তুমিময় নেশা | পর্ব -০২
মিহি গালে হাত দিয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নাতাশা চেঁচিয়ে বললো,
—“তোর জন্য হ্যাঁ শুধু তোর জন্য সালিফ গতকাল engagement এর আংটি খুলে ফেলে দিয়েছে। তুই আমার সালিফ কে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিস।”
—“এসব কি বলছেন আপনি? আমি কেন উনাকে আপনার থেকে কেড়ে নিতে যাবো?”
—“ও এখন না জানার ভান করছিস?”
—“আমি নয় আপনি!”
—“তোর কি হাল আমি করবো সেটা তুই নিজেও জানিস না!”
রেগে নাতাশা চলে যায়। মিহি, তূর্ণা আর রাইসা কে রেখে কোথাও একটা চলে যায়। তারা আসতে চাইলে নিষেধ করে না আসার জন্য কারণ সে কিছুক্ষণ একা থাকতে চায়। একটা বেঞ্চিতে বসে আছে মিহি। শুধু বসে নয় কান্না ও করছে নাতাশা তার গায়ে হাত তুলল এটা তার পছন্দ হয় নি। অপমান করা হয়েছে তাকে।
সালিফ ঘুম থেকে একটু দেরি তেই উঠে। ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুড়তে থাকে। ভার্সিটিতে এসে সোজা মিহির ক্লাসে যায়। সেখানে তূর্ণা আর রাইসা বসে ছিলো। তাদের ইশারায় বাহিরে ডাকে।
—“মিহি কোথায়?”
—“আমরা কিভাবে বলবো মিহি কোথায়? আমাদের ই বা কেন জিঙ্গেস করছেন?”
সালিফ বোকা বনে গেলো। তূর্ণা আর কিছু না বলে চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে যায়। তাদের মুখে এমন আশ্চর্যজনক উত্তর শুনে সালিফ এখনো তাজ্জব হয়ে আছে। এমন তো কখনো করে না তারা! তাহলে আজ এমন করছে কেন? ভার্সিটির আনাচে কানাচে মিহি কে খুঁজছে সালিফ কিন্তু সে নেই। এদিকে ফারদিন আর ইহান কেও জানিয়েছিলো আজ ভার্সিটি তে আসবে না তাই তারা ও আসে নি। হঠাৎ সালিফের চোখ পার্কিং এর দিকে বেঞ্চিতে বসে থাকা মিহির উপর যায়। দ্রুত পায়ে সেদিকে এগোয় সালিফ।
—“মিহি তুমি এখানে কি করছো আর আমি কোথায় না খুঁজলাম উফ!”
মিহি কোনো কথা বলছে না। সালিফের দিকে তাকাচ্ছে ও না। এটা দেখে সালিফ বললো,
—“কি হলো কথা বলছো না যে?”
মিহি উঠে চলে যেতে নিবে সালিফ পেছন থেকে মিহির হাত টেনে ধরে। মিহি বলে উঠলো,
—“ছাড়ুন আমার হাত!”
—“কি হয়েছে তোমাদের? এভাবে কথা বলছো কেন?”
—“আজব তো! আপনার সাথে কথা বলার জন্য আমাদের নিয়ম কানুন শিখতে হবে নাকি?”
—“মিহি!”
—“ছাড়ুন বলছি আমার হাত!”
—“না ছাড়লে?”
—“কেটে ফেলবো সেই হাত!”
