তাঁহার অপেক্ষায় | পর্ব -৫
নীলাদ্রিকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। রমেলা বেগম কান্না করছে আর বলছে
-আমার মাইয়াটার কি হলো। এই দিনটা দেখার ছিলো বাকী।
-আম্মা শান্ত হও সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আমার মেয়েকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ।
-আম্মা তুমি যদি ভেঙ্গে পড়ো আমরা কই যাবো বলো।
-আমি এই হাত দিয়ে আমার মাইয়াটাকে চড় মারলাম।
রমেলা বেগম কান্নায় বিভোর হয়ে গেলো।” রিয়াদ,নিলয়,শুভ,লিমন চোখ মুছে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হলো। চারজনে ডাক্তারের সামনে দাঁড়িয়ে
-নীলাদ্রি
-ভয়ের কিছু নেই। বিপদমুক্ত এখন সে। তবে হ্যা আরেকটা কথা
-কি স্যার
-ওকে কোন প্রকার ডিপ্রেশন বা কোন প্রকার জবরদস্তি করবেন না। করলে বিপদ আছে।
ডাক্তার সাহেব চলে যায়। চার ভাই কেবিনে ঢোকে। নীলাদ্রি ঘুমিয়ে আছে। চার ভাই তে তাকিয়ে আছে নীলাদ্রির দিকে।
লিমন বলে উঠলো
-ও সুস্থ হলেই ওকে বিয়ে দিয়ে দিলে হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
-হ্যা। আমাদের বোনটা ও তাহলে ভালো থাকবে।
-ঘটককে আসতে বলে দি।
-ঠিক আছে।
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো। নীলাদ্রি পুরোপুরি সুস্থ।
২৮ মার্চ ১৯৯১
সকাল বেলা কাব্যের মা আর খালা নীলাদ্রির বাসায় আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। নীলাদ্রির চার ভাই না করে দেয়। তবু ও কাব্যের মা বলে উঠলো
-দেখো বাবারা আমার ছেলে না হয় একটা ভূল করেই ফেলেছে। ওদের দুজনকে আলাদা না করে আমার ছেলের হাতে নীলাদ্রিকে তুলে দেন। আমার তো একটা মাত্র ছেলে নীলাদ্রি আমার মেয়ে হয়ে থাকবে। নীলাদ্রিকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
–দেখুন আপনাকে যা বলার বলে দিয়েছি। আপনার ছেলে যদি আমার বোনের সাথে প্রেম না করে যদি আপনাদের পাঠাতো তাহলে আমরা ভেবে দেখতাম। কিন্তু ও তা করেনি।
শুভ বলে উঠলো
-আজ নীলাদ্রিকে আবেগের বশে পছন্দ হয়েছে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ওর আবেগ কেটে যাবে৷ তখন ও অন্য কাউকে খুজবে।
-আপনি এখন আসতে পারেন।
কাব্যের মা আর খালা চলে আসে৷ ঘটক নীলাদ্রির জন্য ছেলে খুজে আনে। আজ সন্ধ্যায় নীলাদ্রিকে দেখতে আসবে। ছেলে পক্ষকে সুন্দর করে যেনো আপ্যায়ন করে।
সন্ধ্যা সাতটা
নীলাদ্রিকে সাজিয়ে হাতে শরবত দিয়ে ছেলেপক্ষের কাছে পাঠায়। নীলাদ্রি শরবত নিয়ে সামনে আসে। নীলাদ্রিকে দেখে বেশ পছন্দ হয়। নীলাদ্রিকে দেখে হাসিখুশি মুখে চলে যায় পাত্র পক্ষ। নীলাদ্রির মুখ কালো হয়ে আছে। মুখে হাসি নেই।
