Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -১২

নিশিতাঃ খালামুনি আমার আজ একটু বাইরে যেতে হবে,,
খালামুনিঃ কেনো,,,, কোথায় যাবি,,,?
নিশিতাঃ ভার্সিটি যাবো একটু,,,,, আর তো মাত্র কয়েকটা দিন,,, তারপর এখানেই একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হবো আর একটা জবের ব্যবস্থা করে নিবো,,, ছোট খালামুনির বোঝা হয়ে আর কতো থাকবো,,,
খালামুনিঃ আমি তোকে বলেছিলাম বর্ষণের থেকে দূরে থাকতে,,, (কঠিন গলায়)
নিশিতাঃ চিন্তা করো না খালামুনি,,,,
এখান থেকে চলে যাওয়ার পর বর্ষণ ভাইয়া কেনো,,,
তোমরাদেরও আর কোনদিন এই নিশিতার মুখ দেখতে হবে না,,,
নিশিতার কালো ছায়া আর কখনো তোমাদের জীবনে পড়বে না,, কথা দিলাম,,,
খালামুনিঃ(নিশিতার কথাগুলো কেনো যেনো তীরের মতো বুকে বিঁধল,,,,
মনে হচ্ছে আমার আরো একটা সন্তান আমার থেকে দূরে যেতে চলছে,,,,
খালা তো মায়ের আরেক রুপ হয়,,,
কিন্তু মেয়েটাকে কখনো নিজের সন্তানের চোখে দেখা হয়নি,,,
কী করবো বোনটাকে যে বড্ড ভালোবাসতাম,,,?
ওকে দেখতে সোহানার কথা খুব মনে পরে,,,
শুধু মনে হয় ওর জন্যই তাকে হারিয়েছি আর শ্রাবণ,,,?
কোন মা হয়তো পারবে না নিজের সন্তানের থেকে বোনের সন্তানকে বেশি ভালোবাসতে,,,,
এখন বর্ষন আমার একমাত্র সম্বল,,, ওকে নিয়ে আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না,,,
এতে নাহয় একটু খারাপই হলাম সবার কাছে,,,) কখন যাবি,,?
নিশিতাঃ তোমার খাওয়া শেষ হলে ঔষধ দিয়ে তারপর আমিও কিছু খেয়ে বের হবো,,,
খালামুনিঃ টাকা লাগবে কতো,,,?
নিশিতাঃ টাকা লাগবে না,,,, এখন শুধু খোঁজ নিবো একটু,,,
পরে ভর্তি হবো,,, আর গাড়ি ভাড়ার টাকা আমার কাছে আছে,,,,
খালামুনিঃ ঠিক আছে,,,, সাবধানে যাস আর তাড়াতাড়ি ফিরে আছিস,,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে,,,,
(খালামুনির খাওয়া শেষে ঔষধ খাইয়ে নিজেও কিছু খেয়ে নিলাম,,,
রুমে গিয়ে বর্ষন ভাইয়ার দেওয়া ড্রেস থেকে একটা কালো থ্রী-পিস পরে নিলাম,,,,
মুখে কোনো সাজ নেই,,,, চার মাস যে এখনো শেষ হয়নি,,, এখন অবশ্য সাজার আর ইচ্ছে ও নেই,,,
আয়নার সামনে দাঁড়ালাম,,,, এখন আয়নার সামনে খুব একটা আশা হয়না,,,,
তিন মাস পরে অন্য রঙে নিজেকে দেখে নিজের কাছেই কেমন যেনো লাগছে,,,
যার মন আর জীবনের রঙই হারিয়ে গেছে সেখানে বাইরের রঙ দিয়ে কী হবে,,,,
নিজের আর যত্ন নেওয়া হয় না,,, চেহারা অনেক নষ্ট হয়ে গেছে,,,
থ্রী-পিসের ওপর বোরখা আর হিজাব পরে নিলাম,,,,
চোখ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না,,, বাইরে এসে একটা রিকশা ডেকে নিলাম,,,,
আমি ভার্সিটি যাচ্ছি না,,, একটা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি,,, জবটা হয়ে গেলে এই শহর আর এই মানুষগুলো থেকে অনেক দূরে চলে যেতে পারবো,,,,
আমার অপয়া মুখ আর এদের দেখতে হবে না,,,,
জানি না জবটা হবে কিনা আমার যে কোয়ালিফিকেশন,,, কোম্পানিটা বেশি বড় নয়,,,
তাই হতেও পারে,,,,
ঠিকনাটা দেখে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি একটা বয়স্ক লোক রাস্তা পার হতে যাচ্ছে আর তার ডানপাশে থেকে একটা ট্রাক অনেক স্প্রিডে তার দিকে ধেয়ে আসছে,,,,
দৌড়ে গিয়ে হাত টান দিয়ে সরিয়ে আনলাম,,,,
আর ট্রাকটা স্প্রিডে পাশ কেটে বেরিয়ে গেলো) আপনি ঠিক আছেন দাদু,,?
