Breaking News

ফিরে আয়

বিকাল বেলায় নদীর কুলে বসে আছি,ছোটবেলার একটা কাহীনি হঠাৎ মনে পরতেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো,তাই একটু নীরবে সময় পার করতে এখানে বসে আছি,ছোট বেলা থেকেই এই নদীটা আমার খুব আপন,কোনো সময় মনটা খারাপ হয়ে গেলেই এখানে এসে বসে থাকি।
একটু পরে মনে হলো কেউ আমার পাশে এসে বসলো,পাশে তাকিয়ে দেখি রাহাত আমার পাশে এসে বসেছে,ওর থেকে চোখটা সরিয়ে আবার অন্যদিকে তাকালাম,
রাহাত, কিরে সাগরের কথাটা কি আবার মনে পরে গেলো..?
মাহফুজ, হ্যা রে, আজকে হঠাৎ করেই ওর কথাটা মনে পরে গেছে,আমার ছোটবেলার পুরো সময়টাই ওর সাথে কাটিয়েছি,কিন্তু সেদিন স্কুল ছুটির পর হঠাৎ করেই সাগর হারিয়ে গেলো,ওকে অনেক খুজেছিলাম, কিন্তু আর কখনো পায় নাই,কিন্তু কয়েকদিন পরেই আমাদের কাছে ওর লাশ এসে পৌছালো,সেদিনের ঘটনাটা এখনো আমার হৃদয়টাকে জ্বালাতে থাকে।
রাহাত, সেই ঘটনাটা আমিও শুনেছি,কিম্তু সবটুকু শুনতে পারি নাই। অনেকদিনের ইচ্ছা,সেই কাহীনি টা তোর মুখ থেকে শুনবো। যদি পারিস, তাহলে আমাকে একটু বল এখন।
মাহফুজ, ওহহহ আমি তো মনে করেছিলাম,তুই ঘটনাটা শুনেছিস। আচ্ছা তুই যখন জানিস না,তাহলে আমি বলছি।
–সেদিন সকাল বেলায় স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম,খুব খুশি ছিলাম সেদিন,কারন আমাদের স্কুলে একটা অনুষ্ঠান হবে,আর সেটার জন্য আমরা পুরো বছর ধরে অপেক্ষায় থাকতাম,তো তৈরি হয়ে নেওয়ার পর ঘর থেকে বের হয়ে সোজা সাগরের বাড়িতে চলে গেলাম,
সাগরের বাড়ি আর আমাদের বাড়িটা একদম কাছে,তাই যেতে একটুও সময় লাগে না। সাগরের ঘরে গিয়ে দেখি ছেলে এখোনো তৈরি হচ্ছে,
— কিরে সাগর তুই তৈরি হয়েই যাচ্ছিস…! আচ্ছা তুই কি মেয়ে মানুষ নাকি যে এতো সাজগোজ করতে হবে..?
–আরে তুই এসবের বুঝবি কি। আমরা পুরো বছর ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকি। আর আজকে হলো সেই দিন। তো নিজেকে একটু ভালো করে উপস্থাপন করতে হবে না..?
— ওহহহ সেটাও তো ঠিক কথা। আমাকে তো দেখছি তোর থেকেই শিখতে হবে সব কিছু। আচ্ছা নবাবের পোলা,আপনার সাজগোজ হয়ে গেলে এখন কি আমরা যেতে পারি..?
