Breaking News

তাঁহার অপেক্ষায় | পর্ব ৬ & শেষ

কাব্য পিছনে ফিরতেই নীলাদ্রিকে দেখলো। কাব্য অবাক হয়ে
-তু তুমি বাইরে আসছো কেন?
নীলাদ্রি কাব্যের দু হাত ধরে কান্না করে দিয়ে
-তুমি প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। আমি তোমার সাথে দূরে কোথা ও চলে যাব।
-কাঁদছো কেন? তোমার বাসা সাজানো কেন? তোমরা ভাইয়ের বিয়ে।
-না আমার বিয়ে। প্লিজ আমি তোমার ছাড়া আর কারো হতে পারবো না।
কাব্য নীলাদ্রির থেকে হাত ছাড়িয়ে দুগালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিয়ে
-চুপ করো কেঁদো না। আমি তোমাকে নিয়ে চলে যাবো।
কাব্য নীলাদ্রিকে নিয়ে পালালো। এক গ্রাম রেখে অন্যগ্রামে ঢুকে পড়লো। দুজনে দৌড়াছে। গ্রামের একজন ওদের দেখে ডাক দেয়। ওরা না থেমে যেতে লাগলো। লোকটা আরো কিছু লোক নিয়ে ওদের ধরার জন্য পিছু নেয়। নীলাদ্রি ভয় পেয়ে যায়। কাব্য নীলাদ্রিকে নিয়ে একটা ঝোপের পাশে বসে পড়ে। রাতের অন্ধকারে কাউকে খুজে পাওয়া মুশকিল। লোকগুলো টচ মেরে খুজতে থাকে। নীলাদ্রি বলে উঠলো
-আমার না খুব ভয় হচ্ছে। ওরা যদি ধরে ফেলে।
-চুপ করো৷ ভয় পেয়ো না। আমাদের ধরতে পারবে না। এই তো এই গ্রামটা পাড় হলেই নৌকা নিয়ে ওপারে চলে যাবো। আর কোনো ঝামেলা থাকবে না।
লোকগুলো ওদের না পেয়ে চলে যায়। ওরা ওখান থেকে উঠে নদী পাড় হয়ে শহরে চলে যায়। নীলাদ্রির পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। কাব্যের চোখে পড়তেই
-তোমার পা কেটে গেছে বলবা না আমাকে। কি অবস্থা।
-ও কিছু না। আমি যে তোমাকে পেয়েছি এতেই শান্তি বেশি।
-চুপ থাকো।
কাব্যের গায়ের জামার এক অংশ ছিড়ে নীলাদ্রির পায়ে বেধে কোলে তুলে ল্যামপোষ্টের আলোয় হাটতে লাগলো। নীলাদ্রি এক নজরে কাব্যের দিকে চেয়ে আছে।
কাব্য নীলাদ্রিকে নিয়ে বন্ধুর বাসায় উঠলো। বন্ধুকে সবটা বলতেই
-তুই আমাকে জানালি না কেন? কত কষ্ট করতে হলো তোকে।
-যা হবার হয়ে গেছে। বুঝতে পারিনি এমন পরিস্থিতি আসবে।
-ঠিক আছে। তোরা থাক আমি কাজী নিয়ে আসি।
-ওকে।
এদিকে নীলাদ্রিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সারা গ্রামে ছড়িয়ে গেলো। রমেলা বেগম নীলাদ্রির ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তখন নীলাদ্রির ঘরের দরজা খোলা দেখে নীলাদ্রিকে না পেয়ে চিৎকার দেয়। মাথায় হাত দিয়ে বসে কান্না শুরু করে দেয়
-আমার মাইয়াটা কই গেলো।
চারভাইতে বেরিয়ে এসে সব জায়গায় খোঁজে কিন্তু পায় না। পাশের গ্রাম থেকে সেই লোকগুলো আসে। এসেই
-আমরা ধরার চেষ্টা করেছি কিন্তু ধরতে পারিনি। আজ পর্যন্ত আমাদের হাত থেকে কেউ ছাড় পায়নি কিন্তু এবার এরা পেয়ে গেলো।
-আচ্ছা ওরা কোন দিকে গেছে।
-অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায়নি। তবে আমাদের গ্রামের ভেতর ছিলো। তারপর কই গেলো দেখতে পায়নি।
বিয়ের আগেই মেয়ে পালিয়ে গেলো এটা পরেরদিন সকাল হতে হতে সবার মুখে মুখে হয়ে গেলো। ইমরান ও বাসায় এসে
-আগেই বলছিলাম তোদের শুনলি না। পড়লো তো চুনকালি। আমার সাথে বিয়ে দিলে পালাতে পারতো না কখনো।
