Breaking News

ডাব বিক্রেতা । পর্ব -০৩



জেরিনঃ সমস্যা কি তোর কাব্য
কাব্যঃ কই আপু কিছু না তো
জেরিনঃ তাহলে তোরা দুজন কথা বলিস না
তিশাঃ এমন করলে হবে। কথা বলিস না কেন?
জান্নাতঃ কি দিয়ে শুরু করবো বুঝতেই পারি না।
জেরিনঃ আরে গাধার বাচ্চা তোরে মনটায় চায় জাগাইয়া আচার দিতে। কুত্তা তাহলে প্রেম করতে আসছিস কেন? কি দিয়ে শুরু করবো?????
কাব্যঃ লজ্জা লাগে বেশি তো।
তিশাঃ তোর লজ্জার গুষ্টি কিলায়। কথা বলবি তা ও লজ্জা। তাহলে কি যে সুন্দর করে প্রপোজ একসেপ্ট করলি তখন লজ্জা করেনি
জান্নাতঃ তখন কি জানি হয়েছিলো কিভাবে যে কি হলো ( মাথা নিচু করে মুচকি হেসে)
জেরিনঃ শোন তোর লজ্জা সব ডাস্টবিনে ফেলা। এখন আমাদের সামনে কথা বলবি। যদি না বলিস না তো তোর কিন্তু ( চোখ রাঙ্গিয়ে)
কাব্যঃ ঠিক আছে।
তিশাঃ দাড়িয়ে আছিস কেন যা।
জান্নাতঃ যাচ্ছি।
কাব্য এগিয়ে আসলো। জান্নাত ও আসলো দুজনে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে আছে।
জেরিনঃ বুঝাতে পারলি
তিশাঃ হুম
জেরিনঃ এরা পারে ও বটে।
তিশাঃ হুম আপু। যদি ভালবাসার লজ্জার এওয়ার্ড দেওয়া হতো তাহলে এরা দুজনেই পেতো।
জেরিনঃ ঠিকি বলছিস। এরা না থাকলে ভালবাসার লজ্জাটা দেখতে পেতাম না
দুজনে হেসে দিলো।।।
কাব্যঃ কে কে কেমন আছেন
জান্নাতঃ ভাল৷ আ আ আপনি ( লজ্জা মাখা কন্ঠে)
কাব্যঃ ভাল। বাসার সবাই কেমন আছে
জেরিনঃ ওরে হারামজাদা কি আপনি আপনি কি বাসার কথা জিঙ্গেস করছিস। তোরে আমি কাবাব মে হাড্ডি না বানাই খাইছি তো আমার শান্তি নেই ( খুব রেগে)
তিশাঃ জান্নাত তুই কি আমার ফ্রেন্ড দেখিস আমরা কি সুন্দর করে কথা বলি। কোন লজ্জা আছে কি। তোর এত লজ্জা কই থেকে আসলো।
কাব্যঃ আপু ঠিক হয়ে যাবে কিছুদিন গেলেই।
জান্নাতঃ আমি আমার ভালবাসাকে রেসপেক্ট করতে চাই তিশা। ওনি আমাকে প্রতিদিন একটা করে চিঠি দেয় আমি ওনার প্রতি মুগ্ধ। আমার জীবনে আমার সুখের মানুষটা পেয়ে গেছি ( চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে পড়ছে)
জেরিন আর তিশা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
কাব্য হাতটা জান্নাতের মুখের কাছে নিচ্ছে আবার সরিয়ে নিচ্ছে। চোখের পানিটা মুছে দিতে পারছে না। জান্নাত চলে গেলো। জান্নাত কলেজ গেইটের সামনে পর্যন্ত যেতে না যেতে কাব্য দৌড়ে যেয়ে একটা কাগজ জান্নাত কে দিলো।।
জেরিন আর তিশা বার বার একে অপরের দিকে তাকাতে থাকলো।
মারিয়াঃ কি রে তিশা এভাবে একে অপরের দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
তিশাঃ এ আমি কোথায় আছি রে।