–আরে হা আমি তৈরি হয়ে গিয়েছি,চল এখন দুজনে নাচতে নাচতে চলে যায়। হা হা হা
— তুই আর জীবনে পাল্টাবি না। একই রকম থেকে যাবি। আচ্ছা চল এখন।
তারপর দুজন মিলে স্কুলের দিকে রওনা দিলাম, আসলে সাগর যতটা দুস্টু,ঠিক তার চেয়ে দ্বিগুন ভালো। সাগর আর আমি স্কুল জীবন শুরু থেকে এই পর্যন্ত খুব ভালো ছাত্র হিসাবে পরিচিত,আমাদের নাম্বার কখোনো নব্বই এর ঘরের নিচে নামতো না।
যাই হোক দুজন মিলে স্কুলে পৌছে গেলাম। তারপর বন্ধুদের সাথে অনেক মজা করে অনুষ্টানটা শেষ করলাম। অনুষ্ঠানের পর আমাদের খাওয়ার আয়োজনও করা হয়েছিলো। সবকিছু শেষ করার পর সাগর বললো ওয়াসরুমে যাবে। আমি যেন গেটের বাইরে গিয়ে দাড়ায়।
ওর কথা মতো আমি গিয়ে স্কুলের গেটে দাড়িয়ে থাকলাম,কিন্তু ২০ মিনিট কেটে গেলো,সাগর আর আসছে না, বিষয়টা একটু খটকা লাগলো আমার কাছে,এমনটা কখনো সাগর করে না। তারপর আমি গিয়ে ওর খোজ করলাম,কিন্তু পুরো স্কুলে সাগরকে খুজে পাওয়া গেলো না। আমি যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলাম তখন,অনেক বার নিজের জ্ঞান হারিয়েছি সাগরকে না পাওয়ার কষ্টে।
অনেক খোজাখুজি করার পরও সাগরকে পাওয়া গেলো না।
হঠাৎ করেই সেই হৃদয় পোড়ানো ঘটনা ঘটলো।
কিছু লোক একদিন সাগরের লাশ আমাদের বাড়িয়ে নিয়ে আসলো।
যেটা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
সাগরের লাশ দেখার পর আমি দুই মাস খুব অসুস্থ ছিলাম।
কারন সাগরের মৃত্যুর শোকের ব্যাথা কাটতেই আমার দুইটা মাস সময় লেগেছিলো।
ওকে আমি নিজের আপন ভাইয়ের মতো দেখতাম।
রাহাত, এই আজকেই পুরো ঘটনাটা জানতে পারলাম,
আমার তো চোখ দিয়ে অনর্গল পানি বেয়ে পরছে,
কিন্তু মাহফুজ তুই এখন ওর কথা যতো ভাববি,
ততো তোর মন কষ্টে ভরে উঠবে,এখন বাসায় চলতো।
তোকে এভাবে দেখে আর আমার ভালো লাগছে না।
বাসায় চল,দেখবি তোর মন আবার ভালো হয়ে যাবে।
মাহফুজ, হ্যা ঠিকই বলেছিস,চল দুজনে বাসায় চলে যায়।
তারপর রাহাতের সাথে বাসার দিকে রওনা দিলাম,
ওহহহ আমার পরিচয়ই তো দেওয়া হলো না। আমি মাহফুজ,
বাবা মায়ের আদরের ছেলে,আমার পরিবারে আমার আরো দুইটা বোন আছে,
আর রাহাত হলো আমার অজানা এক আপন ভাই।
কারন ছোটবেলায় আমার মা রাহাতকে চাইল্ড কেয়ার সংস্থা থেকে নিয়ে এসেছিলেন,
কারন রাহাতের বাবা মা কেউ নাই,ছোটবেলায় তার বাবামা মারা গেছে,
সেই থেকে দুজন আপন ভাইয়ের মতো,রাহাত মিলে এখন আমরা দুই ভাই আর দুই বোন।
দুজনে বাসায় চলে আসলাম, তারপর সবাইকে নিয়ে সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে বসলাম,
রাহাত আমাদের আড্ডার সেরা প্লেয়ার,অল্প সময়ের মধ্যেই জমজমাট একটা পরিবেশ তৈরি করে ফেলে।
সবাই মিলে অনেক সময় আড্ডা দিলাম,একটু পরেই মা রাতের খাবারের জন্য ডাকলো।
মাহফুজ, এইতো মা আসছি,তুমি টেবিলে খাবার রেডি করো।
এই রাহাত সবকয়টাকে নিয়ে টেবিলে চলে আয়,আমি গেলাম।
তারপর টেবিলে গিয়ে খেতে বসে গেলাম।
রাহাত সুমা আর সেফাকে নিয়ে টেবিলে চলে আসলো,
সুমা আর সেফা হলো আমার দুই বোন। সুমা আমার থেকে বড়,বিয়ে হয়ে একটা বাচ্চাও আছে,
আর সেফা পড়ালেখা করছে।
সেফা, দেখ না ভাইয়া,এই রাহাত আর সুমা আমাকে জোড় করে নিয়ে এসেছে,আসতে চাইনি,
তাই জোড় করে নিয়ে এসেছে,
সুমা, এই তুই কি একটু চুপ করবি হা..?
