Breaking News

ডিভোর্স । পর্ব -৩৮



নিলাঃ (কী হলো জানি না,,,?? মায়ের পা জড়িয়ে ধরলাম,,,,) আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি মা,,,, আমাকে মাফ করে দিন,,,,,(পা ধরে কান্না করতে লাগলাম,,,,)
নার্সঃ রোগীর জ্ঞান ফিরেছে,,,, আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন,,,,
নিলাঃ আমি দেখা করবো,,,,(চোখের পানি মুছে,,)
মাঃ না,,,

নিলাঃ প্লিজ মা,,,, এবারের মতো মাফ করে দাও,,,,
মাঃ ঠিক আছে,,, আরিয়ান যদি মাফ করে তাহলে আমিও মাফ করে দেবো,,,,
নিলাঃ(আরিয়ানের কেবিনে গেলাম,,,, চোখ বন্ধ করেই আছে এখনো,,মাথায় হাত রাখলাম,,,আর চোখ মেলে তাকালো,,) এখন কেমন লাগছে,,,??
আরিয়ানঃ হ,,,হুম ভালো,,,, তুমি ঠিক আছো,,,??
নিলাঃ হুম,,,,,,আমাকে এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ,,,, আমি আর কোনো ভুল করবো না,,,(হাত জড়িয়ে কান্না করে,,,)

আরিয়ানঃ,,,,,,,,,,,
নিলাঃ প্লিজ আরিয়ান,,,,(কান্না করেই)
আরিয়ানঃ তুমি শুধু আমার সাথে অন্যায় করোনি,,, মা আর অন্তরার সাথেও করেছো,,,,, সবচেয়ে বেশি অন্যায় আমিই করেছি তবে তুমিও কিছু কম করোনি,,,,
নিলাঃ আ,,,আমি অন্তরার থেকেও মাফ চেয়ে নিবো,,,আগে তুমি মাফ করে দাও,,,,
আরিয়ানঃ ঠিক আছে,,,, এবারের মতো মাফ করলাম তোমায়,,,, তোমাকে মাফ করে হয়তো অন্তরার থেকেও একদিন মাফ পেয়ে যাবো আমি,,,

নিলাঃ (আজ নিলার আবার নতুন করে জন্ম হলো,,,)
ডক্টরঃ সরি মিস্টার আরিয়ান,,,, আপনার পা দুটো প্যারালাইজড হয়ে গেছে,,, আপনি হয়তো আর হাঁটতে পারবেন না কখনো,,,,
নিলাঃ আরিয়ান,,,,,,,,,, (বিস্ফুরিত কন্ঠে,,)
আরিয়ানঃ(চোখ বন্ধ করতেই চোখের কোন বেয়ে পানির বিন্দু গড়িয়ে গেলো,,,,) সত্যি বলেছিলো অন্তরা,,,, ওপরওয়ালার শাস্তির সীমারেখা হয় না,,,
ডক্টরঃ আরো একটা দুঃসংবাদ আছে,,,
আরিয়ানঃ বলে ফেলুন,,,, হারানোর আর কী বাকি আছে,,,??
ডক্টরঃ মিসেস নিলা দু-মাসের প্রেগনেন্ট ছিলেন,,,,
আরিয়ানঃ ছ,,ছিলেন,,,,,???

ডক্টরঃ উনার মাথায় আঘাত লাগার সাথে পেটেও লেগেছে,,, যার জন্য,,,,
নিলাঃ ক,,,কী,,,(ভয়ে ভয়ে)
ডক্টরঃ She has had a miscarriage and will never be a mother again,,,,,,,sorry,,,
(ডক্টর সব বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন,,, আরিয়ান পাথর হয়ে বসে আছে,,,, যেন অনুভূতিহীন হয়ে গেছে,,,,নিলা আরিয়ানের বুকে পরে চিৎকার করে কাঁদছে,,,)
নিলাঃ যে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অন্তরাকে তোমার জীবন থেকে সরিয়েছিলাম আজ সত্যি হয়ে আমার কাছেই ফিরে এসেছে,,,(কান্না করতে করতে,,)

