Breaking News

মুখে ব্রণ । ৬ ও শেষ পর্ব

আসফি নিরা ভার্সিটির গেইটের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো হঠাৎ করেই গেইটের দিকে চোখ যেতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। জিম গাড়ি থেকে নামলো পাশে আশরাফ চৌধুরী দাঁড়ানো
-মামনি তুমি যাও আর হ্যা ছুটির পর আমি তোমাকে নিতে আসবো।
-ঠিক আছে আঙ্কেল।
জিম ভার্সিটির ভেতর ঢুকলো আশরাফ চৌধুরী গাড়ি নিয়ে চলে গেলো
নিরা আসফি দুজন দুজনের দিকে তাকালো তারপর
-কি হলো ব্যাপারটা। কি ভাবছি আর কি হলো।
-আমার মাথায় কিছুই আসছে না। গতকাল কি বললো 
আর আজ নিজেই গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গেলো। “
দুজন দুজনের মাথায় থাবা মারলো। “
জিম ক্লাসে ঢোকার আগেই কাব্য এসে জিমের সামনে দাঁড়ালো। 
জিম বলে উঠলো
-কি সমস্যা আপনার?

-কোন সমস্যা না। মুখে ঐটা লাগাননি কেন?
-ইচ্ছা হয়নি তাই লাগায়নি। আপনি বলার কে?
কাব্য চোখটা বন্ধ করে আবার খুলে জিমের মুখের স্ক্যার্ট খুলে। জিমের মুখে কিছু লাগিয়ে দিয়ে
-আমি জানতাম তুমি লাগাবে না। তাই নিজের কাছেই রাখছি।
-আপনি কিন্তু ঠিক করছেন না। আমি প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দিবো। “
-যার কাছে ইচ্ছে দাও কিছু হবে না।
কাব্য চলে গেলো৷ জিম মুচকি হেসে কাব্যের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে 
স্কার্ট দিয়ে মুখ বেঁধে ক্লাসে ঢুকলো।
কাব্য ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখন বন্যা এসে
-ভাইয়া আপনি অনেক ভালো। 
আপনার সাথে পরিচয় না হলে বুঝতে পারতাম না আপনি মানুষটা ঠিক কেমন?
কাব্য ভ্রু কুচকে
-কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি।
-না ভাই। কেন?

-এত সুন্দর করে বলছো তো তাই।
-যেটা সত্য তাই বলছি। কোনো ঝামেলা না ভালোবাসাটা একটু বেশিই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভার্সিটি ছুটির পর জিম ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতেই
আশরাফ চৌধুরীর গাড়ি এসে থামলো৷ গাড়িতে উঠে জিম চলে গেলো৷”
কাব্য আড্ডা মেরে বিকালে বাসায় ঢুকলো। ড্রইংরুমে ঢুকে চোখে ছানাবড়া পড়লো। 
চোখ দুটো ডলে আবার তাকালো । না ঠিকি দেখছে জিম আর বাবা একসাথে টিভি দেখছে। 
কাব্য একটু উচু সুরে
-আশরাফ চৌধুরী
জিম তাকিয়ে পড়লো৷ আশরাফ চৌধুরী হেসে দিয়ে
-মামনি কাজের ছেলেটা আসছে। ওকে বলো তাড়াতাড়ি রান্না করতে। 
রান্না না করলে খেতে পারবে না।
কাব্য অবাক আর রাগ নিয়ে
-আমি কাজের লোক। আমি”
কাব্যের কথা শুনে জিম হেসে দেয়
-যাও রেধে আনো।

কাব্য কিছু না বলে কিচেনে গেলো৷ রাগে শরীর জ্বলছে। মেয়েটার সামনে আমাকে।
কাব্য চাল ডাল এক সাথ করে এক হাড়ি পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিয়ে বের হয়ে এসে 
নিজের রুমে চলে গেলো। আশরাফ চৌধুরী বলে উঠলো
-তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হবে না। দিলে তো আবার বাশ।
রুমের ভেতর থেকে
-রান্না হলে খেয়ে নিয়ো বাবা। হেব্বি টেস্টি হবে। এখন কিচেনে যেয়ে দেখো পানিতে হয়েছে কি না। না হলে আরেকটু পানি দিয়ো৷ “
জিম বাপ বেটার কান্ড দেখে হাসছে আর অবাক।
রাতে ডিনারের টাইম সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে নিলো।
এভাবে চলতে লাগলো অনেকদিন। জিম এখন রান্না করে ভার্সিটি যাওয়ার আগে নাস্তা বানায় আর এসে খাবার। জিমের মুখের ব্রণ আস্তে আস্তে কমে আসলো৷ কাব্যের কড়া শাসনে জিম নিজের ইচ্ছা মতো কিছু করতে পারে না। রাত জেগে পড়াশোনা ও। বেশি রাত জাগলে এসে পানি ঢালবে মাথায়। ভোর পাচ টায় উঠিয়ে দেয় জিমকে। সকালের বাইরের আবহাওয়ার সুভাষটাই অন্যরকম এক অনুভূতি।

