Breaking News

কালো বউ । পর্ব -১৭



রুপকঃ(যতো এগিয়ে যাচ্ছি ততো ভয় বাড়ছে,,, কেবিনের সামনে যেতেই জমিরকে দেখতে পেলাম,,,,)
বাবার কী অবস্থা জমির,,,,?
জমিরঃ অবস্থা বেশি ভালো নয়,,,, ডক্টর দেখছেন,,,,
তমসাঃ(আমি চুপচাপ দেখে যাচ্ছি,,,, কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না,,,,)
রুপকঃ(একটু পরই ডক্টর বের হয়ে আসলেন,,,) ডক্টর,,,,
ডক্টরঃ রুপক আমার কেবিনে আসো,,,
রুপকঃ (চুপচাপ ডক্টরের সাথে গিয়ে তার কেবিনে বসলাম,,,)
তমসাঃ(আমিও গিয়ে স্যারের পাশের চেয়ার টেনে বসলাম,,,)
ডক্টরঃ রবিন নিজের খেয়াল রাখা বাদ দিয়েছে অনেক বছর হয়ে গেছে,,,,
শুধু একটা প্রবলেম হলে আমরা ট্রিটমেন্ট করে ঠিক করার চেষ্টা করতাম,,,, কিডনি দুটোর অবস্থায় খারাপ,,,, হার্টের প্রবলেম,,, বড় কোনো আঘাত সয্য করতে পারবে না,,,, এখন ব্রেনের অবস্থাও খারাপ,,, এমন জায়গায় ইনজুরি হয়েছিলো অপারেশন করা সম্ভব হয়নি,,, এক্সিডেন্টের পর আমার কাছে এসেছিলো,,৷ সেই সময় আমি কিছু মেডিসিন দিয়েছিলাম,,, সেগুলো ঠিক মতো নিলে আজ এই অবস্থায় আসতো না,,,,
রুপকঃ ইনজুরি মানে,,,,?
ডক্টরঃ হ্যাঁ,,,, তুমি যখন বিজনেসের কাজে আমেরিকা গিয়েছিলে তোমার বাবার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো,,, খুব বেশি আঘাত লাগেনি তবে মাথার এমন জায়গায় ইনজুরি হয়েছিলো যা অপারেশন করা সম্ভব হয়নি,,, তবে ইনজুরি বেশী গভীর ছিলো না আমি যে মেডিসিন দিয়েছিলাম সেগুলোতেই ঠিক হয়ে যেতো,,, যদি তা ঠিক মতো নেওয়া হতো,,, কিন্তু রবিন সেটাকে পুরোপুরি অবহেলা করেছে,,,, ফলে ইনজুরি থেকে ইনফেকশন হয়ে ক্যান্সারের রুপ নিয়েছে,,,,
রুপকঃ ক্যান্সার,,,,?
ডক্টরঃ নিজেকে শক্ত করো রুপক,,, আমি জানি তুমি অনেক স্ট্রং,,, রবিনের হাতে বেশি সময় নেই ,,,, এটাই সত্যি আর সত্যিটা মেনে নিতেই হবে,,,,
তমসাঃ( স্যার পাথরের মতো বসে আছে,,, স্যারের জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে,,,) স্যার,,,,
রুপকঃ I,,,I am ok,,,,,(গম্ভীর গলায়) ডক্টর আর কোন চান্স নেই,,,,?
ডক্টরঃ তুমি চাইলে অপারেশন করাতে পারো তবে চান্স ১% এরও কম,,, আর যদি না করাও তাহলে হয়তো আরো কয়েকটা মাস মেডিসিনের ওপর,,,,,,
রুপকঃ বাবার সাথে দেখা করা যাবে,,,,?
ডক্টরঃ হ্যাঁ দেখা করতে পারবে,,, কিন্তু এখনো জ্ঞান ফেরেনি,,,, ওখানে গিয়ে কথা বলতে পারবে না,,,,,,,
রুপকঃ ঠিক আছে,,, কিছু বলবো না,,,,
তমসাঃ(স্যার ডক্টরের কেবিন থেকে বের হয়ে গেলে আমিও সাথে বের হলাম,,, স্যার উনার বাবার কাছে চলে গেলেন আইসিইউতে,,, আমি আইসিইউর সামনে জমিরের সাথে দাঁড়ালাম,,,,)
জমিরঃ জন্মের সময় মাকে হারিয়েছে,,,, এখন বাবার কিছু হয়ে গেলে একদম একা হয়ে যাবে রুপক স্যার,,,
তমসাঃ উনার মা নেই,,,,?
