Breaking News

মিঃ ডেভিল লাভার | পর্ব -০৩

সাফওয়ান ফোন টা পকেটে রেখে দুটি হাত গুঁজে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
অপার্থিব এক অনুভূতি হচ্ছে! আফিক মুখ ফুলিয়ে আছে।
মেঘলা কি দিয়ে শুরু করবে তার কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।
যাই হোক আফিকের অভিমান কাটলো। হাসছে সে মেঘলা আমতা আমতা করে বললো,
—একা এসেছেন?
—না।

সাফওয়ান কে ডাকলো আফিক।
সাফওয়ান মুখে হিরো মার্কা হাসি ঝুলিয়ে কোনো প্রকার না থেমেই সোজাসুজি বলে দিলো!
— তাার মানে ভাই আমার এমনি এমনি পাগল হয়নি।
যাক আমি অনেক লাকি যে বিয়ের আগেই ভাইয়ের হবু বউ মানে ভাবী কে দেখার সুযোগ হয়েছে।
আর কোনো ভাবে সুযোগ হতো না।
তা ভাবী আপনি কে জানেন আপনার হবু বর বিয়ের আগেই যে পরিমাণ পাগলামি শুরু করেছে বিয়ের পর সম্ভবত পাবনায় ভর্তি করাতেও হতে পারে!!
মেঘলা লজ্জা পেয়ে গেলো। ৩ জন ই হাসছে।
সাফওয়ান ওদের কে পারসোনাল টাইম স্পেন্ড করতে দিতে চায় তাই নিজে ফোন আসার নাম করে কিছু টা দূরে চলে যায়।

সায়মা নীলিমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার!
— বলবি আসল ব্যাপার টা কি? আমি তো কিছুই বুঝলাম না!
— তুই আসলেই একটা গাঁধি!
— হ্যাঁ তুই তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট তা অনুগ্রহ করে যদি বলতি কি হয়েছে!
নীলিমা যতটুকু বুঝতে পেরেছে খুলে বললো। সায়মা হা করে আছে। নীলিমা বললো,
— একটা খেলা দেখবি?
— কি?
— দেখ….

নীলিমা বারান্দায় গেলো। জোড়ে চেঁচিয়ে বললো,
— সায়মাআআআ দেখ দেখ গেটের কাছে চোর এসেছে। চোর চোর কে কোথায় আছো গো চোর এসেছে!
সায়মা ভড়কে গেছে সাথে কান একেবারে ঝালাপালা হয়ে গেলো। বাপরে মেয়ে তো নয় যেনো মাইক। মেঘলা থতমত খেয়ে বললো,
— আপনি এক্ষুনি যান আমি যাচ্ছি নয়তো খারাপ একটা পরিস্থিতি তে পড়বো!
মেঘলা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেট বন্ধ করে দিয়ে খুব সাবধানে কেটে পড়লো।
আফিক বেচারা হতাশ হয়ে সাফওয়ানের কাছে আসলো। মেঘলা ফের আবার আসবে বলে মনে ও হচ্ছে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফিরে গেলো আফিক। সাফওয়ান পুরো টা দেখে গেলো। সোজাসাপ্টা কোনো কিছু বুঝে নি। একটুকু বুঝেছে কেউ এসে ওদের মাঝে বাম হাত ঢুকিয়েছে। যাক একদিকে ভালোই হয়েছে নয়তো এই আফিক আজ তার ঘুমের ১৩ টা বাজিয়ে দিতো এটা নিশ্চিত।

সাফওয়ানের মনে হলো যেই ব্যক্তি এই কাজ টা করেছে তাকে ঘটা করে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসা উচিত। মেঘলা কে রুমে এসে কাউকে না পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে গেলো তাও পারলো না। দৌড় দেওয়ায় গলা শুকিয়ে গেছে। পানি খাওয়া দরকার। তখনি কেউ পানির গ্লাস মেঘলার দিকে বাড়িয়ে দিলো। মেঘলা ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে নিলো। তার সামনে নীলিমা আর সায়মা দাঁড়িয়ে। মেঘলার বুঝতে পারলো না ঠিক কি রিয়েক্ট করবে। তার প্রেমের বারোটা বাজিয়ে দিলো এই বজ্জাত মেয়েটা। পরে অবশ্য আবার নিজেকেই দোষী মনে হলো। নিজেই তো মিথ্যা বলেছে এখন কি বলবে? নীলিমা হাসি চেপে রেখে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— আপু কুল ডাউন!
— হ্যাঁ!

— তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
— কেমন?
নীলিমা কে থামিয়ে দিয়ে সায়মা বললো,
— মনে হচ্ছে কোথাও চুরি করতে গিয়েছিলো গৃহস্থের দৌড়ানি খেয়ে এসেছো!
অসহায় মুখখানা দেখার মতো হয়েছে।
নীলিমা আর সায়মা হাসতে হাসতে শেষ! আজ মেঘলা আর আফিকের গায়ে হলুদ।
বাসায় মানুষের ভরপুর। সকল রিলেটিভ রা এসেছে। ছাঁদে সব কিছু সাজানো হয়েছে।
খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। মেঘলা কে হলুদ পরীর মতো লাগছে।
নীলিমা পড়ে গেলো বিপদে সে শাড়ি সামলাতে পারে না।
সায়মা এতো জোড়া জুড়ি করছে যে না পরে পারছে ও না।
লাল আর হলুদ ম্যাচিং করে পড়বে বলে ঠিক করলো।

সাথে নতুন করে সায়মার আরো মামাতো বোন ফুফাতো বোন রাও আছে।
মেঘলা কে সাজিয়েছে তার ভার্সিটির ফ্রেন্ড রা। সবাই রেডি মেঘলা কেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শুধু নীলিমার টাই হচ্ছে না।
সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে এটা দেখে নীলিমা বললো,
— তোমরা যাও আমি আর সায়মা একটু পর ই আসছি। ব্যাস আর একটু সময় লাগবে।
সবাই চলে গেলো। বাঁধার জন্য পিন গুলো হারিয়ে ফেললো নীলিমা।
— তুই দুমিনিট ওয়েট কর আমি নিয়ে আসছি!
— আচ্ছা।

বাসায় এতো মানুষ। সায়মা যাওয়ার পথ পাচ্ছে না। আরহাম মাত্র এসেছে। তার উপর এতো গরম পড়ছে সহ্য করার মতো ও না। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটা জায়গা খুঁজছে সে কিন্তু পাচ্ছে না। অবশেষে একটা রুমের সামনে এসে আরহাম বুঝতে পারলো ভেতরে কেউ নেই। নক না করে দরজায় পা বাড়াতেইই বড়সড় এক ধাক্কা খেলো সে। এটা কি দেখছে সে। এ যে সাক্ষাৎ পরী।
চোখ ফেরানো দায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলিমার দিকে অথচ নীলিমার সেদিকে ভ্রুঁ ক্ষেপ ও নেই। আচমকা আয়নায় চোখ পড়তেই আতঁকে উঠলো সে। এক জোড়া চোখ তার দিকে কেমন করে চেয়ে আছে। নীলিমা রেগে গেলো। আরহামের কারো সাথে ধাক্কা লেগে বাস্তবে ফিরে আসে। নীলিমার চাহনি কি ইঙ্গিত করছে সেটা বুঝতে পেরে আরহাম বললো,

— আই এম সো সরি!
এই কথাটাতে ও যেনো বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ ছিলো না।
চোখ একটুর জন্য ও এদিক ওদিক করছে না আরহাম।
আরে এ যে ভারী অসভ্য নীলিমা আরহামের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো।
মেজাজ টা চরম খারাপ হয়ে গেলো। আরহাম মাথা চুলকিয়ে নিজেই নিজে কে বকতে থাকলো।
আর ভাবছে মেয়েটা তাকে নির্ঘাত বেহায়া অসভ্য স্টুপিড এমন কিছুই হয়তো ভেবেছে!
অবশ্যই এটা ভাববে না ই বা কেন?
সে যেভাবে তাকিয়ে ছিলো এতে সে কেউ ই এটা ভাবতো।
কাজ টা মোটেও ঠিক হয় নি! অনুতপ্ত বোধ করছে আরহাম!
সায়মা অনেক কষ্টে পিন নিতে সক্ষম হলো।

ফিরে আসতেই তার সামনে আকাশী রঙ্গের টিশার্ট পড়া
তার সেই কাঙ্ক্ষিত প্রিয় মানুষ টাকে দেখে একেবারেই অবাক সায়মা।
বিশ্বাস ই করতে পারছে না যে আরহাম এসেছে।
আরহাম খেয়াল করলো সায়মা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়মার সামনে গিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
— কিরে এভাবে হা করে আছিস কেন?
সায়মা বিশ্বাস হচ্ছে না একদম। নিজের হাতে নিজেই একটা চিমটি কেটে দেখলো নাহ সত্যি ই সব কিছু। একটু অভিমান হলো। এতোদিন কেন আসে নি আরহাম? নিরবে কতো অপেক্ষা করেছে সায়মা।
— ভাইয়া তুমি এতোদিন কেন আসো নি?
— একটু কাজ পড়ে গেছিলো যে।

