Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -১৫

ইকরাঃ একবার সরি বলতাম,,,, যোগাযোগ করা যাবে,,,,?
সুজনঃ আমি ওর ফ্রেন্ড,,,, ওয়েট কল করে দেখছি,,,।
ইকরাঃ ওকে,,,,,
ক্রিংক্রিংক্রিং
নিশিতাঃ (এই সুজন আবার এখন কল কেনো দিচ্ছে,,,?) হ্যালো,,,,
সুজনঃ বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিস,,,,?
নিশিতাঃ সেই কখন চলে এসেছি,,, কেনো তুই জাসনি,,,?
সুজনঃ মিস ইকরা তোর সাথে কথা বলবে,,,,
নিশিতাঃ ইকরা,,,,?
সুজনঃ পার্কের,,,,,,
নিশিতাঃ তুই এখনো যাসনি পার্ক থেকে,,,?
সুজনঃ না,,, নে তুই কথা বল,,,
নিশিতাঃ আমি কী কথা বলবো,,,,,?
ইকরাঃ আসসালামু আলাইকুম,,,,, আমি ইকরা,,, পার্কে যাকে দেখেছেন,,,।
নিশিতাঃ ও,,,ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,,, (আরে ভুলেই গিয়েছিলাম এর সাথে যোগাযোগ করার কথাই তো ভাবছিলাম,,,,)
ইকরাঃ আসলে আমি সরি বলতে কল দিয়েছি,,, আমি না জেনে আপনাকে অনেক বাজে কথা বলেছি,,,, আমি সত্যি দুঃখীত,,,,
নিশিতাঃ ভালোবাসো বর্ষণ ভাইয়াকে,,,,?
ইকরাঃ হ্যাঁ,,,,, অনেক বেশি ভালোবাসি,,,কিন্তু তার সবটা জোরে আপনার বসবাস,,, অনেক চেষ্টা করেছি নিজের জন্য একটু জায়গা তৈরি করতে,,,, কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছি,,,, এখন বুঝতে পারছি আপনি মানুষই এমন যাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না,,,,।
নিশিতাঃ তোমার পরিবারের কেউ জানে,,,,,?
ইকরাঃ আমার বড় ভাইয়ার বন্ধু বর্ষণ ভাইয়া,,,, সেখান থেকেই উনাকে চিনি,,,, ভাইয়াও জানে বর্ষণ ভাইয়া আপনাকে ভালোবাসে,,,, আর যদি জানতে পারে আমি বর্ষণ ভাইয়াকে বিরক্ত করছি তাহলে আমাকে মেরেই ফেলবে,,,,,।
নিশিতাঃ আমি না থাকলে তো কোনো সমস্যা নেই,,,, তারপর ধীরেধীরে উনার মনে তোমার জন্য জায়গা করে নিও,,,
ইকরাঃ আপনি কোথায় যাবেন,,,,?
