তাঁহার অপেক্ষায় | পর্ব-৪
কাব্য নদীতে লাফ দিয়ে ডুব দিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো। নীলাদ্রি কাব্যের এমন কান্ড দেখে হাসতে লাগলো। শুভ নীলাদ্রিকে দেখে
-ওখানে বসে কি করছিস। বাসায় যা।
-যাচ্ছি ভাইয়া।।
নীলাদ্রি উঠে চলে গেলো। কাব্য ভিজা কাপড়ে বাসায় গেলো। আয়শা দেখা মাত্রই
-ভাইয়া তুমি ভিজা কেন?
-ও কিছু না। যা গামছাটা নিয়ে আয়।
-আচ্ছা। পুকুর ঘাটে যাও আমি নিয়ে আসি।
পরেরদিন বিকালে
কাব্য আর নীলাদ্রি দুজনে মিলে অন্যগ্রামে ঘুরতে গেলো।
-আচ্ছা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো কখনো।
– কেন বলোতো
-তুমি সত্যি কি আমাকে ভালোবাসো
কাব্য নীলাদ্রির হাতটা ধরে
-হুম ভালোবাসি। ” তোমার এই হাতটা এভাবে সারাজীবন ধরে রাখবো।”
দুজনে বেশ হাসিখুশি ভাবে অনেক কথা বলে সন্ধ্যায় বাসায় চলে গেলো।
এভাবে কেটে গেলো ১ মাস। ভালোবাসাটা যেনো সুখময় করে তুলেছে।
কতদিন বা আর সুখময় থাকবে সুখের ভেতর তো কষ্টটা তো চলে আসবে
১৩ মার্চ ১৯৯১
ভোরে
নিলয়,শুভ, লিমন ক্ষেতে কাজ করছিলো ইমরান এসে
-কি রে তোর বোনরে দেখলাম পাশের গ্রামের একটা ছেলের নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
লিমন ইমরানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে
-ইমরান তুই কিন্তু দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিস।
শুভ লিমনকে থামিয়ে দিয়ে
-কই দেখছিস। আজ প্রমাণ দিতে পারবি তো। “
-হ্যা পারবো। আজকে হাতে নাতে দিবো৷ চল আমার সাথে।
নিলয় ইমরানের দিকে তাকিয়ে
-এতদিন তো কোনো প্রমাণ দিতে পারিসনি আজকে যদি ভূল হয় তাহলে তোকে ওখানেই
-ঠিক আছে দেখা যাবে। চল এখন।
রিয়াদ নীলাদ্রির তিন ভাইকে নিয়ে নদীর তীরে দাঁড়াতেই কাব্য নৌকা নিয়ে তীরে আসলো৷ নীলাদ্রি ভাইদের দেখা হা হয়ে গেলো। আর ভয় পেতে লাগলো। কি করবে এখন। কিছুই বুঝতে পারছে না। তিন ভাই রাগে ফুসছে, ইমরান হাসছে আর বলছে
-বলছিলাম না৷ এতদিন ধরতে পারিনি আর তোরা আমার কথা বিশ্বাস ও করিসনি। দেখ তোর বোন লুতুরপুতুর কেমন করছে।
লিমন নিচে নেমে যেয়ে
-তোরা দুজন এদিকে আয়।
নীলাদ্রি ভয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো
-ভা ভা ভাইয়া ওর কোন দোষ নেই সব দোষ আমার আমি ওকে বলছিলাম আমাকে নৌকায় নিয়ে ঘুরতে।
-উঠে আয়।
নীলাদ্রি কাব্যকে বললো
-তুমি প্লিজ চলে যাও। এসো না।
-না তোমাকে এই পরিস্থিতিতে আমি একা ছেড়ে যাবো না।
কাব্য পাড়ে উঠলো। তিন ভাই কাব্যের সামনে। লিমন নীলাদ্রির হাত ধরে আসে
-কে হয় তোর?
-আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি
শুভ কষে চড় মারলো কাব্যের গালে ঠাস,ঠাস ঠাস শব্দ হলো৷ নীলাদ্রি কেঁপে উঠে কান্না করে দিলো
-ভাইয়া ওকে মেরো না।
-তোর ব্যবস্থা বাসায় যেয়ে করছি।
নিলয় বলে উঠলো
-তোকে যেনো আর আমার বোনের চারপাশে না দেখি৷ আর এই গ্রামের আশপাশে। আজকে ছেড়ে দিলাম পরেরবার আর ছেড়ে কথা বলবো না। “
নীলাদ্রিকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। নীলাদ্রি কান্না করছে। নীলাদ্রির কান্না শুনে রমেলা বেগম আর রিয়াদ বাইর হয়ে আসলো
-কি রে বাজান তোরা ক্ষেতে যাসনি। মাইয়াটার কি হলো
নীলাদ্রি দৌড়ে গিয়ে রমেলা বেগমকে জরিয়ে ধরলো
শুভ রাগি গলায়
-ও যেনো আজকের পর থেকে এক পা ও ঘরের বাইরে না দেয়। যদি দেয় তবে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
রিয়াদ বলে উঠলো
-কি হয়েছে বলবি তো
-পাশের গ্রামের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
রিয়াদ নীলাদ্রির দিকে তাকালো। নীলাদ্রি রমেলা বেগমকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
রিয়াদ বলে উঠলো
-আচ্ছা তোরা যা ঐ কাজটুকু কর আমি দেখতাছি৷
তিনজনে চলে গেলো রিয়াদ নীলাদ্রিকে বললো
-এসব কি শুনছি
