ডাব বিক্রেতা । ৫ম ও শেষ পর্ব
কাব্যঃ কই গো
জান্নাতঃ আসছো তুমি। ( ঘর থেকে বেরিয়ে)
কাব্য বারন্দায় বসে জান্নাতের হাতে টাকা দিয়ে
কাব্যঃ এটা রাখো আমার প্রথম উপার্জন
জান্নাতঃ এটা খরচ করলে তো পারতে ( পাখা দিয়ে বাতাস করছে)
কাব্যঃ না। এটা তোমার কাছে রেখে দিবা। এর পর থেকে খরচ করবো।
জান্নাতঃ তুমি পারো ও বট ( শাড়ির আচল দিয়ে মুখ আর বুক মুছে দিলো)
কাব্যঃ কি করছো।
জান্নাতঃ এতক্ষণ রৌদ্রে ছিলে ঘেমে কি হয়ে গেছো। কালা হয়ে গেছো তুমি। ( ওঠে ঘরের ভেতর গেলো।
কাব্যঃ কই গেলা আবার।
জান্নাতঃ এই তো ( এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে কাব্যকে দিলো)
কাব্যঃ তুমি বুঝলে কি করে আমি পানি খাবো। ( অবাক হয়
জান্নাতঃ এটা আমার কর্তব্য। কত স্বপ্ন দেখছি হাজবেন্ড কাজ থেকে ফিরবে আমি তার সেবা করবো আজ পূর্ণতা পেলো ( হাসি মুখে)
কাব্যঃ এভাবে তোমাকে সুখে রাখতে পারবো।
জান্নাতঃ বেশি কথা বলো না। পানি খেয়ে কল পারে আসো। আমি গেলাম।
জান্নাত কল পাড়ে যেয়ে পানি চাপলো। কাব্য পানি খেয়ে এসে গোসল করে নিলো। জান্নাতের থেকে গামছা নিয়ে শরীর মুছে ঘরে গেলো। জান্নাত ভাত বেড়ে বসে আছে। কাব্য বেশ অবাক জান্নাতের এসব দেখে। মনে মনে বলছে মেয়েটা বেশ সংসারি। আমি সত্যি খুব ভাগ্য করে তোমায় পেলাম জান্নাত। আমি শরীরে রক্ত যতদিন আছে তোমাকে একটু ও কষ্ট পেতে দিবো না। সব সময় তোমার হাসিখুশি মুখে রাখবো।
জান্নাতঃ কি হলো বসো দাড়িয়ে কি ভাবছো খিদে লাগছে
কাব্যঃ ক ক ক কই কিছু না তো ( ভাবনা থেকে বেরিয়ে থ ম খেয়ে)
জান্নাতঃ একটা কথা বলবো
কাব্যঃ বলো
জান্নাতঃ আমার না খুব স্বপ্ন ছিলো আমার বর আমাকে নিজ হাতে তুলে খাইয়ে দিবে ( লজ্জা পেয়ে শাড়ির আচলে মুখ লুকালো)
কাব্যঃ পাগলি এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে। এসো।
কাব্য জান্নাতকে খাইয়ে দিলো আর নিজে খেলো। খাওয়া দাওয়া শেষে জান্নাত কাব্যের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো
জান্নাতঃ শোন না
কাব্যঃ বলো
জান্নাতঃ আমি তোমার সাথে ডাব বিক্রি করতে যাবো।
কাব্যঃ পাগল তুমি।
জান্নাতঃ কিছু জানি না। তুমি ডাব বিক্রি করবে আমি ছাতা ধরে বসে থাকবো। বাসায় একা একা তোমায় ছাড়া ভাল লাগে না। প্লিজ আমি তোমাকে আমার চোখের সামনে সবসময় রাখতে চাই ( চোখ দিয়ে পানি পড়লো)
কাব্যঃ আরে পাগলি কাদছো কেন?ঠিক আছে তুমি আমার সাথে যাবে।
জান্নাতঃ সত্যি।
কাব্যঃ হুম।
জান্নাত খুব খুশি হলো।