নিশিতাঃ সেটা তোমার চিন্তা করতে হবে না,,,, তুমি নিজের কথা চিন্তা করো,,, আমি তোমাকে সুযোগ তৈরি করে দিতে পারবো,,, বাকিটা তোমার নিজেরই করতে হবে,,,,
ইকরাঃ ঠ,,,ঠিক আছে,,,,,,
নিশিতাঃ খুব তাড়াতাড়ি তোমার সাথে দেখা করবো বাকিটা তখন নাহয় বলবো,,,,
ইকরাঃ ওকে,,,,,
নিশিতাঃ (কল কেটে কী করা যায় ভাবতে লাগলাম,,,, শ্রাবণকে আমি কখনো ভালোবাসিনি,,,, একটা ভালো বন্ধু মনে করতাম,,, যার সাথে মন খোলে কথা বলা যায়,,, কিন্তু বর্ষণ ভাইয়ার সাথে কখনো সহজ হতে পারিনি,,, তার কারণ কখনো বুঝতে পারিনি,,,, উনাকে ভালোবাসি এমন কিছুও নয়,,, এসব নিয়ে কখনো চিন্তাও করিনি,,, কিন্তু আজ কেনো জানি মাথা থেকে বেরই করতে পারছি না,,, রাতে উনার সামনে যেতেও কেমন আনইজি ফিল হচ্ছিলো,,,, এভাবে কিছু দিন কেটে গেলো,,, খালামুনি এখন একটু ভালো আছে,,, এখন একটু একটু হাঁটতে পারে,,, নিজে নিজে ওয়াশরুমে যেতে পারে,,, এই কয়েকদিন বর্ষণ ভাইয়াকে আমি অনেক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি,,, উনিও কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে,,, আজ খালুজান আসছে খালামুনিকে দেখতে,,,, তার জন্য সকাল থেকেই রান্না করছি,,,)
ক্রিংক্রিংক্রিং
নিশিতাঃ(হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে তাকিয়ে দেখি খালুজানের নাম্বার,,,) খালুজান আপনি কোথায়,,,,, সেই কখন বললেন চলে এসেছি এখনো এসে পৌঁছালেন না,,,,,
খালুজানঃ আমি হাসপিটালে,,,,
নিশিতাঃ ক,,,কী হয়েছে,,,, আপনি হসপিটালে কেনো,,,,?
খালুজানঃ আমি কতদূর এলাম সেটা জানার জন্য বর্ষণ কল দিয়েছিলো,,, কথা বলতে বলতে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়,,,, তারপর আমি হ্যালো হ্যালো করতে থাকি কিন্তু বর্ষণের কোনো আওয়াজ আসছিলো না,,,,
নিশিতাঃ স,,,সব ঠিক আছে তো,,,,,?
খালুজানঃ কিছু ঠিক নেই,,, বর্ষণ ** হসপিটালে আছে,,, ও,,,ওর অবস্থা ভালো নয়,,,,
নিশিতাঃ(হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো,,,, বারবার আমার সাথেই কেনো এমন হয়,,,, হসপিটাল যে বড্ড ভয় পায়,,,, মুহূর্তেই চোখের সামনে পুরনো স্মৃতিগুলো একে একে ভেসে ওঠলো,,,,, না না উনার কিছু হতে পারে না,,, এবার উনার কিছু হলে আমিও এটা বিশ্বাস করে নিবো আমি একটা অভিশাপ আর তা হতে পারে না,,,, চোখ মুছে,,, পরে থাকা ফোনটা নিয়ে রুমে থেকে কিছু টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলাম,,,,)
আন্টিঃ তুমি এমন হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছো,,,,?
নিশিতাঃ আপনি খালামুনির একটু খেয়াল রাখবেন,,,, আমি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো,,,,
আন্টিঃ কিন্তু যাচ্ছো কোথায়,,,,?
নিশিতাঃ এসে বলবো,,, আপনি খালামুনির খেয়াল রাখবেন প্লিজ,,,,,।
আন্টিঃ ঠিক আছে,,,,,,,
নিশিতাঃ(তাড়াতাড়ি হসপিটালের দিকে যেতে লাগলাম,,,, চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে,,,, উনার কিছু হয়ে গেলে আমি খালামুনির সামনে দাঁড়াতে পারবো না,,,,, আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ থাকবে না,,,, নিজের কাছেও প্রমাণ হয়ে যাবে আমি অপয়া,,,,, পথ যেনো শেষই হচ্ছে না,,,, কিছুক্ষণের মধ্যে হসপিটালে পৌঁছে গেলাম,,,, রিসেপশনে জেনে দৌঁড়ে পাঁচতলা ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি খালুজান মাথায় হাত দিয়ে বসে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে,,,,) খালুজান,,,,,
খালুজানঃ ওর কিছু হয়ে গেলে আমি আর তোর খালামুনি এবার সত্যি মরে যাবো,,,,(ডুকরে কেঁদে উঠে,,)
নিশিতাঃ কিছু হবে না উনার,,,,(কাঁদতে কাঁদতে)
খালুজানঃ তাই যেনো হয়,,,,
নিশিতাঃ(খালুজানের পাশে বসে পড়লাম,,,, একটু পর ডক্টর বের হয়ে এলো,,,, খালুজান আর আমি দাঁড়িয়ে গেলাম ডক্টরকে দেখে) ডক্টর,,,,,?
