Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -০8

নিশিতাঃ খালামুনি আর খালুজান খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,, খালামুনি এতোক্ষণ বসেই ছিলো,,,, একটু আগে প্রচুর ঝিমাচ্ছিলো,,,, তাই আমি ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছি,,,, ড্রয়িংরুমে টানানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে এগারোটা বাজে,,,, বর্ষণ ভাইয়া এখনো ফেরেনি,,,,, শীতের রাত আটটা বাজলেই অনেক রাত মনে হয়,,, সেখানে সাড়ে এগারোটা বাজে,,,, আমারও ঘুমে চোখ ভেঙে আসছে,,, বারবার হাই তুলছি,,,,, কিন্তু উনার আসার নাম নেই,,, তারপর কখন চোখ লেগে এসেছে মনে নেই,,,, কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো,,,, চোখ কচলে ঘড়ির দিকে তাকালাম,,, সাড়ে বারোটা বেজে গেছে,,৷ তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজা খোলে দিলাম,,,,
বর্ষণঃ এতো রাতে এখনো ঘুমাওনি কেনো,,,??
নিশিতাঃ ন,,না মানে আপনি এখনো বাড়ি ফেরেননি,,,, তাই আর কী,,,,??
বর্ষণঃ আমি সারারাত না ফিরলে কী সারারাত বসে থাকতে,,,,,??
নিশিতাঃ হ্যাঁ,,,, মানে না,,,,
বর্ষণঃ ভেতরে যাবো,,,,??
নিশিতাঃ(তাড়াতাড়ি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালাম,,,, উনি ভেতরে ঢুকলে দরজা আটকে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম,, )
বর্ষণঃ নিশি,,,,,
নিশিতাঃ জী ভাইয়া,,,,??
বর্ষণঃ এইগুলো তোমার জন্য,,,
নিশিতাঃ(ভাইয়ার হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ,,, ডানহাতের গুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,)
বর্ষণঃ এখানে তোমার জন্য কিছু ড্রেস আছে,,,, আর এতে বাবা-মায়ের কিছু জিনিস,,,,
নিশিতাঃ আমার জন্য কেনো,,,,??
বর্ষণঃ গিফট,,,,, নাও আর রুমে গিয়ে ঘুমাও,,,,
নিশিতাঃ(চুপচাপ প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম,,,, এই দুমাসে একটা সুতোও কেউ কিনে দেয়নি,,,, শ্রাবণ আমার জন্য আগে থেকে যা কিনে রেখেছিলো সেসবই পরছি,,,, প্যাকেটগুলো আলমারীতে রাখতে গিয়েও আবার বের করে আনলাম,,,,কেনো যেনো দেখার ইচ্ছে হলো,,,?? প্যাকেটগুলো বেডে রেখে একটা প্যাকেট খুললাম,,,, অনেক সুন্দর একটা গ্রাউন গারো সবুজ রঙের,,,,, পুরোটা গ্রাউন পাথর দিয়ে সুন্দর করে কাজ করা,,,,,, কিন্তু আমি এটা পরে কোথায় যাবো,,,,?? আরো কিছু প্যাকেট খুললাম,,,, অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রেস আর শাড়ি,,,,, কিন্তু এসব পড়লে মানুষ বাজে কথা বলবে,,, সবগুলো লাইট কালার,,,,, প্যাকেটগুলো আলমারিতে তোলে রাখলাম,,,, প্রতিদিনের মতো আজও উঠে নামাজ পড়ে নিলাম আর বেলকনিতে চলে গেলাম,,, ভোরের বাতাস অনেক ভালো লাগে,,,,,,,,, আজও বর্ষণ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম,,,, তবে আজ সাথে খালুজানও আছে,,,,, খালুজান ভেতরে চলে এলেন আর বর্ষণ ভাইয়া গার্ডেনে এক্সারসাইজ করতে লাগলেন,,,, আমি কিচেনে চলে গেলাম,,, রান্নার শেষের দিকে খালামুনি কিচেনে ঢুকলেন,,,)
খালামুনিঃ নিশিতা,,,,,
নিশিতাঃ হ্যাঁ খালামুনি,,,,
খালামুনিঃ এই বর্ষণ গতরাতে কয়টার দিকে বাড়ি ফিরেছিলো,,,,??
