ফিরে আয় | পর্ব -০৪
সেফা যখনই কথা বলতে যাবে,তখনই উপরের দিকো চোখ পড়ে,সাথে সাথে ফোনটাও বেজে ওঠে,
মাহফুজ, সেফা তুই কি ড্রোনটা দেখতে পাচ্ছিস..?
সেফা, হ্যা ভাইয়া আমি ড্রোনটা দেখতে পাচ্ছি,সেফা খুশিতে কান্না করে দেয়,
মাহফুজ, এই পাগলি এখন কান্না করার সময় নাই,তাড়াতাড়ি রোগীকে গিয়ে রক্তটা দিয়ে আয়,নাহলে মারা যাবে,আর হা হসপিটালে চলে আয়,
সেফা, সত্যিই ভাইয়া তুই অসাধারন,তোর মতো মানুষ হয় না,আমি এখুনি যাচ্ছি,
মাহফুজ, ফোনটা কেটে দিয়ে একটা জায়গায় বসলাম,
সত্যিই এখন মনের ভিতরে খুব ভালো লাগছে,আমার ড্রোনটাকেও নিচে নামিয়ে নিয়ে আসলাম,
সত্যি বলতে ড্রোনটাকে খুব আদর করতে ইচ্ছা করছে,কারন এতোদিন উড়ানোর জন্য কতো কাঠখড় পুড়িয়েছি,কিন্তু উরলো না,আর আজকে এই ভালো একটা কাজে ঠিকই উড়ে গেলো,যাক আর বসে না থেকে হসপিটালে চলে যায়,
তারপর ড্রোনটাকে যত্ন করে গাড়িতে রাখলাম,বেশ তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে গেলাম,
বাবা আর সেফা কেবিনের পাশে বসে আছে,ছেলেটার বাবা মা একপাশে বসে কান্না করছে,
ওদেরকে দেখে খুব মায়া হলো,তখন ওদের কাছে গেলাম,
মাহফুজ, দেখুন আংকেল আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না,
আমার মা একজন খুব ভালো ডাক্তার,নিশ্চয় আপনার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে।
তাছাড়া আপনার ছেলেকে দেখতে একদম আমার বন্ধু সাগরের মতো,
যাকে বহুকাল আগেই আমি হারিয়েছি,আমরা সর্বোচ্চ।পরিমানে চেষ্টা করবো,
আর আল্লাহ রহমত করলে আপনার ছেলেকে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দিবো,
ছেলেটার বাবা, তোমাদেরকে কৃতজ্ঞা জানিয়ে শেষ করতে পারবো না,
সত্যিই আল্লাহ তোমাদের মনে দয়া অসীম পরিমানে দিয়েছেন বলেই মাহফুজের পায়ে সালাম করতে গেলো,
মাহফুজ, তখনই পা দুটো সরিয়ে নিলাম,এই এই আংকেল আপনি কি করছেন এগুলো..?
আপনি আমাকে সালাম করছেন কেন,
বরং আমিই আপনাকে সালাম করবো,আপনি শুধু আমার জন্য দুয়া করবেন।
ছেলেটার বাবা, আমি তোমার জন্য প্রাণ ভরে দুয়া করি বাবা,জীবনে অনেক বড় হও,
মাহফুজ, ওনাদের সাথে কথা বলতে বলতে মা অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে গেলো,
আমি আম্মুকে আমাদের কাছে আসতে বললাম,
আম্মু, শুনুন আফজাল সাহেব (রোগীর বাবা),
আপনাদের চিন্তা করার কোনো কারন নাই,আপনার ছেলেকে আমরা বাচাতে পেরেছি,
সঠিক সময়ে রক্ত দিতে না পারলে মনে হয় বাচানো সম্ভব হতো না।
মাহফুজ, আম্মু তোমাকে অনেক ধন্যবাদ যে তুমি তোমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছো,
আর আংকেল তো আমাকে সালাম করতে পর্যন্ত গিয়েছিলো…!
আম্মু, এটা কি করতে গিয়েছিলেন আফজাল সাহেব..?