ডক্টরঃ রোগীর অবস্থা বেশি ভালো নয়,,,,,,,
নিশিতাঃ(এটা শোনার পর খালুজান ধপ করে বসে পড়লেন,,,,, আমিও ধপ করে বসে পড়লাম,,,)
ডক্টরঃ আপনারা একজন আমার সাথে আসুন,,,, কিছু কথা আছে,,,
নিশিতাঃ খালুজান তুমি বসো আমি আসছি,,,,,(খালুজানকে বসিয়ে রেখে আমি ডক্টরের সাথে চলে গেলাম,,,, উনার কেবিনে গিয়ে বসলাম,,,,)
ডক্টরঃ মাথায় আঘাত লেগেছে আর গাড়ির কাচ ভেঙে পেটে ঢুকে গেছে,,,, একটা কিডনি পুরো ড্যামেজ হয়ে গেছে আমরা সেটা বাদ দিয়ে দিয়েছি আর অন্যটার অবস্থাও খারাপ,,, একটা জিনিস বুঝতে পারছি না এক্সিডেন্টের জন্য পেটে এভাবে কাচ ঢুকলো কীভাবে,,,, দেখে মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে ঢুকিয়ে দিয়েছে,,,, এখন ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটা কিডনি দিতে হবে নাহলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়,,,
নিশিতাঃ ত,,,তাহলে তাই করুন,,, টাকার চিন্তা করবেন না,,,, যতো টাকা লাগবে আমরা দিবো,,, কিন্তু প্লিজ উনাকে বাঁচান,,,,।
ডক্টরঃ টাকার জন্য নয়,,, আমি জানি টাকার সমস্যা হবে না কারণ মিস্টার খানকে আমি পারসোনালি জানি,,, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিডনি জোগাড় করা,,, কারণ উনার রক্তের গ্রুপ খুব রের,,,,।
নিশিতাঃ উনার বাবার সাথে তো মিলবে,,, আর আমি জানি খালুজান মানা করবেন না,,,,
ডক্টরঃ কিন্তু এই বয়সে উনার অপারেশন করা অনেক রিস্কি আর বয়সেরও অনেক ব্যবধান,,,।
নিশিতাঃ উনার রক্তের গ্রুপ কী,,,?
ডক্টরঃ AB- আমাদের এশিয়া মহাদেশে মাত্র ০.১% মানুষের রক্তের গ্রুপ AB- হয়,,,, যেখানে রক্তের জোগাড় করাই কঠিন সেখানে কিডনি কীভাবে জোগাড় করবো,,,, উনার কপাল ভালো হসপিটালে দুই ব্যাগ রক্ত ছিলো,,,, তাই এখনো বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি আমরা,,,, এক ব্যাগ প্রায় শেষ হতে চললো,,, চারদিকে রক্তের জোগাড় করার জন্য খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু কিডনি,,,,,?
