Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -০৫



নিশিতাঃ (কারো ডাকে চমকে উঠে পেছনে তাকালাম,,, এদিকে তো কেউ আসেনা,,,,) বর্ষণ ভাইয়া,,,
বর্ষণঃ এই সময়ে এখানে কী করছো,,,?? একটু পরই তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে,,,
নিশিতাঃ এমনই,,, কিছু না,,,,(ভাঙা গলায়,,,)
বর্ষণঃ কাঁদছিলে কেনো,,,??
নিশিতাঃ ক,,,কই কাঁদছিলাম,,,, এমনই বসে ছিলাম একটু,,,
বর্ষণঃ আমি তো কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে এদিকে আসলাম,,,,
নিশিতাঃ আ,,,আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন,,,
বর্ষণঃ হতে পারে,,, এখন বাড়ির ভেতরে চলো,,,
নিশিতাঃ আপনি জান আমি আসছি,,,
বর্ষণঃ আমার আগে আগে হাঁটো যাও,,,(কঠিন গলায়)
নিশিতাঃ(আর কথা বাড়ালাম না,,, উঠে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম,,,, বর্ষণ ভাইয়া কেমন যেনো একটা,,,, এই যে এতোদিন পর এসেছে,,,, কেমন আছো,,, কী অবস্থা এসব জিজ্ঞাসা করবে তা না করেই নরমাল কথা বলা শুরু করে দিয়েছে,,, কখনো হাঁসতেও দেখিনি,,,, শ্রাবণ আর বর্ষণ ভাইয়া দুজনে একে অপরের বিপরীত,,, শ্রাবণের মুখে সবসময় হাঁসি লেগেই থাকতো,,, আর বর্ষণ ভাইয়ার হাসি দেখা মানে অমাবস্যায় চাঁদ দেখা,,,শ্রাবণ আমাকে তুই করে বলতো আবার বর্ষণ ভাইয়া ছোটবেলা থেকেই তুমি করেই বলেন,,,,)
বর্ষণঃ(তোমার গায়ের এই সাদা ড্রেস আমার কাছে বিষের মতো লাগছে,,,, তীরের মতো বিঁধছে বুকের ভিতর,,,, ইচ্ছে করছে আগুনে পুড়িয়ে দেয়,,,,, আগের থেকেও শুকিয়ে গেছে নিশি,,,, মুখের দিকে তাকাতেই বুকের ভিতরের যন্ত্রণাগুলো চোখে পরে,, কিন্তু আমারই বা কী করার আছে,,,,?? শ্রাবণ ভালো বলেই সেদিন তোমার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম,,,, আমি তো সবার চোখেই অভদ্র,, বেপরোয়া,,,,, লাফাঙ্গা খারাপ ছিলাম,,, আর খারাপ বলেই ভালোর কাছে ছেড়ে দিয়েছিলাম,,, তোমার ভালোর জন্য কিন্তু ভালো তো তোমার কপালেই ছিলো না,,,)
নিশিতাঃ (হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির ভেতরে চলে এলাম,,,) খালামুনি দেখো কে এসেছে,,,??
খালামুনিঃ আবার তোর নতুন কোন নাগর এসেছে,,, বেহায়া মেয়ে কোথাকার,,, এখনই এতো কথা শুনালাম তাও শিক্ষা হয়নি,,,, আবার কাকে নিয়ে এসেছিস,,,(পান চিবোতে চিবোতে রুম থেকে বের হয়ে)
নিশিতাঃ(মাথা নিচু করে আছি আর টপটপ পানি পড়ছে চোখ থেকে,,, বর্ষণ ভাইয়ার সামনেও এসব বলতে হলো,,, উনার দিকে তাকাতেও পারবো না আর,,,)
বর্ষণঃ মা,,,,,(মায়ের মুখের ভাষা শুনে আমি নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি,,, এ আমি কোথায় আছি,,,, তবে কী এটাই কারণ নিশির পুকুরপাড়ে বসে কান্না করার,,,)
মাঃ আরে আমার বাবাটা এসেছে,,,,(কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে,,,) তোর ভাইয়া আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে,,,, তুইও আমার কোনো খোঁজ খবর নিস না,,,,
বর্ষণঃ নিশিকে তুমি এসব কী বলছিলে,,,,(অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে)
মাঃ এই অপয়া অলক্ষীর কথা বলিস না,,, এখন রুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে জামা পাল্টে নে যা,,,
বর্ষণঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি মা,,, নিশিকে এসব কেনো বলছো,,,??