-ভাইয়া আমি ওকে ভালোবাসি। “
রিয়াদ তেড়ে গেলো
-তোর ভালোবাসা
রমেলা বেগম রিয়াদকে থামিয়ে
-বাজান ও ছোট মানুষ। কিছু বলিস না।
-তুমি ওকে বুঝাও আম্মা।”
কাব্য বাসায় ফিরতেই আয়েশা কাব্যের গালে আঙ্গুলের ছাপ দেখে বললো
-ভাইয়া গালে কি হয়েছে।
-মশা মারতে যেয়ে জোড়ে লেগে গেছে।
-ঠিক আছে। আম্মায় নাস্তা দিছে খেতে এসো।
রাত ৮ টা নিস্তব্ধ গ্রাম । রাস্তাঘাটে মানুষ নেই যা ও আছে দু একজন। গ্রামে রাত ৮ টা মানে বিশাল ব্যাপার। নীলাদ্রির ঘরের জানালায় ঠকঠক শব্দ হচ্ছে। নীলাদ্রি ভয়ে ভয়ে জানালাটা খুললো। খুলেই চমকে উঠলো
-তু ত তু তুমি
-এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
-কি করবো তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না। একা লাগে।
-আরে আমি তো আসছি। মুখটা ঠিক করো।
-তুমি এত রাতে আসছো কেন কেউ দেখে ফেললে তো সমস্যা হবে।
-কেউ দেখবে না।
-তুমি যাও এখন। ভাইয়ারা বুঝতে পারলে আর রক্ষা নেই।
-এত অস্থির হয়ো না। আমি যাবো তোমাকে একটু দেখে যায়।
(তোমার মনমরা মুখটা আমায় যে শান্তি দেয় না
ছুটে আসি মুখটা তোমার
মলিন করতে, আসুক না যতই বাঁধা, আমি বেধে রাখবো তোমাকে এই মনে।)
-হয়েছে যাও এখন।
-খেয়েছো তুমি।
-না। আমি খাবো না।
-চুপচাপ যেয়ে খেয়ে নিবা।
-আচ্ছা। বিকালে ঝোপের কাছে থেকো আসবানি।
-ওকে। ।
কাব্য চলে গেলো। নীলাদ্রির এখন একটু ভালো লাগছে।
পরেরদিন
নীলাদ্রি বিকালে নদীর তীরের ঝোপের পাশে গেলো। কাব্য আগে থেকে বসেই ছিলো
-এসেছো
-হুম। কেমন আছো
-দেখে বুঝো না। ”
-এমনটা কেন হলো?
-জানিনা।
-আমার না ভয় করছে
-কেন?
অন্যদিকে চার ভাইয়ের কানে খবর চলে গেলো। চারভাই দ্রুত নদীর তীরের দিকে পা চালালো।
-ভাইয়ারা যদি জেনে যায়।
-এত ভয় পেয়ো না। ভাইয়াদের আমি ম্যানেজ করে নিবো।
নীলাদ্রি কাব্যের হাত ধরে
-সত্যি বলছো।
-হুম৷ পরশু আম্মা আসলেই তোমাদের বাসায় পাঠাবো।”
নীলাদ্রির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কাব্যের হাত দুটো শক্ত করে ধরলো ।
পিছন থেকেই বলে উঠলো
-নীলাদ্রি
কাব্য আর নীলাদ্রি পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। দুজনে উঠে দাঁড়ালো। দুজনে এখনো হাত ধরা। শুভ যেয়ে নীলাদ্রির হাত ধরে টান দিলো। কিন্তু কাব্যের সাথে হাত ধরা থাকায় ছুটলো না।
তিনজনে এসে কাব্যকে মারা শুরু করলো৷ নীলাদ্রির হাত এখনো ধরা। নীলাদ্রি কেঁদে যাচ্ছে আর বলছে
-ভাইয়া ওকে মেরো না। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ভাইয়া মেরো না ওকে।
-তোকে বারণ করছিলাম আমার বোনের চারপাশে তোকে না দেখি। তোকে মানা করছিলাম তবুও তুই। কাব্যকে এ্যালোপ্যাথারি চড় ঘুসি মারতে থাকে
কাব্যের শরীর মুখ বেয়ে রক্ত ঝরছে। এক সময় নিস্তেজ হয়ে যায় কাব্য। হাত ছেড়ে দেয় নীলাদ্রির৷ মাটিতে পড়ে থাকে কাব্য৷ নীলাদ্রিকে নিয়ে চলে যায় ভাইয়েরা।
কাব্যের কথা শুনে আয়শা আর কাব্যের খালা কান্না করতে করতে চলে আসে। কাব্যকে তুলে হাসপাতালে নিলো।
চার ভাই চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো
-আম্মা আম্মা কই তুমি
রমেলা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে
-কি হয়েছে
-তোমাকে বারণ করছিলা ও যেনো ঘরের বাইরে না যায়।
-আমি তো কাজ করছিলাম ও কোন ফাকে বেরিয়ে গেলো দেখিনি। কি হয়েছে
-ও আবার ঐ ছেলের সাথে।
রমেলা বেগম এসে নীলাদ্রির গালে চড় বসিয়ে
-তোর জন্য কি গ্রামে মুখ দেখাতে পারবো না। মানসম্মান সব খেয়ে ফেললি।
নীলাদ্রি দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা অফ করে দিয়ে উড়না ফ্যানের সাথে পেছিয়ে গলায় পেছি ঝুলে পড়লো
নিলয় রিয়াদ দৌড়ো এসে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে নীলাদ্রিকে ধরে কেঁদে দিলো
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com