খুব ভালোবাসি তোকে | পর্ব-০৪
নীলা চোখ বড় বড় করে মিতু আর রাফির দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, এরা দুজন একে অপরকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কেন.? নীলা দেখলো রাফি বার বার মিতুর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মিতু কিছুতেই রাফিকে ছাড়ছে না।
মিতু রাফিকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
এদিকে নীলা যে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তাদের কোনো খেয়ালই নেই।
নীলা এবার মিতু আর রাফির আরও কাছে গিয়ে দাড়ালো আর একটা জোরে কাশি দিয়ে উঠলো।
হঠাৎ কারও কাশির আওয়াজ শুনে মিতু রাফিকে তারাতাড়ি ছেড়ে দিয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। মিতু একবার মাথা ঘোরাতেই দেখলো নীলা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
নীলাকে তাদের সামনে দেখে মিতু বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আর রাফি তো নীলাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে পালিয়েছে।।
মিতুঃ কিরে তুই এইখানে.! কখন আসলি.?
নীলাঃ যখন তোরা একে অপরদিকে জড়িয়ে ধরেছিলি তখনই এসেছি।।
মিতুঃ দুর তুই আর আসার সময় পেলি না, কতো কষ্ট করে রাফিকে আজ এইখানে নিয়ে আসলাম একটু জড়িয়ে ধরবো বলে।। আর তুই এসেই সব মাটি করে দিলি।।
নীলাঃ আমি তো আর এমনি আসি নি।। এসেছি তোকে একটা কথা জানাতে।।
মিতুঃ কি কথা.?
নীলাঃ আমি গতরাতে তামিম ভাইয়ার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম (হালকা লজ্জা মাখা ফেস করে)।।
মিতুঃ তাই নাকি, তা কেমন লাগলো চুমু খেতে.? আর তোর সব প্রশ্নের উত্তর এখন পেয়ে গেছিস তো.?
নীলাঃ কেমন লাগলো বলতে যখন আমি উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম তখন মনের মধ্যে এক প্রকার অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল আর এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করছিল।। ইচ্ছে করছিল উনার ঠোঁটে আরও চুমু খাই কিন্তু তা আর হলো না (হতাশ মনে)।।
মিতুঃ কেন.? আর তামিম ভাইয়া কি জানেন নাই যে তুই উনার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিস.?
নীলাঃ বলছি শুন (তারপর নীলা মিতুকে ওইরাতের ঘটনা + গতকালের ঘটনাও বললো)।।
মিতুঃ বলিস কি.! তামিম ভাইয়া তাহলে সব জেনেও তোকে মাফ করে দিয়েছেন.? আর তুই এবারও তামিম ভাইয়ার কাছে বলেছিস যে আমিই তোকে এই চুমু খাওয়ার বুদ্ধিটা দিয়েছি.?
নীলাঃ হুম তা ছাড়া আমি কি করবো ভাইয়া আমাকে যেভাবে চেপে ধরেছিলেন আর সবাইকে সবকিছু বলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছিলেন, তাই আমিও সব সত্যি বলে দিয়েছি।।
মিতুঃ তুই তো দেখছি আমার আর রাফির সবকিছু ভাইরাল করে দিচ্ছিস।। যা তুই আর আমার সাথে কথাই বলবি না।। তোর সাথে আর কথা নাই।।
নীলাঃ এই প্লিজ এমন করিস না।। স্কুলে তুই ছাড়া তো আমার আর কোনো বান্ধবী নেই।। তোকে ছাড়া আমি একা একা থাকবো কি করে, বল.?
মিতুঃ আচ্ছা যা এইবারের মতো মাফ করে দিলাম।। কিন্তু পরেরবার থেকে আমার আর রাফির বিষয়ে কাউকে কিছু বলেছিস তো ওইদিনই আমাদের বন্ধুত্ব শেষ, মনে থাকে যেন।।
নীলাঃ আচ্ছা মনে থাকবে, এবার চল ক্লাসে যাই।।
মিতুঃ হুম চল।।
তারপর নীলা আর মিতু দুজন তাদের ক্লাসে চলে আসলো আর একটা ব্রেঞ্চে দুজনে বসে পরলো।
এদিকে তামিম কলেজে গিয়ে কলেজের বড় বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আর ফোন টিপছে।
তার কোনো বন্ধু এখনো কলেজে আসেনি
বিধায় সে ক্লাসে না গিয়ে বাহিরে একা একা দাঁড়িয়ে ফেসবুকিং করছে।।
–এই যে ইন্টার ১ম বর্ষের ক্লাসরুমটা কোনদিকে একটু বলবেন.?
তামিম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফেসবুকিং করছিল ঠিক তখনই একটা মেয়েলি কণ্ঠে কথাটা ভেসে উঠলো।। তামিম ফেসবুকিং করা বাদ দিয়ে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালো আর
দেখলো একটা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। হয়তো এই মেয়েটাই কথাটা বলেছে।
মেয়েটার দিকে এক নজর তাকিয়েই তামিম চোখ সরিয়ে নিল আর বললো…
তামিমঃ জি আমাকে কিছু বলছেন.?