মাঃ তো কী বলবো এই মেয়েকে,,,,,?? সোহানা যেদিন এই মেয়ের খবর দিলো,,, নতুন অতিথি আসতে চলেছে,,,, আদরের বোনটার বাচ্চা হবে,,, কতো খুশি হয়েছিলাম,,,,, সেইদিনই এর বাপের লাশ ফিরলো বাড়িতে,,, তখনই সবাই বলেছিলো এ বাচ্চা শুভ হবে না,,,, জন্মের পর আমার বোনটাকেও খেয়ে নিলো,,,,, আর এখন আমার তরতাজা ছেলেটাকে,,,,। অলক্ষী,,, অপয়া বলবো না তো কী বলবো একে,,,,
বর্ষণঃ মা,,,,, এতে ওর দোষ কোথায়,,,?? নিশি ও তো বাবা-মা,,, আর,,,স,,স্বামী হারিয়েছে,,,,
মাঃ সব ওরই কপালের দোষ,,,,, আজ কী করেছে জানিস,,,,??
বর্ষণঃ কী করেছে,,, (অবাক হয়ে)
মাঃ আমার ছেলেটা মারা গেছে কেবল দুটো মাস গেছে,,,, এখনই বাড়িতে ছেলে এনে,,,,,৷
বর্ষণঃ মা,,,,,, এসব কী বলছো তুমি,,, সব কিছুর একটা লিমিট আছে কিন্তু ,,,(রাগে চোখমুখ লাল করে)
মাঃ আমি মিথ্যে বলছি নাকি,,,,ওকেই জিজ্ঞেস কর তুই,,,,(রেগে)
বর্ষণঃ নিশি,,, কে এসেছিলো বাড়িতে,,,,??(কঠিন গলায়,,,)
নিশিতাঃ(শেষ পর্যন্ত চরিত্রের পরিক্ষাও দিতে হচ্ছে,,, টপটপ করে পানি পড়ছে চোখ থেকে,,, মাথা নিচু করেই উত্তর দিলাম) আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড সুজন এসেছিলো,,,৷ দুমাস হলো ভার্সিটি যাইনি আর কোন খোঁজ খবরও পায়নি,,,, তাই আমার কী হয়েছে জানার জন্য এসেছিলো,,, (ভাঙা গলায় একদমে সব বলে থামলাম)
বর্ষণঃ দুমাস হলো ভার্সিটি যাওনি মানে,,,,?? ভার্সিটি কেনো যাওনি,,,??(অবাক হয়ে)
মাঃ ও এখন ইদ্দত পালন করছে,,, চারমাস দশ দিন এই বাড়িতে থাকবে ও,,,, আর এই বাড়িতে থেকে ওর ভার্সিটি যাওয়া হবে না,,, এখান থেকে যখন চলে যাবে,,, তখন যা ইচ্ছে করুক,,,
বর্ষণঃ কোথায় যাবে,,,?? মা তুমি কী পাগল হয়ে গেছো,,, কী বলছো বুঝতে পারছো কিছু,,,?? ঠিক আছে ওকে তুমি ইসলামি বিধান অনুযায়ী ইদ্দত পালন করাচ্ছো ভালো কথা,,, কিন্তু এই বিধানে তো কোথাও লেখা নেই ও বাড়ির বাইরে যেতে পারবে না,,, পর্দা করে বাইরে যেতেই পারে,,,, আর ইদ্দত পালন শেষে চলে যাবে মানে,,, কোথায় যাবে ও,,?
মাঃ যেখানে ছিলো,,,??