-তোকে কে ডেকেছে এখানে। যাবি নাকি কিছু করতে হবে।
-এই শোধ আমি নিয়ে ছাড়বো।
-আরে যা তো কি করবি তুই জানা আছে।
ইমরান চলে গেলো। ছেলে পক্ষের লোকজন শুনে ওদের যা না তা বলে অপমান করলো। কিন্তু ছেলে যা বললো তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না
-ভাইয়া আমার পরিবারের জন্য আমি আপনাদের কাছে মাফ চাচ্ছি। কিছু মনে করেন না। নীলাদ্রি আজ হোক বা কাল হোক ও ঠিকি ওর ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরে যেতো৷ মাঝখানে আমি সহ আপনারা আরো বেশি অপমান হতেন। তাই বলি কি ওদের দুজনকে মেনে নিয়েন৷ সুখে শান্তিতে থাকতে দিয়েন।
ছেলে চলে যায়।
এক সপ্তাহ পর
২৫ মে ১৯৯১
নীলাদ্রি আর কাব্য দুজনে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করেই রিয়াদের সামনে পড়ে যায়। দুজনে ঘামড়ে যায়৷ নীলাদ্রি রিয়াদের পা জরিয়ে ধরে
-ভাইয়া ওর কোন দোষ নেই সব দোষ আমার। আমি ওকে নিয়ে পালাইছি। তুমি প্লিজ ওকে কিছু বলো৷ না৷ আমরা চলে যাবো দুজনে অনেক দূরে। তোমাদের সামনে আসবো না কখনো৷ আমাদের আলাদা করো না।
রিয়াদ নীলাদ্রিকে তুলে
-কই যাবি আমাদের ছেড়ে। আমাদের চোখে এতদিন কালো কাপড় ছিলো। বাসায় চল তোরা।
নীলাদ্রি কাব্য দুজনে অবাক হয়ে যায় রিয়াদের কথায়।
নীলাদ্রি আর কাব্যকে বাসায় নিয়ে গেলো৷ কারো মনে কোনো প্রকার রাগ নেই। রমেলা বেগম নীলাদ্রিকে দেখে দৌড়ে নীলাদ্রিকে বুকে জরিয়ে ধরে
-মারে তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলি কেন? একবার তো বলতে পারতি৷
-আম্মা তোমরা আমাকে মাফ করে দাও এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।”
দুই পরিবার দুজনকে মেনে নেয়। কোনরুপ ঝামেলা ছাড়াই।
আয়শা কাব্যকে বললো
-ভাইয়া তুই আমার থেকে এত বড় সত্যিটা লুকালি। তাই তো বলি তুই কেন রোজ এদিকে আসিস।
-হুম বুঝছিস তবে।
কাব্যকে নীলাদ্রিকে নিয়ে নিজের বাসায় যাবে। কিন্তু ঘটলো বিপত্তি। নীলাদ্রির ভাইয়েরা বললো
-কাব্য তুমি আর নীলাদ্রি এই বাসায় থাকো৷ এখান থেকে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের ঘের ক্ষেত আছে এই গুলো দেখাশোনা করো।
-কিন্তু ভাইয়া আম্মু
-তোমার আম্মুর সাথে কথা হয়েছে।
-কি বললো সে
-থাকতে বলছে।
-ঠিক আছে।
নীলাদ্রি অনেক খুশি।
এভাবে সুখে শান্তিতে কাটতে লাগলো সবার জীবন যাপন । দেখতে দেখতে দু বছর কেটে গেলো
১লা এপ্রিল ১৯৯৫
কাব্য নীলাদ্রির থেকে প্রতিদিনের মতো সকালে নীলাদ্রির কপালে চুমু দিয়ে কাজে বেরিয়ে পড়লো হাসিমুখে। নীলাদ্রি দুপুরে খাবার নিয়ে ঘের এ গেলো কিন্তু কাব্যকে পেলো না। কোথায় গেলো বুঝতে পারছে না। নীলাদ্রি সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলো কিন্তু আসেনি। বাসায় গেলো ভাবছে অন্যদিকে কাজ করে বাসায় গেছে। কিন্তু বাসায় এসে পেলো না।
নীলাদ্রি ভাইদের জিঙ্গেস করলো কাব্য কোথায়। কিন্তু ভাইয়েরা বলতে পারে না। রাত বারটা বেজে গেলো কিন্তু কাব্যের খোজ নেই। ৪ ভাইয়েরা সব জায়গায় খোজ নিলো কিন্তু কোথা ও যায়নি। ভাইয়েরা বাসায় ফিরতেই