পরেরদিন থেকে কাব্যের সাথে জান্নাত ডাব বিক্রি করতে গেলো। কাব্য ডাব বিক্রি করে জান্নাত ছাতি ধরে রাখে কাব্যের মাথার উপর।
কাব্যঃ তোমার না আসলে হতো না।
জান্নাতঃ কেন সুন্দর সুন্দর মেয়েদের দিকে তাকাতে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে
কাব্যঃ কি যে বলো না। তুমি তো আমার রাজ্যে সুন্দরী। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখার শখ নেই
জান্নাতঃ তাহলে বললে কেন
কাব্যঃ এই রৌদ্রে তোমার কষ্ট হচ্ছে তো কালা হয়ে যাবে।
জান্নাতঃ কষ্ট হচ্ছে না। কেন কালা হলে ভালবাসবে না আর
কাব্যঃ তোমাকে আমি বুড়োকাল পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো।
জান্নাতঃ আমার যৌবন যদি হারিয়ে যায়
কাব্যঃ তোমার মন তো আর হারাচ্ছে না
এভাবে কেটে গেলো বেশ ক দিন। হঠাৎ একদিন ওদের ভ্যানের সামনে একটা গাড়ি থামে। কাব্য জান্নাত বেশ অবাক হয়ে যায়। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে ও ছেলে নামলো। ওদের কাছে ডাব চাইলো। কাব্য ডাব কেটে দিলো
মেয়েঃ আসলে ভাইয়া রোজ এই পথ দিয়ে যায় আপনাদের দেখি দুজনকে ১০ মিনিট আপনাদের দুজনের ভালবাসা। আমার না হিংসে লাগে তাই ভাবছি আজ থেকে এই যে আমার করল্লা বফ আর আমি ওস্তা সুন্দরী আপনাদের সাথে গল্প করবো
কাব্য আর জান্নাত বেশ অবাক হলো। একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে
করল্লাঃ আপু সত্যি বলছি তোমাদের ভালবাসার তুলনা হয় না। এই ওস্তা সুন্দরী এত দিন আমার লাইফটা তেজপাতা করে রাখছে
ওস্তাঃ মিথ্যা বলবা না বলে দিলাম তুমি তেজপাতা করছো
দুজনের ভেতর ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। কাব্য আর জান্নাত হাসছে।
কাব্যঃ থামো থামে ভালবাসা মানেই তো জীবন তেজপাতা। কেউ কাউকে ছাড়া কখনো ভাল থাকতে পারে না। যদি সত্যি মনের ভালবাসা হয়ে থাকে।
জান্নাতঃ তা তোমাদের নাম কি ওস্তা সুন্দরী আর করল্লা নাকি রিয়েল নাম আছে।
ওস্তা সুন্দরীঃ হুম আছে তো আমি মেহেরিন ও মেহেরাব
কাব্যঃ বাহ্ দুজনের নামের ভালো মিল আছে।
জান্নাতঃ তা তোমাদের কি বলে ডাকবো
ওস্তা সুন্দরীঃ ওস্তা সুন্দরী আর করল্লা। তাহলে হবেই
করল্লাঃ হ্যা আপু ভাইয়া আমাদের খুব ভালো লাগবে।
ওস্তা সুন্দরী আর করল্লা দুজনে কথা বলে চলে গেলো
জান্নাতঃ দেখছো কত পাগল দুজন
কাব্যঃ হুম ভালবাসা থাকলে তো এমনটাই হবে।
এভাবে কেটে গেলো যেতে লাগলো দিন গুলো খুব করে।
করল্লা আর ওস্তা সুন্দরী এসে দুজনের সাথে গল্প করে চলে যেতো