লোকটাঃ হ্যাঁ দাদুভাই আমি ঠিক আছি,,, তুমি ঠিক আছো,,?
নিশিতাঃ (লোকটা মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম,,,
উনার চেহারা অনেকটা আমার বাবার মতো,,,
বাবাকে আমি দেখিনি তবে বাবা আর মায়ের ছবি আমার কাছে আছে)
লোকটাঃ কী হলো দাদুভাই,,,?
নিশিতাঃ আপনি,,,?
লোকটাঃ আমি জাহাঙ্গীর দেওয়ান,,,,, আর তুমি,,,?
নিশিতাঃ (সাথে সাথে উনার ধরা হাতটা ছেড়ে দিলাম,,,) নিশিতা দেওয়ান,,,,,,
লোকটাঃ ন,,,নি,,,,নিশিতা দেওয়ান,,,,?
নিশিতাঃ হ্যাঁ,,,, নিশিতা দেওয়ান,,,, জিহাদ দেওয়ান আর সোহানা ইসলামের একমাত্র মেয়ে,,,,
( আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে এলাম,,,, উনি এখনো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে,,,
হয়তো বুঝতে পারছে না কী করবে,,,,
নিজের একমাত্র ছেলের শেষ চিহ্ন দেখে বুকে টেনে নিবে নাকি নিজের একমাত্র ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করা নাতনিকে ধিক্কার দিয়ে দূরে সরিয়ে দিবে,,,,
দূরে তো আগেই সরিয়ে দিয়েছে এখন আর নতুন করে অপমানের অপেক্ষা না করে চলে এলাম,,,, কিন্তু উনাকে কে মারতে চাইছে,,,,?
ট্রাকটাকে দেখে মনে হচ্ছিল না,,, ভুল করে এভাবে আসছিলো,,,
মনে হচ্ছিলো ইচ্ছে করে কেউ উনাকে ট্রাক চাপা দিতে চাইছেন,,,,
কিন্তু কে করবে এমন,,?)
জাহাঙ্গীরঃ নিশিতা,,,,,? আমার নাতনি,,,, আর ছেলের শেষ চিহ্ন,,,,
নিশিতা,,,, দাঁড়া দাদুভাই,,,,
(উনার ডাক নিশিতা শুনতে পেলো না,,,কারণ সে অনেক আগেই চলে গেছে,,,,
উনি আশেপাশে নিশিতা খোঁজতে শুরু করলেন কিন্তু পেলেন না,,,,
এদিকে অন্য কেউ রাগে ফেটে পরছে,,,)
,,,,,,এই আপদটা কোথায় থেকে উদয় হয়েছিলো,,,
আজও বুড়োটাকে মারতে পারলাম না,,,কে এই মেয়ে,,,? মৃত্যুর মুখ থেকে বুড়োটাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলো,,,
,,,,,,,,আজ বেঁচে গেছে বলে কী সবসময় বেঁচে যাবে,,,? এি বুড়োকে তো মরতেই হবে,,,
যেভাবে এর ছেলেকে মেরেছি একইভাবে এই বুড়োকেও মারবো,,,,
আর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হবো আমরা,,,
,,,,,,,কিন্তু এই বুড়ো যে পর্যন্ত না মরবে সেটা তো অসম্ভব,,,
,,,,,,তাই তো বুড়োকে মরতেই হবে,,,,
কোথায় ভেবেছিলাম ছেলে মরে গেলে সব আমাদের দিয়ে দেবে কিন্তু কোথায় কী,,,,?
