ডিভোর্স । পর্ব -৪০
জ্যোতিঃ মেয়ের খাবার রেডি করছিলাম পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো খালি পেটে হাত রেখে চুলে মুখ গুঁজে দিয়েছে
একদম বিরক্ত করবেন না মেজাজ খারাপ আছে এমন-ই
তনয়ঃ কী হয়েছে আমার লক্ষী বউটার
জ্যোতিঃ আপনার মেয়ে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে খাবার খাবে না আর শুধু ভ্যা ভ্যা করবে,,।
তনয়ঃ মায়ের মতো হয়েছে,,, (বিরবির করে)
জ্যোতিঃ কী বললেন,,,,?? (রেগে)
তনয়ঃ কই,,,, কিছু না তো,,,, আমার প্রিন্সেস কোথায়,,,,,?
জ্যোতিঃ রুমে বসে খেলছে,,,,
তনয়ঃ তুমি ওর খাবার নিয়ে আসো আমি দেখছি খায় কিনা,,,,,
(তনয় মেয়ের কাছে চলে গেলো,,,,)
তনয়ঃ আমার মা টা কী করে তনয়া বেডের মাঝে বসে খেলনা দিয়ে খেলছে
কেবল হামাগুড়ি দিতে শিখেছে একটু একটু আর মা আর বাবাটা একটু বলতে পারে
তনয়াঃ বা,,,বা,,,বা,,,,,,
তনয়ঃ(মেয়েকে কোলে তোলে নিলাম,,,,,) ওরে আমার মা কেমন করে ডাকছে,,,,,, মায়ের কথা শুনো না কেন মা,,,,,?? না খেলে তুমি আমার সাথে খেলবে কীভাবে শুনি,,,,,,
তনয়াঃ বা,,,বা,,,,বা,,,,,,
জ্যোতিঃ শুধু বাবা আর বাবা,,,, কেন রে মা কী নদীর জলে ভেসে এসেছে শুনি,,,,,???
তনয়াঃ বা,,,,,বা,,,,,বা
তনয়ঃ হাহাহাহা,,,,,,
জ্যোতিঃ হাসবেন না একদম,,,,, সারাদিন বাবা বাবা করে আর মন চাইলে দিনে একবার মা বলে,,, কষ্ট করে জন্ম দিলাম আমি,,,, সারাদিন খাওয়াই দাওয়াই আমি আর বলে শুধু বাবা ,,,(মুখ কালো করে,,,)
তনয়ঃ ( তনয়াকে জ্যোতির কোলে দিয়ে,,,, জ্যোতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম,,,,) তুমি কী একা জন্ম দিয়েছো,,,??(দুষ্টমি করে,,,)
জ্যোতিঃ সব সময় ফাজলামি করেন,,,?? (হালকা রাগ দেখিয়ে,,)
তনয়ঃ ওকে ওকে,,,, আমার কাছে একটা ভালো বুদ্ধি আছে,,,,
জ্যোতিঃ কী বুদ্ধি,,,,??? (আগ্রহ নিয়ে,,,)
তনয়ঃ তনয়া তো শুধু বাবা বাবা করে,,,,?? তনয়ার একটা ভাই আনার ব্যবস্থা করি যে শুধু মা মা করবে,,,
জ্যোতিঃ লাগবে না আমার মা মা করা,,,,
তনয়ঃ কেন কেন,,,,(না বোঝার ভান করে,,,)
জ্যোতিঃ আপনার মেয়েই আমার জীবন বাঁশপাতা করে দিয়েছে,,,, আর লাগবে না আমার,,,,
তনয়ঃ লাগবে না কেন শুনি,,,,,?? অবশ্যই লাগবে,,,, আমার তো আরো এক ডজন খানিক লাগবে,,,,, যাতে সারা বাড়ি ভরে থাকে,,,, এতবড় বাড়ি মাত্র তিনজন মানুষ ভালো লাগে বলো,,,,
জ্যোতিঃ তাহলে বরং এক কাজ করুন,,,,, আরো কয়েকটা বিয়ে করে নিন,,,, এমনই বাড়ি ভরে যাবে,,,,
তনয়ঃ না বাবা,,, এক বিয়েতে আমার জীবন ধনেপাতা কুচি হয়ে গেছে,,,, (বিরবির করে,,)
জ্যোতিঃ কী বললেন আপনি,,,?? আমি আপনার জীবন ধনেপাতা কুচি করে দিয়েছি,,,,?? তাহলে বিয়ে কেন করেছেন আমাকে,,,??
তনয়ঃ (কিছু না বলে তনয়ার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে জ্যোতির ঠোঁটে টুপ করে একটা কিস করলাম,,, তারপর কোমর জড়িয়ে কাছে আনলাম,,, তনয়া জ্যোতির একপাশে কোলে,,,) এই বুকে অন্যকেউ ঘুমালে সয্য করতে পারবে তো,,,,??