জমিরঃ না,,,, উনার মা মারা গেছে উনার জন্মের সময়,,,।
তমসাঃ (স্যারের জন্য এখন সত্যি অনেক বেশি খারাপ লাগছে,,,, পৃথিবীতে সত্যি কেউ পুরোপুরি সুখী হতে পারে না,,,)
রুপকঃ(বেডে শুয়ে আছে বাবা,,,, হ্যাঁ বাবা,,, আমার বাবা,,, যাকে দীর্ঘ একত্রিশ বছর বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করেছি আমি,,, নিজেকে আজ বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে,,, বাবার পাশে চেয়ার টেনে বসলাম,,,, আজ বাবাকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে,,,,, যেনো কোনো জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া সৈনিক,,,,, মাথায় হাত রাখতে গিয়েও সরিয়ে নিলাম,,,, কী করবো আমি,,,? আবার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম,,,,)
আকাশঃ কী হলো বলো,,,? কী বলতে এসেছো,,,?
বৃষ্টিঃ বাবা আমি তানভীরকে ভালোবাসি,,,
আকাশঃ (অনেকটা চমকে তাকালাম,,, এভাবে বলবে ভাবতেও পারিনি,,,
মেয়ের সাথে অতিরিক্ত ফ্রেন্ডলি হলে যা হয় আর কী,,,?)
সেসব নিয়ে তো আমি আগেই কথা বলেছি,,,, এখন আবার নতুন করে কী বলবো,,,?
বৃষ্টিঃ বাবা,,, তানভীরও আমাকে ভালোবাসে,,,
আকাশঃ সেটা তো আমার মনে হয়নি তার কথা শুনে,,,, বা তার সাথে কথা বলে,,,,
ড্রাইভারঃ স্যার,,, আসবো,,,?
আকাশঃ হ্যাঁ আসো,,,
ড্রাইভারঃ মেডাম খাবার পাঠাইছে,,,,
আকাশঃ এখানে রাখো,,, তুমি খেয়েছো,,,?
ড্রাইভারঃ না স্যার,,,, এখন গিয়ে খাবো,,,
আকাশঃ ঠিক আছে,,, খেয়ে নাও গিয়ে,,, বৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে আসো,,,, খেয়ে নেবে,,,
বৃষ্টিঃ কিন্তু আমার কথা শেষ হয়নি,,,
আকাশঃ বাকি কথা খাওয়ার পর হবে,,,,
বৃষ্টিঃ (চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেলাম,,,)
★★★
সিনহাঃ কী হলো ভাইয়া,,,, খাচ্ছিস না কেনো,,,?
তানভীরঃ হ্যাঁ খাচ্ছি তো,,, তুই নিজের খাওয়া শেষ কর,,,
(এই মেয়ে কী সত্যি সত্যি রকির সাথে ঘুরতে গেছে নাকি,,,
নিজের ভালো পাগলেও বুঝে কিন্তু এই মেয়ে বুঝবে না,,, রকি যে পরিমাণ খারাপ ছেলে,,,
ওর ক্ষতি করতে এক মুহুর্ত ভাববে না,,, আমার সাথে রাগ করে কী সব করছে,,?
ধূর আর ভাবতে পারছি না,,)
সিনহাঃ(খেয়ে রুমে এসে বসতেই ফোন বেজে উঠলো,,,)
ক্রিংক্রিংক্রিং
সিনহাঃ আসসালামু আলাইকুম ,,,,,, কে বলছেন,,,,?
,,,,,,,,,,,,,
সিনহাঃ হ্যালো,,,,,
,,,,,,,
সিনহাঃ কী হলো কথা বলছেন না কেন,,,? আর কথা না বললে কল কেনো দিয়েছেন,,,?
আমার এতো আজাইরা পেঁচাল পারার সময় নাই,,,
আল্লাহ হাফেজ,, (ফোন কেটে শুয়ে পড়লাম,,, আবার ফোন বেজে উঠলো) আরে কে বলছেন হ্যা,,,,?
,,,,কেমন আছো,,,,?
সিনহাঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,, কে বলছেন সেটা বলেন,,,?
,,,,আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞেস করবে না,,,,?
