Breaking News

কালো বউ । পর্ব -১০



তমসাঃ(সামনে তাকিয়ে আমি অবাকের চরম সীমায়,,,,) আরাফাত,,,, (মৃদু গলায়)
আরাফাতঃ (তমসা এদিকে তাকাতেই চোখ টিপ মেরে দিলাম,,,,)
আরাফাতের মাঃ তোমার নাম কী মা,,,??
তমসাঃ ত,,তাসমিয়া ইসলাম তমসা,,,,
আ: মাঃ বাহ্ খুব মিষ্টি নাম,,,, লেখাপড়া কতটা করেছো,,,??
তমসাঃ মাস্টার্স কমপ্লিট,,,,
আ: মাঃ জব করো নাকি,,,??
তমসাঃ করি না,,, তবে আগামীকাল থেকে করবো,, একটা জব হয়েছে,,,,
আরাফাতের বোনঃ মা,,,, মেয়েটা কতো কালো দেখেছো,,, ভাইয়ার পছন্দ দেখে আমি অবাক হচ্ছি,,,, কী দেখে এই মেয়েকে পছন্দ করেছে,,,??(চাপা স্বরে)
আ: মাঃ চুপ,,,, সামনাসামনি এসব বলতে হয় না,,,
তমসাঃ(আস্তে বললেও কথাটা স্পষ্ট কানে এসে লাগলো,,,,মাথা নিচু করে বসে রইলাম,,, )
আ: মাঃ আরাফাতের বাবা তুমি কিছু জিজ্ঞেস করবে,,,,??
আ: বাবাঃ তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করো,,,, সে করবে নাকি,,,(গম্ভীর গলায় মুখ কালো করে,,,)
তমসাঃ(উনাদের কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে কারো আমাকে পছন্দ হয়নি,,,হবার কথাও নয়,,, হয়তো শুধু আরাফাত আর নিজেদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে এখনো চুপচাপ বসে আছে,,,,)
আরাফাতঃ হ্যাঁ তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না,,, যা করার আমিই করছি,,,, এই মেয়ে একটু হেঁটে দেখাও,,,(দুষ্টুমি করে)
তমসাঃ(চোখ পাকিয়ে আরাফাতের দিকে তাকালাম,,, ফাজলামো করতে এসেছে আমাকে নিয়ে,,,)
আরাফাতঃ কী হলো হেঁটে দেখাও,,,??
তমসাঃ (বাধ্য হয়ে হেঁটে দেখাতে হলো,,, ওর পরিবারের সবাই মনে হচ্ছে বিষ খেয়ে তা হজম করছে,,, মুখ দেখে তাই মনে হচ্ছে,,,,)
আরাফাতঃ চুল দেখাও,,,,
তমসাঃ(আরাফাতের এসব কান্ড দেখে শুধু আমি না সবাই অবাক হচ্ছে,,, সাথে বিরক্ত,,,, আমার বা কী বলার আছে,,, বাধ্য হয়ে চুল দেখালাম,,,,)
আরাফাতঃ রান্না করতে পারো,,, ঘরের কাজ করতে পারো,,,
তমসাঃ হ্যাঁ পারি,,,,
আরাফাতঃ নামাজ পড়ো নিয়মিত,,,, কুরআন তিলাওয়াত করতে জানো,,,??
তমসাঃ হ্যাঁ,,,,,(এখন এখানে আর কেউ না থাকলে সত্যি আমি আরাফাতের মাথা ফাটিয়ে দিতাম,,, কখনো পাত্রের কাছে এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়নি,,,, কিছু জিজ্ঞেস করলেও আলাদা কথা বলতে গেলে তখন জিজ্ঞেস করতো,,,, আর এখানে আরাফাত ড্রামা করছে,,,,)
আরাফাতঃ আর,,,,
আ: মাঃ আরাফাত অনেক হয়েছে তোমার ফাজলামি,,, এখানে এসেও তোমার ফাজলামি করতে হলো,,,?? এবার চুপ করো,,,,
আরাফাতঃ আরে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করছিলে না তাই আমি করে দিলাম,,,,
আ: মাঃ তোমাদের আলাদা কথা বলার থাকলে যাও,,,,
আরাফাতঃ আমার কোনো কথা নেই,,,,,,
তমসাঃ আমার আছে,,,(আরাফাত কথা শেষ করার আগেই,,,)
আ: মাঃ ঠিক আছে,,,
তমসার মাঃ তমসা তোর রুমে নিয়ে যা,,,,
তমসাঃ(উঠে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম,,,
আর আরাফাত আমার পিছু পিছু আসছে,,, আমি রুমে গিয়ে সোজা বেলকনিতে চলে গেলাম,,, আরাফাতও বেলকনিতে এসে দাড়ালো,,,) এসব কী হচ্ছে আরাফাত,,,??