জেরিনঃ আমি বিষ খামু।
রাফসানঃ আরে আপু বিষ পড়ে খেয়ো কি হয়েছে তাই বলো।
তিশাঃ কাব্য আর জান্নাত
মারিয়াঃ কি হয়েছে
জেরিন সব কথা খুলে বললো। রাফসান আর মারিয়া হা করে একে অপরের দিকে তাকালো
তিশাঃ তোদের আবার কি হলো।
মারিয়াঃ ওরা এমনটা করছে সত্যি
তিশাঃ হুম
মারিয়াঃ আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না জানিস
রাফসানঃ কিভাবে সম্ভব এগুলো।
মারিয়াঃ তুমি তো প্রথম থেকেই আমার হাত ধরে গেছো।
রাফসানঃ হ্যা আর এর শুরুতেই। এদের ভালবাসাকে সম্মান জানাই।
জেরিনঃ বেশি করে জানা। নিজেদের ভালবাসার সম্মানটা নিয়ে আয়।
মারিয়াঃ হুম ওদের ফলো করবো আজ থেকে।
জেরিনঃ যা করার করিস। কাব্যকে আমি খেয়েই ফেলবো।।।
জান্নাত বাসায় যেয়ে কাগজটা খুললো,,,
বোকা মেয়ে এভাবে কান্না করে। মন থেকে যে ভালবাসা রেসপেক্ট এটা বা কম কিসে। প্রতিটা ভালবাসায় তো একে অপরকে রেসপেক্ট করে। যার জন্য সবাই ভালবাসাটা জয় করে নিতে পারে। তোমার অশ্রুভেজা চোখ আমার হ্রদয়টাকে আঘাত করছে। তোমার চোখের অশ্রু মুছে দিতে যেয়ে ও মুছে দিতে পারিনি। আমি আমার সত্যিকারের ভালবাসাটা পেয়ে গেছি। জান্নাত আমি তোমাকে খুব বেশি ভালবাসি। তোমার ভালবাসার প্রতি আমার সম্মান অনেক বেশি।????????
পরেরদিন সবাই কলেজে গেলো। কাব্য আর জান্নাতের সাথে অল্প অল্প কথা হলো আজ। সবাই প্ল্যান মতো ঘুরতে গেলো। খাওয়া দাওয়া ঘুরাঘুরি শেষে যে যার বাসার চলে গেলো।।।
পরেরদিন জান্নাত কাব্যের হাতে একটা কাগজ দিলো। হালকা টুকিটাকি কথা হলো দুজনের। ক্লাস শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেলো।
রাতে কাব্য কাগজটা মেলে পড়তে লাগলো
আমার জীবনে প্রথম সুন্দর একটা মুহূর্ত তোমার সাথে কাটাতে পেরেছি৷ খুব হ্যাপি ছিলাম তোমার সাথে ঘুরতে যাওয়া। একসাথে খাবার খাওয়া৷ আচ্ছা আমি কি কখনো ঠকে যাব না তো৷ আমি কি বেশি স্বপ্ন দেখে ফেলছি না তো। তোমার প্রতিটা চিঠি আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে। শুধুই তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি৷ ভালবাসি আমি তোমাকে। জানিনা তোমার প্রতি আমার এত অনুভূতি কই থেকে আসে।
#জান্নাত।
কাব্য কাগজটা পড়ে মুচকি হাসছে আর বলছে পাগলি মেয়ে একটা। কখনোই তোমাকে ঠকতে দিবো না৷ আমি যে তোমাকে ভালবাসি।।।
জেরিনঃ কি রে শয়তান কি মন দিয়ে পড়িস ( কাব্যের দরজার কাছে দাড়িয়ে)
কাব্যঃ আপু তুমি ( পুরোই থ)
জেরিনঃ হ্যা আমি আসতে পারিনা নাকি
কাব্যঃ এই রাতে।
জেরিনঃ হুম কি করবো বল মন যে আর মানে না তাই তো ছুটে এলাম