কাব্য আর জান্নাতের বিয়ের ১ বছর ৬ মাস পূর্ণ হলো। কাব্য নিজের ফ্যামিলিতে ও জান্নাতের ফ্যামিলিতে টাকা পাঠাতো কিন্তু জানতো না কারা পাঠায়
একদিন
হিমেলঃ আরে জান্নাত তুমি। শেষ এ কি না ডাব বিক্রি করছো৷
কাব্যঃ আপনি কে। ওকে চিনেন
হিমেলঃ ওর কাছে জিঙ্গেস করো। সেদিন যদি চড়টা না মেরে আমাকে একসেপ্ট করতে তাহলে আজ তুমি বিলাসিতা করতে পারতে। এই রৌদ্রে পুড়ে ডাব বিক্রি করতে হতো না।
জান্নাতঃ বিলাসিতা সব কিছু না। ভালবাসার ও প্রয়োজন আছে ( কাব্যকে থামিয়ে দিয়ে বললো)
হিমেলঃ তাই নাকি। তাই তো দেখতে পারছি ভালবাসা আজ রাস্তায় দাড় করিয়েছে। তোমাকে কি বলবো তুমি যেমন তোমার সাথেই ঠিক সেটাই জুটছে। অনেক দেমাগ ছিলো। কোথায় আজ সে দেমাগ। নেই তো।
এমন সময় মেহেরিন আর মেহেরাব আসলো
ওস্তা সুন্দরীঃ আরে হিমেল ভাইয়া। ভাবির সাথে ঝগড়া মিটছে তো
হিমেলঃ তু তু তুমি এখানে
ওস্তা সুন্দরীঃ হ্যা, ভাবির জন্য ডাব কিনতে এসেছেন। নিয়ে যান টাকা টা আমি দিয়ে দিবো। আর হ্যা কখনো যদি পারেন ভাবিকে নিয়ে এসে এখানে এসেন এই যে ভাইয়া আর আপুর ভালবাসা দেখে যদি কিছু শিখেন। এত বিলাসিতা আপনাদের তবুও সেই ঝগড়া প্রতিদিন। ভালোবেসে তো বিয়ে করিছিলেন।
হিমেল আর এক মূহুর্ত দাড়ালো অপমানে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
জান্নাতঃ তুমি ওকে চিনো
করল্লাঃ হুম আপু আমাদের পাশের প্লাটে। প্রেম করে বিয়ে করছে কিন্তু হ্যাপি না। না আসে হিমেল ভাইয়ার টাইম যে বউ কে নিয়ে ঘুরতে যাবে। সারাদিন বউ তে ঘরে বসে থাকে। টাইম দিতে বললে বলে তোর বাপ কি টাকা দিবে যতটুক টাইম ঘুরবো তার। এই নিয়ে রোজ রোজ ঝগড়া ঝাটি হয়। মারামারি ও হয়।
জান্নাত মুচকি হেসে দিলো আর মনে মনে বললো যদি সারাজীবন টাকার পিছনেই ছুটতে হয় তাহলে কি দরকার ভালবাসার স্বপ্ম দেখিয়ে তার স্বপ্মটাকে মাটি করে দেওয়ার। কি দরকার এত বিলাসিতার। টাকার থেকে ভালবাসার মানুষের সময় দেওয়াটাই তো অনেক বড় টাকার চেয়ে।
ওস্তা সুন্দরীঃ তবো তোমরা দুজন না থাকলে ভালবাসার মূল্যটা এই করল্লাকে বোঝাতে পারতাম না
করল্লাঃ কেন তুমি তো বিলাসিতায় থাকতে চাও। সবকিছুই তো দিয়েছি তোমাকে। টাকার পিছু ছুটেছি
ওস্তা সুন্দরীঃ আগে তো ভাবতাম বিলাসিতায় সব। টাকা সব কিন্তু ভালবাসাটা যে সব তা তো জানতাম না নিজপর ভূলটা তো ভেঙ্গে গেছে।
করল্লাঃ এই জন্যই তো এখন তোমাকে টাইম দি। সব সময় তোমার চোখের সামনেই থাকি।
কাব্যঃ তোমরা দুজনে তাহলে সবটা মানিয়ে নিছো
