ডাব বিক্রেতা । পর্ব -০৪
কাব্যঃ জেরিন আপু মুখটা ওমন করে আছো কেন?
জেরিনঃ কাব্য আমি মনে হয় এবার ও ( মন খারাপ করে)
কাব্যঃ তুমি আসলেই একটা গাধী। নিচে রোল না খুজে প্রথমে খুজো ( হাসি মুখে)
জেরিনঃ দাত ক্যালাস না।
কাব্যঃ থাকো আমি যায় ওরা কি করে দেখি।
জেরিনঃ যা।
কাব্য চলে গেলো ।জেরিন মনটা খারাপ করে কাব্যের কথা মতো প্রথম দিকে রোল খুজছে। জেরিনের চোখ আটকে গেলো। চোখ দিয়ে এক নিমিষেই পানি ঝড়ে পড়লো। দৌড়ে চলে গেলো
কাব্য রাফসান জান্নাত মারিয়া তিশা সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে কথা বলছিলো। জেরিন দৌড়ে এসে খুশিতে রাফসানকে তারপর জান্নাত, মারিয়া, তিশা শেষ এ কাব্যকে জরিয়ে ধরিয়ে ধরলো। সবাই তো হতবাক
জেরিনঃ আমি পাশ করেছি। আমার কত আনন্দ লাগছে। কাব্য তোকে আমি কখনো ভূলবো না রে।।
তিশাঃ আমাদের ভূলে যাবা।
জেরিনঃ না৷ চল আজ পার্টি দিবো আর বাসায় বলবো ফেল করছি।
কাব্যঃ কেন
জেরিনঃ তাড়া তো ধরেই আছে আমি ফেল করে বসে আছি।
কাব্যঃ তা ও প্রথমে খুশির খবর দিবা দেখবা বিশ্বাস করবে না। তারপর কলেজে যখন শুনবে দেখবা খুব খুশি হবে
মারিয়াঃ কাব্য ঠিকি বলছে।
রাফসানঃ আপু চলো খিদা লাগছে আগে তো পার্টি করি।
জেরিন সবাইকে নিয়ে পার্টি করলো। অনেক খেলো। তারপর সবার বাসায় চলে আসলো
জেরিন বাসায় আসার সাথে সাথে
জেরিনের বাবাঃ এটা কিভাবে সম্ভব হলো জেরিন
মাঃ যেভাবেই হোক না কেন আমার মেয়ে ২য় হয়েছে এটা বা কম খুশির কি।
জেরিনঃ তোমরা কিভাবে জানলা ( অবাক হয়ে)
বাবাঃ স্যারে ফোন দিয়ে বলছে। কিভাবে সম্ভব হলো।।
মাঃ মা আয় তো অনেক ক্লান্ত খাবি।
জেরিনঃ খেয়ে আসছি
বাবাঃ জানতাম৷ বাপের টাকা আছে উড়াবি তো।
জেরিনঃ বাবা খুতা দিয়ো না। তাইলে কিন্তু আম্মুকে
বাবাঃ বোকা মেয়ে মজা করছি।
মাঃ কি বলবি আমাকে
জেরিনঃ ওটা তো বাবার সাথে মজা করছি তাই না বাবা।
বাবাঃ হুম।
মাঃ বুঝিনা তোদের বাপ মেয়ে কান্ড কারখানা। (চলে গেলো বলেই)
বাবাঃ মা আমার লক্ষিটি বাবাকে এভাবে ব্ল্যাক মেইল করে না। ছবিটা ডিলেট করে দে।
জেরিনঃ কেন তোমার সিগারেট খেতে সুবিধা হবে (বলেই চলে গেলো)
চলতে লাগলো দিনের পর দিন সবার সুন্দর জীবনগুলো । কিন্তু মাঝখান থেকে একটা ঝড় এসে সব উলট পালট করে দিয়ে গেলো।
একদিন
জেরিনঃ জান্নাত কাঁদছিস কেন?
