Breaking News

আনন্দময় ভালোবাসা | পর্ব - ২য়

রিমি পিরিয়ডের ব্যাথায় কাতড়াচ্ছে।তার দিকে যে এগোচ্ছে ৩জন যুবক সেদিকে তার খেয়াল নেই।
সে ব্যাথার কারণে চারদিকের কিছুই শুনতে পারছে না।রক্তে পাজামা ভিজে গেছে তার।
পেটটা অতিরিক্ত ফোলা থাকার কারণে বেশি নড়াচড়া করতেও পারছে না।
ছেলেগুলো তার সামনে এসে দাঁড়ায়।রিমির চোখ দিয়ে পানির ফোয়াড়া নামছে।
রিমি চোখ খুলে সামনে তাকিয়েই চমকে ওঠে।মনের ভিতরে প্রবেশ করেছে ভয় নামক জিনিসটা।
ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বলে ওঠে,

“তোরা হাতদুটো ধর,আমি আগে কাজটা সেরে নেই।রক্ত গোলাপ।
কতদিন থেকে এরকম ফুল দেখিনা।আহ!”
ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে আরো অশ্লীল ভাষায় কথা বলছিল।
দুজন ছেলে গিয়ে রিমির দুহাত চেপে ধরে।
রিমি যে প্রতিরোধ করবে তারও উপায় নেই।
কুকুর গুলো দাঁড়িয়ে দেখছে।রিমির কান্নার পরিমাণ মুহুর্তে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
আজ হয়তো নিজের সবটুকুই বিসর্জন দিতে হবে তাকে।একদিকে ব্যাথা অন্যদিকে সতিত্ব।
ছেলেদুটো রিমির হাত দুটো ‌চেপে ধরে।
আর একজন ছেলে তার নিজের প্যান্টের বেল্টে খুলতে শুরু করে।
রিমি কান্না করতে করতে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
চোখ বন্ধ করলেও পানি ঠিকই গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে।
সে কল্পনায় দেখতে পারছে ছেলেটা তার কাছে আসছে।

হঠাৎ করে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়।রিমির হাতদুটো ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে রিমি।দেখে অবাক করা এক কান্ড।
দুটো ছেলে‌ প্রাণপ‌ণে ছুটছে।
আর যে ছেলেটা প্যান্টের বেল্ট খুলে উলঙ্গ হয়েছিল তাকে কয়েকটা কুকুর ধরেছে।
তার অবস্তা হয়েছে দেখার মতো।রিমি তার চোখ বন্ধ করে সেখানে বসে আছে।
কুকুর গুলো ছেলেটাকে কামড়ে শেষ করছে।
একপর্যায়ে ছেলেটা খুব জোড়ে চিল্লিয়ে ওঠে।
রিমি কি মনে করে নিজের চোখটা খুলে ফেলে।

চোখ খুলে বুঝতে পারে ভুল করেছে।লজ্জায় চোখদুটো আবার বন্ধ করে নেয়।
একটা কুকুর ছেলেটার গোপনাঙ্গে কামড় দিয়েছে।
ছেলেটা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
কুকুর গুলো এবার তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজ নিজ আবাসনে যায়।
ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পড়ে থাকে।
কিছুক্ষন আগে রিমির যে পরিমাণ ব্যাথা ছিল তা এখন নেই।
এর কারন কি হতে পারে তা রিমির অজানা।
রিমি বুঝতে পারে এখানে থাকাটা আর নিরাপদ নয়।
তার ঐ দুই বন্ধু পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রস্তুতি নিয়ে আবার আসতে পারে।
একবার না হয় ভাগ্যের জোড়ে বেঁচেছে।
কিন্তু পরেরবার তো নাও বাঁচতে পারে।
কিন্তু এতরাতে বাহিরে একটা মেয়ে।সেটা কি নিরাপদ?
সে ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে?
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় এখানে নয় বাহিরে গিয়ে 
একটা জায়গা খুঁজে আজকে রাতটা কাটিয়ে দেবে।

রিমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু ব্যার্থ হয়।দিত্বীয়বার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়।
আবার মনে পড়ে স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসের কথা।
এই লোকটা কথা বারবার মনে পড়ায় নিজের মনে উপর খানিকটা বিরক্ত হয় রিমি।
সে নিজের মনকে বলে,স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস নয়,এই রিমিই সেরা।
এই কথা মনে করে সে উঠতে চেষ্টা করে।এবার সফল হয় সে।
সে উঠে দাঁড়াতেই আবার পড়ে যেতে ধরে।
এক্সিডেন্টের ধকল এখ‌নো সাড়িয়ে উঠতে পারেনি।সেই ব্যাথা গুলো এখনো‌ আছে।
না জানি কতদিন থাকবে?ঔষুধ যে খাবে তারও পয়সা নেই।
সব কিছুর বাধা পেড়িয়ে রিমি হাটতে শুরু করে।

