ডিভোর্স । পর্ব -৩৭
আরিয়ানঃ তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো আমার,,,(করুন গলায়,,,)
অন্তরাঃ আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান,,, আপনার সাথে কোন কথা নেই আমার,,,,
আরিয়ানঃ প্লিজ অন্তরা,,, দুই মিনিট সময় দাও,,,,,,
হৃদয়ঃ সময় আমার কাছে চান মিস্টার আরিয়ান আহমেদ,,,,। আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি,,, আমার অনুমতি ছাড়া আমার ওয়াইফের সাথে কথা বলতে চলে এসেছেন,,,, (রাগে মুখ লাল করে,,,,)
আরিয়ানঃ স,,সরি স্যার,,,,,, শুধু এক মিনিট কথা বলতে দিন,,, অনেকদিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি,,,,, কিন্তু,,,,।।
হৃদয়ঃ পারেননি,,,, তাই তো,,, আর চেষ্টাও করিয়েন না,,, আপনার কালো ছায়া আমার নতুন জীবনে পড়তে দিতে চাই না আমি,,,,,
আরিয়ানঃ স্যার,,,,,,,,,, আমার কালো ছায়া আপনাদের জীবনে ফেলতে আসিনি,,,, শুধু একবার ক্ষমা চাইতে এসেছি,,,,।
হৃদয়ঃ আপনার ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা আছে বলে মনে করেন আপনি,,,?? আপনি এখনো মুক্ত আকাশে নিশ্বাস নিতে পারছেন কেন জানেন,,,?? আমার স্ত্রী চায় আপনার শাস্তি প্রকৃতি দিক,,, ওপরে যে একজন আছে সে দিক,,,,। তাই এখনো মাথার ওপর খোলা আকাশ দেখতে পাচ্ছেন আপনি,,,। মানুষের দেওয়া শাস্তির একটা সীমারেখা হয় কিন্তু ওপরে যিনি আছেন তার শাস্তির কোনো সীমারেখা নেই,,,,,,।।
আরিয়ানঃ অন্তরা,,,,,,,,
হৃদয়ঃ How dare you call by the name of Antara,,,??? Call her mam from today,,,
আরিয়ানঃ ওকে,,,,, ম্যাম আপনি আমাকে মাফ করে দিন দয়া করে,,,?? এই অপরাধবোধ আমাকে তিলেতিলে শেষ করে দিচ্ছে,,,,,(হাত জোর করে,,)
অন্তরাঃ পারলে মাফ করে দিতাম,,,, কিন্তু আমি চাইলেও আপনাকে কখনো মাফ করতে পারবো না,,,, আপনি আমার সন্তানের খুনি,,,,,। কোনো মা পারে না তার সন্তানের খুনিকে মাফ করতে,,,। শুধু আমার সন্তানকে খুন করেননি,,, খুন করেছেন মা ডাক শোনার অধিকার,,,,,
আরিয়ানঃ আমি,,,,,,,
হৃদয়ঃ শুনতে পেয়েছেন কী বলেছে,,,?? গেইটটা ওদিকে,,, (আঙুল দিয়ে গেইট দেখিয়ে)
আরিয়ানঃ আমার কথাটা,,,,,,
হৃদয়ঃ অনেক কষ্টে নিজের ভদ্রতা ধরে রেখেছি,,,৷ এখন আপনাকে নিয়ে এখানে কোনো ঝামেলা হলে কথা আমার ওয়াইফকে শুনতে হবে,,, তাই এখনো নিজের পায়ে দাড়িয়ে আছেন আপনি,,,,। যদি এম্বুলেন্স করে এখান থেকে বেরোতে না চান তাহলে এখনই বের হয়ে যান,,,(রাগে দাঁতে দাঁত চেপে,,)
আরিয়ানঃ এটা শুনলে হয়তো কিছুটা মাফ করতে পারতে আমাকে,,, আর খুশিও হতে,,, কিন্তু আমার কপাল খারাপ তুমি শুনতেই চাও না আমার কথা,,,। ঠিক আছে আসছি,,,, আপনাদের সামনে আর কখনো আসবো না,,,(হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে) যে কষ্টগুলো আমি তোমাকে দিয়েছি তা যেন আর কখনো তোমাকে স্পর্শ করতে না পারে,,,, ভালো থেকো অন্তরা,,,, ওহ্ সরি,,, ম্যাম,,, আসছি,,,
