Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -০৬

বর্ষণঃ মা,,, খাবার দাও,,,,
মাঃ দিচ্ছি,,, একটু অপেক্ষা কর,,,
নিশিতাঃ (খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলাম,,,)
বর্ষণঃ তুমি কোথায় যাচ্ছো নিশি,,,,??(প্লেটে খাবার নিতে নিতে)
নিশিতাঃ রুমে যাচ্ছি একটু কাজ আছে,,,
বর্ষণঃ আমার কিছু দরকার হলে কে দিবে,,,??
মাঃ আমি আছি তো,,, ও যাক না,,,
বর্ষণঃ তোমার কোমর ব্যাথা,,, এখানে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই,,,, তুমি বরং রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও,,,,
মাঃ না না আমি ঠিক আছি,,,, তুই এতোদিন পর বাড়ি ফিরেছিস আমি নিজ হাতেই খাওয়াবো,,,
বর্ষণঃ রান্না তো তুমি করেছো,,, এতোক্ষণ কিচেনে ছিলে এখন গিয়ে রেস্ট নাও,,,
মাঃ কিন্তু,,,,,
বর্ষণঃ আমার কিছু দরকার হলে নিশি দেবে,,,,
নিশিতাঃ(উনারা মা ছেলে কথা বলছে আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছি,,,,)
মাঃ ঠিক আছে,,,, নিশিতা ভালো মতো খাওয়াবি,,,
নিশিতাঃ আচ্ছা খালামুনি,,,,(খালামুনি নিজের রুমের দিকে চলে গেলো,,, আমি দাঁড়িয়ে আছি আর বর্ষণ ভাইয়া নিজের মনে খেয়ে যাচ্ছে,,,,)
বর্ষণঃ দাঁড়িয়ে আছো কেন,,,?? একটা চেয়ার টেনে বসো,,,
নিশিতাঃ না আমি এখানেই ঠিক আছি,,,
বর্ষণঃ খাওয়া দাওয়া করা হয়েছে,,,,??
নিশিতাঃ(কিছুটা চমকে বর্ষণ ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,, এই দুই মাসে এই প্রথম কেউ আমার খাওয়ার খোঁজ নিলো,,,, চোখ টলমল করছে পানিতে,,,, তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিলাম,,,)
বর্ষণঃ কী হলো বলছো না কেন,,,??
নিশিতাঃ হ,,, হ্যাঁ খেয়েছি দুপুরে,,,
বর্ষণঃ ক্ষিদে পায়নি এখন,,,??
নিশিতাঃ ন,,,নাহ,,,
বর্ষণঃ মিথ্যা কেন বলছো,,,?? দুপুরে খেলে এখন অবশ্যই ক্ষিদে পেয়েছে,,,,
নিশিতাঃ না পায়নি,,,
বর্ষণঃ টেয়ারটা টেনে বসো,,,,
নিশিতাঃ (চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,,, খালামুনি যদি কিছু বলে,,)
বর্ষণঃ আমি একটা কথা দ্বিতীয় বার বলা পছন্দ করি না,,,,
তবু দ্বিতীয় বার নয় তৃতীয় বার বলছি বসো,,,(কঠিন গলায়)
নিশিতাঃ(গলা শুনে একটা ঢোক গিলে নিলাম,,,, ভাইয়ার অনেক রাগ সেটা ছোটবেলা থেকেই জানি,,,
তাই আর কথা না বাড়িয়ে বর্ষণ ভাইয়ার থেকে এক চেয়ার ফাকা রেখে বসে পড়লাম,,,,,)
বর্ষণঃ(আর একটা প্লেটে খাবার নিয়ে নিশির সামনে দিলাম,,,)
আমার শেষ হওয়ার আগে শেষ করো,,,
নিশিতাঃ (অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে,,)
আ,,,আমি এখন খাবো না,,,
বর্ষণঃ আগেই একটা কথা বলেছি,,, আমি এক কথা দ্বিতীয় বার বলা পছন্দ করি না,,,,
নিশিতাঃ(কারো সামনে খাওয়ার অভ্যাস নেই,,,
তার ওপর ভাইয়ার সামনে কীভাবে খাবো,,,??