ভার্সিটিতে আজ অনুষ্ঠান। যে যার মতো করে সুন্দর করে সেজে আসবে৷ নিরা আসফি সহ সবাই সেজেগুজে ভার্সিটিতে আসলো৷ হঠাৎ করে সবার চোখ দুটো গেইটের সামনে গেলো৷ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নীল পাঞ্জাবী, নীল শাড়িতে দুজনকে হেব্বি লাগছে। নীরা আসফি দুজনের দিকে তাকিয়ে
-কাব্য ভাইয়া আর জিম
-এই জিম এত সুন্দর হলো কি করে। ওর মুখে তো কোনো ব্রণ নেই।
-আমার না মাথায় কিছু ঢুকছে না।
জিম আর কাব্য দুজনে নীল ড্রেস পড়ে আসছে। দুজনে পাশাপাশি হেটে এগিয়ে আসলো। তানজিল বন্যা নীরা আসফির সামনে দাঁড়ালো । তানজিলের মুখ থেকে বের হয়ে গেলো
-আপনাদের দুজনকে সেই লাগছে ভাইয়া ভাবি।
বন্যা তানজিলের দিকে তাকিয়ে
-ভাইয়া কি বিয়ে করছে নাকি। আমরা জানি না।

জিম লজ্জা পেলো
নিরা বলে উঠলো
-আমাদের ভেতর থেকে আমাদের ক্রাশকে এভাবে কেড়ে নিলো।
কাব্য হেসে দিয়ে
-কার কখন কার প্রতি মায়ায় জরিয়ে যাবে তা কেউ বলতে পারে না। আর কে কার উপযুক্ত তা না দেখে উপযুক্ত করে নিতে হয়। হ্যা আমি জিমকে ভালবাসি আর ওকেই বিয়ে করবো খুব শীগ্রই।
জীম কাব্যের মুখে এমন কথা শুনে সেখান থেকে চলে আসলো। কাব্য এটা দেখে অবাক হলো। জিমকে ডাক দেয় কিন্তু ফিরে না। চলে যায়।
কাব্য ফোনটা বের করে আশরাফ চৌধুরী কে ফোন দিয়ে
-আমি জিমকে বিয়ে করতে চায় তুমি সব ব্যবস্থা করো।
-হতোছাড়া তোর সাহস হলো কি করে। বাবার কাছে বিয়ের কথা বলিস। আজ তুই বাড়িতে আয়।
ফোনটা কেটে দিলো। কাব্য ওদের মুখের দিকে তাকায়। নিরা আর আসফি হেসে দেয়।
-ভাইয়া পিঠে ছালা বেঁধে যেয়ো।

-ছালা দেখছিস৷ হাসপাতালে কাল দেখতে আসিছ।
-তা তো অবশ্যই আসবো।
সন্ধ্যার দিকে কাব্য বাসায় ফিরে কলিং বেল চিপলো কিন্তু কেউ দরজা খুললো না। দরজায় হাত লাগাতেই দরজা খুলে গেলো। চুরি করে ধীর পায়ে অন্ধকারে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলো । খাটের উপর বসতেই এক চিৎকার দিলো কাব্য। ভূত ভূত ভূত। লাইটটা কোনো মতে জ্বালিয়ে দেখলো জিম বসা আসে
-তুমি এখানে কেনো?
-আমি সেই কখন থেকে বসে আছি আপনার এই আসার টাইম
কাব্য থ ম খেয়ে
– ক ক কেনো?

-আপনি কি বলছেন আমাকে বিয়ে করবেন ভালোবাসেন। আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন। আমার আগে বয়ফ্রেন্ড ছিলো।
-যতটুকু চেনার চিনেছি বেশি চিনতে চায় না৷ বয়ফ্রেন্ড ছিলো এখন তো নেই। আর আমি অতিতটা জানতে চায় না৷
-কেন? আপনার জানা উচিত।
-কেন?
-কারণ আমি দেখতে ভালো না। আমার মুখে ব্রণে ভর্তি । এই ব্রণের কারণে আমার প্রথম ভালোবাসা হারিয়েছি। ।
-এখন তো ব্রণ নেই।
-পরে আবার উঠবে তখন।
– যেভাবে শাসন করেছি তার থেকে বেশি শাসন করবো৷ মুখে ব্রণ আছে থাকুক। মনে কি ব্রণ আছে। ।
-মনে থাকবে কেন?
-তাহলে। এই সৌন্দর্য বা কতদিন থাকবে। হারিয়ে যাবে এক টাইম। শোনো তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো বলো আমি অন্য একজনকে বিয়ে করবো।

