মুখে ব্রণ । পর্ব- ০৫
তাবাচ্ছুম তানজিলকে দেখে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো।
ইমন আর কাব্য হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
পুরো ভার্সিটির সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
তানজিলের চোখ বেয়ে পানি ধরছে আর বলতে লাগলো
-কই ছিলি তুই বন্যা। এতদিনে একটা খোজ ও নিসনি।
কি করছিস এ তোর অবস্থা।
তুই সেদিন চলে আসার পর থেকে মা আর আমার সাথে কথা বলে না।
কি দোষ করছিলাম আমি বল।
বন্যা তানজিলকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে তানজিলের মুখের
ডান পাশে ডান হাত রেখে
আগের থেকে মুখের এ কি অবস্থা করছিস তুই।
কতটা শুকিয়ে গেছিস। সেদিন কেন আমাকে আটকালি না।
আমি যে তোকে ভালবাসি তা তুই কখনো বুঝতিস না।”
তানজিল বন্যার দু গাল হাত দিয়ে ধরে
-ভয়তে বলতে পারতাম না৷ যদি তুই হারিয়ে যাস।
হুম গেছিলাম তো হারিয়ে। তোকে ভোলার অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি।
তোর উপর খুব বেশি অভিমান জমেছিলো তাই তো দূরে চলে আসলাম।
-খুব ভালো ছিলি বল তুই। তোকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পায়নি রে।
দিনরাত এক করে ফেলছি।”
সরি রে।
আজ যদি দেখা না হতো তাহলে কি করতি বল৷
তোর কাছে চলে যেতাম।
যদি মরে যে
বন্যা তানজিলের পুরো কথা শেষ হতে না দিয়ে গালে কষে চড় মারলো। কাব্য ইমন একে অপরের দিকে তাকালো।
বন্যা তানজিলকে জরিয়ে ধরলো। দুজনে যেনো এতদিন পর দুটো প্রাণ খুজে পেলো। কাব্য একটু কেশে উঠলো। দুজন দুজনকে ছেড়ে দিয়ে৷ তানজিল বললো
-সরি ভাইয়া
-আরে বোকা সরি বলার দরকার নেই আগে বাসায় নিয়ে যা। তোর মায়ের অভিমান ভাঙ্গা। আর বন্যা তুমি ছাইপাঁশ খেয়ো না ওকে।
তানজিল বন্যার দিকে তাকিয়ে পড়লো
-ভাইয়া কি বলছে
-কি করবো তুই আমাকে বুঝলি না সেই কষ্টে সিগারেট খেতাম ম্যাছে বসে।
তানজিল চোখ গরম দিয়ে
-আমি খেয়েছি। তোর জন্য প্রতিটা রাত কিভাবে কাটাইছি জানিস
-আমার রুম মেট একটা আপু খেতো তার কাছ থেকেই
-তোকে আর ওখানে থাকতে হবে না।
তানজিল আর বন্যা দুজনে খুনসুটি করতে করতে চলে গেলো।
ইমন ডান গালে হাত দিয়ে
ভাইয়া আমাকে শুধু শুধু মারলেন।
আরে বোকা তোকে তো ভালবাসা দিছি।
এত জোরে। কেটে গেছে
আচ্ছা চল তোকে হাস খাওয়াবো।
– চুরি করে
-ওরে না না। কিনে খাওয়াবো।
পরেরদিন কাব্য ভার্সিটি গেইটপর সামনে বসে আছে। নিরা কাব্যের সামনে এসে
-ভাইয়া এতদিন কই ছিলেন। “
-বাবাতে বন্দী করে রাখছিলো তাই আসতে পারিনি।
-ভাইয়া আপনাকে না অনেক মিস করছি (আসফি)
কাব্য ভ্রু কুচকে
-তুই করবি মিস। এত ভনিতা না করে কাজের কথা বল।
আসফি নিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে। আসফি বললো
