি হয়েছে আসবে!(চোখ টিপ মেরে!)
— মানে?
— বুঝতে পারবি!
সাফওয়ান অনেক্ষণ নাগাদ খেয়াল করছে আড়শির ফ্রেন্ড দিয়া নামের মেয়ে টা তার পিছু ছাড়ছে না। তাকে ফলো করছে। কিন্তু কেন? সাফওয়ান ভাবছিলো অন্য কিছু এর মাঝে দিয়ার মতিগতি মোটেও ভালো লাগছে না। একরকম বিরক্ত লাগছে বটে। সাফওয়ান চলে যাচ্ছিলো! দিয়া ডাকলো,
— শুনোন!
— কী?
— আপনাকে একটা কথা বলতাম!
— বলো!
— আসলে….
দিয়া পেছন ফিরে এই সুযোগে সাফওয়ান জলদি কেটে পরে। রাত প্রায় শেষের দিকে হলুদে একেবারে মাখামাখি সবাই। সাফওয়ান কে বজ্জাত মেয়ে গুলা লাগিয়ে দিয়েছে সে চায় নি তাও। আফিকের অবস্থা ও করুণ। বেচারা অনেক ক্লান্ত। ক্লান্তি দূরে ঢেলে মেঘলা কে ফোন দেয়। এদিকে সবাই বসে ছিলো মেঘলার পাশে। ফোন টা লুকাতে সফল হলো না। সবাই পঁচালো তাকে। অবশেষে ফোন রিসিভ করলো। আফিক মেঘলা কে দেখতে চাইছে। এমনিতে দেখা যাবে না তাই মেঘলা কিছুক্ষণ আগের তোলা ছবি গুলো পাঠিয়ে দেয়। সে ও ভীষণ ক্লান্ত ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
আফিক হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সাফওয়ান উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো সফল হলো না।
— এই একদম ফাজলামো করবি না দে বলছি আমার ফোন!
— লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবা আর আমি দেখলেই দোষ আমি তো দেখেই ছাড়বো!
সাফওয়ান ফোনের দিকে একটু তাকাতেই সেদিনের শপিংমলের দেখা নীলিমার মতো কাউকে দেখলো। স্পষ্ট করে দেখার আগেই আফিক ছোঁ মেরে ফোন টা কেড়ে নেয়। এন্ড ফোন লক করে দেয়। সাফওয়ান এটাকে নিজের পাগলামি মনে করলো। ওইদিনের ঘটনায় নীলিমার চেহারা এখনো অবধি ভুলতে পারে নিসে। নীলিমা কে নিয়ে প্রতিমুহূর্তে ভাবনার জন্যই এমন হয়েছে বলে তার ধারণা। সাফওয়ানের নীলিমা কে খুঁজে বের করতেই হবে কিন্তু এই বিয়েটার জন্য আটকে গেছে। মনের আনন্দে কিছু একটা ভেবেই চোখ দুটো বুজে নিলো সাফওয়ান। খুব কাছে থেকে ও নিজের মনে কল্পনায় আঁকা মনের মানুষ টিকে দেখতে পেলো না সে। জানতেও পারলো না তার প্রিয়তমা তার কত কাছে! এই জন্যই হয়তো বলে “প্রিয় মানুষ কে কাছে থাককে ও দূরে মনে হয়! অতি কাছে তবুও বুঝা যায় না, যায় না ছোঁয়া। শুধুই মনের সুপ্ত অনুভূতি গুলো দিয়ে একটু একটু করে ভালোবাসা যায়!”
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com