আরাফাতঃ কী হচ্ছে,,, (না বুঝার ভান করে)
তমসাঃ ফাজলামি করবি না বলে দিলাম,,,
আরাফাতঃ কই ফাজলামি করলাম,,,??
তমসাঃ কেনো এসেছিস এখানে,,, মজা নিতে,,,(সিরিয়াস হয়ে,,,)
আরাফাতঃ তমসা,,,,, এসব কী বলছিস,,,?? তোর মনে হচ্ছে আমি মজা করছি,,,,??
তমসাঃ তাছাড়া অন্যকিছু মনে হচ্ছে না,,,,
আরাফাতঃ(তমসার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিলাম,,,) তোকে কতটা ভালোবাসি সেটা বুঝতে পেরেছি তোর থেকে দূরে গিয়ে,,,, বিশ্বাস কর একটা দিন এমন যায়নি তোর কথা মনে পড়েনি,,,, এতো ফরেনারের ভীরে থেকেও তোর মায়াবী হাসি ভুলতে পারিনি,,, তোর এই গভীর কাজল কালো চোখ ভুলতে পারিনি,,, তাইতো দেশে ফিরেই আগে তোর খোঁজে বেড়িয়ে পড়ি,,,, তোর কী মনে হয় আবার আমাদের দেখা হঠাৎ হয়েছে,,,,?? তা নয়,,, আমি তোকে খোঁজে বের করেছি,,৷ যখন জানলাম তুই এখনো বিয়ে করিসনি তখন কতটা খুশি হয়েছি জানিস,,, তখন মনে হয়েছিলো আল্লাহ হয়তো আমার ভাগ্যেই রেখেছে তোকে,,,,,
তমসাঃ(অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আরফাতের দিকে,,, ওর কথা আমার মাথায় ঢুকছে না,,, কী বলছে এসব,,,,?? ওকে ফ্রেন্ড ছাড়া কিছু ভাবিনি কখনো,,, ওর দিক থেকেও তাই মনে হয়েছে সবসময়,,, তবে আজ এসব কী বলছে,,,) তুই কী বলছিস এসব,,,?? তোর মাথা ঠিক আছে,,,??
আরাফাতঃ আমার মাথা একদম ঠিক আছে,,, আর যা শুনেছিস তার একটা কথাও মিথ্যে নয়,,,
তমসাঃ তুই কী আমার ওপর দয়া করতে চাইছিস আরাফাত,,,??
আরাফাতঃ দয়া,,,, কিসের দয়া করবো,,,??(অবাক হয়ে)
তমসাঃ বিয়ে হচ্ছে না বলে,,,বিয়ে করে দয়া করছিস,,, আমার বাবাকে কন্যা দায় থেকে মুক্তি দিয়ে দয়া করতে চাইছিস,,,??
আরাফাতঃ কিসের দয়া,,,, আমি তোকে ভালোবাসি,,, এই সহজ উত্তরটা কেনো মানতে পারছিস না তুই,,,,
তমসাঃ মানতে পারছি না কারণ আমাকে ভালোবাসা কোনো সহজ উত্তর হতে পারে না,,,, আমাকে ভালোবাসার মতো কিছু নেই,,, আর তোর মতো কারো তো একদমই না,,,, এটা অসম্ভব,,,
আরাফাতঃ(ওর হাত ধরে টান দিয়ে কাছে এনে কোমর জড়িয়ে ধরলাম একহাতে,,, আর অন্যহাত তমসার গালে রাখলাম,,,) কেনো সম্ভব নয়,,,,?? তুই জানিস তুই কতটা সুন্দরী দেখতে,,,?? যাদের কাছে শুধু সাদা চামড়ার মানেই সুন্দর তারা আসলে সৌন্দর্যের মানেই জানে না,,,, এই টানা হরিণী চোখ,,,, ঠোঁটের কোণে মায়াবী হাসি,,, মায়ায় লেপ্টে থাকা মুখ,,, কালো মেঘের মতো লম্বা চুল,,, কারো ভালোবাসার জন্য যথেষ্ট,,,,, তোর দিকে যে পুরুষ গভীর মনোযোগে একবার তাকাবে সে তোর প্রেমে পড়তে বাধ্য,,,, যেমন আমি,,,,
তমসাঃ(আমার হয়তো লজ্জা পাওয়া উচিত,,,, একটা ছেলে আমার এমন প্রশংসা করছে,,, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার লজ্জা লাগছে না,,, বরং আরাফাতকে পাগল মনে হচ্ছে,,,) তুই কী পাগল হয়ে গিয়েছিস,,,??