বর্ষণঃ ছোট খালামুনির দ্বায়িত্ব সে পালন করেছে,,, নিশির ওপর তার যতটা দ্বায়িত্ব ছিলো তোমারও ঠিক ততটা দ্বায়িত্ব ছিলো,,, কিন্তু তুমি নিজের দ্বায়িত্ব পালন করোনি,,,, এখন অন্তত করো,,, কারণ এখন তুমি শুধু নিশির খালামুনি নও নিশির শাশুড়ী,,,, ছোটখালামুনির থেকে অনেক বেশি দ্বায়িত্ব তোমার,,,
মাঃ আমাকে এতো জ্ঞান দিতে আসবি না,,,, আমি রাখতে পারবো না এই অপয়া মেয়েকে,,,, আমার সংসার এমনই নষ্ট করে দিয়েছে,,,, আরো অমঙ্গল করার আগেই এই মেয়েকে বিদায় করবো আমি এই বাড়ি থেকে,,,,
বর্ষণঃ মা,,, তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো,,,??
মাঃ তুই এখন রুমে চল,,, ফ্রেশ হবি,,, চল,,,
বর্ষণঃ এটা আমার কথার উত্তর নয়,,,
মাঃ আমি তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি,,, আমি তোর খাবার দিচ্ছি তুই ফ্রেশ হয়ে আয়,,,
বর্ষণঃ মা,,,,(মা আমার কথার উত্তর না দিয়েই চলে গেলো,,,,
নিশিও চলে গেলো শ্রাবণ মানে নিজের রুমের দিকে,,,,
আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে এসে ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেললাম বেডে,,,
মাথায় হাত দিয়ে বেডে বসে পড়লাম,,,, এতটা কষ্টে আছে আমার নিশি,,,
যা করার আমাকেই করতে হবে,,,
শ্রাবণ ওকে তোর জন্য ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু তুই মাঝপথেই ওর হাত ছেড়ে চলে গেছিস,,,
বাকিটা পথ আমি ওকে পাড় করাবো,,, তোর শূন্যতা মুছে দিবো ওর মন থেকে,,,,ওর জীবন থেকে,,,,,
নিশিতাঃ রুমে এসে ওযু করে মাগরিবের নামাজে বসে আল্লাহর কাছে ধৈর্য্য চাইলাম,,,,
সব সয্য করার জন্য,,,, সয্য করা ছাড়া আমার যে আর কিছুই করার নেই,,,,
চোখ থেকে টপটপ পানি গড়িয়ে পড়ছে হাতের মোনাজাতে,,,,,
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন,,, ছোটবেলা থেকেই এটা শুনে বড় হয়েছি,,,,
আমার জীবনে এসব কোন ভালোর জন্য হলো আমি খোঁজে পাই না,,,,
আবার ভাবি আমি কষ্ট কেনো পাচ্ছি,,,,
আমার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,,,,,
তিনিও তে এতিম ছিলেন,,,,
তার জীবনের থেকে তো আর বেশি কষ্ট নয় আমার জীবনে,,,,,
শুধু ধৈর্য্য চাই আল্লাহর কাছে,,,,
মোনাজাত শেষ করে চোখ মুছে নিলাম,,,, জায়নামাজ ভাজ করে রাখতেই,,,,
খালামুনিঃ নিশিতা,,,,,
নিশিতাঃ আসছি খালামুনি,,,,(তাড়াতাড়ি কিচেনে গেলাম)
খালামুনিঃ সব রেডি করে টেবিলে রাখ,,, আজ কতটা দিন পর ছেলেটা এসেছে,,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে খালামুনি,,,,
খালামুনিঃ আর একটা কথা,,,,
নিশিতাঃ কী,,,, (ঘুরে তাকালাম খালামুনির দিকে,,,)
খালামুনিঃ বর্ষণের সামনে বেশি যাবি না,,,
একই ভুল আমি দ্বিতীয়বার কখনো করবো না,,,
নিশিতাঃ (খালামুনির এই কথার মানে আমি কিছুই বুঝলাম না,,,,
শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি,,,
তখনই সিড়ি দিয়ে কারো নামার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালাম,,,,
বর্ষণ ভাইয়া নামছে,,,
কিন্তু খালামুনি আমাকে ভাইয়ার সামনে বেশি যেতে মানা করলো কেনো,,,??)
চলবে,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com