-আপনি এখন যান এখান থেকে আমরা দুজনে মিলে কিছু মুরগি ধরি।”
কাব্য বাইকের উপর থেকে নেমে নিরা আর আসফির কান ধরে
-মুরগি তো আমি ধরেছি পালাবি কই। “
নিরা আসফি কাব্যের হাত ধরে এক সাথে বললো
-ভাইয়া লাগছে
কাব্য মুচকি হেসে
-লাগার জন্যই তো ধরেছি। কতদিন মুরগি ধরি না।
-ভাইয়া ভূল হয়ে গেছে। “
তানজিল আর বন্যা হাত ধরে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে কাব্যকে দেখলো ওদের কান ধরে আছে। দুজনে সামনে গেলো। কাব্য ওদের ছেড়ে দিয়ে
-কি খবর দুজনের। মা কি কথা বলছে
তানজিল হেসে
কথা না বলে যাবে কোথায়। খুব খুশি হয়েছে তারা।
-হুম তাহলে তো ভালই হয়েছে। যাও ক্লাসে।
তানজিল আর বন্যা চলে গেলো
নিরা কাব্যকে জিঙ্গেস করলো
-কারা ওরা? “
-দুজনের ভালবাসার মানুষ। অনেকদিন পর দুজনের মিল হলো। “
আসফি নাকটা খিচে নিয়ে
-ছিঃ মেয়েটার কি রুচি। আমি হলে তো কখনো এমন ছেলের সাথে রিলেশনে যেতাম না।”
কাব্য আসফির দিকে তাকিয়ে
-ওদের ভেতর ভালবাসাটা আসে। ভালবাসা কখনো রুচি দিয়ে বিবেচনা হয় না মন দিয়ে বিবেচনা হয়।”
-তাই বলে মুখ ভর্তি (নিরা)
-সৌন্দর্য সবসময়ের জন্য নয়। ক্ষণিকের জন্য। ভালবাসাটা সারাজীবনের জন্য।
গেইট দিয়ে জিম মুখ চুলকাতে চুলকাতে ভেতরে প্রবেশ করলো। কাব্যের চোখটা জিমের উপর চলে যায়। “
এই মেয়ে এদিকে এসো
জিম কাব্যের সামনে দাড়িয়ে
জ্বী বলুন ভাইয়া
মুখটা খোলা রাখলে পারেন। ব্রণের কষ্ট থেকে বাঁচতেন। ইমন যা তো।
ইমন হেসে দিয়ে
-ভাই যাওয়া লাগবো না চলে এসেছে।
কাব্য হাতে বরফ নিয়ে জিমের হাতে দিলো।
-বরফটা মুখে লাগাও যন্ত্রণা কমে যাবে।
জিম কাব্যের কথায় হা হয়ে পড়লো।
-ঠিক হয়ে যাবে আমি বরফ লাগাবো না।
কাব্য মুচকি হেসে জিমের মুখের মুখোস খুলে ফেললো।
জিমের মুখের অনেক জায়গা থেকে রক্ত ও বের হচ্ছে।
কাব্য বরফটা জিমের মুখে আস্তে আস্তে বোলাতে লাগলো।
জিমের চোখ বেয়ে পানি ঝরছে আর কাপছে। ১০ মিনিট পর কাব্য জিমকে ছেড়ে দিলো।
কাব্য চলে গেলো। জিম থ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
মুখের যন্ত্রণা কমে গেছে।
নিজের মুখে হাত দিয়ে দেখলো মুখের ব্রণের আকারটা ছোট হয়ে গেছে।
জিম ক্লাসে চলে গেলো
ক্লাস শেষ এ জিম ক্যাম্পাস থেকে চলে যাচ্ছিলো তখন কাব্য জিমের পথ আগলে ধরে।
কাব্য জিমের দিকে একটা কৌটা এগিয়ে দিয়ে
-এটা রাখো। সকালে ঘুম থেকে উঠে এটা মাখবে।
আর ক্লাস শেষ এ বিকালে। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলবে।
এটা কি আমি নিতে পারবো না।
কাব্য জিমকে ধমকসুরে
এই মেয়ে এত ভনিতা না করে ধরো। কথা না শুনলে ভার্সিটি থেকে বের করে দিবো।
-আপনি আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছেন।
ইমন বলে উঠলো
-ভাই নিতে চায় না। শুধু শুধু জোড় করছেন কেন?