জিম রাগি লুকে কাব্যের দিকে তাকালো
-ঠিক আছে করতে পারেন। ।।
জিমের চোখে পানি থলমল করছে। কাব্যের পাশ কাটিয়ে জিম চলে যাচ্ছিলো। কাব্য হাতটা টেনে ধরে বুকে টেনে নিয়ে জরিয়ে ধরে।
-দেখো আমি তোমাকে আমার মতো করে সাজিয়ে নিছি।
আমার মা বেচে থাকলে সে আজ খুব খুশি হতো ।
আমার মায়ের মুখে ও ব্রণ ছিলো।
সে আমাকে বলেছে কখনো কালো মানুষ 
আর মুখ ভর্তি ব্রণ মানুষকে অবহেলা বা ঘৃণার চোখে দেখবি না।
তোর বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতো।
এক প্রকার যুদ্ধ করে আমাকে এই বাসায় আনে।
তোর দাদি চেয়েছিলো সুন্দর বউ আনবে কিন্তু আমার মুখে ব্রণ ছিলো বলে ঘৃণা করতো।
এটা ঠিক ব্রণ ভরা মুখের দিকে কেউ তাকায় না।
সমাজের কিছু মানুষেরা ও ঘৃণার চোখে দেখে।
হাসি তামাশা ঠাট্টা করতেই থাকে। আর রইলো পাশের প্রতিবেশী।
তারা সুন্দর করে বাঁশ দিতে জানে।

আমার মেয়েটা সুন্দর ওমুকের মেয়ে সুন্দর হলে ও মুখে যা অবস্থা দেখতেই ঘৃণা করে।
তবে হ্যা ব্রণ দীর্ঘ স্থায়ী না এটা কমে যায়। থাকে না।
তবে আমি মনে করতাম আমার মুখে ব্রণ কেন হলো।
এটাই কষ্ট ছিলো। এক সময় তোর বাবার যত্ন নেওয়াটে আমার মুখের ব্রণগুলো চলে গেলো।
তোর দাদি সে তার ভূলটা বুঝতে পারে৷ আমাকে তার মেয়ের মতো করে নেয়।
আমার সংসারে সুখের জোয়ার বইতে থাকলো।
কাব্যের কথা শুনে জিম কেঁদেই দিলো৷
-হুম বুঝতে পেরেছি। এবার ছাড়ো নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।
কাব্য জিমকে ছেড়ে দিয়ে
-মানে

-নিচে গেলে দেখতে পাবা। আর শোনো আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবেসে ফেলেছি। ভয় হয় এই ব্রণ নিয়ে৷ যদি তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।
কথাটা বলেই জিম চলে গেলো। কাব্য রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে অবাক হয়ে গেলো। জিমের বাবা মা সবাই আসছে। আশরাফ চৌধুরী বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করলো। আশরাফ চৌধুরী ও খুব খুশি। ধুমধাম করে কাব্য আর জিমের বিয়ে হয়।
আশরাফ চোধুরী করিমুন ছবির ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে
-তুমি বলতে না আমার ছেলে তোমার মতো হয়েছে। আমি বলতাম আমার মতো হয়েছে৷ আজ তুৃমি থাকলে বুঝতে আমার ছেলে আমার মতই হয়েছে।
কাব্য রুমে ঢুকেই দেখলো জিম ঘুমাচ্ছে।
কাব্য জিমের পাশে বসে ডাক দিলো। জিম উঠলো
-কি ডাকো কেন?
-তুমি ঘুমাচ্ছো কেন?

-কেন? রাত কত হয়েছে দেখছো
-মাত্র তো ১১ টা ৩০।
-হ্যা তুমি বলছো না রাত জাগলে ব্রণ উঠবে। তাই ঘুমাচ্ছি তুমি ও ঘুমাও।
-আজ আমাদের বাসর রাত। কই গল্প করবো তা না
-রাখো তোমার বাসর রাত। সকালে করা যাবে বাসর রাত। ঘুমাতে দাও৷
জিম শুয়ে পড়লো। কাব্য মনে মনে বলছে কেন যে এটা বলতে গেলাম।
হায় রে৷ জিম কাব্যকে বললো
-তুমি শুয়ে পড়ো না কেন?
-হ্যা শুবো।
জিম কাব্যকে এক টানে বুকের উপর নিয়ে জরিয়ে ধরে
-এখন ঘুমাও। নাই একটু জাগলে ব্রণ উঠবে।

<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com