সিনহাঃ আপনি কে সেটাই জানি না,,, তো আপনি কেমন আছেন সেটা জেনে আমি কী করবো,,,?
,,,,,আমি ইশান,,,,,
সিনহাঃ তো মি. ইশান,,,, এখন আপনি আমার কাছে কী চান,,,?
,,,,,,,,কথা বলতে চাই,,
সিনহাঃ কিন্তু আমি চাই না,,, আমি অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলি না,,, আল্লাহ হাফেজ,,, (কল কেটে দিলাম,,,, যত্তসব আবালের দল,,, তারপর আপুকে কল দিলাম)
তমসাঃ হ্যাঁ,,, সিনহা,, বল
সিনহাঃ লান্স করেছিস,,,,? এখন তো লান্স টাইম,,,প্রথম দিন কেমন কাটছে অফিস,,,,
তমসাঃ এতো প্রশ্ন একসাথে করছে,,,, একটা একটা কর,,,
সিনহাঃ তোর গলা এমন লাগছে কেনো,,,,? ঠিক আছিস তুই,,,
তমসাঃ আমি ঠিক আছি,,, লান্স করিনি,,, হসপিটালে আছি,,,
সিনহাঃ হ,,,হসপিটাল,,,, কী হয়েছে,,, হসপিটালে কী করছিস,,,,?
তমসাঃ আমার বসের বাবা অসুস্থ,,, স্যারের সাথেই এসেছি,,,
সিনহাঃ ওহ্,,,, আচ্ছা কিছু খেয়ে নে,,, সাবধানে থাকিস,,,
আর আরাফাত ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে,,,,?
তমসাঃ (আরাফাতের কথা শুনেই মাথায় বাজ পড়লো,,,,
আমি তো ওর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,,,) সিনহা তোর সাথে পড়ে কথা বলছি,,, একটু রাখ,,,
সিনহাঃ ওকে,,,,,(আপুর ফোন কাটতেই আবার আগের নাম্বার থেকে কল এলো,,,
কল কেটে ফোন অফ করে দিলাম,,,, যত্তসব ঝামেলা)
****
রুপকঃ(বাবার হাত ধরে পাশে বসে আছি,,,, হঠাৎ চোখ মেলে তাকালো,,,) এখন কেমন লাগছে ,,,?
রবিনঃ ভ,,,,ভালো,,,,
রুপকঃ এমন কেনো করলেন,,,?(টলমল চোখে)
রবিনঃ ক,,,কী ক,,করেছি আবার,,(মুচকি হাসার চেষ্টা করে)
রুপকঃ আমাকে কিছু জানাননি কেনো,,, ঠিক সময়ে ট্রিটমেন্ট করলে সব ঠিক হয়ে যেতো,,,,
রবিনঃ ক্লান্ত হয়ে গেছি জীবনের সাথে লড়তে লড়তে,,,, এবার বিশ্রাম চাই,,, তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই,,,, তোমার মা যে অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছে,,,
রুপকঃ আর আমি,,,,,?(কান্না ভেজা গলায়,,,)
রবিনঃ রুপক,,,, সারাজীবন তুমি আমাকে দায়ী করে এসেছো তোমার মায়ের মৃত্যুর জন্য,,,,
কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমার মাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম,,,, হ্যাঁ আমার ভুল ছিলো,,,
তবে আমার থেকে বেশি ভুল ছিলো তোমার মায়ের,,,,
সেদিন যদি একা একা নামতে না চাইতো,,,,
হয়তো আমরাও একটা সুখী পরিবার হতাম,,,
এতোদিন জানতাম আমার ছেলে আমাকে শুধু ঘৃণা করে,,
কিন্তু আজ জানলাম সেটা ঘৃণা ছিলো না,,,, অভিমান ছিলো,,,
আর আজ তোমার ভালোবাসার কাছে অভিমান হেরে গেছে,,,,
এখন আমার আর চাওয়ার কিছু নেই,,, শুধু একবার বাবা বলে ডাক,,,
রুপকঃ বাবা,,,,,,,,(বাবাকে জড়িয়ে কান্না করে দিলাম,,,,
এতো বছরের জীবনে হয়তো এই প্রথমবার কান্না করছি,,,)
রবিনঃ রুপক মির্জা কান্না করছে,,,?(মজা করার ছলে)
রুপকঃ(কোন কথা বলছি না,,, কী করবো আমি,,,? কীভাবে ভালো করবো বাবাকে,,,,?