আরিয়ানঃ পাপ কখনো কাউকে ছাড়ে না,,,
আরিয়ানঃ(সেদিন থেকে সব পাল্টে গেছে,,, নতুন এক নিলাকে আবিষ্কার করেছিলাম,,, দিনরাত আমার সেবা করতো,,, এই ঘটনার একবছর পর মা মারা যান,,,,,, আরিয়ানা আমাদের নিজেদের মেয়ে নয়,,, নিলার কথাতেই একটা এতিমখানা থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিলো,,, আরিয়ানার বয়স এখন চাঁর বছর,,,,, নিলার সেবায় আমিও এখন সুস্থ,,,, হাঁটতে পারি,,,,, কিছুদিন পরই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ,,,, তবু দিন শেষে মনে হয় কিছু একটা নেই,,,,,। তাও বলবো ভালো আছি অনেক,,,, অন্তরার সাথে যে অন্যায় করেছি এতটা ভালো থাকার অধিকারও হয়তো নেই আমাদের,,,,। )
আরিয়ানাঃ বাবা,,,,,,

আরিয়ানঃ কোথায় গিয়েছিলো আমার পরীটা,,,??
আরিয়ানাঃ খেলতে,,,,,,
আরিয়ানঃ শুধু খেললে হবে,,, খেতে হবে না,,?? না খেলে বড় হবে কীভাবে,,,??
আরিয়ানাঃ খাবো তো,,, তোমার সাথে,,,,
(আরিয়ানা আরিয়ানের গলা জড়িয়ে গালে চুমু খেলো,,)
নিলাঃ (বাকিটা জীবন যেন এভাবেই কাটাতে পারি,,, কখনো অন্তরার সাথে দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নেবো,,,, আর ধন্যবাদও দেবো,,,,)
সিয়ামঃ মা,,,,,,,,

অন্তরাঃ কী হয়েছে,,, স্কুল ব্যাগ এখনো কাঁধেই,,, তবু এমনভাবে ডাকছো মনে হচ্ছে কতো সময় ধরে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছো,,,
সিয়ামঃ তুমি জানো না,,, বাসায় এসে তোমাকে না দেখলে আমার একদম ভালো লাগে না,,,
অন্তরাঃ জানি তো,,, কিন্তু আগে ফ্রেশ তো হয়ে নেবে,,,,
সিয়ামঃ না আগে তোমাকে দেখবো তারপর ফ্রেশ হবো,,,,
অন্তরাঃ পাগল ছেলে,,,, দিনদিন বাপের মতো হয়ে যাচ্ছে,,,,,(কাঁধ থেকে ব্যাগ নিয়ে,,,)
সিয়ামঃ আমিতো চাই বাবার মতো হতে,,,, বাবার মতো তোমাকে অনেক ভালোবাসতে,,,,
অন্তরাঃ (সিয়ামের মুখটা হাতের আঁজলে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেলাম,,) যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি,,,

সিয়ামঃ ওকে,,,মা,,,??
অন্তরাঃ আবার কী,,,??
সিয়ামঃ সারা কোথায়,,,,??
অন্তরাঃ ঘুমিয়ে পড়েছে একটু আগে,,,
সিয়ামঃ ওহ্ আর বাবা কখন আসবে,,,??
অন্তরাঃ আজকে তো আসতে অনেক রাত হবে সোনা,,, তুমি আজকে একাই খেলো,,,,
সিয়ামঃ ওকে,,,(মন খারাপ করে,,,)

(সিয়াম চলে গেলো ফ্রেশ হতে আর অন্তরা সিয়ামের খাবার রেডি করতে চলে গেলো)
সিয়ামঃ বোনু,,,,,,,??ঘুমিয়ে পড়েছিস কেন,,,?? খেলবি না,,,??
অন্তরাঃ(হ্যাঁ সারা আমার মেয়ে,,,, আমার আর হৃদয়ের ভালোবাসার প্রতিক,,,,)
হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,, এই অন্তরা তুমি আমার ফোন কেন রিসিভ করোনি,,,,। তুমি জানো না তোমার ফোন রিসিভ করতে একটু লেট হলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,,, ভয় করে,,,
(হৃদয়ের মা ভার্সিটিতে,,, হৃদয় আর রিয়াদ অফিসে চলে গেছে,,,, সিয়াম স্কুলে যায় এখন,,,, বাড়িতে অন্তরা একা,,,, অফিসে থেকে হৃদয় বারবার অন্তরাকে কল দিচ্ছে কিন্তু অন্তরা রিসিভ করছে না,,,। তাই বাসায় চলে এসেছে,,, সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করলে বললো রুমে আছে,,, রুমে এসে দেখে অন্তরা ঘুমিয়ে আছে,,)