জ্যোতিঃ তার আগেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো,,,,
তনয়ঃ (জ্যোতির মুখ চেপে ধরলাম,,,) তোর কিছু হলে আমার কী হবে,,,,?? আমি বুঝি বেঁচে থাকবো,,,??
জ্যোতিঃ (দুজনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ,,,,)
তনয়াঃ ভ্যা,,,,,,,,,,
জ্যোতিঃ (তনয়ার কান্না দেখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলাম,,,, তনয়াকে বেডে শুইয়ে খাবার খাওয়াতে লাগলাম,,,,)
তনয়ঃ(বেডের সামনে সোফায় বসে জ্যোতির দিকে তাকিয়ে আছি,,,, কতটা কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে,,, এই জ্যোতিকে আবিষ্কার করতে,,,, সেটা শুধু আমি জানি,,,। একবছর,,, পুরো একবছর জ্যোতি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলেনি,,,,, প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে ওর বন্ধু হওয়ার দাবি করেছিলাম,,,, সেদিন ও আমাকে ফেরাতে পারেনি,,,,, ধীরে ধীরে বন্ধুত্বকে ভালেবাসায় রুপ দিয়েছি,,, জ্যোতিও হয়তো চেষ্টা করেছিলো নতুন করে শুরু করতে তাই আজকের দিন দেখতে পাচ্ছি,,,,, প্রথম ভালোবাসার রাতের চিহ্ন আমাদের তনয়া,,,,, আজ আমি সম্পূর্ণ একজন মানুষ,,,, যার একটা ভালোবাসায় ভরা পরিবার আছে,,,,,)
জ্যোতিঃ (তনয়ের দিকে চোখ যেতেই দেখি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,, চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে,,,,?? বিনিময়ে উনি মাথা নেড়ে বুঝালেন কিছু না,,,, সাথে উনার সেই মুচকি হাসি,,,,। যে হাসি আমার মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট,,,,
“বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই দ্বিতীয় ভালোবাসা আসে,, কিন্তু তা কখনোই প্রথম ভালোবাসার মত পুরোটা ছুয়ে যেতে পারেনা,,,*হুমায়ুন আহমেদ*
কথাটা হয়তো সত্যি,,,। তনয়কে আমি ভালোবাসি তবু কখনো কখনো কেন যেন বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা করে,,, তবু বলবো তনয় আমাকে যতটা ভালোবাসে ততটা হয়তো কেউ বাসতে পারতো না,,,,। তনয়ের ভালোবাসার কাছে হেরে গেছি আমি,,,,,। এতটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কীভাবে ফিরিয়ে দিতাম,,,?? তবে তনয়ের জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবো না,,,, হয়তো রিয়াদ কেও না,,,। আমার জীবনে রিয়াদ আর তনয় দুজনের জায়গায় আলাদা,,,, কারো জায়গা কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়,,,,। আর চাইলেও রিয়াদকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারবো না আমি,,,,, তবে চাওয়ার চাইতেও অনেক ভালো আছি আমি,,,, এদের ঘিরেই আমার জীবন,,, তনয় আর আমাদের মেয়ে,,,,।)
তনয়ঃ কী ভাবছো,,,,,??(জ্যোতির পাশে শুয়ে পেট জড়িয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে,,,)
জ্যোতিঃ মেয়েটা আছে তো,,,, মেয়ে বড় হচ্ছে একটু লজ্জা শরম করুন,,,,।
তনয়ঃ মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,,,, তাকিয়ে দেখো,,,,
জ্যোতিঃ (তাকিয়ে দেখি তনয়া খাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,) তো,,,, ঘুমিয়েছে তো কী হয়েছে,,,?? আপনার জন্য ঘুম ভেঙে যাবে,,,,
তনয়ঃ ভাঙবে না,,,
জ্যোতিঃ খাবার রেডি করতে হবে,,,, রাত হলো তো,,, খাবেন না,,,??
তনয়ঃ খাবো তো,,,, অনেক ক্ষিদে পেয়েছে,,,,
জ্যোতিঃ তাহলে এখন আমাকে ছাড়ুন,,, খাবার গরম করে দিচ্ছি,,,,,
তনয়ঃ উহুম,,,, এই ক্ষিদে পায়নি,,,,
জ্যোতিঃ তাহলে,,??(ভ্রু কুঁচকে,,)
তনয়ঃ(ওকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরালাম,,, ঠোঁটের দিকে ইশারা করে) মিষ্টির ক্ষিদে পেয়েছে,,, সেই সকালে খেয়েছি,,,, (মন খারাপের ভান করে,,)
জ্যোতিঃ ছাড়ুন তো,,, যত্তসব ঢং,,,,
তনয়ঃ সবসময় শুধু পালাই পালাই কেন করো,,,?? কখনো নিজের ইচ্ছে আমার কাছে আসো না,,,,। যাও কাজ করো গিয়ে,,,, (জ্যোতিকে ছেড়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে)
জ্যোতিঃ কথায় কথায় এতো রাগ ভালো লাগে কারো,,,??