জান্নাতঃ আপু (কেদে)
মারিয়াঃ কি হয়েছে বল
জান্নাতঃ আমার বাসা থেকে ছেলে দেখছে বিয়ে ঠিক করে ফেলছে। কি করবো এখন আমি।
জেরিনঃ কাব্য জানে।
জান্নাতঃ না
মারিয়াঃ তোর বাসায় বলছিস কাব্যের কথা।
জান্নাতঃ অনেকবার বলছি তারা মেনে নিবে না কখনো। ( আরো জোরে কেঁদে)
জেরিনঃ কাব্য কলেজে আসছে কি।
রাফসানঃ ঐ তো আসছে।
জেরিনঃ তোরা থাক আমি আসছি৷
জেরিন উঠে চলে আসলো
জেরিনঃ কাব্য শোন
কাব্যঃ বলো আপু
জেরিনঃ তুই জান্নাতকে সত্যি ভালবাসিস তো
কাব্যঃ হ্যা কিন্তু ( অবাক হয়ে)
জেরিনঃ ওকে তুই বিয়ে করতে পারবি৷
কাব্যঃ যাকে ভালবাসি তাকে তো বিয়ে করবো।
জেরিনঃ তোকে যদি বলি এখন বিয়ে করবি।
কাব্যঃ আপু আমি তো রাজি কিন্তু জান্নাত কি রাজি হবে আর ওর পরিবার।
জেরিনঃ সেটা তোকে ভাবতে হবে। তোর ফ্যামিলি কি মেনে নিবে জান্নাতকে।
কাব্যঃ তা জানি না তবে আমি বললে নিবে।কিন্তু কি হয়েছে বলবা তো।
জেরিন কাব্যকে সবটা বললো। কাব্য এটা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
জেরিনঃ তুই এখন তোর বাসায় যাবি এবং তোর পরিবার কি বলে জানা।
কাব্যঃ আমি যাবো আর আসবো।
কাব্য চোখ দিয়ে পানি মুছে বাসায় চলে গেলো।
জেরিনঃ জান্নাত তোর কাব্যকে বিয়ে করতে কোন অসুবিধা।
জান্নাতঃ আমি তো ওকে সারাজীবন আমার করে পেতে চায় আপু। কিন্তু আমার পরিবার ( কেদে দিয়ে)
জেরিনঃ পরিবারের কথা ভাবলে ভালোবাসাকে হারাতে হবে। কি করবি ভেবে বল।।
কাব্যঃ বাবা আমি বিয়ে করবো।
বাবাঃ বাবা তুই ঠিক আছিস তো। ( অবাক হয়ে)
কাব্যঃ হ্যা। আমি যাকে বিয়ে করে আনবো মেনে নিবা তো।
বাবাঃ কাব্যের মা কোথায় তুমি ব্যস্ত এদিকে আসো। তোমার ছেলের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
কাব্যঃ আমার মাথা ঠিকি আছে।
মাঃ কি হয়েছে কি
বাবাঃ তোমার ছেলে এই বয়সে বিয়ে করতে চায়। নিজের খরচ জোগাতে পারে না আবার অন্যকে ঘাড়ে ওঠাবে।
মাঃ বাবা কাব্য কি হয়েছে তোর।
কাব্যঃ আমি বিয়ে করতে চায়। আমি যাকে ভালবাসি তাকে আজ এই মূহুর্তে
বাবাঃ কাব্য তুই পড়াশোনা শেষ কর ভালো চাকরি কর তারপর ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিবো তোকে।
কাব্যঃ তোমরা মেনে নিবা কি না৷ আমি পড়াশোনা করবো না। কাজ করবো।
ঠাস ঠাস কাব্যের গালে চড় বসিয়ে দিলো কষে কাব্যের বাবা
বাবাঃ কি পেয়েছিস কি যখন যা বলবি তাই শুনবো। তুই যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে করিস তাহলে তোর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।
কাব্যঃ ওকে।।
কাব্য চলে আসলো। জেরিনকে সবকিছু বললো। জেরিন দুজনকে সাথে নিয়ে কাজী অফিসে নিয়ে দুজনকে বিয়ে দিলো।
বিয়ের পর কাব্যের কাছে ১০ হাজার টাকা আর মোবাইল নাম্বার একটা ঠিকানা বলে দিলো।
কাব্য আর জান্নাত পারি দিলো নতুন শহরে কিন্তু একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। বাস থেকে নামার পর রিক্সায় করে যাচ্ছিলো। তখন রিক্সাওয়ালা ওদের একটা জায়গায় নিয়ে ওদের কাছে যা ছিলো কেড়ে নিলো। রিক্সা ওয়ালার সাথে আরো লোকজন যোগ হয়েছিলো।
জান্নাতঃ কি হবে কাব্য
কাব্যঃ চিন্তা করো না কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। নতুন জায়গা মানুষ চিনি না বিপদে এভাবে সব কেড়ে নিলো।
জান্নাতঃ কি করবা এখন
কাব্যঃ চলো হাটি দেখি কোন ব্যবস্থা করতে পারি কি না।
এদিকে জেরিন ওদের বার বার ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু ফোনে পাচ্ছে না। ফোন অফ। ওর দেওয়া ঠিকানায় ও ফোন দিলো এখনো নাকি যায়নি। বাস কাউন্টারে যেয়ে খোজ নিলো ওরা নেমে গেছে। জেরিন চিন্তায় পড়ে গেলো ওদের কোন বিপদ হলো না তো।
এদিকে কাব্য আর জান্নাতকে পরিবারের সবাই খুজছে কিন্তু কোথা ও পেলো না।
কাব্য আর জান্নাত কিছুদূর যেতেই একটা নারকেল বাগান দেখতে পেলো। সেখানে একটা ঝুপড়ির মতো ঘর দেখতে পেলো। ঘরটার কাছে যেতেই
করিম মিয়াঃ কারা তোমরা এখানে কি করছো ( বাগান দেখাশোনা করে)
কাব্যঃ জ্বী চাচা আমরা
কাব্য সবকিছু বললো শুনে
করিম মিয়াঃ তোমরা তো জানে বেচে গেছো। চিন্তা করো না আমার সাথে এসো। কোন কাজ ঠিক করছো
কাব্যঃ না চাচা।
করিম মিয়াঃ ডাব বিক্রি করতে পারবা।
কাব্যঃ পারবো কিন্তু চাচা আমার কাছে তো টাকা নেই।
করিম মিয়াঃ চিন্তা করো না আমি তোমার সব ব্যবস্থা করে দিবো তুমি আমাকে পরে টাকা দিয়ে দিয়ো।
কাব্য আর জান্নাত অনেক খুশি হলো। করিম চাচা ওদের একটা ছোট্ট ঘর ঠিক করে দিলো তারপর তার নিজের একটা ভ্যান দিলো। নারকেল বাগান থেকে ডাব পেরে কাব্যকে দিতো কাব্য নিয়ে তা বিক্রি করতো হেটে হেটে। বিক্রি শেষ এ ডাবের টাকা দিয়ে যা লাভ হতো তা নিয়ে বাসায় ফিরলো
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com