–এইখানে তো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই তাহলে আর কাকে বলবো.?
তামিমঃ চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই তার আশেপাশে কেউ নেই।
জি বলেন কি বলবেন.?
–বলছি ইন্টার ১ম বর্ষের ক্লাসরুমটা কোনদিকে.?
তামিমঃ ওই যে ২ তলা বিল্ডিং দেখছেন ওই বিল্ডিংয়ের নিচ তলার প্রথম রুমটাই ইন্টার ১ম বর্ষের ক্লাসরুম।।
–ওহহ আচ্ছা Thank You…
তামিমঃ হুম Welcome…
তারপর মেয়েটা সেখান থেকে ক্লাসে চলে গেল আর তামিম আবার আগের মতো ফেসবুকিং করতে লাগলো।।
–কিরে হারামি মেয়েটা কে ছিল.?
তামিম ফেসবুকিং করায় পুরো মনোযোগ দিতে না দিতেই আবার কে যেন কথাটা বললো।
তামিম মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো তার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে।
তামিমঃ আরে তোরা কখন আসলি.?
হাসিবঃ যখন তুই ওই মেয়েটার সাথে কথা বলতেছিলি তখনই এসেছি আমরা।
তামিমঃ কোন মেয়ে.? আর কই আমি তো তোদেরকে দেখলাম না।
হাসিবঃ একটু আগে যে মেয়েটা তোর সাথে কথা বলছিল সেই মেয়ের কথা বলছি।। আর আমরা তখন কলেজের গেইটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু মেয়েটা তোর সামনে থাকাতে আমরা আসছিলাম না। তো এখন বল মেয়েটা কে.?
তামিমঃ আমি কীভাবে বলবো মেয়েটা কে.? তোরা আসছিলি না তাই এইখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফেসবুকিং করছিলাম ঠিক তখনই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আর জিজ্ঞেস করে ইন্টার ১ম বর্ষের ক্লাসরুম কোনদিকে।
তো আমিও মেয়েটাকে ক্লাসরুম দেখিয়ে দিলাম আর মেয়েটা চলে গেল।
শুভঃ বলিস কি মেয়েটা ইন্টার ১ম বর্ষের ক্লাসরুম তালাশ করছিল.!
তার মানে মেয়েটা নিশ্চয়ই আমাদের সাথেই পড়ে।
বন্ধু আমাদের প্রত্যেকেরই তো Gf আছে, এবার তুইও একটা Gf বানিয়ে ফেল।
দেখ ওই মেয়েটাকে কোনোরকমে পটাতে পারিস কি না।
এইভাবে একা একা আর কতো বছর থাকবি, এবার অন্তত একটা প্রেম কর।।
তামিমঃ দেখ তোরা ভালো করেই জানিস যে আমি এইসব প্রেম ভালোবাসা একদম পছন্দ করি না।। তারপরও তোরা সবসময় আমাকে প্রেম করতে বলিস কেন বলতো.?
হাসিবঃ আরে বেটা আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে তুই ই একজন যে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করিস নি।। দেখ আমিও তো ক্লাস ১০ এ থাকতেই তামান্নার (হাসিবের Gf) সাথে প্রেম করা শুরু করেছি।। শুভর ও তো এখন একটা Gf আছে।। প্রেম করিস না শুধু তুই।।
এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক যে আমরা সবাই প্রেম করি অথচ তুই প্রেম করিস না।।
তাই শুভ ঠিকই বলেছে তুইও এবার একটা প্রেম কর আর আমাদের মতো মিঙেল হয়ে যা।।
তামিমঃ দেখ বিয়ের আগে এইসব প্রেম ভালোবাসাকে ইসলামে হারাম বলা হয়েছে।।
আর তোরা যাদের সাথেই প্রেম করছিস তাকেই যে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবি
তার কি গ্যারান্টি.? ওই মেয়েদের মা-বাবা তো তাদের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য
কোনো ধনী ভালো জামাই খুজবে যাতে তাদের মেয়ে জীবনে সুখে থাকে।।
তোরা প্রেম করছিস ভালো কথা, কিন্তু জীবনে এমন কিছু করিস যাতে ওদের
মা-বাবা নিজে থেকে এসেই ওদের মেয়েকে তোদের হাতে তুলে দেয়।।
তোদেরকে যেন ওদের কাছে যেতে হয়না ওদের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য।।
আর আমি প্রেম করিনা বলে তোদের জন্য যদি এটা লজ্জাজনক বিষয় হয় তাহলে
আজ থেকে আমাকে তোরা আর ফ্রেন্ড ভাবিস না, তোদের ফ্রেন্ড
সারকেল থেকে আমাকে বাদ দিয়ে দে।।
হাসিবঃ আরে কি বলছিস তুই এইসব.! আমাদের বন্ধুত্ব সেই ক্লাস ১ থেকে, আর তুই আজকে এই সামান্য ব্যাপারে আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিবি.? আর তুই যে কথাগুলো বলেছিস তা ভুল বলিস নি।। বিয়ের আগে পর নারীর সাথে প্রেম ভালোবাসা করা ঠিক নয়।। কিন্তু কি করবো বল, প্রেম করার সময় তো আর এইসব মাথায় থাকে না।। আর আজকে থেকে আমরা আর কখনো তোকে প্রেম করার জন্য বলবো না।। কিন্তু প্লিজ তবুও তুই আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্বটা নষ্ট করিস না।।
তামিমঃ ওকে মনে থাকে যেন, আর যদি কোনোদিন আমাকে প্রেম করার জন্য বলেছিস তো ওইদিনই আমি তোদের থেকে আলাদা হয়ে যাব, ভেঙে ফেলবো আমাদের ক্লাস ১ থেকে কলেজ অবধি বন্ধুত্বটা।।
হাসিবঃ না আর কখনো এইসব বলবো না প্রমিস।। আচ্ছা বন্ধু একটা প্রশ্ন করবো.?