,,,,,,,এখন আবার ভীমরতিতে পেয়েছে,,, সব নাকি নাতনিকে দেবে,,,
নাতনির খোঁজ কোনোদিন পাবে না তুমি বুড়ো,,,
আর খোঁজে বের করলে সেটাকেও বাপমায়ের কাছে পাঠিয়ে দিবো,,,,
,,,,,,ঠিক বলেছিস,,,হাহাহা
(সবগুলো অট্টহাসিতে ফেটে পরছে,,,
আর একটু তাই তারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে,,,
এদিকে জাহাঙ্গীর দেওয়ান বাড়ি ফিরে নিজের ইজি চেয়ারে বসে পড়লেন চোখ বন্ধ করে,,,,
আর হারিয়ে গেলেন আরো বিশ_একুশ বছর আগে,,,,
এমন করেই ইজি চেয়ারে বসে ছিলেন আর তার স্ত্রী তাকে ডেকে তুলেছিলো,,,,)
*অতীত*
মুক্তা বেগম(নিশিতার দাদীমা) এই যে শুনছেন,,,?
জাহাঙ্গীরঃ হ্যাঁ বলো,,, শুনতে পাচ্ছি,,,
মুক্তাঃ নাতনি হয়েছে আমাদের,,,,
জাহাঙ্গীরঃ (চোখ মেলে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালাম মুক্তার দিকে,,,,
আবার চোখ বন্ধ করে নিলাম) আমার কোনো নাতনি নেই,,, তোমার হতে পারে আমার নয়,,,
ঐ অপয়া মেয়ে বা তার মায়ের কেনো জায়গা নেই আমার বাড়িতে,,,
ওদের জন্য আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি,,,
মুক্তাঃ বৌমা মারা গেছে,,,, সে আর এই পৃথিবীতে নেই,,,
একদম এতিম হয়ে গেছে আমাদের নাতনি,,,, (কান্না ভেজা গলায়,,)
জাহাঙ্গীরঃ (হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসলাম,,,
এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না,,,
মেয়েটাকে আমার ভালো লাগতো না কিন্তু মরে যাক তা কখনো চাইনি,,,,
আর ঐ মেয়েটা কী কপাল নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে,,,,?
সত্যি অপয়া ঐ মেয়ে,,, উঠে দাঁড়ালাম চলে যাওয়ার জন্য,,,)
মুক্তাঃ ওকে আমরা মেনে না নিলে দেওয়ান বংশের মেয়ে মানুষের লাঠি ঝাঁটা খেয়ে পথে পথে বড় হবে,,,
শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ওর জীবন,,,,
জাহাঙ্গীরঃ আমি ওকে দেওয়ান বংশের মেয়ে হিসাবে মানি না,,,,
মুক্তাঃ মানুন আর নাই মানুন এটাই সত্যি,,,,
ও দেওয়ান বংশের মেয়ে,,,, আপনার রক্ত,,,,,
জাহাঙ্গীরঃ ঐ মেয়েকে নিয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাই না আমি এই বাড়িতে,,৷
মুক্তাঃ আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন,,,,,,,,,
এই যে শুনছেন,,,,,,?