হৃদয়ঃ এদিকে আমি চিন্তায় মরছি আর এখানে মহারানী ঘুমাচ্ছে,,,, দাড়াও তোমার ঘুম বার করছি আমি,,,,
(কাছে গিয়ে অন্তরাকে কেমন নিস্তেজ লাগছে,,,)
অন্তরা,,,, এই অন্তরা,,,,ও তো অ,,অজ্ঞান হয়ে গেছে,,,,,। এই অন্তু কথা বল না,,,,৷ এমন মজা আমার ভালো লাগছে না,,,,। ভয় করছে আমার,,,,। (গ্লাস থেকে পানি নিয়ে চোখেমুখে দিলাম,,, তাও জ্ঞান ফিরছে না,,,। তাই কোলে করে গাড়িতে নিয়ে বসালাম,,,,, তাড়াতাড়ি হাসপাতালের নিয়ে যেতে লাগলাম,,,,) তোমার কিছু হলে আমার কী হবে অন্তরা,,,?? একবার ভেবেছো আমার কথা,,,,
(ছেলেদের কাঁদতে নেই,,,, কিন্তু হৃদয়ের চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে,,,,, জীবনে কোনোদিন এতটা ভয় হয়তো পায়নি হৃদয়,,,,)

হৃদয়ঃ (অন্তরার হাত ধরে হাসপাতালের বেডের পাশে বসে আছি,,,, ডক্টর পাশে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট দেখছে,,,)
ডক্টরঃ ভয়ের কিছু নেই,,,, এই সময় এমন একটু হয়,,,, খাবার দাবারের দিকে নজর রাখবেন,,,,,
হৃদয়ঃ এই সময় মানে,,,??
ডক্টরঃ আপনার ওয়াইফ ৩ মাসের প্রেগনেন্ট,,,,, মিষ্টি নিয়ে আসুন,,
(এটা শোনার পর হৃদয় পাথর হয়ে গেছে,,,,। কিছুই বুঝতে পারছে না,,,)
হৃদয়ঃ (না না মিথ্যে স্বপ্ন দেখে নিজেকে আর অন্তরাকে কষ্ট দিতে পারবো না,,,) আ,,,আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,,,, অন্তরা কখনো মা হতে পারবে না,,,,
ডক্টরঃ কী বলছেন আপনি,,,?? রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে উনি প্রেগনেন্ট,,,, ডক্টর আপনি নাকি আমি,,, কে বলেছে উনি মা হতে পারবে না,,,??

হৃদয়ঃ আ,,,,আপনি দয়া করে আবার টেস্ট করুন,,, আর এটা অন্তরাকে বলবেন না প্লিজ,,(এই কথাটা অন্তরা শুনলে ওর কষ্টটা আরো বেড়ে যাবে,,, আমি চাই না ও একটুও কষ্ট পাক,,,)
ডক্টরঃ ঠিক আছে,,,,, আপনার ইচ্ছে,,,, কিন্তু আমার রিপোর্ট কখনো ভুল হতে পারে না,,,
হৃদয়ঃ এই রিপোর্ট যদি সত্যি হয়,,, আমি কী করবো আমি নিজেই জানি না,,,??(অন্তরার মুখের দিকে তাকিয়ে,, শান্ত গলায়,,)
(ডক্টর চলে গেলো আবার টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে,,,)
সিয়ামঃ মা,,,, আমি খেলতে যাচ্ছি,,,,
অন্তরাঃ আরে,,, খাবার খেয়ে নাও আগে,,,,
সিয়ামঃ টিফিন করেছি,,, এখন ক্ষিদে নেই,,, আজকে বাবা আসবে না,,, বন্ধুদের সাথে খেলতে হলে আগে যেতে হবে,,,, আমি আসছি,,,

অন্তরাঃ খাবার খেতে কতো সময় লাগবে,,,, খাবার না খেলে আমি কোথাও যেতে দিবো না বলে দিলাম,,,,
সিয়ামঃ তাহলে তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও,,,
অন্তরাঃ এদিকে আসো,,,,(সিয়ামকে খাইয়ে দিতে লাগলাম,,, একদম বাপের মতো বাস্কেটবল খেলার পাগল,,, হৃদয় আগে বাসায় আসলে বাপ ছেলে দুজনে খেলে আর আমরা মা-মেয়ে বসে দেখি,,, আজ হৃদয়ের আসতে লেট হবে বলেছে,,,,) ক্ষিদে নাকি পায়নি,,, এবার খাবারগুলো সব কোথায় গেলো শুনি,,,??