সত্যি বলতে ক্ষিদেও পেয়েছে,,, দুপুরে খাবার খেতে ইচ্ছে করছিলো না,,,
তাই একটু খেয়েই রেখে দিয়েছিলাম,,,,
এখন খাবো না বললেও উনি হয়তো রেগে যাবেন,,,, একটু খাবার নিয়ে মুখে দিলাম,,,
কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,, উনার দিকে ঘুরে তাকালাম,,৷
নাহ্ উনি তো নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে,,,,
হয়তো আমার মনের ভুল আর বেশি না ভেবে আবার খাবার মুখে দিলাম,,)
বর্ষণঃ (ওফ,,,, আর একটু হলেই ধরা পড়ে যেতাম,,,,,)
নিশিতাঃ(খেতে খুব আনইজি লাগছে উনার সামনে,,, কিন্তু কী করবো,,,?? চুপচাপ একটু করে খেয়ে যাচ্ছি,,,,)
বর্ষণঃ এভাবে শালিকের মতো খাও বলেই দেখতেও শালিক পাখির মতোই লাগে,,,
নিশিতাঃ( হঠাৎ উনার এমন কথা শুনে কাশি উঠে গেলো,,,)
বর্ষণঃ(তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে পানি এগিয়ে দিলাম,,,, মাথায় হাত দিতে গিয়েও পিছিয়ে নিলাম,,,
আবার কিন্তু একটা ভেবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম,,,, ধীরে ধীরে ওর কাশি কমে গেলো,,)
খাওয়ার সময় অন্যদিকে মন না দিলেই হয়,,,
নিশিতাঃ(কাশি থামলে উনার কথায় হুশ ফিরলো,,,
হঠাৎ উনাকে এতো কাছে দেখে চমকে উঠলাম,,,,)
আ,,,আমি ঠিক আছি,,,, আমি আর খাবো না,,, আপনি আপনার খাওয়া শেষ করুন,,,
বর্ষণঃ আমার খাওয়া শেষ,,,, আমি রুমে যাচ্ছি,,,
নিশিতাঃ ঠ,,,ঠিক আছে,,,(ভাইয়া নিজের রুমের দিকে চলে গেলো,,,
আমিও সব গুছিয়ে প্লেটগুলো ধুয়ে রুমে চলে এলাম,,,,
একটু পরই এশারের আযান হলে নামাজ পড়ে নিলাম,,, তারপর একটু পড়তে বসলাম,,,,,,)
খালামুনিঃ নিশিতা,,,,
নিশিতাঃ হ্যাঁ খালামুনি আসছি,,,,(ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বেজে গেছে,,,,,
ডিনারের সময় হয়েছে,,, বইগুলো গুছিয়ে আবার নিচে গেলাম,,,
টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছি,,)
খালুজানঃ বর্ষণ কোথায়,,,,,?? আসার সময় আমার সাথে দেখা করে এসেছে,,,
খালামুনিঃ অনেকটা জার্নি করে এসেছে তো তাই রেস্ট নিচ্ছে,,,,
সন্ধ্যায় খেয়েছে এখন আর খাবে না,,, তুমি বরং সকালে কথা বলে নিয়ো,,,
খালুজানঃ ঠিক আছে,,,,
নিশিতাঃ(আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছি,,,,
এটা ওটা উনাদের এগিয়ে দিচ্ছি,,,, খাওয়া শেষে উনারা উনাদের রুমে চলে গেলেন,,,
আমি আর খেলাম না,,, এমনই রাতে খেতে ইচ্ছে করে না আজ আবার সন্ধ্যায় খেয়েছি,,,
সব গুছিয়ে রুমে চলে গেলাম,,, আবার একটু পড়তে বসলাম,,,
একটা অংক কিছুতেই মিলছে না,,,
বারবার চেষ্টা করেও না পেরে সব ফেলে বেলকনিতে চলে গেলাম,,,,,
আজ কেনো যেনো বেলকনিতেও ভালো লাগছে না,,, তাই একটু ছাদে চলে গেলাম,,,,
গ্রামের রাত শহরের মতো হয়,,, তারওপর এখন আবার শীতকাল,,,,,,
সন্ধ্যা হলেই সব অন্ধকার,, মনে হয় অনেক রাত ,,,,,
তবে এখন অনেক উন্নত হয়ে গেছে,,,
সবাই আলো জ্বালিয়ে রাখে,,,, তবে এই বাড়ির আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই,,,
আছে একটু দূরে,,, ছাঁদে দাঁড়ালে বাড়ির চারপাশের গাছগুলো দেখা যায় আর একটু দূরের ধানের ক্ষেত,,,,