জাহাঙ্গীরঃ হুম,,,,(অতীতে হারিয়ে গিয়েছিলাম,,,,
মুক্তার ডাক শুনে তাকালাম,,,
সেদিন যদি মুক্তার কথা শুনে নিশিতাকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতাম
তাহলে আজ তাকে এতো খোঁজতে হতো না,,,)
মুক্তাঃ কী ভাবছেন,,,?
জাহাঙ্গীরঃ নিশিতাকে দেখেছি আজ,,, আমাদের দাদুভাইকে দেখেছি আমি,,,
আজ তার জন্য এতো বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি,,,,
মুক্তাঃ ক,,কোথায় দেখেছেন,,,? কী বলছেন এসব,,,?
জাহাঙ্গীরঃ (প্রথম থেকে সব খুলে বললাম মুক্তাকে,,,)
মুক্তাঃ দেখতে কেমন হয়েছে,,,,? জাহিদের মতো নাকি বৌমার মতো,,,
যার মতোই হোক অনেক সুন্দর হয়েছে নিশ্চয়ই,,,,
কারণ আমার জাহিদ আর বৌমা দুজনেই তো অনেক সুন্দর ছিলো,,,,
জাহাঙ্গীরঃ কার মতো হয়েছে সেটা তো বলতে পারবো না,,,, বোরখা পরা ছিলো,,,,,
মুক্তাঃ তাড়াতাড়ি খোঁজে বের করুন না নাতনিকে,,,,
মরার আগে একটু দেখে যেতে চাই,,,, ওপারে গিয়ে যেনো ছেলেটার কাছে অপরাধী না হয়ে যাই,,,,
জাহাঙ্গীরঃ ঠিক বলেছো,,, এই শহরেই যখন আছে,,, খুঁজে বের করবোই,,,,
আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি,,,,
বৌমার ভাই ভাবিরা যদি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে দিতো তাহলে এতো কষ্ট করতে হতো না,,,
মুক্তাঃ খোঁজে বের করুন,,,
জাহাঙ্গীরঃ হুম,,,,,
নিশিতাঃ (ইন্টারভিউ মোটামোটি ভালোই হয়েছে,,, কিন্তু মাথায় ঘুরছে অন্যকিছু,,,,
সব থাকতেও আমার কিছুই নেই,,,, আচ্ছা বাবা-মা থাকলেও কী আমার জীবন এমনই হতো,,,,?
হঠাৎ করেই রাস্তায় সুজনকে দেখলাম,,,
পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কানে ফোন,,,,, )
মামা থামেন থামেন,,,, এই সুজন,,,
তুই এখানে কী করছিস,,?
সুজনঃ তুই,,,,
নিশিতাঃ (ভাড়া মিটিয়ে সুজনের সামনে দাড়ালাম,,,,)
তুই এখানে কী করছিস,,,?
সুজনঃ একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম,,,,
তুই এখানে কীভাবে সম্ভব,,,? তোর ঐ ডাইনি শাশুড়ী,,,,?
নিশিতাঃ এভাবে কেনো বলছিস,,,,?
সেসব বাদ দে তুই কেমন আছিস আর বাকি সবাই কেমন আছে,,?
সুজনঃ সবাই ভালো আছে,,,, কিন্তু তোর বিষয়ে কিছুই বুঝলাম না আমি,,,
তোর শাশুড়ী ঐ দিন কী বলছিলো,,,? তোর হাসবেন্ড কোথায়,,,,?
নিশিতাঃ(সুজনের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম,,,,)
সেসব অন্য একদিন বলবো,,,, আজ আসছি,,, লেট হয়ে গেছে,,,,
সুজনঃ আরে যাবি মানে,,,, এতোদিন পর দেখা,,, আর এখনই চলে যাবি,,,
চল একটু বসি,,,,
নিশিতাঃ (সুজন আমার কথা না শুনেই পার্কের ভেতরে চলে গেলো,,,
আমিও বাধ্য হয়ে ভেতরে গেলাম,,,,
কিন্তু আমাদের থেকে একটু দূরে যাকে দেখলাম ভয়ে আমার হাতপা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,,,)
চলবে,,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com