জেরিনের পিছন থেকে ধীরে ধীরে একটা চেহারা বের হলো। কাব্য তো রীতিমতো ভূত দেখার মতো৷ কাব্যের চোখটা সরছে না। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
জেরিনঃ কি রে ভূত দেখছিস নাকি। আঙ্কেল আন্টি কোথায়।
কাব্যঃ বাসায় নেই। নানুকে দেখতে গেছে ( জেরিনের পিছে চোখটা সরছে না)
জেরিনঃ দরজা মেলা রাখছিস কেন। চোরে যদি সব চুরি করে নিয়ে যেতো।
কাব্যঃ পরী আসবে আমার ঘরে আগে জানলে তো একটু গুছিয়ে রাখতাম।
জেরিনঃ এমা কি বলিস। নে দেখ পরীকে আমরা পাশেই আছি।
জেরিন চলে গেলো জান্নাতকে সামনে রেখে।
জান্নাত মাথাটা নিচু করে মাটির দিকে চোখ দিয়ে দাড়িয়ে আছে।।
জেরিনঃ এই তোরা ভেতরো আয় সব।
রাফসানঃ কাব্যের মা বাবা কিছু বলেনি।
জেরিনঃ ওরে গাধা কাব্যের মা বাবা তো বাসায় নাই। তোরা ব্যস্ত ভেতরে আয় কাজ আছে।
তিশা মারিয়া রাফসান ঘরে ঢুকলো
কাব্যঃ দাড়িয়ে আছেন কেন বসুন ( চেয়ার এগিয়ে দিয়ে)
জান্নাতঃ না বসবো না ( নিচু স্বরে)
কাব্যঃ সমস্যা নেই দাড়িয়ে থাকলে কষ্ট পাবো বসুন।
জান্নাতঃ আপনার সমস্যা করলাম এসে ( চেয়ারে বসে)
কাব্যঃ না৷ ভালই হইছে মনটা আনচান আনচান করছিলো আপনাকে দেখার জন্য।
জান্নাতঃ আমার ও খুব ইচ্ছা করছিলো৷ জেরিন আপু আমাদের বাসায় গেছিলো তাকে বললাম আপনাকে যদি একটু দেখতে পেতাম৷
কাব্যঃ আপু নিয়ে চলে আসলো।
জান্নাতঃ হুম। আপনি বাসায় একা।
কাব্যঃ হ্যা। আপনি বসুন কিছু নিয়ে আসি
জান্নাতঃ না না আমি কিছু খাবো না এখনি চলে যাবো। আপনি আমার সামনে একটু বসে থাকুন
কাব্যঃ প্রথমবার বাসায় আসলেন খালি মুখে চলে যাবেন।
জান্নাতঃ পরেরবার এসে পেট পুরে খাবো৷ আপনি কিন্তু না খেয়ে ঘুমাবেন না।
কাব্যঃ আচ্ছা।
জান্নাত আড় চোখে কাব্যের দিকে তাকাচ্ছে আর চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। কাব্য ও জান্নাতের চোখের দিকে তাকাতে পাচ্ছে না সরাসরি।।
দুজনের ভেতর অনেক কথা হলো।
জেরিনঃ সব রেডি এখন দুজনে চলে আসো৷ বেশি রাত করা যাবে না।
কাব্যঃ কি রেডি আপু ( অবাক হয়ে)
জেরিনঃ জান্নাত চলে আয়। আসলেই দেখবি।
জান্নাত জেরিনের কথা মতো চলে আসলো। কাব্য ও পিছে আসলো এসে পুরোই অবাক হয়ে গেলো।
ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো। খাবার থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে।
জেরিনঃ হা করে কি দেখছিস। তোর বাসায় এলাম না খেয়ে কি চলে যাবো নাকি। তাই ফ্রিজ থেকে সব বের করে রান্না করলাম।
রাফসানঃ বেশ মজার আইডিয়া দিছো আপু নাই খিদেই বাড়ি যেতে পারতাম না।
মারিয়াঃ তোর তো খাই খাই পেট৷
