প্রতারক | পর্ব-০২
আমি দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেলাম।আমার ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছি।ইচ্ছা করছিলো চিৎকার দিয়ে কাঁদি।কিন্তু তাও পারছি না।হঠাৎ করে কেউ আমার কাঁধে হাত রাখলো।তখন আমি চোখ মুছে সামনের দিকে তাকাতে ই দেখি আমার বড় ভাই আসিফ।আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করি।
তখন ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে কাঁদিস না বোন।দেখ আর্নিয়া আল্লাহ যা করে সব সময় ই মানুষের ভালোর জন্যে ই করে।।
–ভাইয়ার কথা শোনে আমি বললাম কীভাবে মেনে নিবো ভাইয়া যার সাথে আজ পাঁচ বছর ধরে আমি আহিরকে ভালোবাসি।এইটা সবাই জানে;;কিন্তু আহির কেনো হঠাৎ করে আমার সাথে এমনটা করলো।।আহির কী করে পারলো আমার সাথে এমনটা করতে।।
–আমার কথা শোনে ভাইয়া একটু হেসে বললো আরে তুই শুধু আহিরের দোষ ই দেখছিস।ঐ মিমি তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।ও তো সব জানতো তোর আর আহিরের ব্যাপারে।তাহলে ও কী করে পারলো এমন প্রতারণা করতে।।
–আমি বললাম আহির প্রতারক॥ও হয়তো নিজের ভালোবাসার জালে মিমিকে ও ফাঁসিয়েছে।হয়তো মিমি কিছু ই জানতো না।।
–ভাইয়া বললো শোন আর্নিয়া আজ তোর সাথে যা হয়েছে তার জন্যে আহির কোনোভাবে একা দোষী নয়।আর তাছাড়া ছেলে-মেয়ে দুজনের ই এক্ষেত্রে সমান দোষ থাকে আর আমার মনে হয় আহির আর মিমি দুজনে ই সমান দোষী।আর আজ যা হয়েছে তা তুই ভুলে যা।দেখবি আল্লাহ হয়তো তোর জন্যে এর চেয়ে ও আরও ভালো কিছু রেখেছে।
কথাগুলো বলে ই আমার ভাইয়া চলে গেলো।।
সেইদিন সারা রাত আমার একটু ও ঘুম হয় নি।চোখের পানিতে বালিশ ভিজে গেছে।শুধু বারবার আমার ওর সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো ই চোখের সামনে ভাসছে।
যখন বৃষ্টি হতো তখন আহির আমাকে বাড়ির বাইরের বাগানে ডাকতো সেখানে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজতাম।
যখন বৃষ্টিতে ভিজে আমার চুলগুলি এলোমেলো হয়ে যেতো
তখন আহির আমাকে বলতো আর্নিয়া এলোমেলো চুলে যেনো তোমাকে পরীস্থানের পরী রাণীর মতো লাগে।।
–আজ আহিরের বলা প্রতিটা মূহূর্ত আমি মিস করছি।
মিস করছি আহিরের সাথে কাটানো প্রতিটা মূহূর্ত।আহির কেনো আমার সাথে এমন করলো!!!
–সকালবেলা যখন আমার ঘুম ভাংঙ্গে তখন ঘড়িতে সাড়ে সাতটা বাজে।।
ইসঃ আজ আমার ফজরের নামাজটা ই পড়া হলো না।
মা আর ভাইয়া কেউ ই আজ আমাকে ডাকলো না।উফঃ ওরা ও না!!অসহ্য!!
–বিছানা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।
বেসিনের আয়নার দিকে তাকাতে ই আমি অবাক হয়ে যায়।।
কারন আমার চোখ দুটো খুব লাল হয়ে গেছে।হয়তো কালকে রাতে খুব কেঁদে ছিলাম তাই।
কোনো কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
-আজ সকালে নাস্তা না করে ই কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
প্রতিদিন নাস্তা না করে ঘর থেকে মা বের হতে ই দেয় না।
কিন্তু আজ আমার জেদের সামনে সবাই হেরে গেলো।।
–যখন কলেজে যাচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে পুরুষ কণ্ঠে কেউ আমাকে বলছে দেখ;;;দেখ;;;
আমাদের পুরো কলেজের লিড়ার যাচ্ছে।
যে কিনা আমাদের পুরো কলেজের সব দায়িত্ব পালন করে;;
আর শেষে কি না তার হুব বর ই বিয়ের পিঁড়িতে তার সামনে অন্য একজন মেয়েকে বিয়ে করে তার হাত ধরে চলে গেছে।হাঃ হাঃ হাঃ এইটা কী ভাবা যায়।কী লজ্জার ব্যাপার ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
পেছনে তাকিয়ে দেখলাম নিরব আর কয়েকটা ছেলে আমার পেছন পেছন আসছে আর কথাগুলো বলছে।
নিরব আসলে একটা বখাটে ছেলে।পুরো ক্লাসের মধ্যে এক নম্বরে বজ্জাত ছেলে।
নিরব আমাকে কয়েকবার প্রপোজ ও করেছিলো কিন্তু আহির ওকে মেরে নাক-মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে।
সেই থেকে নিরব আমার পেছনে পড়ে আছে।
নিরবের কথা শোনে আমি কোনো প্রতি উত্তর করলাম না।
সোজা হাঁটা শুরু করলাম।কারন এখন আমি আর কোনো ফালতু ঝামেলায় জড়াতে চাই না।
-প্রায় কলেজে পনেরো মিনিট হাঁটার পর কলেজে পৌঁছালাম।
আসলে আমার হাঁটার অভ্যাস আছে খুব।তাই বাসা থেকে কলেজ অবধি হেঁটে ই আসি।
কিন্তু আজ হাঁটতে আমার একদম ই ভালো লাগছিলো না।
কারন প্রতিদিন আহিরের সাথে গল্প করতে করতে কলেজে পৌঁছাতাম।
কিন্তু আজ একা ই আমার কলেজে আসতে হলো।
আসার পথে আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম আহিরকে।কিন্তু কোথাও দেখি নি।
-যখন কলেজে পৌঁছালাম তখন চারদিকের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কোথ থেকে আমার বান্ধবী তিথি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।
তিথি আমাকে বললো আর্নিয়া কী থেকে কী হয়ে গেলো।
আমি কিছু ই বললাম না।তিথিকে নিয়ে কলেজের ভেতরে চলে গেলাম।।
-কলেজের ভেতরে গিয়ে আমি আর তিথি দুজনে গল্প করছি।
তিথি খুব বকবক করছে।কিন্তু আমার ভালো লাগছে না।হঠাৎ করে,,
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com