সে বুঝতে পারছেনা এটা তার সঠিক সিদ্ধান্ত নাকি ভুল সিদ্ধান্ত।
সে আর অতসত না ভেবে সেখান থেকে বের হয়ে হাটতে শুরু করে।
পেটটা কালকের তুলোনায় আজকে একটু কমেছে।
এই পেট ফুলোর জন্যই‌ আজ তার এই অবস্তা।
এসব কথা ভেবে সে মনে মনে পেটটাকে ইচ্ছে মত গালি দেয়।
হাটতে হাটতে রিমি এসে দাঁড়ায় একটা শহীদ মিনারের সামনে।
শহীদ মিনারের উপরে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৩টা বাজে।
রিমি আবার হাটতে শুরু করে।সম্পুর্ন রাস্তায় মানুষ নামক কোনো‌ প্রাণীর ছায়া নেই।
মাঝে মাঝে দু-চারটা কুকুর আছে।রিমি হাটতে হাটতে এসে দাঁড়ায় একটা স্কুলের সামনে।
সামনে বিশাল একটা মাঠ।স্কুলের গেটের সামনে একটা লাইট আলো দিচ্ছে।
রিমি স্কুলের নামটা পড়তে শুরু করে।স্কুলের নাম হলো,’গংগাচড়া আদর্শ উচ্চ‌ বিদ্যালয়।’
রিমি স্কুলের গেটের সামনেই বসে পড়ে।

স্কুলের গেটে তালা দেওয়া রয়েছে।না হলে ভিতরে ঢুকতো।
রিমি সেখানে আস্তে করে সুয়ে পড়ে।ভাবতে থাকে আগের কথা গুলো।
এই‌সময় তার থাকার কথা ছিল কোথায় আর‌ সে কোথায়।
তার বাবা-মা যার সাথে বিয়ে দিয়েছে সে একজন প্রবাসী রিমি সেটা জানেনা।
জানলে হয়তো বিয়েই‌ করতো না।
আজকে তার স্বামী তার পাশে থাকলে না হোক কিছু করতো।
একপর্যায়ে রিমি সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।

একঘুমে রাত পার।রাতে আর কোনো রকম সমস্যা হয় না।
সকাল বেলা স্কুলের দারোয়ান এসে জাগিয়ে দেয় তাকে।রিমি তারাতারি উঠে পড়ে।
দারোয়ানটা তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এতে বিন্দু পরিমান লজ্জা পায় রিমি।
সে তারাতারি উঠে হাটতে শুরু করে।পিছন থেকে দারোয়ানটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আর কোনোদিন যদি এখানে দেখি মেরে ভুত বানিয়ে দেব।
যত্তসব পাগলের দল।”

রিমি তার কথায় কান না দিয়ে হাটতে শুরু করে।
রাস্তার সবাই রিমির দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে।
প্রথম প্রথম রিমি এর কারন বুঝতে না পারলেও‌ পড়ে বুঝতে পারে।
সবাই তার দিকে তাকানোর কারন হচ্ছে তার রক্তে মাখা পাজামাটা।
কালকে পিরিয়ডের সময় যেটা রক্তে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
রিমি নিজে খুব লজ্জায় পড়ে যায়।বুকের ওরনাটা দিয়ে কমোড়টা ঢেকে ফেলে।
এবার তার দিকে তাকাচ্ছে সব ছেলেরা।রিমি বুঝতে পারে এভাবে হাঁটা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
কিন্তু সে বসবে এমন কোনো জায়গায়ও নেই।আসার পথে কিছু ভাঙ্গা বাড়ি দেখেছিল।
কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই বমি বমি ভাব শুরু হয় রিমির।সাথে সাথে বাহিরে বের হয়ে আসে সে।
ভিতরের পরিবেশ প্রচন্ড বাজে।মানব সন্তানেরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।

রিমি পুনরায় হাটতে থাকে।আর সম্ভব হচ্ছে না আর এই‌ হাটা।
সে ধপকরে একটা মাঠে বসে পড়ে।মাথাটা নিচের দিকে করে থাকে।
কালকের ব্যাথাটা আজকে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।
পেটটা অসহ্য রকমের ব্যাথা করছে।রিমি সেখানেই শুয়ে পড়ে।
উদিত সুর্যের আলো এসে পড়ে তার চোখে মুখে।সে মাঠের মাঝেই শুয়ে পড়ে।
সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে আর চলে যাচ্ছে।
কেউ থামছে না দেখার জন্য।সবাই‌ চলে যাওয়ার সময় বলে যাচ্ছে,
‘পাগলিটা শুয়ে আছে’

চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com