নিশিতাঃ আমার রক্তের গ্রুপও AB- ,,,,,, আমি দেবো উনাকে কিডনি,,,,,
ডক্টরঃ what,,,,, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনারই রক্তের প্রয়োজন,,, আপনি কিডনি দেবেন,,,,। আর একসাথে দুজনের অপারেশন করতে গেলে কতো রক্ত লাগবে আপনি জানেন,,,,? এতো রক্ত কোথায় পাওয়া যাবে,,,? আর তাছাড়া আপনার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া আমরা এটা করতে পারবো না,,,,
নিশিতাঃ আমি এতিম,,, আমার কিছু হয়ে গেলে আপনাকে কেউ কিছু বলতে আসবে না,,,, আমার জন্য কারো বুক খালি হবে না,,, কিন্তু উনার কিছু হয়ে গেলে আরো দুজন মানুষও মরে যাবে,,,, আর তাছাড়া আমি সাবালিকা আমার সব ডিসিশন আমিই নেই,,, আপনি প্লিজ আগে আমার পরিক্ষা করুন আমার কিডনি নেওয়া যাবে কিনা,,,, তারপর বাকিটা দেখা যাবে,,,,।
ডক্টরঃ আপনি প্লিজ ভালো করে ভেবে বলুন,,, একটা কিডনি দেওয়া মানে স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা বেছে নেওয়া,,,
নিশিতাঃ প্লিজ আপনি কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না,,,,
ডক্টরঃ ঠিক আছে,,, চলুন,,,,
নিশিতাঃ এক মিনিট,,,, এখন দয়া করে খালুজানকে এসব কিছু জানাবেন না,,,, গিয়ে বলবেন উনি এখন একটু ভালো আছে,,,, প্লিজ,,,
ডক্টরঃ ওকে,,,
নিশিতাঃ(ডক্টর আমার কথা মতোই খালুজানকে বুঝিয়ে বললেন,,, তারপর উনার সাথে চলে গেলাম পরিক্ষা করতে,,,, প্রয়োজনীয় পরিক্ষা করা হলে আবার খালুজানের কাছে গিয়ে বসে রইলাম অনেকক্ষন,,,, এক ঘন্টার মধ্যে সব রিপোর্ট চলে আসবে,,, ইমার্জেন্সি করা হয়েছে,,,,, উনাকে এখন আইসিইউতে রাখা হয়েছে,,, বাইরে থেকে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,,,, চিন্তা করবেন না,,, আমি আপনার কিছুই হতে দেবো না,,, প্রয়োজন হলে নিজের জীবনের বিনিময়ে আপনাকে আপনার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিবো,,,, একবার আপনার মায়ের বুক খালি হয়েছে,,, এবার আর আমি তা হতে দেবো না,,,,।)
খালুজানঃ উনারা তোমার কিসের পরিক্ষা করলো,,, আর কেনো করলো,,,?
নিশিতাঃ(উনাকে এখন কী বলবো,,,?) ইয়ে মানে,,,,,
নার্সঃ মিস নিশিতা,,,, আপনার রিপোর্ট চলে এসেছে,,, ডক্টর আপনাকে ডাকছে,,,
নিশিতাঃ খালুজান আপনি বসুন আমি আসছি,,,, চিন্তা করবেন না আমি কিছু হতে দেবো না উনার,,,,(খালুজান আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,,, একটা আঘাত এখনো সামলে উঠতে পারেননি আবার একটা আঘাত কীভাবে সামলে নেবে,,,,?) ডক্টর আসবো,,,
ডক্টরঃ হ্যাঁ আসুন,,,,(মুখ কালো করে,,,)
নিশিতাঃ Doctor,,,, anything wrong,,,,,?
ডক্টরঃ আমার পক্ষে আপনার অপারেশন করা সম্ভব নয়,,, চারমাস আগে আপনার কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো,,,?
নিশিতাঃ জ,,,জী কেনো,,,,?
ডক্টরঃ সেখানে আপনার কিছু ইন্টারনাল ইনজুরি হয়ছিলো,,,, কিন্তু আপনি তার কোনো ট্রিটমেন্ট নেননি,,, এখন আপনার অপারেশন করা অনেক বেশি রিস্কি হয়ে গেছে,,, আর আপনার শরীরও অনেক দূর্বল,,,,
নিশিতাঃ প্লিজ এমন বলবেন না,,,, উনার একটা জীবনের সাথে আরো দুটো জীবন জরিয়ে আছে,,, আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও উনাকে বাঁচান,,,,
ডক্টরঃ আমরা ডক্টর,,,, কসাই নই,,, একজনের জীবন বাঁচাতে আমরা অন্যজনের জীবন কেঁড়ে নিতে পারবো না,,,, সরি,,,,
নিশিতাঃ (কী করবো এখন আমি,,,?)
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com