তুমিময় নেশা | পর্ব -০৩
সালিফ নাতাশা কে কল দিয়েছে দেখে খুব অবাক নাতাশা। দেরি না করে চট জলদি ফোন টা রিসিভ করে। নাতাশা কে কিছু বলতে না দিতে সালিফ বলে উঠলো,
“কোথায় তুমি জলদি পার্কের সামনে আসো!”
“হঠাৎ এতো জরুরি তলব?”
“কথা আছে তোমার সাথে!”
সালিফের শান্ত কন্ঠস্বর শুনে নাতাশা কিছুই বুঝতে পারলো না। সে দেরি না করে চলে আসে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সালিফ দাঁড়িয়েই ছিলো নাতাশা গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ায়!
“কি ব্যাপার বলো তো?”
“কি চাও তুমি?”
“তোমাকে!”
“সিরিয়াসলি?”
“ইয়াহ!”
“হাহাহা।”
সালিফ ঠাস একটা থাপ্পড় মারলো নাতাশার গালে। নাতাশা রেগে বললো,
“তুমি আবার ওই লো ক্লাস মেয়েটার জন্য আমার গায়ে হাত তুললে?”
“মিহি লো ক্লাস হলে ও তোমার মতো মুখোশধারী নয়! আর তাছাড়া থাপ্পড় টা তোমার প্রাপ্য ই ছিলো মিথ্যা বলেছো তার উপর তুমি মিহির গায়ে ও হাত তুলেছো!”
“হোয়াট ডু ইউ মিন সালিফ?”
“কেন বুঝতে পারছো না?”
“তুমি আমাকে বার বার ওই মেয়েটার জন্য ইনসাল্ট করছো! পারো না তুমি এটা করতে আমার সাথে!”
“আমি মিহির জন্য এসব করছি তোমাকে কে বললো?”
“কারো বলার প্রয়োজন কেন পড়বে? যেখানে আমি নিজেই সব জানি!”
“কি জানো?”
“তুমি মিহি কে ভালোবাসো এই জন্য এনগেইজমেন্টের আংটি পর্যন্ত খুলে ফেলতে দুইবার ভাবো নি!”
“হোয়াট? আমি কখন বলেছি আমি মিহি কে ভালোবাসি?”
“তুমি তো এটাও বলো নি যে তুমি মিহি কে ভালোবাসো!”
“স্যাট আপ নাতাশা। নাটক টা তুমি শুরু করেছিলে আর আমি সেই আংটি খুলে ফেলে কাহিনী ক্লোজড করে দিয়েছি আর কিছুই না!”
“মানে? কিসের নাটক?”
“এই যে তুমি ভালোবাসো বলে যেই নাটক টা এতোদিন ধরে কনটিনিউ করে আসছিলেন সেটা! তুমি নিজেকে যতটা চালাক ভাবো ততটা চালাক ও তুমি নও!”
“বুঝলাম না আমি!”
সালিফ ফোন টা বের করে গ্যালারি থেকে একটা ছেলের স্থিরচিত্র নাতাশার কে দেখায়। নাতাশার চেহারার মানচিত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো। নাতাশা হকচকিয়ে উঠে বললো,
“ককে ককে এএইটা?”
“তোমার মস্তিষ্কের কাজ মনে হয় হঠাৎ করেই স্লো হয়ে গেছে। আরেক টা থাপ্পড় দিয়ে দ্রুত করতে হবে!”
ফ্ল্যাশ ব্যাক………………..
ভার্সিটিতে নাতাশা একটা ছেলের উপর ক্রাস খায়। ভয়ংকর ভালো লেগে যায় তার। এর উপর জানতে পারে সালিফ কোটিপতি বাবার একমাত্র ছেলে। ব্যাস হয়ে গেলো সালিফের পেছনে লাগে নাতাশা। ভার্সিটি তে নাতাশার পরিচয় গোপন রাখা। সালিফ প্রথম থেকেই নাতাশা কে পাত্তা দিতো না। এর মাঝে নাতাশা উপদ্রব বেড়ে গেলো ভালোবাসি ভালোবাসি বলে সালিফের মাথা খেয়ে দিচ্ছিলো সে।একদিন সালিফ ডিরেক্টলি এসব করতে না করে দেওয়ায় নাতাশা বাসায় রেগে চলে যায়। বাসায় হাত কেটে বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে থাকে। নাতাশার বাবা মা হতবাক হয়ে আছেন। ঘরের চারদিকে সালিফের ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নাতাশার ফোন খুঁজে সালিফের নাম্বার পাওয়া মাত্রই কল করা হয়। সালিফ এসে দেখেছিলো এসব।
সেদিন সালিফের হাতে প্রথম থাপ্পড় খায় নাতাশা। সালিফের একটাই কথা হাত কেটে কখনো ভালোবাসা দেখানো যায় না। নাতাশার বাবা মা সালিফের বাবা মা কে মেয়ের এসব পাগলামির কথা বলে সালিফ কে বিয়ের কথা বলে। সালিফ প্রথমে নারাজ হলে পরে কোনো ভাবে রাজি হয়। তবে ডিরেক্টলি বিয়ে করে নি এনগেইজমেন্ট হয়েছিলো শুধু। বিয়ের জন্য নাতাশা জোড় করেছিলো কিন্তু সালিফ তা করতে দেয় নি।
সব কিছু ঠিকঠাক ই চলছিলো! একদিন সালিফ নাতাশা কে একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে বসা অবস্থায় দেখে। তখন সাদাফ তার বাবার পরিবর্তে ব্যবসায়ের কাজের জন্য কিছু দিন বাইরে ছিলো। হুট করে না জানিয়ে আসতেই এসব লক্ষ্য করে সালিফ। সেই ছেলেটার নাম নাফিস। নাতাশার সাথে নাফিসের ও সম্পর্ক আছে। সালিফ কয়েক মুহূর্তের জন্য সব টা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। নাতাশা আসল রহস্য খুঁজতে সফল হয় সালিফ। নাতাশা মূলত সেই ছেলে গুলোই কেই সম্পর্কে ফাঁসায় যারা কোটিপতি। সালিফ সময়ের অপেক্ষায় ছিলো সকলের সামনে নাতাশার মুখোশ খুলার। সেজন্য এতোদিন কিছু বলে নি।
নাতাশা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে সালিফ খপ করে তার হাত ধরে ফেলে।
“আরে কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“আআব.আআমি…”
“আরো অনেক কিছু বাকি আছে মাই ডিয়ার। এতো সহজে তো ছাড়া পাচ্ছো না তুমি!”