(আরিয়ান বের হয়ে গেলো,,, গেইটের সামনে থেকে একবার পিছনে তাকালো আরিয়ান,,,,)
আরিয়ানঃ সত্যি,,, হৃদয়ই তোমার যোগ্য,,,, আমি নই,,, ভালো থেকো,,,,
,,,,,
জ্যোতিঃ (জানালার সামনে দাড়িয়ে আছি,,,, পাশেই তনয় স্যার দাঁড়ানো,,,, হ্যা আমাকে দেখতে আশা ছেলে আর কেউ নয়,,,, তনয় স্যার,,। তার দুঃসম্পর্কের চাচা চাচী আর কাজিন এসেছে সাথে,,,,।)
তনয়ঃ আমি কী খুব খারাপ জ্যোতি,,,?? একটা সু্যোগ আমাকে দেওয়া যায় না,,,,?? বিশ্বাস করে একবার হাতটা ধরে দেখো,,,, জীবনের যতো খারাপ সময়ই আসুক কখনো হাত ছাড়বো না,,,
জ্যোতিঃ আপনি জানেন আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি,,,, তাহলে কেন আমার সাথে নিজের জীবন জড়াতে চাইছেন,,,??
তনয়ঃ আমি যদি পারতাম,,, তাহলে তুমি যাকে ভালোবাসো,,, তার হাতে তোমাকে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি নিজে করতাম,,,, কিন্তু তুমি যাকে ভালোবাসো সে কখনো তোমাকে জীবনের জীবনে আসতে দেবে না,,,,, তার জীবনে আর কারো কোন জায়গা নেই,,,,,,
জ্যোতিঃ (তনয় স্যারের কথা শুনে চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা পানি পড়লো,,, তনয় স্যারের আড়ালেই সেটা মুছে নিলাম,,, শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম,,,, সবার ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায় না,,,,।)
তনয়ঃ তোমার বাবা-মার পছন্দে কাউকে বিয়ে করবে তুমি,,,, তাহলে সেটা আমি হলে সমস্যা কোথায়,,??
জ্যোতিঃ (আমার ভালোবাসা তো পূর্নতা পেলো না,,,,, আপনার ভালোবাসাই নাহয় পূর্নতা পাক,,,)
তনয়ঃ আমাকে ভালোবাসতে হবে না তোমার,,,, শুধু তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিয়ো,,,,
জ্যোতিঃ আমার কোনো আপত্তি নেই,,, তবে বিয়েটা তাড়াতাড়ি হলে ভালো হতো,,,,,(কোনো রকম অনুভূতি ছাড়া বললাম,,,, তনয়ও হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছে তাই তারও খুব একটা অনুভূতির প্রকাশ হলো না,,,, রুম থেকে চলে গেলো তনয়,,, আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম,,,,)
★পাঁচ বছর পর★
নিলাঃ তোমার মেডিসিন নেওয়ার সময় হয়ে গেছে,,,, তাড়াতাড়ি মেডিসিন খেয়ে নাও,,,,
আরিয়ানঃ এতো মেডিসিন খেতে আর ভালো লাগে না,,,,,।
নিলাঃ আল্লাহর রহমতে শেষমেষ ঠিক হয়ে গেছো তুমি,,,, আর কয়েকটা দিন খেলেই আর খেতে হবে না,,,,,
আরিয়ানঃ ঠিক আছে দাও,,,,,, আরিয়ানা কোথায়,,,??
নিলাঃ খেলছে মনে হয়,,,, এই মেয়েটা একদম কথা শুনে না,,,,,,
আরিয়ানঃ ডেকে নিয়ো এসো,,,, এখনো তো মনে হয় খায়নি,,,,,
নিলাঃ তুমি মেডিসিনটা নাও আমি দেখছি কোথায় গেলো,,,
আরিয়ানঃ হুম যাও,,,,,
নিলাঃ আরিয়ান,,,,,,
আরিয়ানঃ হ্যাঁ বলো,,,,,,
নিলাঃ এখনো কী আমাকে ক্ষমা করতে পারোনি,,,,??
