ফিরে আয় | পর্ব -০২
সকাল বেলায় কিছু একটার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো,আস্তে করে চোখটা খুললাম,
দেখি একটা ছায়া আমার পাশে কিছু একটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে……!
এভাবে হঠাৎ কাউকে দেখে আমি ভয় পেয়ে উঠে বসলাম,আর তখনই রুমের লাইট টা অন হয়ে গেলো,পাশে তাকিয়ে দেখি সেফা একটা হাত পাখা নিয়ে আমার পাশে দাড়িয়ে আছে।
মাহফুজ, কিরে পাগলি তুই এভাবে এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন..?
আবার হাতপাখা হাতে করে,
সেফা, আরে ভাইয়া শেষ রাতের দিকে বিদ্যুত চলে গিয়েছিলো, তাই পাখা দিয়ে বাতাস নিচ্ছিলাম,
একবার ভাবলাম যে তোর রুমে এসে তোকে বাতাস দিই,তাই তো বাতাস দিচ্ছিলাম,
কিন্তু খানিক আগেই বিদ্যুত চলে আসছে, আর হা তুমি কি বললে..?
এখন এতো রাত..? আরে ফজরের সময় তো প্রায় চলে যাচ্ছে,যাও উঠে নামাজ পরে নাও।
মাহফুজ, এভাবে তোকে দেখে তো আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,
তো বুদ্ধু বাতাস না করে নামাজের জন্য আরেকটু আগে ডাকলে কি বিশ্ব ভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো..?
সেফা, আজ্ঞে না মহাশয়,অশুদ্ধ হতো না,তুই এখন উঠে নামাজ পরে নে,আমি গেলাম।
ঘাট হয়েছে তোকে বাতাস দেওয়ার জন্য,বলেই সেফা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মাহফুজ, সেফার চলে যাওয়ার দিকে অবাক হয়েছে তাকিয়ে থাকলাম,
মেয়েটা দেখি আমার সামান্য একটু কথাতে অভিমান করে বসলো..!
তবে সমস্যা নাই,ওর অভিমান কিভাবে ভাঙতে হয়,সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে ওজু করে নামাজটা আদায় করে নিলাম।
একটু পরেই মাহফুজের রুমে রাহাত আসলো,
রাহাত, এই মাহফুজ তোকে বাবা যেতে বলেছিলো না..?
তুই তো এখনো বসে আছিস..!
মাহফুজ, ওহহ সরি রে আমি ভুলে গেছিলাম,
আমি এখনি যাচ্ছি বাবার সাথে দেখা করতে,তারপর রুম থেকে বের হয়ে বাবার কাছে গেলাম,
–বাবা আমাকে ডেকেছিলে তুমি..?
–হ্যা রে মাহফুজ তোকে ডেকেছিলাম,তোকে একটা কথা বলার ছিলো,
ভাবলাম কাজটা করার আগে তোর সাথে কথা বললে ভালো হয়,তুই তো এখন আমাদের সবথেকে বড় সাপোর্ট।
— বাবা তুমি এভাবে বলছো কেন..? ছোটবেলা থেকে আমাকে কষ্ট করে মানুষ করেছো,আর আমিও এই আশা নিয়ে বড় হয়েছি যে কখনো যদি তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারি,তো বলো বাবা কি বলবে…?
— শোন মাহফুজ,আমাদের হসপিটালের একটা প্রোগ্রামের জন্য আদেশ এসেছে,তারা বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যে যেনো গ্রামে একটা হেল্থ ক্যাম্পেইন করি। আর গ্রামের নিরীহ লোকদেরকে সরকারীভাবে চিকিৎসা আর মেডিসিন দিয়ে সাহায্য করি,
–আরে বাবা এটাতো খুব ভালো একটা উদ্দোগ নিয়েছো সবাই,এটাতে আমার পুরো সমর্থন আছে,আচ্ছা তোমরা আয়োজন করো,আমি রাহাত সহ আরো দুইটা বন্ধুকে মেনেজ করছি,তোমরা তো রাহাতকে ভালো একজন ডাক্তার বানিয়েছো,রাহাত আমাদের সবসময়ের সাথি
আচ্ছা বাবা তাহলে আমি সবকিছু মেনেজ করি,আর তোমরা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
মাহফুজ, বাবার সাথে কথা বলে চলে আসলাম,আর রাহাতকে বিষয়টা জানালাম,রাহাত এটা শুনে খুব খুশি হলো,আমারও অনেক ভালো লাগছে যে অনেকদিন পর গ্রামে যাবো,আর সবাইকে সাহায্য করতে পারবো।
ওইদিকে বাবা মা তাদেরকে প্রস্তুত করতে লাগলো,আর আমি হসপিটালের সবকিছুর ব্যবস্থা নিজের হাতে নিয়ে নিলাম,তিনদিনের মাথায় রাহাত আর বাকি ফ্রেন্ডদের সাথে নিয়ে সমস্ত মেটারিয়াল প্রস্তুত করে ফেললাম,বাবা সিদ্ধান্ত নিয়ে যে পরিবারের সবাই সেখানে যাবে,তাই সবাই নিজেদের মতো রেডি হয়ে নিয়েছে। বাসার বাইরে নিজেদের গাড়ি সহ হসপিটালের গাড়িটা রেডি করে রাখলাম,তারপর বাসার ভিতরে চলে আসলাম।
সেফা, কিরে ভাইয়া সব কিছু রেডি করে নিয়েছিস..?