করল্লাঃ হ্যা ভাইয়া। আপনাদের ভালবাসা না দেখলে কখনই বুঝতে পারতাম না প্রিয় মানুষটাকে টাইম দেওয়ার সুন্দর মূহুর্তগুলো।।
জান্নাতঃ হুম এটা যদি সবাই বুঝতো তাহলে ভালবাসার কমতি হয়তো কারো পড়তো না।
ওস্তা সুন্দরীঃ হ্যা আপু। আমরা তো মরিচিকার পিছনেই ছুটে বেড়ায়। যার জন্য অনেক জীবনে এখনো সুখ নেই।
এভাবে কেটে গেলো আরো ৬ মাস। জান্নাত প্রেগন্যান্ট
কাব্যঃ তুমি বাসায় বসে রেস্ট করো এই অবস্থা যেতে হবে না।
জান্নাতঃ না যাবো আমি তোমার কাছে থাকতে চাই
কাব্যঃ কথা শোনো প্লিজ। আমাদের বাবুটা ভালোভাবে পৃথিবীতে আসুক তারপর না হয় যেয়ো।
জান্নাতঃ না। আমি যাবো তোমার সাথে কিচ্ছু হবে না দেখো।
কাব্যঃ ওকে।
কাব্য জান্নাতকে নিয়ে যায়। জান্নাত পাশে বসে থাকে কাব্যকে দেখে। করল্লা আর ওস্তা প্রতিদিন জান্নাতের জন্য ফল পুষ্টিকর খাবার এনে খাইয়ে দিতো
জান্নাতঃ আমার জন্য এতো কিছু না করলে পারো না।
ওস্তা সুন্দরীঃ কি বলো আপু তোমার কোল জুড়ে তো নতুন অতিথি আসছে আমরা এতটুকু করবো না কিভাবে হয়। এটা তো আমাদের ও বাচ্চা। কি বলো
করল্লাঃ হ্যা। আপু কোন কিছু শুনতে চাই না আমাদের বাবুটাকে আমরা টেক কেয়ার করবো ( হাসি মুখে)
এভাবে দেখতে দেখতে ৯ মাস ২৫ দিন কেটে গেলো। মেহেরিন ও মেহেরাব জান্নাতকে নিয়ে হাসপাতালে চেকআপ করাতে নিয়ে যেতো। সব কিছু ভালোভাবেই কাটছিলো
হঠাৎ একদিন
মেহেরিনঃ ভাইয়া আপু আসেনি
কাব্যঃ না ওকে বাসায় রেখে আসছি।
মেহেরিনঃ কেউ কি আছে বাসায় দেখার জন্য।
কাব্যঃ না। ও তো বললো তুমি যাও আজ ও যাবে না।
মেহেরাবঃ ভাইয়া তুমি কি পাগল
কাব্যের চোখে কেমন করে পানি চলে আসলো। এক মূহূর্ত না দাড়িয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসলো
জান্নাতঃ কি হলো চলে আসলে কেন
কাব্যঃ তুৃমি ঠিক আছো তো।
জান্নাতঃ হ্যা কেন কি হয়েছে
কাব্যঃ না কিছু না
জান্নাতঃ কাদছো কেন এই পাগল
কাব্যঃ কই কাদছি
জান্নাতঃ কি হয়েছে বলবা তো। এমন করলে ভাল লাগে বলো
কাব্যঃ কিছু না
হঠাৎ করে জান্নাতের ব্লাড ভাঙ্গতে শুরু করে আর ব্যথা উঠে খুব। কাব্য বুঝতে পেরে জান্নাতকে কোলে তুলে নিয়ে বাইরে বের হলো। হঠাৎ জোড়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। রাস্তায় কোন গাড়ি নেই
জান্নাতঃ আমি আর পারছি না কাব্য।
কাব্যঃ একটু সহ্য করো এখনি হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
জান্নাতঃ ও মা গো। আর পারছি না।
কাব্যঃ একটু প্লিজ এখনি গাড়ি পেয়ে যাবো।