কাব্য ভ্রু কুচকে জিমের দিকে তাকিয়ে ইমনের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে
-বলে দে আমি কাউকে ব্ল্যাক মেইল করি না।
জিম ভয়তে কৌটাটা হাতে নিলো। কাব্য চলে গেলো। ইমন কাব্যের পিছে।
বন্যা তানজিলকে চোখ বুঝতে বললো। তানজিল বন্যার কথা শুনে চোখ বন্ধ করলো। বন্যা হাত দিয়ে তানজিলের মুখে কিছু একটা মেখে দিলো৷ তানজিল চোখ খুলেই
-কি লাগাইছিস । জ্বলছে কেন?
-আরে একটু সহ্য কর ঠিক হয়ে যাবে।
-তুই আমার মুখে এসিড লাগাসনি তো। “
-হ্যা লাগাইছি তো। তোকে তো বিয়ে করলে আমি করবো অন্যকেউ তো না। ।
-হ্যা কত যে করবি নে।।
কেন রে অন্য মেয়েকে করার শখ আছে নাকি।
না না। এই জ্বলাটা কমছে। কি ছিলো এটা।
বলা যাবে না।
জীম গেইট দিয়ে বের হতে যাবে তখন আসফি আর নিরা সামনে দাড়ালো। আসফি বলে উঠলো
-এই মেয়ে তোর এই অবস্থায় আসতে লজ্জা লাগে না ক্যাম্পাসে।
নিরা বললো
-আরে দেখিস না গাইয়া। ওদের আবার কিসের লজ্জা। মুখে দেখিস না ডিম পাড়িয়ে আনসে।
দুজনে হেসে উঠলো। জিম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আসফি বলে উঠলো
-তোর জন্য আমরা কাব্যকে হারাতে বসছি। তোর ভেতর এমন কি দেখলো কাব্য যার জন্য ও এতকিছু করছে।
-আমরা এতদিন পিছে ঘুরে ও পাত্তা পেলাম না আর এ দু দিনে আসাটা টেক কেয়ার করা শুরু করে দিয়েছে।
জিম আর না দাড়িয়ে চলে গেলো। আসফি বলে উঠলো
-বিকালেই একটা কিছু করতে হবে।
-হুম ভালো আইডিয়া। “
কাব্য বাসায় গান গাইতে গাইতে ঢুকলো। কাব্যের আশরাফ চৌধুরী একটু অবাক হয়ে
-কি ব্যাপার আজ আবার কি ঘটনা ঘটালি।
-কিছুই না বাবা।
-আজ এত খুশি খুশি কেন?
-ও তুমি বুঝবে না।
কাব্য উপরের রুমে চলে গেলো।
সন্ধ্যার দিকে আশরাফ চৌধুরীর সামনে বসে আছে নিরা আর আসফি
-কি ব্যাপার মামনি কাব্য কিছু করছে নাকি।
-আঙ্কেল করছে মানে। অনেক বড় কিছু করছে।
আশরাফ চৌধুরী অবাক হয়ে
-কি করছে
-আঙ্কেল আপনার ছেলের সামনে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে ও কি না মুখে ব্রণ ভর্তি একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো।
-আঙ্কেল মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ছিঃ সে কি অবস্থা।
আশরাফ চৌধুরী মুখটা গোমড়া করে
-ঠিক আছে তোমরা যাও আমি ব্যাপারটা দেখছি৷
আসফি আর নিরা চলে আসলো
-কাব্যকে যা দিবে।
-হুম। দেখে তো তাই মনে হলো।
-কাজ তবে হলো।
পরেরদিন জিম ভার্সিটির যাওয়ার পথে আশরাফ চৌধুরী জিমের সামনে দাড়িয়ে
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com