শুধু ছোটদের মতো নালিশ করতে পারিস,এছাড়া কি আর কিছু শিখিস নাই না কি..?
রাহাত, ওরে একটু টাইট দিতে হবে,কি বলো সুমা আপু..??
মাহফুজ, এই যে তোরা এবার একটু চুপ কর তো।
আমার মিষ্টি বোনটাকে একা পেয়ে সবাই তো খুব শাসন করছিস,
সেফা তোর কোনো চিন্তা নাই,আমি তোর পাশে আছি।
সেফা, হা ভাইয়া তুমি আমার সাথে থাকলেই হবে,তুমি আমার একমাত্র ঢাল হয়ে থাকবে।
মাহফুজ, আচ্ছা সবাই এখন খেয়ে নে,আবার সকালে তোদের সাথে কথা হবে,
আমার একটু কাজ আছে আমার রুমে,তাই আমি চলে গেলাম,
সবার সাথে সকালে দেখা হবে।
রাহাত, মাহফুজ তোকে আংকেল একসময় দেখা করতে বলেছে,
মাহফুজ, সেই কথাটা আগে বলবি তো,আচ্ছা আমি বাবার সাথে কালকে কথা বলবো।
তারপর নিজের রুমে চলে আসলাম,কম্পিউটার অন করে দেখলাম কিছু মেসেজ এসেছে,
আসলে আমি মোটামুটি আউটসোর্সিং এর কাজ করি,
আর পড়ালেকা শেষ,এখন চাকরি করার ইচ্ছা নাই।
কম্পিউটারে একটা মিউজিক অন করে দিয়ে বিছানায় আসলাম,
হঠাৎ করে টেবিলের উপরে চোখ পড়লো,আমি একটা ড্রোন বানাচ্ছি নিজে চেষ্টা করে,
ড্রোন তো তৈরি করে ফেলেছি,কিন্তু ড্রোন মহাশয় উড়তেই চাইছে না।
এবার ওটাকে টেবিল থেকে নামিয়ে কাজ করতে লাগলাম।
একটু পর রিমোট হাতে নিয়ে সুইচ অন করলাম, ওহহহ ড্রোনটা উড়েছে,
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো একটু পরেই পরে গেলো নিচে। তখন ড্রোনের উপরে খুব রাগ হতে লাগলো।
আরে ড্রোন বেটা..!
তুই কবে উড়তে শিখবি বল তো…?
তোর জন্য কতো কিছুই না করছি,
নিজে নিজে ড্রোন বানাচ্ছি,
যাতে কোনো বিপদে নিজের ড্রোনটাকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারি।
এই ড্রোনটা বানানোর সময় বাবা যে কতো কথা আমাকে শোনায় সেটা বলার বাইরে।
তার একটা কথা,আমার এই অকেজো ড্রোমটা কখনো উড়তে পারবে না।
কিন্তু আমি বাবাকে বলেছি যে আমার ড্রোনটা উড়বেই,
সেটা যেভাবেই হোক আমি করেই ছাড়বো,
আরো কিছুক্ষণ আমার ড্রোনটা নিয়ে কাজ করলাম,কিন্তু চোখে অনেক ঘুম এসে জড়ো হলো,
তাই মেইন লাইট টা অফ করে ডিম লাইট অন করে ঘুমিয়ে পড়লাম,
সকাল বেলায় কিছু একটার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো,আস্তে করে চোখটা খুললাম,
দেখি একটা ছায়া আমার পাশে কিছু একটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে……!
চলবে……

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com