হঠাৎ করেই একটা কার আসলো কারের সামনে কাব্য দাড়িয়ে পড়লো
কারের গ্লাস নামাতেই দেখতে পেলো জেরিন। জেরিন ওদের ভিজতে দেখে গেট খুলে উঠিয়ে নিলো। জান্নাত ব্যথায় চিৎকার করতে লাগলো। গাড়ি যেয়ে হাসপাতালের সামনে থামলো। জান্নাতকে তাড়াতাড়ি ওটিতে নিয়ে গেলো
কাব্যঃ জান্নাত
জেরিনঃ চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে। তুই এতদিন কোন খোজ নিসনি কেন।
কাব্য সবটা বললো
জেরিনঃ একবার হলে ও তো আসতিস। আন্টি আঙ্কেল কতো খুজছে তোদের। ওয়েট।
জেরিন ফোন বের করে দুজনের ফ্যামিলি কে হাসপাতালে আসতে বললো।।
মেহেরিন আর মেহেরাব খবর পেয়ে ছুটে আসলো হাসপাতালে
মেহেরিনঃ আপু কই
কাব্যঃ ওটি তে
মেহেরাবঃ ঠিক আছে তো
জেরিনঃ হ্যা ঠিক আছে। ডাক্তার তো এখনো বের হচ্ছে না।
ওটির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। কাব্যের ভেতরে শান্তি পাচ্ছে না। চোখ বেয়ে পানি ঝরছে আর আল্লাহকে ডাকছে।
দু পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ছুটে আসলো। জেরিন শান্ত করলে তাদের।
কিছু সময় পর
ডাক্তারঃ মেয়ের কে আছে
কাব্যঃ জ্বী আমি ( ছুটে যেয়ে)
ডাক্তারঃ আপনার মেয়ে হয়েছে
কাব্যঃ ও ঠিক আছে তো
ডাক্তারঃ সরি আমরা মাকে বাচাতে পারিনি
কাব্য কথাটা শুনতেই পার তলা থেকে যেনো মাটি সরে গেলো। ফ্লোরে বসে পড়লো। সবার চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। কাব্য চিৎকার করে কাদতে পারছে না। স্তব্ধ হয়ে আছে
জান্নাতঃ আচ্ছা আমাদের যদি মেয়ে হয় কেমন হবে
কাব্যঃ খুব ভাল হবে।
জান্নাতঃ সত্যি নাকি তুমি মন রাখতে বলছো।
কাব্যঃ সত্যি কেন বলোতো
জান্নাতঃ সবাই তো ছেলের আশা করে। ছেলে না হলে সে মেয়ে অপয়া হয়। কত কথা শুনতে হয় মেয়েটির
কাব্যঃ আমার ছেলে লাগবে না। একটা রাজকন্যা হলেই যথেষ্ট।
জান্নাতঃ আমি যদি মরে যায় আমার মেয়েকে দেখে রাখবে তো।
কাব্যঃ চুপ দিবো একটা। এসব বলে না।
জান্নাতঃ তবু ও। যদি আমি না থাকি আরেকটা বিয়ে করে আমার মেয়েকে অনাথ করে দিয়ো না কিন্তু।
কাব্যঃ এমন করে বলে না পাগলি।কষ্ট লাগে
কাব্য এবার চিৎকার দিয়ে কেদে উঠে জান্নাত তুমি কই ফিরে এসো। আমাকে একা রেখে তুমি যেতে পারো না। প্লিজ ফিরে এসো৷ আমি কাকে নিয়ে থাকবো।
জান্নাতের লাশটা বাইরে বের করতেই কাব্য জান্নাতের মাথা বুকের সাথে চেপে ধরে, জান্নাত ফিরে আয়। কে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে কে ভাকবাসবে আমাকে। আমাকে একা রেখে যাস না। আমার মাথায় কে ছাতি ধরবে কে খেয়াল রাখবে আমার ।