রাতের বেলা ধানক্ষেতে অসংখ্য জোনাকি পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে,,,,
আমার বড্ড ইচ্ছে করে এই ধানক্ষেতে গিয়ে জোনাকিপোকা ধরতে,,,
আমার জায়গায় অন্যকোনো মেয়ে হলে হয়তো এই রাতে ছাঁদে আসতে ভয় পেতো,,,
শহরের বাড়ির ছাঁদ হলে প্রবলেম ছিলো না,,,
কিন্তু এই গ্রামে রাতের বেলা চারপাশটা কতটা গা ছমছমে হয় বলে বুঝানো যাবে না,,,
কিন্তু আমার একটুও ভয় করছে না,,,,
ভয় তাদের করে যাদের জীবনের মায়া থাকে,,,
কিন্তু আমার জীবনটা আমার কাছে বোঝা,,,,
এই জীবন থেকে ছুটি পেলেই আমি খুশি,,,,,,
ছাঁদে দাঁড়িয়ে এই শীতের শেষের দিকের পরিবেশটা উপভোগ করছি,,,,
চোখ বন্ধ করে ছাঁদের কর্নারে দাঁড়িয়ে আছি,,,,
হঠাৎ করেই আবার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে আমার দিকে,,,,
আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম,,,,,
কিন্তু কেউ নেই,,, আবার সামনে তাকালাম)
বর্ষণঃ(জায়গা চেঞ্জ হলে আমার সহজে ঘুম হয়না,, তাই একটু ছাঁদে চলে এলাম,,,,
এতোরাতে ছাঁদে কে,,,?? ছাঁদের গেইট খোলা,,,
ছাঁদে গিয়ে  আবছা আলায় দেখি নিশি দাঁড়িয়ে আছে,,,,
একদম ছাঁদের কর্ণারে,,,,
ছাঁদে লাইট নেই বাড়ির বাইরের লাইটের আলো ছাঁদটাকে  আবছা আলোকিত করেছে,,,,
সেই আলোয় দেখতে পাচ্ছি হালকা ক্রিম কালার একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশি,,,
গায়ে একটা শাল,,,,
হঠাৎ করেই এদিকে তাকালো কিন্তু আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে আলো একদম কম,,, তাই হয়তো দেখতে পায়নি,,,আবার মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকালো,,,,) নিশি,,,,,
নিশিতাঃ(হঠাৎ বর্ষণ ভাইয়ার গলা শুনে চমকে পিছনে তাকালাম,,,,
একটু আগেই তো দেখলাম এখানে কেউ নেই,,,, উনি কোথা থেকে এলেন,,,)
আ,,,আপনি,,,, এখন এখানে,,,??
বর্ষণঃ আমারও একই প্রশ্ন,,,, এই শীতের রাতে এখানে দাঁড়িয়ে কী করছো,,,??
নিশিতাঃ এমনই ভালো লাগছিলো না,,, তাই এখানে এলাম,,,,
আপনি না ঘুমিয়ে এখানে কী করছেন,,,??
বর্ষণঃ জায়গা চেঞ্জ হলে আমার সহজে ঘুম হয়না,,,
নিশিতাঃ ওহ্,,,,, (আবার দুজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি দুজায়গায়,,,)
বর্ষণঃ সবার জীবনেই কিছু কঠিন মুহূর্ত আসে,,,
হয়তো কাউকে জীবনে একটু বেশি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়,,,
তবে জীবন থেমে থাকে না,,, আপন গতিতে চলতে থাকে,,৷
আর একটা সময় গিয়ে সেই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হয় আবার কেউ হার মেনে যায়,,,,
তবে জীবনের আসল মানে তখন বুঝা যায় যখন সকল কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রেখে তার মোকাবেলা করতে সক্ষম হই আমরা,,,,
নিশিতাঃ(চুপচাপ উনার কথাগুলো মন দিয়ে শুনে যাচ্ছি,,,,)
বর্ষণঃ তোমার জীবনের পরিস্থিতিটা একটু বেশি কঠিন তবে সামলে নেওয়া যাবে না এমন নয়,,,
নিশিতাঃ(এবার উনার দিকে তাকালাম,,,)
বর্ষণঃ এভাবে সব ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলে জীবন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়,,,
চলবে,,,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com