নিশিতাঃ ঐ রাত সাড়ে বারোটার দিকে,,,,,
খালামুনিঃ ওহ্ ,,,,,, এই ছেলেটার না চলাফেরার কোনো ঠিক নেই,,, সেসব থাক,,,, তোর রান্না কতদূর,,,
নিশিতাঃ এই তো শেষের দিকে,,,,
খালামুনিঃ আমি কোনো হেল্প করবো,,,,??
নিশিতাঃ না,,,, (মিষ্টি হেঁসে) আমার হয়ে গেছে,,,
বর্ষণঃ মা,,,,(টাওয়েল দিয়ে গলার ঘাম মুছতে মুছতে,,,)
খালামুনিঃ হ্যাঁ বাবা,,,, বল কী হয়েছে,,,??
বর্ষণঃ মা আজ আমি চলে যাবে,,,,
খালামুনিঃ চলে যাবি মানে,,,(অনেক অবাক হয়ে)
নিশিতাঃ(সবজি প্লেটে রাখতে রাখতে ড্রয়িংরুমে বর্ষণ ভাইয়ার বলা কথা শুনে হাত থেমে গেলো,,,)
বর্ষণঃ আমার কাজ পরে গেছে,,,, আজ বিকেলের আগেই অফিসে যেতে হবে,,,, ইম্পর্ট্যান্ট কাজ পরে গেছে,,,,
খালামুনিঃ কেবল দুটো দিন হলো এসেছিস,,,,তাও আবার দু’মাস পর,,,তার ওপর গতকাল সারাদিন বাড়িতেই ছিলি না,,,,, এখনই কেনো চলে যাবি,,,??
বর্ষণঃ আবার কয়েকদিন পরই আসবো,,, তবে আজ লান্সের পরই আমি রওনা দিবো,,,,,
খালামুনিঃ কিন্তু,,,,
বর্ষণঃ Don’t worry ma,,,,বললাম তো কিছুদিন পরই আবার আসবো,,,,
খালামুনিঃ ঠিক আছে,,,,তবে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আজ সারাদিন আমার সাথে থাকতে হবে,,,
বর্ষণঃ ওকে,,,, আজ যাওয়ার আগে পর্যন্ত তোমার সাথেই থাকবো,,,, খুশী,,,
খালামুনিঃ হুম,,,, নিশিতা,,,,
নিশিতাঃ হ্যাঁ খালামুনি,,,,,
খালামুনিঃ আজ সব রান্না আমি করবো,,,
নিশিতাঃ ঠিক আছে খালামুনি,,, লাগলে বলবে আমি হেল্প করবো,,,,
খালামুনিঃ ঠিক আছে,,, এখন খাবার দে,,,আমি তোর খালুজানকে ডেকে আনছি,,,
নিশিতাঃ আচ্ছা,,,,,(খালামুনি খালুজানকে ডাকতে চলে গেলেন,,, বর্ষণ ভাইয়া এখনো দাঁড়িয়ে আছেন,,, আমি টেবিলে পরোটার বক্স রেখে আবার কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম,,)
বর্ষণঃ নিশি,,,,
নিশিতাঃ হ্যাঁ ভাইয়া,,,,??
বর্ষণঃ গতরাতে তোমাকে আমি যে প্যাকেটগুলো দিয়েছিলাম সবগুলো দেখেছো,,,,??
নিশিতাঃ মা,,,,মানে,,,,,না ভাইয়া,,,,সবগুলো দেখা হয়নি,,,,
বর্ষণঃ যেগুলো দেখেছো,,,, পছন্দ হয়েছে,,,??
