তাঁহার অপেক্ষায় | পর্ব-৩
৪ দিন পর নভেম্বর ১০
নীলাদ্রি ভোরে নদীর তীরে গেলো কিন্তু কাব্যকে দেখতে পেলো না। নদীর তীরে পা মেলে দিয়ে ঢেউয়ের পানির সাথে খেলা করছে। এই চার দিনে নীলাদ্রি কাব্যকে নিয়ে অনেক ভেবেছে৷ কাব্যের জন্য মনের কোণে ছোট্ট একটা বাসা বেঁধেছে। ভাবছে আজ কাব্যকে বলবে মনের কথাগুলো কিন্তু ওকে না দেখতে পেয়ে মনটা খারাপ করে বাসায় চলে আসলো। রমেলা বেগম নীলাদ্রিকে দেখে
-মা তোর মুখটা শুকনো কেন? কি হয়েছে?
-কিছু না আম্মায়।
নীলাদ্রি নিজের ঘরে চলে যেয়ে শুয়ে পড়লো৷
বিকালে বিল দিয়ে শুরু করে নদীর তীরে সব জায়গায় গেলো কিন্তু কাব্যকে দেখতে পেলো না।
রাত ১১ টা পূর্নিমার চাদের আলোয় আলোকিত করেছে প্রকৃতিকে। নীলাদ্রি বাইরে এসে বারান্দার মেঝেতে পড়ে আকাশ পানে চেয়ে
ও শুকতারা আমার না কিছুই ভালো লাগছে না। কিছু নেই নেই ফিল করছি। তুমি তো বোঝ আমাকে। একটিবার তাকে বলো না আসতে আমার সামনে।
পূর্ণিমার চাদের আলোয় আলোকিত প্রকৃতি
অন্ধকার আমার মনে
মেঘে এসে ঘিরে ফেলছে সবটুকটু
তার দেখা না পেলে আধার ঘনিয়ে
বৃষ্টি ঝড়বে টপটপ করে।
চাঁদ তুমি তারে আমার কথা দাও না জানিয়ে।
পরেরদিন নীলাদ্রি ভোরে উঠে চলে গেলো কিন্তু কোনো দেখা নেই। ভেতরে কেমন শূন্যতা ভর করছিলো। মন খারাপ করে বাসায় ফিরে এলো। এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়দিন। এই কদিনে নীলাদ্রি চোখের নীচে কালো দাগ পড়ে যায়। চোখ দুটো ফুলো ফুলো। মুখটা শুকিয়ে গেছে। দেখতে দেখতে নতুন বছর আসার সময় এসে গেছে।
৩১ ডিসেম্বর ১৯৯০
রাত ১১ টা ৩০
সবাই মিলে আজকে পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই খুব আনন্দ করছে। নীলাদ্রি নদীর তীরের এক কোণে চেয়ারের উপর বসে আছে। মন খারাপ করে। পিকনিকটা নদীর তীরেই হচ্ছে। সবাই ফানুস উড়াবে। নতুন বছরকে বরণ করে নিবে৷
১১ টা ৫৫ নীলাদ্রির কানে নদীতে নৌকা বেয়ে আসছে এর শব্দটা কানে এসে লাগলো। নীলাদ্রি চোখটা নদীর দিকে দিয়ে হা হয়ে আছে। পূণিমা চাদের আলোই নীলাদ্রির চিন্তে অসুবিধা হলো না। এ পলকে চেয়ে আছে।
মাথায় গামছা বাধা পরণে স্যান্ড গেঞ্জি, লুঙ্গি এটা আর কেউ নয় কাব্য। নীলাদ্রি এক দৌড়ে নদীর পাড়ের হালকা পানিতে নেমে দাঁড়ালো । কাব্য সেখানেই নৌকাটা ভেড়ালো। নীলাদ্রির দিকে চেয়ে আছে কাব্য। নীলাদ্রিকে চিন্তে বেশ কষ্ট হচ্ছে কাব্যের। নীলাদ্রির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। দেরি না করে নৌকার উপর উঠে পড়লো। কাব্য বেশ অবাক হয়ে গেলো৷ নীলাদ্রি কাব্যকে বললো
-নৌকাটা নিয়ে মাঝখানে যান।
নীলাদ্রির কথা মতো নৌকাটা তীর থেকে নদীর মাঝখানে নিয়ে আসলো। নীলাদ্রি এক পা নদীর ঝুলিয়ে দিলো নদীর পানির উপর। কাব্যের দিকে তাকিয়ে
-এত দিন কই ছিলেন। ভূলে গেলেন আমাকে?
নীলাদ্রির মুখে এমন কথা শুনে কাব্য পুরাই থ। নীলাদ্রি আবার বলে উঠলো
-কি হলো বলেন?
-কাজ ছিলো শহরে গেছিলাম।
-বলে গেলে কি হতো।
-কেন?