তনয়ঃ,,,,,,,,,,,
জ্যোতিঃ (উনার গালে হাত রাখতেই হাত সরিয়ে দিলো,,,, আবার হাত রাখলে সরিয়ে দিতে চাইলে শক্ত করে ধরে নিজের দিকে করলাম,,,,৷ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে,,, আস্তে করে ঠোঁটে একটা কিস করে দিলাম,,,,,)
তনয়ঃ(এবার ওর দিকে তাকালাম,,,,,। দুষ্টু হেসে দুগালে হাত রেখে ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলাম,,,)
অন্তরাঃ(ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,,,এবার আর না পেরে চোখ খুললাম,,,,। কেউ খুব নিবিড়ভাবে আমার ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে যাচ্ছে,,,, ধাক্কা দিয়েও লাভ হলো না,,,, অনেকসময় ছাড়ানোর চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে শুধু মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম,,,,)
হৃদয়ঃ (ঠোঁট ছেড়ে দিলাম,,,) কী হয়েছে সাপের মতো মুড়াচ্ছ কেন,,,,?? বিরক্ত করছো আমাকে,,,,
অন্তরাঃ আমি বিরক্ত করছি,,,?? নাকি আপনি,,,?? আপনার এই বদঅভ্যেস যাবে না,,,, ঘুমের মধ্যে কেউ এমন করে,,,??
হৃদয়ঃ ঘুমিয়ে থাকলে তোমার ঠোঁট দেখলে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে,,, আমার কী দোষ,,??
অন্তরাঃ আমি ডাইনিং টেবিলে ছিলাম,,, এখানে কীভাবে এলাম,,,,??
হৃদয়ঃ ঘুমিয়ে পড়েছিলে তাই নিয়ে এলাম,,,,।
অন্তরাঃ চলুন খাবার দিচ্ছি আপনার,,,,
হৃদয়ঃ খেয়ে এসেছি আমি খাবো না,,,,
অন্তরাঃ ওহ্ ( মন খারাপ করে,,,)
হৃদয়ঃ আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো,,,,, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,,,,
অন্তরাঃ হুম,,,(উনি জানেন উনাকে ছাড়া আমি খাইনা,,,, একবার জিজ্ঞেসও করলো না,,,, আমি খেয়েছি কিনা,,,, আবার ভালোবাসা দেখাতে এসেছে,,, রাগ করে শুয়ে পড়লাম,,,,, সিয়াম ঠিকমতো ঘুমিয়েছে কিনা দেখা হলো না,,,, আবার ওঠে সিয়ামের রুমে গেলাম,,,, সিয়াম এখন অন্যরুমে ঘুমায়,,,, মাঝে মাঝে আবার আমার কাছে ঘুমায়,,,, সিয়ামের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম,,,, ভাইয়া সিয়ামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,,,, হ্যাঁ রিয়াদ ভাইয়া,,,,৷ উনার কোনো চেঞ্জ হয়নি,,, আগের থেকেও গম্ভীর হয়ে গেছে,,,,, তবে রাতের আঁধারে নিজের ছেলেকে ভালোবাসতে ভুলেন না,,,,।
বড়আব্বু ডাকে সিয়াম রিয়াদ ভাইয়াকে,,,,,,। মাঝে মাঝে শুধু সারার সাথে ভাইয়াকে একটু হাসতে দেখেছি,,,,। সারাকে অনেক ভালোবাসে ভাইয়া,,, এখন অফিসে কম থাকে,,, হৃদয়ই বেশি সামলায় অফিস,,,। ভাইয়া দিনদিন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়ছে,,,,। দুটো বইও বের হয়েছে উনার,,,, ভালো সাফল্য পেয়েছেন,,, তবে উনার লেখাগুলো কেবল বিষাদে ঘেরা,,,,।
আবার বিয়ে করানোর চেষ্টা সবাই ত্যাগ করেছে,,,,। উনাকে উনার মতো ছেড়ে দিয়েছে,,,, বাড়িতেও কম থাকে,,,,, মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যায় কয়েকদিনের জন্য,,,,। কাঁধে কেউ হাত রাখতেই চমকে উঠলাম,,,)
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com