নিশিতাঃ জী ভাইয়া,,,,, সবগুলো অনেক সুন্দর,,, কিন্তু ঐসব ড্রেস পরে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা আমার নেই,,,
বর্ষণঃ ওখানে ছোট একটা প্যাকেট আছে,,,,সেটা খোলে দেখো,,, এখন সবার খাওয়ার পরে,,,,
নিশিতাঃ(কী আছে এই প্যাকেটে,,,?) ঠ,,ঠিক আছে,,,
বর্ষণঃ হুম,,,,, (নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম,,,,, )
নিশিতাঃ (একটু পরই খালামুনি আর খালুজান টেবিলে এসে বসলেন)
খালুজানঃ বর্ষণ চলে কেনো যেতে চাইছে,,,,??
খালামুনিঃ ওর নাকি কোনো কাজ পরে গেছে,,,
খালাজানঃ আর কয়েকদিন পরে গেলেই হতো,,,,
বর্ষণঃ না বাবা,,,, আমার যাওয়াটা অনেক বেশি দরকার,,, একটা প্রবলেম হয়েছে,,,, (সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
খালুজানঃ ঠিক আছে,,,, তবে তাড়াতাড়ি আবার আসতে হবে কিন্তু,,,,,
বর্ষণঃ হ্যাঁ,,,, চেষ্টা করবো,,,,
খালামুনিঃ এখন আগে খেয়ে নাও,,,,
নিশিতাঃ(আমি আজও সবার সাথেই বসে খেতে লাগলাম,,,,, আজ কয়েকবার আড়চোখে বর্ষণ ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,, কারণ আমার মনে হচ্ছিলো উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,, কিন্তু প্রতিবারই ভুল প্রমাণিত হলাম,,, উনি নিজের মনে খেয়ে যাচ্ছেন,,,, খাওয়া শেষে নিজের রুমে চলে গেলেন,,,,, আমি সব গুছিয়ে নিয়ে রুমে গেলাম,,, সবগুলো প্যাকেট বের করলাম,,,, যে প্যাকেটগুলো দেখা বাকি ছিলো সেগুলো দেখতে শুরু করলাম,,, কয়েকটা প্যাকেটে কিছু জুয়েলারি,,,, যেগুলো দেখে আমার চোখ কপালে,,, কারণ সবগুলো ডায়মন্ডের জুয়েলারি,,, উনি এতো টাকা কোথায় পেলেন,,,?? আর একটা প্যাকেট খোলে দেখালাম একটা ফোন,,, আইফোন,,,, এতো দামী ফোন আমাকে কেনো দিয়েছেন,,,, ফেরত দিবো,,,?? কিন্তু গিফট কীভাবে ফেরত দিবো,,,, খালামুনি যদি জানতে পারে তাহলে আবার আমার সাথেই রাগ করবে,,,, ফোনটা রেখে দিতে গেলেই ফোনটা বেজে ওঠলো,,,,)
ক্রিংক্রিংক্রিং
নিশিতাঃ আসসালামু আলাইকুম,,,,,,, কে বলছেন,,,??
,,,,,,,,
নিশিতাঃ হ্যালো,,,,,,
বর্ষণঃ ফোন পছন্দ হয়েছে,,,,,??
নিশিতাঃ জী,,,, কিন্তু এতো দামী ফোন আমাকে কেনো দিয়েছেন,,,,??
বর্ষণঃ মা তোমাকে এখন এই বাড়ির বাইরে যেতে দিবে না,,,, তাই ফোন দিয়ে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে আর পড়াশোনায় ও হেল্প হবে,,,,
নিশিতাঃ কিন্তু খালামুনি জানলে সমস্যা হবে,,,,
বর্ষণঃ জানানোর প্রয়োজন নেই,,,, আর কোন ফালতু কাজে এটা ব্যবহার করো না,,,,
নিশিতাঃ ফালতু মানে,,,(কপাল কুঁচকে)
বর্ষণঃ কিছু না,,, রাখছি,,,,
নিশিতাঃ কি,,,কিন্তু (যা কেটে দিলো,,,,,,)
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com