যদি বাবাকেই না বাঁচাতে পারি তাহলে এই টাকার পাহাড় দিয়ে কী করবো,,,?
না না এভাবে বসে থেকে কিছু হবে না,,, আমার কিছু একটা করতেই হবে,,,)
বাবা তুমি একটু ঘুমাও আমি আসছি,,,
রবিনঃ কোথায় যাবে,,,?
রুপকঃ আসছি,,,,
তমসাঃ(সিনহার কল কেটেই আরাফাতকে কল দিলাম,,, আর সাথে সাথে রিসিভ করলো,,,)
সরি আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম,,,,
আরাফাতঃ কী এতো ব্যস্ত ছিলি,,? ফোনটা রিসিভ করার সময় হলো না তোর,,,
তমসাঃ তুই তো জানিস আজ আমার অফিসের প্রথমদিন,,, অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে,,,
তোকে পরে বলবো,,,
রুপকঃ মিস তমসা,,,,
তমসাঃ জ,,জী স্যার,,,,(তাড়াতাড়ি আরাফাতের কল কেটে দিলাম,,)
রুপকঃ বিকেলের মিটিং ক্যানসেল করুন,,,
আর আমি কিছু ডক্টরের নাম দিচ্ছি তাদের সাথে যোগাযোগ করুন,,,
আমি তাদের ইমিডিয়েট এখানে চাই,,,
তমসাঃ ও,,ওকে স্যার,,,,
রুপকঃ আপনি বাবার কাছে গিয়ে একটু বসুন,,, আমি একটু আসছি,,,
তমসাঃ ওকে স্যার,,,,
***
মেঘলাঃ বৃষ্টি কী আপনার সাথে এখনো,,,,?
আকাশঃ হ্যাঁ,,, কী হয়েছে,,,? তোমার গলা এমন লাগছে কেনো,,, কোনো প্রবলেম,,,?
মেঘলাঃ রবিন ভাইয়ার অবস্থা ভালো নয়, হসপিটালে ভর্তি আছে।
রুপক কল দিয়েছিলো একটু আগে,,, ছেলেটা একা আছে,,,
আপনি বৃষ্টিকে নিয়ে হসপিটালে জান আমিও আসছি।
আকাশঃ ঠিক আছে,,, তুমি চিন্তা করো না,,, আমি এখনই যাচ্ছি,,,
বৃষ্টিঃ কী হয়েছে বাবা,,,? মা কী বললো,,,?
আকাশঃ তোমার রবিন আঙ্কেল হসপিটালে,,,,আমাদের এখনই যেতে হবে,,,,
বৃষ্টিঃ ওকে চলো,,,
***
তমসাঃ (স্যার চলে গেলে আমি আইসিইউতে গিয়ে স্যারের বাবার পাশে চেয়ারে বসলাম,,,,
অনেকটা আমার বাবার বয়সী,,, স্যারের সাথে চেহারায় তেমন মিল নেই,,, শুধু চুলগুলো এক রকম,,, ঘন আর সিল্কি,,,,
দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে? এখন কেমন লাগছে স্যার।
রবিনঃ (একটা মেয়ের মিষ্টি গলা শুনে ধীরে ধীরে তাকালাম ) ভালো,,,
তুমি কে মামুনি,,,?
তমসাঃ আমি রুপক স্যারের নতুন পি.এ,,,,
রবিনঃ তুমি রুপকের পি.এ আমার নয়,,,, তাই আমাকে স্যার বলার প্রয়োজন নেই,,,
আঙ্কেল বললেই হবে,,, নাম কী তোমার মামুনি,,,?
তমসাঃ তাসমিয়া ইসলাম তমসা,,,,
রবিনঃ মিষ্টি নাম,,,, আচ্ছা রুপক কোথায়,,,,?
তমসাঃ জানি না আঙ্কেল,,, কোথায় যেনো গেলো,,,
রবিনঃ লান্স করেছে ও,,,
তমসাঃ না,,,, কিছু খায়নি এখনো,,
রবিনঃ তুমি খেয়েছো,,,?
তমসাঃ ইয়ে মানে না,,,(আমতাআমতা করে,,)
রবিনঃ রুপক আসলে ওকে বুঝিয়ে একটু কিছু খেতে বলো আর তুমিও লান্স করে নিও,,,
তমসাঃ ঠিক আছে আঙ্কেল,,, আপনি এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুন,,,,
রবিনঃ হুম,,,,
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com