কালো বউ | পর্ব - ২৬
তমসাঃ বিয়ের শপিং করতে যেতে হবে,,,,
রুপকঃ বিয়ের তো এখনো পনেরো দিনের বেশি বাকি আছে,,,,,
তমসাঃ আরাফাত যেতে বলেছে,,,,
রুপকঃ কখন লাগবে ছুটি,,,?
তমসাঃ তিনটার দিকে যেতে হবে,,,,
রুপকঃ ওকে,,,, তিনটায় চলে যেও,,, আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি,,,,, বাবার বিষয়ে কিছু ডক্টরের সাথে ডিসকাশন করতে হবে,,,,
তমসাঃ ওকে স্যার,,,,(খুশি হয়ে)
রুপকঃ (তমসার দিকে একবার তাকালাম,,,, কেনো জানি না নিজের অজান্তেই তমসার মাঝে সেই ছোট্ট মেয়েটাকে খোঁজে বেড়াচ্ছি,,, সেটা বোকামি ছাড়া কিছু নয় সেটাও খুব ভালো করেই জানি আমি,,,, কোনো কিছু মিল খোঁজে না পেলেও হাসির মিলটা আছে,,, হাসিটা এখনো ততটাই নিষ্পাপ যতটা কয়েক বছর আগে ছিলো,,,, ধূর এসব আমি কী ভাবছি,,,? এই মেয়ে নিষ্পাপ কীভাবে হতে পারে,,,? এই মেয়ে আমার জীবনটাকে একাকিত্বের গহিন অন্ধকারে ঢেলে দিয়েছে,,,,, এই হাঁসি আমি বেশিদিন স্থায়ী হতে দিবো না ,,,, wait and see,,,, অফিস থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্য চলে গেলাম,,,,)
তমসাঃ(দুই ঘন্টা ধরে একটা লেহেঙ্গা কেনার জন্য ঘুরছি আমি আর আরাফাত,,,, কিছুতেই পছন্দ করতে পারছি না,,,, কালার পছন্দ হলে ডিজাইন পছন্দ হয় না আবার ডিজাইন পছন্দ হলে কালার পছন্দ হয় না,,,,, সব পছন্দ হলে আবার আমাকে মানায় না,,,, আরাফাতও বিরক্ত হয়ে গেছে ঘুরতে ঘুরতে,,,,)
আরাফাতঃ ড্রেসের কালেকশন অন্য আরেকদিন দেখবো,,, আজ চলো জুয়েলারি দেখি,,,
তমসাঃ ওকে,,,,,(মলিন হেঁসে,,, আরাফাতের বিরক্তি কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমার ওপর,,,, হওয়ারই কথা,,,, কালো না হয়ে ফর্সা হলে যে কোনো ড্রেসে ভালো লাগতো,,, এসব কারণে আমি কখনো শপিংয়ে আসি না,,,, মা আর সিনহা পছন্দ করে যা এনে দেয় তাই ইউজ করি,,, আমি আর আরাফাত জুয়েলারি দেখতে চলে গেলাম,,,,, কিছু গোল্ড আর কিছু ডায়মন্ডের জুয়েলারি কিনলাম,,,, বিয়ের দিনের জন্য গোল্ডের জুয়েলারি আর রিসেশনের জন্য ডায়মন্ডের জুয়েলারি কিনলাম,,,,,, হলুদের দিন তো ফুলের গহনাই পরা হবে,,,,)
আরাফাতঃ যাক একটা তাও কমপ্লিট হলো,,,,
তমসাঃ এখনো অনেক কিছু বাকি আছে,,,,
আরাফাতঃ ড্রেস কেনার জন্য তুমি আন্টি আর সিনহার সাথে চলে এসো,,, বিল আমি পে করে দিবো পরে,,,
তমসাঃ ওকে,,,,(শপিং শেষে আরাফাত বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলো,,,, বাসায় আসতেই সিনহা সব জুয়েলারি খোলে দেখতে লাগলো,,,,,)
সিনহাঃ ড্রেস কেনো কিনিস নি,,,,?