আরাফাতঃ আমি একদম ঠিক আছি,,, তবে তোকে না পেলে পাগল হয়ে যাবো,,,, “পাগল হয়ে যাবো আমি পাগল হয়ে যাবো”
তমসাঃ সবসময় ফান ভালো লাগে না আরাফাত,,, (রাগী গলায়)
আরাফাতঃ এখন চলতো বাইরে,,, সবাই অপেক্ষা করছে,,, কী ভাববে সবাই,,,?? প্রেম করা শুরু করে দিয়েছি,,,(বেলকনি থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম)
তমসাঃ তোর পরিবারের কারো আমাকে পছন্দ হয়নি আরাফাত,,,,
আরাফাতঃ(ওর কথা শুনে থেমে গেলাম,,,,) বিয়ে আমি করছি আমার পরিবার নয়,,,(গম্ভীর গলায়)
তমসাঃ বিয়ে শুধু দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করে না বরং দুটো পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করে,,,,
আরাফাতঃ( আবার ঘুরে তাকালাম ওর দিকে) একসময় ওরাই তোকে আমার থেকে বেশী খেয়াল রাখবে,,, ভালোবাসবে দেখিস,,,,
তমসাঃ কিন্তু,,,,
আরাফাতঃ আর কোনো কথা না এখন,,, চল আমার সাথে,,,,
★★★
বৃষ্টিঃ বসে আছিস কেনো,,, শাওয়ার নিয়ে আয় খাবো তো একসাথে,,,,
সিনহাঃ শাওয়ার নিয়ে পড়বো টা কী,,,??
বৃষ্টিঃ আমার কী ড্রেসের অভাব পরেছে,,,?? আলমারি খুলে যেটা পছন্দ হয় পরে নে,,,
সিনহাঃ বৃষ্টি,,,,,
বৃষ্টিঃ হুম বল,,,,
সিনহাঃ আজ শাড়ি পড়বি,,,,, বাড়িতে মা আমাকে একদম শাড়ি পড়তে দেয় না,,,, খুব ইচ্ছে করছে,,,
বৃষ্টিঃ পড়তে পারিস শাড়ী,,,,??
সিনহাঃ নাহ্ (মন খারাপ করে,,)
বৃষ্টিঃ আরে মন খারাপ করছিস কেনো,,, মা আছে তো,,,মা পড়িয়ে দেবে,,,
সিনহাঃ কিন্তু ব্লাউজ,,, পেটিকোট কই পাবো,,,
বৃষ্টিঃ ধূর তুই সবসময় বেশি ভাবিস,,,, আমার আছে সব,,, কলেজ বা ভার্সিটি বৈশাখ বা বসন্ত উৎসবে যাওয়ার জন্য অনেক কেনা হয়েছে,,,,(আলমারি থেকে শাড়ি ব্লাউজ সব বের করে) কিন্তু একটা শাড়িও তো ভালো লাগছে না,,,, তুই একটা নিয়ে এখন শাওয়ারে যা আমি মার কাছে থেকে শাড়ি নিয়ে আসছি,,, মায়ের শাড়ি অনেক সুন্দর,,,,
সিনহাঃ ওকে,,,,,(বৃষ্টি ওর মায়ের কাছে চলে গেলো,,, আমি ওর একটা বাসন্তী কালার শাড়ি নিয়ে শাওয়ারে চলে গেলাম,,,, শাওয়ার শেষে শাড়ি কিছুতেই পড়তে পারছি না,,,, শেষ পর্যন্ত শাড়ীর কাছে হার মেনে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলাম,,, ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে নিচ্ছি,,, এই চুল সামলাতে আমার অনেক কষ্ট হয়,,, কেটে ছোট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপুর জন্য পারি না,,, আমার মতো ছোট মানুষ কী এতো বড়বড় চুল সামলাতে পারে,,, অনেক কষ্টে চুল মুছছি,,, এই বৃষ্টি এখনো আসছে না কেনো,,,??)
রোদঃ এই বৃষ্টি,,,, কতোক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না,,,??(দরজা খোলে ভেতরে ঢুকে আমার চোখ কপালে,,,, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি)
সিনহাঃ(হঠাৎ করেই রোদ ভাইয়া কিছু একটা বলে দরজা খোলে ভেতরে চলে এলেন,,,, একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবার রোদ ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,,, তারপর চোখ বুজে চিৎকার করলাম) আ,,,,,,,,,,
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com