“‘মানে?”
ইহান আর ফারদিন নাতাশা কে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে রেখে তালা মেরে দেয়। আজকে মুখোশ উন্মোচন হবে নাতাশার। সালিফ এতো তাড়াতাড়ি এটা করতে চায় নি নাতাশাই বাধ্য করেছে!
মিহি তার ফুপির বাসায় চলে আসে কিছু দিনের জন্য। যেটা রাইসা আর তূর্ণা ও জানতো না। সালিফ রাইসা আর তূর্ণা কে মিহির বাসায় পাঠিয়ে সেটা জেনে নেয়। ঠিকানা জোগাড় করে খুব দ্রুতই সেদিকে রওয়ানা দেয় সালিফ। আনমনে ড্রাইভ করছে সালিফ আর ভাবছে নাতাশার কথাটা!
“আচ্ছা আমি কি সত্যি ই মিহি কে ভালোবাসি? না না এটা কিভাবে হয় আমি ওকে ভালোবাসতে যাবো কেন! ধুর এটা শুধুই মনের ভুল আর কিছু না! হ্যাঁ মিহি কে আমার ভালো লাগে কিন্তু ভালো লাগা আর ভালোবাসা তো এক না! প্রথম দিন ই মিহি কে প্রচন্ড ভালো লেগেছিলো আমার! আচ্ছা এটা লাভ এট ফার্স্ট সাইট নয়তো? আরে না না ধুর কিসব ভাবছি আমি! কন্ট্রোল সালিফ কন্ট্রোল!”[মনে মনে]
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে সালিফ। মিহির নাম্বারে কল দেয়। কয়েক বার রিং হওয়ার পর ফোন টা তোলে মিহি!
“ওই স্টুপিড কে আপনি হ্যাঁ? এভাবে লাগাতার ফোন দিয়ে যাচ্ছেন! চিনেন নাকি আমাকে?”[আননোন নাম্বার দেখে কিছুটা রাগ লাগে মিহির]
সালিফ মিহির কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। মিহি আবার বললো,
“কথাই যখন বলতে পারেন না তো কল দেন কেন আজিব!”
“পারি তো!”
“কে বলছেন?”
“আমি!”
“আমি টা কে ভাই?”
“ভাই না মানুষ!”
“আপনি যে মানুষ সেটা আমি জানি কারণ গরু ছাগল তো ফোন ইউজ করতে পারে না তাই না তার উপর কল দেওয়া তো অসম্ভব। মানুষ জেনেই চাই বলেই সম্বোধন করেছি!”
“পৃথিবীর সকল মানুষ কি আপনার ভাই?”
“হ্যাঁ মানে না। ধুর কে বলেন তো আপনি?”
“আমি আপনার ভাই না জামাই নিচে আসো!”
“কিহ বললেন?”
“কেন শুনতে পাও নি?”
“না আবার বলেন!”
“বুঝেছি কানের ডাক্তার দেখাতে হবে। নিচে রেডি হয়ে আসো!”
“নিচে মানে!”
“কি মেয়েরে বাবা এতো কথা কিভাবে বলে ও মাই গড[মনে মনে] নিচে মানে নিচে তুমি যেখানে আছো তার নিচে!”
“আপনি আমার সাথে ফাইজলামি করেন? মেরে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো পরে আর হাড্ডি খেতে পারবেন না বুঝেছেন? কে আপনি বলুন তো!”
“সালিফ!”
কথাটা শুনেই চমকে উঠলো মিহি। এক দৌড়ে বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো সালিফ দাঁড়ানো। সালিফের মুখে রাজ্যজয়ের হাসি। মিহির দিকে হাত নাড়িয়ে নিচে আসতে বললো,
“তাড়াতাড়ি নিচে আসো!”
“আআআপপনি আআপনি এএএখানে কককেন?”
সালিফ মিহির কথা শুনে হেসে তার সাথে মিলিয়ে বললো,
“আআআমি এএএখানে ততততোমাকে কিডন্যাপ ককককরতে এএএসেছি!”
“কককিহ!”
“তুমি আসবে নাকি আমি বাড়ির ভেতরে চলে আসবো তখন কিন্তু কিছু হলে তুমি দায়ী থাকবে আমি না!”
“না না আসছি আমি”
“এইতো গুড তাড়াতাড়ি আসো!”
মিহি ভয়ে ভয়ে সালিফের কাছে আসে। সালিফ মিহির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এলোমেলো চুলে তাকে মারাত্মক কিউট লাগছে। সালিফ কে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহি বিব্রত হয়। এরপর সালিফ তাকে যা বললো তা শুনে মিহি shocked….
চলবে?
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com