আরিয়ানঃ (নিলার হাত ধরে কাছে এনে বসালাম,,,) তোমাকে আমি সেদিনই মাফ করে দিয়েছি যেদিন তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে মাফ চেয়েছিলে,,,, তবু কেন প্রতিদিন এই একই প্রশ্ন করো,,,,??
নিলাঃ মনের শান্তির জন্য,,,, ভালোবাসো না একটুও,,,
আরিয়ানঃ হুম বাসি,,,, অন্তরা এখন আমার কাছে অতীত,,,, তুমি বর্তমান,,, ভবিষ্যৎ,,,, । অন্তরার জন্য মনে একটা জায়গা সবসময় থাকবে,,, সেটা আমি চাইলেও মুছে ফেলতে পারবো না,,,, কিন্তু তুমি আর আরিয়ানা এখন আমার জীবনের সব,,,,
নিলাঃ (আরিয়ানের হাত মুঠোয় নিয়ে একটা কিস করলাম,,,) তুমি বসো আমি আরিয়ানাকে খুঁজে আনছি,,,
আরিয়ানঃ হুম,,,(মুচকি হেসে আবার বই পড়ায় মন দিলো,,,)
নিলাঃ ( ভালো আছি এখন আমরা,,, আরিয়ান,,, আমি আর আমাদের ছোট্ট পুতুল আরিয়ানা,,,, এটাই আমাদের ছোট্ট পৃথিবী,,,, আজ থেকে তিন বছর আগে নতুন করে শুরু হয় আমাদের পথচলা,,,)
আরিয়ানঃ (বইটা বন্ধ করে নিলার যাওয়ার দিকে তাকালাম,,,, মানুষ কতো পরিবর্তন হতে পারে নিলাকে দেখে তা বুঝা যায়,,,,। পার্লার,, ক্লাব,,, ঘুরাঘুরি এসব নিয়ে যে ডুবে থাকতো আজ তার জীবন আমি আর আরিয়ানাতেই সীমাবদ্ধ,,,সেদিন অন্তরার বউভাত থেকে বাসায় এসে দেখি,,,, একটা ছেলের কাঁধে হেলান দিয়ে নেশাগ্রস্থ নিলা বাসায় ঢুকলো,,,,। এটা তারপরের রোজকার রুটিন ছিলো নিলার,,,, দুবছরে আমার জীবনটা নরক করে তুলেছিলো,,,,বাচ্চার বললে এড়িয়ে যেতো,,, দুবছর কেটে যায় এভাবেই,,,,। চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির চাকরি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছি অনেক আগেই,,,। অফিস থেকে ফেরার সময় হটাৎ নিলার ফোন,,,,)
নিলাঃ আ,,আরিয়ান,,,, প্লিজ হেল্প মি,,,,,, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে,,,(অস্থির গলায়)
আরিয়ানঃ কারা মেরে ফেলবে,,,,,
নিলাঃ প্লিজ হেল্প মি,,, (কান্না করে)
আরিয়ানঃ ওকে,,, ওকে ডোন্ট প্যানিক,,,, তুমি কোথায় আছো,,,,,??