-কাব্যকে পেলে
-না রে। কোথা ও যায়নি বলে। তাহলে গেলো কই।
নীলাদ্রি কেদে দিয়ে
,-ও তো কখনো এমন করে না। আমাকে না বলে কোথা ও যায় না।
-কাদিস না। ও ঠিকি চলে আসবে।
রাত পেরিয়ে দিন হলো দিন পেরিয়ে দুপুর সন্ধ্যা রাত কিন্তু কাব্যের কোন খোজ নেই। কেউ কেউ বলতে লাগলো কাব্য ওকে রেখে পালিয়েছে। অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে পলাইছে। নীলাদ্রি কান্না করতে থাকে। এভাবে এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। কিন্তু কাব্যের কোনো খোজ নেই। নীলাদ্রি চোখমুখ শুকিয়ে যায়। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। বোনের কষ্ট ভাইয়েরা ও দেখতে পারে না। সব জায়গায় খোঁজে প্রতিদিন পায় না। কাব্যের মা খালা বোনরা ও কান্না করে। কাব্যকে খোজে পায় না। নীলাদ্রি নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এক টাইম। সবসময় চুপচাপ। কারো সাথে এখন আর কথা বলে না। নিজের মতো করে চলাচল করে একা একা। নদীর পাড়ে যেয়ে বসে থাকে চুপচাপ। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে৷ কেউ এসে কথা বললে ও তার দিকে তাকিয়ে উঠে চলে যায়।
দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটে গেলো কিন্তু কাব্যের কোন খোজ আজ ও মিলেনি। দেখতে দেখতে গ্রাম শহর মানুষজন সব কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু বদলায়নি নীলাদ্রি। ভালবাসা হারিয়ে সে এখন পাগল। ১৫ বছরে কারো সাথে কোনরুপ কথা সে বলেনি। হাসিখুশি মুখটা এভাবে হারিয়ে যাবে কেউ বুঝতে পারেনি
২১ মার্চ ২০২১
নীলাদ্রি নদীর তীরে উদাস মনে পা ঝুলিয়ে দিয়ে আনমনে বসে আছে। আজ ও অপেক্ষা করে হয়তো কাব্যের জন্য। কোন এক টাইম হয়তো ফিরে আসবে। চোখের পানি আজ ও ঝরায় নীলাদ্রি। নীলাদ্রি একা একা হাসে কান্না করে। বিরবির করে গান গায় এই অর্থ শুধু নীলাদ্রিই জানে আর কেউ না।
নীলাদ্রির মতো এমন হাজারো মেয়ে আছে যারা ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে কাতর। জীবনটাকে বদলাতে পারেনি।
বিঃদ্রঃ কাব্য যদি কখনো ফিরে আসে তাহলে গল্পের ২য় খন্ড লিখবো৷ আর ফিরে না আসলে এখানেই সমাপ্ত ।
(জানিনা গল্পটা কেমন ছিলো বা কতটুকু ভালো হয়েছে।
হয়তো গল্পটা মানসম্মত হয়নি। ঠিক মতো গুছিয়ে লিখতে পারিনি।
তবে হ্যা আগেরকালের মানুষের ভালোবাসাটা সত্যি ছিলো।
তারা মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতো এক অপরকে। কিন্তু বর্তমানে এই ভালোবাসাটা নেই।
একজন মন উজার করে ভালবাসলে অন্যজন বাসে না। যার শেষ পরিণতি হয় কেউ পাগল,
কেউ করে আত্মহত্যা, কেউ ঠেলে দেয় নিজেকে অন্ধকার জগতে।
বর্তমানের ভালবাসাটা এতটাই সস্তা হয়ে গেছে। যাদের সাথে ঘটছে তারাই জানে শুধু।
ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কথাগুলে ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবেন। ধন্যবাদ সবাই।
(সমাপ্ত)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com