পরবর্তীতে খবর আছে মেয়েকে পছন্দ হয়নি। আর কোনো কারণ বলেনি। নীলাদ্রি এটা শুনে বেশ খুশি হলো। অপেক্ষায় আছে কাব্য কবে ওর মাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠাবে এই বাসায়। নীলাদ্রি জানে না কাব্যের মা আসছিলো।
এভাবে নীলাদ্রিকে দেখতে আসতো ছেলে পক্ষ আর বলতো মেয়ে পছন্দ হয়নি।
চার ভাই মা রে হতাশ হয়ে গেলো। কেন এমনটা হচ্ছে। নীলাদ্রি তো কম সুন্দর না।
১৮ এপ্রিল ১৯৯১
বিকালে ইমরান ও তার পরিবার আসলো বিয়ের কথা বলতে। সবাই অবাক হয়ে গেলো। ইমরানের মা বলে উঠলো
-নীলাদ্রিকে আমার সেই ছোটকাল থেকেই পছন্দ। ওকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে যাবো।
-দেখুন আন্টি আমরা আপনার ছেলের সাথে আমার বোনের সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে না । আপনাদের সম্মান থাকতে চলে যান
ইমরান এটা কখনো কল্পনাতে ভাবতে পারেনি এটা বলবে। ইমরানের মা বাবা উঠে দাঁড়িয়ে
-অপমানটা করা ঠিক হয়নি।
ইমরান সহ পরিবারের সবাই চলে গেলো।
এভাবে একের পর এক প্রস্তাব আসতেই থাকে পরবর্তীতে ছেলে পক্ষ না করে দেয়।
নিলয় এসে রমেলা বেগমকে বলে
-আম্মা রফিক চাচার ছেলে নীলাদ্রিকে পছন্দ হয়েছে।
-মাশআল্লাহ। বাজান বিয়ের তারিখ তবে ঠিক কর।
-আচ্ছা আম্মা।
নীলাদ্রি এই ক দিনে কাব্যের কোন খোঁজ পেলো না। কি করবে বুঝতে পারছে না। কাব্যকে ছাড়া ও কাউকে বিয়ে করবে না।
(বিধাতা এ তোমার কেমন নিলা
কেন জড়ালে আমাকে ভালবাসার বাঁধনে
কেন বা কেড়ে নিলে আমার ভালবাসাটুকু।
পারি না যে সইতে আর
মরিতে পারিলে মনে যে শান্তি বইবে।
এদিকে চার ভাই যে ইমরানের সামনে দাঁড়িয়ে ইমরানের কলার ধরে মারা শুরু করে দিলো। আর বলতে লাগলো
-আমার বোনের নামে মিথ্যা বদনাম ছড়াস। আমার বোনের বিয়ে এতদিন তুই ভেঙ্গে আসছিস। তোকে তো আজকেই শেষ করে দিবো। ইমরানকে মেরে চলে আসে।
১৪ মে ১৯৯১
আজ নীলাদ্রির গায়ে হলুদ। নীলাদ্রির চোখে পানি। কোন খোজ পেলো না কাব্যের। এই বুঝি কাব্য এসে নিয়ে গেলো। নীলাদ্রি চোখের পানি মুছসে আর বলছে
-আম্মায় আমি বিয়ে করবো না । আমাকে কাব্যের কাছে যেতে দাও।
রমেল বেগম চোখ রাঙ্গিয়ে
-আমাদের আর মানসম্মান খাইস না। অনেক খাইছিস। এবারে আমাদের উদ্ধার কর। “
রমেলা বেগম চলে গেলো৷ নীলাদ্রি কান্না করতে লাগলো। নীলাদ্রির গায়ে হলুদ লাগানো শেষ হয়ে গেলো। ।
রাত ১২ টা। নীলাদ্রির ঘরের জানালা ঠকঠক করে শব্দ হলো। নীলাদ্রি জানালা খুলে কাব্যকে দেখা মাত্রই জানালা অফ করে দিলো। কাব্য অবাক হয়ে গেলো। আবার আস্তে আস্তে করে শব্দ করছে কিন্তু খুলছে না৷ কাব্যের ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com