সবাই কাব্যকে শান্তনা দিলো
জান্নাতের মাঃ আজ আমাদের জন্য আমার মেয়েটাকে হারালাম। মারে তোর মুখে এক বার মা ডাক টা শুনতে পারলাম না। কেন গেলি একবার মা বলে ডাক না। আমাদের তুই ক্ষমা করে দে মা রে
জান্নাতের বাবার চোখ বেয়ে পানি ঝরছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
মেহেরিনঃ কি হয়ে গেলো। আমরা কেন কাব্য ভাইয়ার সাথে গেলাম না কার সাথে গল্প করবো কাকে দেখে হিংসে করবো।
মেহেরাবঃ কেদো না। ( চোখ বেয়ে পানি ঝরছে)
কাব্যের মা বাবার মুখে যেনো কোন কথা নেই চোখে বেয়ে পানি ঝরছে।
জেরিনঃ কাদিস না কাব্য৷ জান্নাত যাকে রেখে গেছে তাকে জান্নাতের অভাবটা বুঝতে দিস না ।
হাসপাতালে কান্নার রোল পড়ে গেলো। আশ পাশে যারা ছিলো তাদের চোখে ও পানি। হিমেল ও তার বউ ও আসছে দেখছে। দুজনের ও চোখে পানি।।
জান্নাতকে দাফন দিলো
কাব্যের বাবাঃ বাবা রে এখানে আর থাকতে হবে না চল আমাদের সাথে
জান্নাতের মাঃ হ্যা বাবা তুমি চলো
কাব্যঃ না আমি এখানেই থাকবো। এখানে আমার জান্নাতের সৃতি আছে। ওর সৃতি নিয়েই থাকতে চায়।।
কাব্যকে কেউ বুঝাতে পারলো না। সবাই চলে গেলো কাব্য জেরিন মেহেরিন আর মেহেরাব থাকলো।
কাব্যঃ তুই যাবি না
জেরিনঃ না। আমি গেলে আমার মেয়েকে কে দেখবে।
কাব্যঃ এখনো বদলাসনি।
জেরিনঃ বদলাতে তো দিলি না
দুদিন পর কাব্যের মা বাবা এসে উঠে ব্যাগ নিয়ে
কাব্যঃ তোমরা
মাঃ আমরা এখানে তোর সাথেই থাকবো।
বাবাঃ অসুবিধা হলে বল চলে যাব
কাব্যঃ না না কিসের অসুবিধা।
এভাবে দেখতে দেখতে ৭ টি বছর কেটে গেলো। কাব্যের মেয়ের নাম আয়াত
একদিন
বাবাই তুমি এতো কষ্ট কেন করছো। তোমাকে না বলছি তুমি এই রোদে বসে থাকবে না।
– কই মামনি রোদ।
– তুমি শুধু মিথ্যে কথা বলো। এই রোদে বাবাই তোমার অনেক কষ্ট হয়।
– কষ্ট হয় না মামনি৷ এখানেই যে আমার সৃতি আছে
– ঠিক আছে আমি আর স্কুলে যাবো না
– কেন
– তুমি ডাব বিক্রি করবে আমি তোমার মাথায় ছাতি ধরে রাখবো।
– তুমি স্কুলে যাবা। রোদ তো তোমার স্কুল ছুটির টাইমে পড়ে।
– ঠিক আছে আমি তাড়াতাড়ি এসে তোমার মাথায় ছাতি ধরে রাখবো৷ তুমি ডাব বিক্রি করবে।
কাব্য মেয়েকে বুকে জরিয়ে নিয়ে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দেয়। ৭ বছরের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনলে সব বাবাই আনন্দে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিবে।
সমাপ্ত
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com