নীলাদ্রি মুখটা ঘুরিয়ে
-বলতে পারবো না।
দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলো তারপর নীলাদ্রি বলে উঠলো
-কেন এসেছিলে তুমি আর কেন বা কেড়ে নিলে এই মন।
কি অপরাধ ছিলো আমার, কেন জড়ালে আমাকে তোমার মায়ায়।
কি দোষ করেছিলাম আমি
ভালবাসার মায়ায় ফেলে
একাই তুমি গেলে চলে,
কেন কষ্ট দিলে তুমি আমায়
আমার এই মনটায় জায়গা করে।
নীলাদ্রির দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। কাব্য পুরো হা হয়ে গেলো৷ তখন কাব্য বললো
-ভালবাসি বলেই তো পারি না তোমায় ছাড়া থাকতে,
বুঝতে পারিনি তুমি আমি
তোমার মনে আমার জন্য এত জায়গা রয়েছে।
ক্ষমা করো প্রিয় তুমি আমায়
তোমার ভালোবাসায় আবদ্ধ করিলে আমি আর যাবো না কখনো, তোমায় না বলে।”
নীলাদ্রি উঠে দাড়ালো কাব্য হাতে ফানুস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দুজনে নৌকার মাঝখানে দাড়ালো। নীলাদ্রি ফানুস হাত দিয়ে ধরলো। কাব্য ফানুসের মোমটা আগুন দিয়ে জ্বালালো। দুজন একসাথে ধরে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর ফানুস ছেড়ে দিলো আকাশে। এভাবে অনেকগুলো ফানুস আকাশে উড়িয়ে দিলো। নীলাদ্রির মুখে আনন্দের ছাপ দেখা যাচ্ছে। কাব্য হাটু গেড়ে নীলাদ্রির সামনে বসে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে
-প্রিয় এই পূর্ণিমার চাদের আলোয় বসে নতুন বছরের সূচনা ঘটিয়ে তুমি কি ধরতে দিবে তোমার হাত। সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে ছায়া হয়ে থাকতে চায় ।
নীলাদ্রি হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে কাব্যের হাতে হাত রাখলো
-হুম আমি তোমাকে আমার পাশে চায় সারাজীবনের জন্য।
ভালবাসার নতুন সূচনা শুরু
০১ জানুয়ারি ১৯৯১। রাত ১.০০ Am
নীলাদ্রিকে তীরে নামিয়ে দিয়ে কাব্য চলে যায়। নীলাদ্রি হাসিখুশি মুখে বাসায় চলে গেলো৷ রমেলা বেগম এতদিন পর মেয়ের হাসিখুশি মুখ দেখে খুবই খুশি।
নীলাদ্রি নিজের ঘরে শুয়ে একা একা হাসছে আর ভাবছে এভাবে ফিরে পাবে কখনো ভাবতে পারিনি৷
কাব্যের মুখে হাসি লেগেই আছেই৷ ভালবাসার মানুষটা তার কাছে ফিরবে কখনো ভাবতে পারেনি।
ভোর বেলা নীলাদ্রি নদীর তীরে চলে আসলো। কাব্য নৌকা নিয়ে নদীর তীরে বসে আছে। নীলাদ্রি এসেই নৌকায় উঠলো। দুজন দুজনের দিকে তাকাতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে। একবার তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকাচ্ছে দুজনে। কাব্য নীলাদ্রিকে বললো
-কেমন আছো
-ভালো আপনি
-ভালো না থেকে পারি। প্রিয় তো সামনেই। তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।
-আচ্ছা আপনার বাসায় কে কে আছে
-আমি মা আর বাবা। তোমার
-আমি আমার চার ভাইয়ের আদরের ছোট বোন। আর মায়ের একমাত্র রাজকন্যা।
-তুমি কিন্তু খুব লাজুক।
-যাহ কি যে বলেন।
দুজনের ভেতর অনেক কথা হলো। সূর্য উঠতে উঠতে কাব্য নীলাদ্রিকে নদীর পাড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। নীলাদ্রি বাসায় আসলে।রমেলা বেগম বললো
– কি রে মা আজ বেলা করে ফিরলি
-ক ক ক ই আম্মা৷
-যা হাতমুখ ধুয়ে আয় নাস্তা করবি।
বিকাল বেলা নীলাদ্রি বিলের আইল দিয়ে হাত মেলে দিয়ে হাটছিলো। কাব্য নীলাদ্রির সামনে এসে দাড়ায়।
দুজন দুজনের দিকে তাকায়। তারপর চলে গেলো।
রাত আটটা
নীলাদ্রি কাব্যের দেওয়া চিঠিটা খুললো
-প্রিয় তোমায় ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারিনা,
এতটা মায়ায় জড়ালে আমায়
তোমায় ছাড়া আমি ভাবতে পারি না কিছু। তোমার মায়া ভরা মুখ খানি দেখতে মন চায় বার বার।
এভাবে চলতে লাগলো অনেকদিন। খুব সুন্দর ভাবেই চলতে লাগলো দুজনের। হাসিখুশি রাগ অভিমানে।
৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯১
নীলাদ্রি আর কাব্য বিকালে নদীর তীরের পাশে ঝোপের পাশে বসে কথা বলছিলো। হঠাৎ করে নীলাদ্রির চোখ চলে গেলো উপরে। নীলাদ্রির ভাইরা আসছে। নীলাদ্রি ভাইয়া বলতেই কাব্য
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com