তামিমঃ কি প্রশ্ন বল.?
হাসিবঃ তোর কি কাউকে ভালো লাগে.? আই মিন কাউকে পছন্দ করিস এমন কেউ আছে কি তোর লাইফে.? দেখ আমরা তোর বন্ধু, আমাদের এইটুকু তো জানার অধিকার আছেই।।
তামিমঃ হে একজনকে আমি ভালোবাসি তবে সেটা কখনো তাকে বলা হয়নি।। মনে মনে থাকে ভালোবেসে যাচ্ছি।।
শুভঃ কি বলিস তাহলে তলে তলে এতো দূর আর আমরা কিছুই জানি না.! তা কে সেই ভাগ্যবতী নারী যাকে তুই ভালোবাসিস.?
তামিমঃ আছে একজন, কিন্তু তার ব্যাপারে তোদেরকে কিছু বলতে পারবো না।। কিন্তু একদিন তোদেরকে সব বলবো সময় আসলে।।
শুভঃ সেই সময়টা কবে আসবে.?
তামিমঃ নিজেও জানি না।।
টুং টুং (কলেজের বেল বেজে উঠলো)
তামিমঃ বেল দিয়ে দিয়েছে চল এবার ক্লাসে যাই।।
শুভঃ হুম চল
তারপর তামিম আর তার বন্ধুরা সেখান থেকে তাদের ক্লাসে চলে আসলো।।
ক্লাসে আসার কিছুক্ষণ পর স্যারও ক্লাস করাতে চলে আসলেন।।
একে একে সবকটা ক্লাস শেষ করে ওইদিনের মতো কলেজ ছুটে হয়ে গেল।।
তামিম তার বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলো।।
বাসায় এসে তামিম তার রুমে যাবে এমন সময় ড্রয়িংরুমের দিকে চোখ পরতেই
সে দেখলো নীলা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে।।
তামিম টিভির দিকে তাকিয়ে দেখলো নীলা একটা হিন্দি মুভি দেখছে,
যেটায় নায়ক-নায়িকারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে আর কি যেন বলাবলি করছে।।
টিভিতে এমন দৃশ্য দেখে মূহুর্তের মধ্যেই তামিমের মাথা গরম হয়ে গেল।। সে আর রুমে গেল না, সোজা ড্রয়িংরুমে ঢুকে নীলা আর টিভির মাঝখানে গিয়ে দাড়ালো।।
তামিমকে হঠাৎ এইভাবে সামনে দেখতে পেয়ে নীলা অনেকটা চমকে উঠলো
আর যখন দেখলো তামিম অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন নীলা কিছুটা ভয় পেয়ে উঠলো।।
এদিকে তামিম নীলার দিকে কিছুক্ষণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে
হঠাৎ ছোঁ মেরে নীলার হাত থেকে টিভির রিমোটটা কেড়ে নিয়ে সজোরে মেঝের মধ্যে আচার মারলো,
সঙে সঙে রিমোট ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।।
তামিমের এমন কাজে নীলা এবার অনেক ভয় পেয়ে উঠলো।।
কিন্তু রিমোট ভেঙেও তামিমের রাগ কমেনি।।
তামিম এবার সোজা নীলার চুলের মুটি ধরে নীলার গালে ঠাসস,
ঠাসস করে দুইটা চড় বসিয়ে দিল আর বললো…
তামিমঃ তোর সাহস কি করে হয় এইসব মুভি দেখার.?
তোকে না একদিন বললাম যে তুই কার্টুন ছাড়া আর কিছু দেখবি না।।
তারপরও তুই আমার কথা অমান্য করে এখন এইখানে বসে মুভি দেখছিস.!
খুব সাহস বেড়েছে তোর তাইনা.? (রাগে চিৎকার করে কথাগুলো বললো)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com