তমসাঃ পছন্দ হয়নি কিছু,,, শুক্রবার অফ ডে আছে,,,, মা আমি আর তুই চলে যাবো,,,, তোরা পছন্দ করে দিবি,,,,
সিনহাঃ ওকে,,,,,(হঠাৎ শয়তানি বুদ্ধি মাথায় এলো,,,, সব জুয়েলারির পিক তোলে ঐ ফালতু লোকটার নাম্বারে এমএমএস করে দিলাম,,,, সাথে লিখলাম আমার বিয়ের জুয়েলারি,,,, অদ্ভুত এক পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছি মনে মনে,,,,)
রোদঃ(করো করো,,,, বেশি করে বিয়ের শপিং করো,,,, সব কিছু সুদে আসলে উসুল করবো আমি,,, এতো হাসি কোথায় থাকে দেখবো,,,)
বৃষ্টিঃ (গালে হাত দিয়ে বসে বসে চিন্তা করছি কী হতে চলেছে,,,,? থাক ভাইয়াকে সত্যিটা বলবো না,,, যে সিনহার বিয়ে না,,, বিয়ে তো তমসা আপুর,,,, সিনহার জন্য ভাইয়া ব্যাক করবে,,, এতেই অনেক,,,)
মেঘলাঃ গালে হাত দিয়ে বসতে হয় না,,,,,
বৃষ্টিঃ (মায়ের গলা শুনে গাল থেকে হাত নামিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম,,,,, মা আমার পাশে এসে বসলো)
মেঘলাঃ কী হয়েছে,,,? গালে হাত দিয়ে কী চিন্তা করছিলে শুনি,,,,?
বৃষ্টিঃ কিছু না,,,, এমনই ভাবছিলাম তমসা আপুর বিয়েতে যাওয়ার জন্য শপিং করতে হবে,,,, কিন্তু শপিংয়ে যাবো কার সাথে,,, তুমি তো যাবে না,,,, বাবার হাতে সময় নেই আর ভাইয়া তো ভাইয়াই,,,(মন খারাপ করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম)
মেঘলাঃ মন খারাপ করতে হবে না,,,, আমি রুপককে বলে দিচ্ছি এই শুক্রবার সময় করে তোমাকে যেনো শপিংয়ে নিয়ে যায়,,,,
বৃষ্টিঃ ভাইয়া যাবে,,,,,?(মায়ের দিকে তাকিয়ে)
মেঘলাঃ মনিমার কথা অমান্য করার সাধ্য আছে রুপকের,,,,?
বৃষ্টিঃ সেটা অবশ্য নেই,,,(মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে,,,,,)
মেঘলাঃ তাহলে এখন মন খারাপ করে বসে না থেকে কিছু খেয়ে নেবে চলো,,,,
বৃষ্টিঃ এখন না,,, বাবা আসলে খাবো,,,,
মেঘলাঃ তোমার বাবার আজকে আসতে লেট হবে,,, মিটিং আছে অনেকগুলো,,,, কবে যে ছেলেটা সব দ্বায়িত্ব নিতে শিখবে,,,, মানুষটা এখন এতো প্রেশার নিতে পারে না,,,,
বৃষ্টিঃ কী দরকার এতো কষ্ট করার,,,? টাকার পাহাড় বানাতে বলেছে কেউ,,,,?
মেঘলাঃ টাকার পাহাড় কাদের জন্য বানাচ্ছে,,, তোমাদের জীবন সুন্দর করার জন্যই তো এতো কষ্ট করছে,,, আর তাছাড়া কোম্পানির লাভের একটা বড় অংশ যায় বিভিন্ন এতিমখানা,,, বৃদ্ধাশ্রমে,,,, কষ্ট না করলে সেসব অসহায় মানুষগুলো কী খাবে শুনি,,,?
বৃষ্টিঃ আমি কী আর এতো কিছু চিন্তা করে বলেছি,,?