— যাও তোমার সাথে কথা নেই!
— কথা না বলিস একটু পানি খেতে দে। তেষ্টা পেয়েছে তো খুব!
— আমি পারবো না তুমি মামনির কাছে যাও।
ভেঙ্গচি কেটে চলে গেলো সায়না। আরহাম এর ও ইচ্ছা হলো না ডাকতে।
সে কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। সায়মার মন টা কেমন করছে।
ইচ্ছা করছে আরহাম কে জাপ্টে ধরতে আর বলতে “আমি আপনাকে ভালোবাসি আরহাম।
অনেক ভালোবাসি! আপনাকে দেখার অপেক্ষাতেই তো ছিলাম।
এতো দেরি করে আসলেন কেন! অভিমান করেছি খুব! অভিমান ভাঙ্গান!”
কিন্তু ইগোর ঠেলায় উল্টো পানি না দিয়েই চলে আসলো!
সব সময় উল্টা পাল্টা করবেই করবেই।
এই মানুষ টার সামনে নিজের সব হুস ভুস হারিয়ে ফেলে সায়মা।
কি করে সে নিজেও জানে না। নিজের কাজের জন্য নিজেই নিজেকে বকতে থাকলো সে।
সায়মা দরজায় নক করলো! নীলিমা বললো,

— কে?
— আমি সায়মা!
নীলিমা খুলে দিয়ে বললো,
— ওহ তুই!
— কেন অন্য কাউকে চাচ্ছিলি?
— আর বলিস না একটা স্টুপিড রুমে ঢুকে পড়তে যাচ্ছিলো!
— বলিস কি?(অবাক হয়ে!)
— আরে হ্যাঁ। ঢুকে পড়তে যাচ্ছিলো তা ঠিক আছে খেয়াল করে নি
মানলাম তবে মেয়ে দেখলেই কি হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে আজিব?
মনে তো হচ্ছিলো চোখ দিলেই গিলে ফেলবে!(রেগে)
সায়মা ভ্রুঁ কুঁচকে একবার নীলিমা কে দেখে মজা করে বললো,
— তোকে অপ্সরীর মতো লাগছে তাই তো বেচারা হা করে তাকিয়ে ছিলো।
মনে হয় ভালো টালো ও বেসে ফেলেছে দেখ গিয়ে হাহাহা!
সায়মা দাঁত কেলিয়ে হাসছে দেখে নীলিমা রেগে তাকালো!
— ওই খচ্চর টার রাগ কি তোর উপর ঝাড়তে বাধ্য করবি?
— আচ্ছা বাবা সরি। কে ছিলো বলতো!
— আমি কি করে জানবো কে ছিলো!

— চিনিস নি?
— তুই যেভাবে বলছিস মনে হয় আমি পৃথিবীর সব মানুষ কে চিনি।
এমন হাদারামের মতো উদ্ভট প্রশ্ন করছিস কেন? টিকটিকির জুস খেয়েছিস নাকি?
— ওয়াক থু। ছিহ এসব মানুষ খায়!
— কথানা বাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করে দে!
সায়মা আনমনে ছিলো তাই কি বলছে নিজের ই খেয়াল নেই।
কথা আর বললো না সায়মার মনে হলো আরহাম হয়তো এখনো তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সায়মা নীলিমা কে সাহায্য করলো পুরোপুরি রেডি হতে।

দুজন সিড়ির কাছে এসে বললো,
— নীলিমা তুই একটু এগো আমি এক্ষুনি আসছি!
— আরে কই যাচ্ছিস আমি পড়ে গেলে সব শেষ। সায়মা শোননন…
কে শোনে কার কথা। সায়মা চলে গেলো।
নীলিমা খুব সাবধানে শাড়ি সামলিয়ে এক পা এক পা করে এগোতে যাবে
আচমকা কারো সাথে ধাক্কা পড়ে যেতে নেয়। চোখ বন্ধ করেই নিয়েছে।
বুঝতে বাকি রইলো না মান সম্মান আজ আর একটু ও বাকি থাকবে না।
শাড়ি তার মান সম্মানের ১২ টা বাজালো বলে! আরহাম পুরাই টাষ্কিত।
ভাবতে ভাবতে নীলিমা আবার তার সামনে পড়বে ভাবতে পারে নি।
দুহাতে চেপে ধরে আছে আরহাম! নীলিমা কে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলো!
নীলিমা চোখ বন্ধ করে আছে। আরহাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com