সিয়ামঃ তোমার হাতে খেলে,,,, ক্ষিদে না পেলেও খাবার একাই সাবার হয়ে যায়,,,
অন্তরাঃ সবসময় বাবাকে কপি করা,,,??(সরু চোখে তাকিয়ে)
সিয়ামঃ Because Dad is my role model,,,, I want to be like Dad when I grow up,,,,
অন্তরাঃ (সিয়ামের কথা শুনে মুচকি হাসলাম,,,) হুম
বাবার মতো একজন আদর্শ মানুষ হও,,,
সিয়ামঃ ওকে আমি আসছি,,, লেট হবে আমার,,,,
অন্তরাঃ ওকে,,,

(সিয়াম খেলতে চলে গেলে অন্তরা খাবার গুছিয়ে রুমে গিয়ে দেখে হৃদয় কল দিচ্ছে,,,)
অন্তরাঃ আল্লাহ,,, এ না আবার বাসায় চলে আসে,,, কেমন এক বদঅভ্যেস হয়েছে,,, ফোন রিসিভ করতে লেট হলেই বাসায় চলে আসবে,,, হ্যালো,,,
হৃদয়ঃ এতোক্ষণ কী করছিলে,,,?? এবার রিসিভ না করলে বাসায় চলে আসতাম,,,।
অন্তরাঃ আরে বাবা সিয়ামকে খাওয়ালাম,,,,
হৃদয়ঃ এই কে তোমার বাবা,,,??

অন্তরাঃ আমার না আমার বাচ্চার বাবা,,,হিহিহি,,,।
হৃদয়ঃ এইবার ঠিক আছে,,,,, তো আমার রাজপুত্র আর রাজকন্যা কী করছে,,??
অন্তরাঃ রাজপুত্র তার রাজকার্য করতে গেছে আর রাজকন্যা ঘুমের দেশে আছে,,,,
হৃদয়ঃ আর আবার বেবটা কী করে,,,??(রোমান্টিক গলায়)
অন্তরাঃ দুই বাচ্চার মা নাকি বেব,,,(মজা করে)
হৃদয়ঃ দিলে আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে,,,, এখন মিটিংয়ে যাওয়ার আগে একটা মিষ্টি দাও,,,।।

অন্তরাঃ আবার,,,,
হৃদয়ঃ তাড়াতাড়ি করো,,, লেট হচ্ছে,,, নাহলে মিটিং ভালো হবে না,,,,
অন্তরাঃ যতোসব ঢং,,,,
হৃদয়ঃ লেট হচ্ছে,,,,,
অন্তরাঃ উম্মা,,(এর পাগলামি দিনদিন আরো বাড়ছে,,)
হৃদয়ঃ thanks you,,,,,
(হৃদয় ফোন রেখে দিলো,,,)
অন্তরাঃ এটা কোনো কথা,,,, কিসের বদলে ধন্যবাদ,,??
ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আগে পিছনে ঘুরতো বিয়ের আগে আর বিয়ের পর শুধু তাকে ভালোবাসি বলো নিজে বছরে একবারও বলবে না,,,,

(রাগ করে আবার মুচকি হাসলাম) ভালোবাসি না বলেও তার প্রতিটা কাজে প্রকাশ পায় কতটা ভালোবাসে,,,,,
জীবনে এতো সুখ ছিলো কখনো কল্পনা করিনি,,,,।
মেয়ের পাশে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম,,,
আর সেই দিনগুলোর কথা ভাবতে লাগলাম যখন প্রথম ওর আগমনের কথা শুনেছিলাম,,,,,
বলে বুঝাতে পারবো না সেই অনুভূতি,,,,,
মনে হয়েছিলো এ বুঝি মরা গাছে ফুল ফোঁটার মতো,,)

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com