মেঘলাঃ এতো কিছু তোমাকে চিন্তাও করতে হবে না,,,, মন দিয়ে পড়াশোনা করো আর পারলে নিজের ভাইয়াকে একটু বুঝাও সব ছেড়ে এভাবে বাইরের দেশে পরে না থেকে দেশে এসে নিজের বাবাকে সাহায্য করতে,,,
বৃষ্টিঃ ওকে বলবো,,,,,
মেঘলাঃ এখন চলো খাবে,,,,
বৃষ্টিঃ ওকে চলো,,,
রবিনঃ দু’তিনদিন হলো তমসা মামুনি আসছে না দেখা করতে,,,, কেনো জানি না মেয়েটার সাথে কথা বললে আলাদা শান্তি পাই মনে,,,, আসছে না কেনো বলতো রুপক,,,,?
রুপকঃ সামনের মাসের পনেরো তারিখ তার বিয়ে,, এখন সে তোমার সাথে দেখা করার সময় পাবে,,,?
রবিনঃ বিয়ে,,,,? আলহামদুলিল্লাহ,,,,, তো বিয়ে কার সাথে,,,, ছেলে কী করে,,,,?
রুপকঃ খান গ্রুপের মালিক আকরাম খানের ছেলে আরাফাত খানের সাথে বিয়ে,,,,
রবিনঃ আরাফাত তো অনেক ভালো ছেলে শুনেছি,,,, যাক ভালো,,, মেয়েটা সুখী হবে,,, রুপক,,,?
রুপকঃ হ্যাঁ বাবা বলো,,,,
রবিনঃ আমার তো সময় শেষ হয়ে এসেছে,,,, চোখ বন্ধ করার আগে কী বৌমার মুখ দেখে যেতে পারবো না,,,,? তোর ও তো বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে,,,, দুদিন পর ৩১ থেকে ৩২ বছরে পা দিবি,,, আর কবে বিয়ে করবি,,,,, নাতি নাতনির মুখ দেখার মতো সময় তো নেই,,,, বৌমার মুখটা অন্তত দেখা,,,,
রুপকঃ বিয়ের কথা বলবে ভালো করে বলো,,,, এসব বাজে কথা কেনো বলছো,,,,?(গম্ভীর গলায়)
রবিনঃ বাজে কথা বলছি না রে বাবা,,, ঠিক কথা বলছি,,,
রুপকঃ ঠিক আছে আমি দেখছি,,,
রবিনঃ পছন্দের কেউ আছে নাকি আমি মেয়ে দেখবো,,,?
রুপকঃ তোমার কিছু করতে হবে না,,,,যা করার আমি করছি,,,,
রবিনঃ ঠিক আছে,,,, তবে একটু তাড়াতাড়ি করিস,,,,
রুপকঃ বাবা,,,, এখন কিন্তু ভালো লাগছে না,,, বললাম তো দেখছি,,, খাওয়া শেষ এখন চলো ঘুমাবে,,,,,
রবিনঃ হ্যাঁ চল,,, ঘুমও পাচ্ছে,,,,,
রুপকঃ বাবাকে তার রুমে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে এলাম,,,,, শুয়ে পড়ার প্রায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো,,,,, আর আমি নিজের রুমে চলে গেলাম,,,, এই প্রথম বাবা আমার কাছে কিছু আবদার করেছে,,, কীভাবে পুরণ করবো আমি,,,? এতো তাড়াতাড়ি মেয়ে কোথায় পাবো,,,,? ইশারা করলে তো হাজার মেয়ে হাজির হয়ে যাবে কিন্তু সব স্বার্থপর আর লোভী,,,,, ভালো মেয়ে কোথায় পাবো এখন,,,,? যে শুধু আমার বাবার বৌমা হয়েই থাকবে আমার স্ত্রী নয়,,,,, আমি কারো জীবনের সাথে জড়িয়ে নিজেকে দুর্বল করতে চাই না,,,, একে তো এই তমসাকে কীভাবে শাস্তি দিবো সেটা চিন্তা করে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে এখন আবার এই নতুন চিন্তা,,,,, তমসা,,,,,, এক মিনিট (কিছু একটা চিন্তা করে),,,, তমসা,,,,? হ্যাঁ তমসাই,,,, এক ঢিলে দুই পাখি মারবো আমি,,,, কাল কী করা যায় সেটা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম,,,,, কাল থেকে শুরু হবে আমার নতুন খেলা,,,,,,(শয়তানি হাসি দিয়ে)
চলবে,,,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com