সালিফ বিদ্যুৎ শখ খাওয়ার মতোই দ্রুত মিহির হাত ছেড়ে দেয়। মিহি চুপচাপ চলে যায়। দূর থেকে এসব লক্ষ্য করছে নাতাশা। কিছু টা আন্দাজ ও করতে পারছে। আজ আর ক্লাস ও করলো না মিহি। সোজা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়। সালিফ পেছন পেছন আসতে যাবে, দেখে নাতাশা চোরের মতো উঁকি দিচ্ছে।
একটু চক্ষু অগোচর হতে মিহি বেপাত্তা হয়ে গেলো এটা দেখে সালিফ থ হয়ে যায়। মিহি কই গেলো এতো দ্রুত? কিছুই মাথায় ঢুকছে না সালিফের এদিকে নাতাশা কে ও এখন দেখা যাচ্ছে না।
পর পর দু’দিন ভার্সিটি তে আসলো না মিহি। এর কারণ কি সালিফ জানেনা। তূর্ণা আর রাইসা ও কিছু বলে না। আজ একেবারে মেজাজ বিগড়ে আছে সালিফের! মিহির এভাবে উধাও হওয়া টা একদমি ই মানতে পারছে না সে। তূর্ণা আর রাইসা মুখোমুখি দাঁড়ায় সালিফ। ইহান রাইসা কে পেছন থেকে নিয়ে চলে যায়। মুখ চেপে ধরে থাকায় সে কোনো শব্দ ও করতে পারছে না।
—“তূর্ণা মিহি কোথায়?”
—“আ…
—“কোনো উল্টা পাল্টা জবাব শুনতে চাচ্ছি না প্লিজ! সোজাসুজি সব খুলে বলো হুট করে এমন বিহেব কেন করছো তোমরা আর মিহি ও নেই! মানে কি এসবের?”
—“একটাই মানে!”
—“কি সেটা?”
—“আপনি আর নাতাশা আপু!”
—“হোয়াট এর মাঝে নাতাশা কিভাবে আসলো?”
সালিফ কে আজ সব খুলে বলে তূর্ণা পেছন ফিরে দেখে রাইসা নেই। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সালিফের দিকে তাকায় সে…
—“রাইসা মেবি ইহানের সাথে আছে! আমি যাচ্ছি!”
রাইসা কে ছাঁদের একপাশে নিয়ে আসে ইহান। রাইসা রেগে লাল হয়ে আছে।
—“আপনার এতো বড় সাহস আমার মুখ চেপে ধরেন!”
—“মুখ চেপেই তো ধরেছি কিডন্যাপ তো করি নি তাই না?”
রাগে ফুঁসছে বাংলার রাইসা এটা দেখে ইহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
—“আমি কিন্তু আপনাকে…”
—“কি?”
—“আই কিল ইউ!”
—“ওকে ট্রাই করতে পারো!”
—“স্টুপিড!”
—“স্টুপিডের কাজ কি জানো?”
—“কী?”
—“মুখে বলবো না করে দেখাবো?”
হাইনের চোখে মুখে ডেভিল মার্কা হাসি দেখে রাইসা ভয় পেয়ে যায়। ইহান এক পা এক পা করে রাইসার দিকে এগিতে থাকে রাইসা দৌড় দেয়। পেছন থেকে ইহান হো হো করে হাসছে। এক দৌড়ে ক্লাসের সামনে আসতেই তূর্ণার সাথে ধাক্কা খায় রাইসা।
—“ওমাগো তুই আমার মাথা ফাটিয়ে খান খান করে দিলি রে!”
—“সরি সরি আমি দেখি নি!”
—“দেখবি কিভাবে চোখ তো আর সাথে নাই!”
—“তো কোথায়?”
—“যে নিয়ে গিয়েছিলো তার কাছেই তো রেখে এসেছিস। এ্যাহ আসছে এখানে ন্যাকা সাজতে!”
ফারদিন ওদের মাঝখানে এসে তূর্ণা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“রাইসা তো ন্যাকা সাজতে হলে ও পারে তুমি তো তাও পারো না পুরাই মাকাল ফল একটা!”
তূর্ণা ঠিক মতো না দেখেই রেগে একটা ঘুসি মারে যেটা ফারদিনের নাক বরাবর লাগে। “মাকাল ফল” সবচেয়ে বিশ্রী দেখতে এটা। এই ফল তূর্ণা একদমি দেখতে পারে না।উপর থেকে দেখতে এই ফল খুব আর্কষনীয় হলেও ভেতরে খুবই বাজে অবস্থা এই ফলের যার জন্য তূর্ণার রাগ উঠে উল্টা এটা দেখলে! তূর্ণা ভালো ভাবে দেখে রাইসার হাত ধরে বললো,
—“বাঁচতে চাইলে পালা রে…..!”
দু’জন কে আর পায় কে। এক দৌড়ে পগাড় পাড়….
চলবে?
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com