মাহফুজ, হ্যা রে সবকিছুই রেডি করে রেখেছি,শুধু তোরা বের হলে আমরা রওনা দিতে পারবো।
সেফা, ভাইয়া আমাদের সবার তৈরি হওয়া শেষ,তুমি তো আগে থেকেই রেডি হয়ে আছো,আমাদের হিরো তো তুমি
মাহফুজ, এই হইছে পামপট্টি অনেক দিয়েছিস,এখন চল। আর বাবা মা তোমরা গিয়ে তোমাদের পছন্দের গাড়িতে উঠো,রাহাত তুই আমার সাথে আয়,সেফাদের জন্য আমাদের আরেকটা গাড়ি আছে,তোরা সেটাতে করে চলে যা।
বাবা মাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম,সেফাদেরকেও গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম,এই রাহাত এবার চল এদের পিছন পিছন আমরা যায়,কারন কোনো বিপদ হলে সামনে থেকে কিছু বোঝা যায় না,গ্রামে আগে থেকেই আমাদের টিম আছে,ওখানে কোনো সমস্যা হবে না।
তারপর বন্ধুরা মিলে গ্রামের দিকে রওনা দিলাম,৪ ঘন্টা পর গ্রামে পৌছে গেলাম সবাই,রাত নামার আগেই সবাই তাবু টানিয়ে ফেললো,থাকার ব্যবস্থা করার পর সবাই মিলে মিনি হসপিটাল তৈরি কাজে লেগে গেলো,অনেক সময় পর সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সেট করা হয়ে গেলো,আগামি কাল থেকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হবে,সবাই রাতের খাবার খেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পরলাম।
পরের দিন সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে নিজেদের কাজে লেগে গেলো,পুরো গ্রামে ডক্টরদের আসার খবর ছড়িয়ে পরেছে,যারা অনেকদিন ধরে চিকিৎসার অভাবে ভুগছিলো,তারা সবাই সরকারী ভাবে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসতে শুরু করে। মাহফুজের মা একজন চিকিৎসক,তিনি অনেক আনন্দের সাথে এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন,রাহাত কিছু রোগীকে চেকআপ করে মাহফুজের একটা কাছে আসে,মাহফুজ রাহাতকে টেনে নিয়ে একটা সাইডে গেলো,
রাহাত, কিরে এমন করে আমাকে নিয়ে আসলি কেন..?
মাহফুজ, আরে কারন আছে,তোকে কি আমি এমনি এমনি নিয়ে আসছি নাকি..? এই লাবিব ক্যামেরা টা নিয়ে আয় তো,লাবিব আমাদের সাথে এসেছে,আমার ফ্রেন্ড,
তখনই লাবিব গিয়ে একটা ক্যামেরা নিয়ে আসে,মাহফুজ ক্যামেরা সেট করে রাহাতকে ক্যামেরার সামনে বসায়,
রাহাত, কিরে ভাই তুই এমন করছিস কেন.? তোর উদ্দেশ্যটা কি একটু বল তো..?
মাহফুজ, তুই এখন আমার বাবা মা মানে তোর আংকেল আন্টির সম্পর্কে কিছু বল
রাহাত, ওহহ এই কথা..?
আরে তাদের ব্যাপারে বলতে শুরু করলে তাদের প্রশংসা বলে শেষ করা যাবে না,
আমি সেই ছোটবেলায় আমার বাবা মাকে হারিয়েছি,
আমার এক আত্মীয় আমাকে চাইল্ড কেয়ারে দিয়ে আসছিলো,
সেখানে থেকেই কিছুদিন অতিবাহিত করলাম,
তারপর একদিন আন্টি আসলো আমাদের সংস্থায়,
সেদিনই আমার জীবনে সবথেকে খুশির দিন,
আল্লাহ মনে হয় আমাকে আর সেখানে রাখতে চাইছিলেন না,
হঠাৎ আন্টির নজর আসলো আমার দিকে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে অনেক সময় কথা বললেন,
আমার মধ্যে সে যে কি পেয়েছিলেন সেটা আমি বুঝেছিলাম না,
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল আমি আজ থেকে তার ছেলে,
তারপর আমাকে চাইল্ড কেয়ার থেকে বাড়িয়ে নিয়ে আসলেন,
আমাকে নিজের ছেলের মতো করে লালন-পালন করে একজন ভালে ডক্টর বানালেন।
আজ আমি তাদের সাথে মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে করি।
মাহফুজ, রাহাতের কথা শুনে আমরা সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলাম,আরে রাহাত ভাই..?
তুই এখন যে কথাগুলো বললি,সেটা যদি বাবা মা শুনে,তাহলে কান্না করে দিবে,
আমার তো কথা বলার ভাষা হারিয়ে গিয়েছিলো,
রাহাত, এহহহ অনেক হয়েছে প্রশংসা করা,এবার চল আমরা ক্যাম্পে ফিরে যায়,
মাহফুজ,হা চল যায়,তারপর সবাই মিলে আবার ক্যাম্পে চলে গেলাম,
এভাবেই আমাদের ৩ দিন কেটে গেলো,মেডিসিন অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেছে,
তাই বাবা মা আর রাহাতকে নিয়ে মেডিসিন আনতে শহরের দিকে রওনা দিলাম,
আমাদের সাথে দুইটা নার্সকে নিয়ে যাচ্ছি কাজে সাহায্য করার জন্য।
সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম,ড্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো,
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রাস্তার মাঝখানে লোকজনের ভির লেগে আছে,
গাড়ি থেকে নেমে গেলাম কি ঘটেছে বিষয়টা দেখার জন্য,
লোকজনের ভির ঠেলে সামনে যেতেই দেখি সাগর রক্ত মাখা অবস্থায় পরে আছে,
আমার চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেলো এটা দেখে,
সাগর তো মারা গিয়েছিলো,তাহলে আবার ফিরে আসলো কিভাবে……!
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com