সবাই হেসে দিলো। তারপর সবাই বসলো৷ খাওয়া শুরু করলো আড় চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছে। তা সবাই দেখেই মুচকি হাসছে।
জেরিনঃ শোন আন্টি যদি কিছু বলে আমার কথা বলে দিস ফ্রিজ থেকে আমি সব কিছু নিয়ে রান্না করছি।
কাব্যঃ আম্মু কিছু জিঙ্গেস করবে না। চিন্তা নেই।
তিশাঃ যায় বলো আপু কাব্যের বাঁশ দিয়ে গেলাম।
জেরিনঃ কি বাঁশ দিলাম। এত কষ্ট করে দুজনকে দেখার সুযোগ করে দিলাম। তার বেলায় কিছু না।
রাফসানঃ হ্যা আপু। তিশা তুই একটু বেশি বেশি।
( এটা মজার বিষয় বন্ধু বান্ধবীর বাড়ি আসলে বাসায় কেউ না থাকলে নিজেরা রান্না করে খাওয়া একদম পুরোই আলাদা মজা৷ কতজন করতে পারে এমনটা)
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিদায় নিলো সবাই।
একে একে সবার বাসায় সবাইকে গাড়িতে করে এগিয়ে দিয়ে আসলো জেরিন।
এভাবে পার হতে লাগলো সবার দিনগুলো। বেশ হাসিখুশি সবাই৷ দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে আসলো। সবাই ভালো মতো সব ক’টা পরিক্ষা শেষ করলো। কলেজ বন্ধ হয়ে গেলো
জান্নাতঃ আজ থেকে তো আমাদের দেখা হবে না।
কাব্যঃ কে বললো দেখা হবে না।
জান্নাতঃ আমাকে তো বাসা থেকে বের হতে দিবে না। কিভাবে আসবো
কাব্যঃ তোমাকে আসতে হবে না আমি রোজ বিকালে তোমার বাসার সামনে এসে দাঁড়াবো তোমাকে দেখে চলে যাবো।
জান্নাতঃ সত্যি বলছেন।
কাব্যঃ হ্যা।
জেরিনঃ তোদের কথা বলা শেষ হলো।
কাব্যঃ হ্যা।
মারিয়াঃ আপু আরেকটু কথা বলতে দাও৷ ওদের আর কবে যে কথা হবে।
তিশাঃ হ্যা। ওরা যে কি কথা বলবে আমরা জানি।
জান্নাতঃ আপু আপনার মুখটা কালো কেন?
জেরিনঃ কই না তো
কাব্যঃ কিছু কি হয়েছে
জেরিনঃ এবার টা ও হয়তো ফেল করবো। তোদের মতো বন্ধুকে আমার হারাতে হবে।
কাব্যঃ এই যে আপু আমাদের কখনো হারাবে না। আর তুমি ফেল করবে না দেইখো
রাফসানঃ আপু ফেল করলে এর পর থেকে আমাদের বড় ভাইয়া আপু বলে ডাকবে। আমরা বলবো জেরিন পিচ্ছি কাঁদে না ফিডার আসতাছে।
জেরিনঃ কি বললি কুত্তা( খুব রেগে)
রাফসান লাল বাতি বুঝতে পেরেই দৌড়৷ জেরিন ও রাফসানের পিছে। সবাই হাসছে।।
যে যার বাসায় চলে গেলো।।
প্রতিদিন কাব্য জান্নাতের বাসার সামনে যেতো জান্নাতকে দেখে চলে আসতো। এভাবে দেখতে দেখতে কলেজে রেজাল্ট দেওয়ার সময় হয়ে গেলো।
আজ কলেজে রেজাল্ট দিবে তাই সবাই আগে আগে কলেজে যেয়ে হাজির৷ রেজাল্টের শিট টানানো হলো। জেরিন সবথেকে নিচু স্থান থেকে রোল দেখছে কিন্তু জেরিনের রোল নেই৷ খুব মন খারাপ হয়ে গেলো জেরিনের
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com