নিলাঃ ★★★ ক্লাবের তিনতলার একটা রুমে,,,,
আরিয়ানঃ (এটাতো সমানেই,,,, পাঁচ মিনিট লাগবে,,,) ওকে আমি এখনই আসছি,,,,
নিলাঃ ত,,তাড়াতাড়ি এসো,,,,,
আরিয়ানঃ (দ্রুত সেই ক্লাবে পৌঁছে গেলাম,,,, তিনতলায় অনেক রুম,,, একে একে সব রুমে খুঁজতে লাগলাম,,,,, এক রুমের সামনে গিয়ে থেমে গেলাম,,,)
নিলাঃ প্লিজ আমাকে যেতে দাও,,, আমি কাউকে কিছু বলবো না,,,,,(কান্না করে,,)
,,,,,কাউকে না বললে লুকিয়ে আমাদের কথা কেন শুনেছিস,,
নিলাঃ আমি কিছু শুনিনি,,, কিছু দেখিনি,,, প্লিজ যেতে দাও,,,(কান্না করে,,,)
আরিয়ানঃ (নিলা মনে হয় কোনো বিপদে পড়েছে,,,)
,,,,এখন এটাকেও সবাই মিলে রেপ করে মেরে ফেলে দিয়ে আসবো ওটার মতো,,(শয়তানি হাঁসি দিয়ে,,,)
আরিয়ানঃ (পেছন দিয়ে নিঃশব্দে ঢুকে একেকটার মাথায় বাড়ি মারলাম ফুলদানি দিয়ে,,, পাঁচটা ছেলে,,)
নিলাঃ আরিয়ান,,,,, (দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে,,)
আরিয়ানঃ এদেরকে তো আজ,,,,, (মারতে গেলে নিলা হাত টেনে ধরলো)
নিলাঃ এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলো প্লিজ,,, এরা অনেক খারাপ লোক,,,, এদের আরো লোক আছে সাথে,,,, তাড়াতাড়ি চলো এখান থেকে,,,
আরিয়ানঃ (নিলাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম ক্লাব থেকে,,,) ওরা তোমাকে মারতে চাইছে কেন,,,??(রাগে চিৎকার করে)
নিলাঃ একটা মেয়েকে জোর করে ওরা সবাই মিলে রেপ করেছে,,,, তারপর গলা টিপে মেরে ফেলেছে,,, সেটা আমি দেখে ফেলেছি তাই,,,,
আরিয়ানঃ এই লাশ কোথায় এখন,,,,(অবাক হয়ে,,)
নিলাঃ এই রুমেই আছে,,,
আরিয়ানঃ তাহলে তো পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে এখনই,,,,
নিলাঃ লাভ নেই,,,, পুলিশ ওদের কিছুই করতে পারবে না,,,,
আরিয়ানঃ তাই বলে,,,,,
নিলাঃ আরিয়ান,,,,,,,,!!!! আরিয়ান আমাকে ধাক্কা মেরে গাড়ি থেকে বের করে দিলো,,,
(একটা বিকট আওয়াজের পর আবার সব নিরবতায় ঢেকে গেলো,,,, একটা ট্রাক আরিয়ানের গাড়ি ধাক্কা মেরে চলে গেলো,,,)
নিলাঃ (জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করলাম,,) আরিয়ান,,,,,, আরিয়ান কোথায়,,,??
নার্সঃ আপনি শান্ত হন,,,,
নিলাঃ আরিয়ান কোথায়,,,,আরিয়ান ঠিক আছে তো,,??
নার্সঃ আপনি শান্ত হন আগে,,,,,,
নিলাঃ আমি বলছি আরিয়ান কোথায়,,,??(চিৎকার করে,,)
নার্সঃ আইসিইউতে,,,, উনার অবস্থা ভালো না,,,।
নিলাঃ(এটা শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গেলাম,,,,, আজ আমার জন্য আরিয়ানের এই অবস্থা,,,, শুধু আমার জন্য,,, চিৎকার করে কান্না করে দিলাম)
নার্সঃ আপনার মাথায় আঘাত লেগেছে,,, কাঁদলে সমস্যা হবে আপনার,,,,
নিলাঃ আমি আরিয়ানের কাছে যাবো,,,,(কান্না করতে করতে,,,)
নার্সঃ ঠিক আছে চলুন,,,,
নিলাঃ (আইসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,,,। মাথায় ব্যান্ডেজ,,,পায়ে,, হাতে ব্যান্ডেজ,, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আরিয়ান শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে,,,,)
আরিয়ানের মাঃ আজ পর্যন্ত তোমাকে কিছু বলিনি,,, কারণ নিজের ইচ্ছে নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছিলাম,,,। কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি,,,। আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য শুধু তুমি দায়ী,,,। তুমি আমার ছেলের জীবন থেকে চলে যাও,,,,,(শক্ত গলায়,,)
নিলাঃ( কী হলো জানি না,,,?? মায়ের পা জড়িয়ে ধরলাম,,,,) আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি মা,,,, আমাকে মাফ করে দিন,,,,,(পা ধরে কান্না করতে লাগলাম,,)
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com