আপনারা শুধু আমার ছেলেকে মন খুলে দোয়া করবেন,যাতে আরো ভালো কোনো কাজ করতে পারে।
সবাই একসাথে কথা বলতে থাকে,তখন সেফা আর মাহফুজের বাবা চলে আসে,
মাহফুজের বাবা, মাহফুজ সত্যি আজকে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে,আমার গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে,
এতোদিন তোর ড্রোন বানানো নিয়ে অনেক কথা বলেছি,কিন্তু আজকে সত্যিই আমাকে অবাক করে দিলো,
ড্রোনটা আজ এমন একটা কাজ করে দেখালে,যেটা আমি ভাবতেও পারি নাই।
মাহফুজ, বাবা এবার কিন্তু প্রশংসাটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে,আমি তো ড্রোন তৈরি করেছি মানুষের উপকারের জন্যই,তাই আজকে ড্রোনটা ভালো একটা কাজ করে দেখালো,
সেফা, না রে ভাইয়া,আব্বুর গর্ব করার কারন আছে,সাথে আমারও খুব ভালো লাগছে,
এতোদিন আমি যদিও তোকে সাপোর্ট করে গেছি,কিন্তু ড্রোনটা যখন উড়ছিলো না,
তখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম,কিন্তু আজকে তো ড্রোনটা কামাল করে দিলো…!
মাহফুজ, হাহহ সবার সব কথাই শুনলাম,
এখন মা বাবা তোমরা সবাই বাসায় চলে যাও,আমি ছেলেটাকে দেখে রাখবো,
আর রাতে বাসায় চলে যাবো পরিস্থিতি ভালো হলে,ওহহহ আর একটা কথা,রাহাত কোথায়..?
ওকে তো দেখলাম না,
সেফা, রাহাত ভাইয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি,আর আপুও চলে এসেছে বাসায়,আমাদের ক্যাম্প আর একদিন থেকেই চলে আসবে,তাই আর থাকার প্য়োজন পরে নাই,
মাহফুজ, আচ্ছা ঠিক আছে,তুই বাবা মাকে নিয়ে বাসায় চলে যা,
আমি পরে আসছি,আর আমার গাড়ি থেকে ড্রোনটাকে নিয়ে যেও,
তারপর সবাইকে এগিয়ে দিয়ে আবার হসপিটালে চলে আসলাম,
ছেলেটাকে সমস্ত রকমের ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করে দিলাম,
ডক্টর বললো আগামিকাল বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে,
তাই আমি রাতেই বাসার দিকে রওনা দিলাম,
সারাদিনের এতো জার্নিতে শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগতে শুরু করলো,
বাসায় গিয়ে ভালো ভাবে রেষ্ট নিতে হবে,
বাসায় পৌছে গাড়িটাকে গ্যারেজে রাখলাম,তারপর কলিংবেল দিতেই সেফা এসে দরজা খুলে দিলো,
তারপর ভিতরে ঢুকতেই তো চোখ কপালে,
বাবা মায়ের সাথে মিলে আমার ড্রোনটার যত্ন নিচ্ছে,আমি অবাক হয়ে সেফার দিকে তাকালাম,
–আরে সেফা এটা আমি ঠিক দেখছি..?
–হ্যা রে ভাইয়া তুই যা দেখছিস ঠিকই দেখছিস বাবা বাসায় এসেই ড্রোনটার যত্ন নিচ্ছে,
আমিও তো দেখে অবাক হয়ে গেছি,
–ওহহহ তাহলে আমার ড্রোনটা শেষকালে মালিকের হাতে পৌছালো..?
এই যে বাবা আমার ড্রোনটাকে একটু ভালে করে যত্ন নাও,এতোদিন ধরে তো শুধু তোমার বকা খেয়েছে,
বাবা, হ্যারে আজকে থেকে অনেক ভালো করেই যত্ন নিবো,এখন তুই যা,
তোর রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে,সবাই মিলে খেতে বসবো,
মাহফুজ, আচ্ছা ঠিক আছে বাবা,তারপর নিচের ঘরের দিকে গেলাম,
দরজা খুলতে গিয়ে দেখি ভিতরে থেকে লক করা,
কি ব্যাপার..!
আমার রুমে আবার কে আসলো..?
আমার রুমে তো কাউকে থাকতে দিই না আমি,তাহলে আমার রুমে ঢুকলো কে..?
আমার পরিবারের সবাই তো বাইরেই আছে,
বেশ রাগ হয়ে গেলো,দরজা আবার টান দিতেই আমার শরীরের উপর কেউ এসে পরে গেলো।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com