মায়ের প্রিয় গয়না
বৌমা, তোমার গয়নাগুলো যত্ন করে রেখে দিও। একেতো মেয়ে হয়েছে; তার উপর কালো। মেয়ের বিয়ের সময় সোনার গয়নাগুলো খুব কাজে লাগবে।
আমার জন্মের পর ঠাম্মির কথাগুলো শুনে মৃদু হেসে মা বলেছিল, “আপনি চিন্তা করবেন না মা। সামান্য কয়টা সোনার গয়নাই তো! মেয়েকে যদি ঠিকঠাক মতো মানুষ করতে পারি একসময় আমার এই কালো মেয়েই আমার গয়না হবে।
এরপর থেকে শুরু হয়ে গেল মায়ের যুদ্ধ। শ্যামলা মেয়েকে ঘষে মেজে রঙ ফর্সাকারি ক্রীম মাখিয়ে ফর্সা করার মতো অসম্ভব যুদ্ধ নয় বটে। কয়লা থেকে হীরে তৈরি করার যুদ্ধ। মানে আমাকে মায়ের গয়নায় রূপান্তরিত করার যুদ্ধ। আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধটা সহজ মনে হলেও যুদ্ধটা মোটেই সহজ ছিল না। নিজের পরিবার, আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো যুদ্ধে জয়ী হওয়া শুধু মুশকিলই নয়; অনেকক্ষেত্রে অসম্ভবও।
-“এতো কি ভাবছো? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও না মা। শেষে দেখবে আমরা ফাংশনে পৌঁছানোর আগেই ফাংশন শেষ হয়ে গেছে।”
-“না! মানে ভাবছিলাম……….!!” (মায়ের চোখে টলমল করছে জল)
-“কি হয়েছে মা?”
এবার মায়ের টলমল চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মা আমার দুই গালে দুই হাত রেখে বললো, “সত্যিই! তুই আমার জীবনটাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিস। আমার সারা জীবনের অপ্রাপ্তির গ্লানি ঘুচিয়ে দিয়েছিস। আমার স্বপ্নকে আমার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছিস।” মাকে আর কাঁদতে না দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললাম, “যার এমন একজন মা থাকে তার স্বপ্ন কি কখনো অধরা থাকতে পারে?” মায়ের কপালে চুমু দিয়ে আবারো বললাম, “ব্যস! এখন থেকে আর কোনো কান্না নয়। এতদিন তুমি সব দায়িত্ব পালন করেছো, আজ থেকে আমি তোমার সব দায়িত্ব নিলাম। এখন তোমার বিশ্রাম।
-“কই, তোদের মা মেয়ের হলো? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।”
-“এইতো হয়ে গেছে, মামা। বাবা রেডি হয়েছে?”
-“হুম। জামাইবাবু তো সেই কখন রেডি হয়ে গেছে। তোকে ডাকছে।”
-“আচ্ছা! আমি যাচ্ছি। তুমি দেখো মামী, রূপ আর রুহানি তৈরি হয়েছে কিনা।”
মামা চলে যেতেই মাকে বললাম, “তুমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও। আমি দেখি বাবা কি বলছে।”
দেখলাম, পাশের ঘরে হুইল চেয়ারে বসে জানালায় চোখ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে বাবা। নিঃশব্দে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাবার কাঁধে হাত রাখতেই বাবা বললো, “এসেছিস মা!”
-“হুম। কিছু বলবে?
মাথাটা নীচু করেই বাবা বললো, “আমি জানি! তুই আমার সাথে রাগ করে আছিস। আমি তোর আর তোর মায়ের সাথে অনেক অন্যায় করেছি। আমায় ক্ষমা করে দে মা।
বাবার চোখ ভর্তি অশ্রু; অনুতাপের অশ্রু। এই পৃথিবীর বেশির পিতাই হয়তো প্রথমবার ছেলে সন্তানের পিতা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাইতো আমার জন্মের পর আমার পিতাও খুব বেশি খুশি হতে পারলো না। তবে, প্রথমদিকে এ বিষয়টা নিয়ে বাবা তেমন কোনো উচ্চবাচ্য বা মায়ের সাথে ঝগড়া না করলেও কিছুদিন পর ঠাম্মির কুমন্ত্রণায় বাবা মা এবং আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। তাছাড়া বড়মা, ছোটমা দু’জনেরই প্রথমবার ছেলে সন্তান হয়েছিল সেকারণেও বাবার মন খারাপ থাকতো।
সবচেয়ে বড় কথা মধ্যবিত্ত সংসারে মনে করা হয় ছেলে মানেই ভবিষ্যতের অবলম্বন। মেয়ে তো পরের ঘরে চলেই যাবে। একটা মেয়ে বুড়ো বয়সে বাবা-মায়ের দেখভাল তো আর করতে পারবে না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছুটা শঙ্কিত ছিল বলেই হয়তো বাবা আমাকে এবং মাকে বকাঝকা করতো। তার উপর আমার মা বেশ জেদি এবং স্বাধীনচেতা একজন মানুষ। আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে খুব কম মানুষই আছে যারা স্বাধীনচেতা নারীকে পছন্দ করে অথবা ভালবাসে।
অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং দৃঢ়চেতা মা আমার খুব বেশিদূর লেখাপড়া করার সুযোগ না পেলেও বিদ্যার প্রতি তার গভীর অনুরাগ আমি দেখেছি। আমার পড়ালেখার খরচ যোগাতে মা একটা মেসে রান্নার কাজ করতো। সেখান যে ছেলেরা থাকতো তাদের কাছ থেকে নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ শিখে ডায়েরীতে লিখে রাখতো। বাড়িতে ফিরে শব্দগুলো আমাকে শেখাতো। আমাকে টিউটর দিতে পারতো না দেখে স্কুলের দিদিদের কাছ থেকে পুরোনো গাইড সংগ্রহ করতো। মেসের ছেলেদেরকেও বলতো নোট করে দিতে।
এতসব কিছু করার পরেও ঠাম্মির বক্তব্য ছিল, “মেয়েমানুষ! অত লেখাপড়া শিখে বেশি পন্ডিত হয়ে দরকার নেই। তার চেয়ে বরং মেয়েকে কিছু হাতের কাজ শেখাও বৌমা। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। সেইতো পরের বাড়িতে গিয়ে হেঁসেলেই কাটিয়ে দিতে হবে পুরো জীবন। কোনোরকমে টেনেটুনে পাস করে স্কুলের চৌকাঠ পেরোলে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই ঝামেলা চুকে গেল। আর এখন যা দিনকাল পড়েছে! মেয়েরা একটু বিদ্বান হলেই ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে। পরে গিয়ে বিপদে পড়ে। তখন পরিবারের মানসম্মান নিয়েই টানাটানি পড়ে যায়।”
-“বিপদের ভয়ে মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখবো! বিপদ তো ঘরে বসে থেকেও আসতে পারে মা। আর এখন যে যুগ পড়েছে তাতে মেয়েদের লেখাপড়া না শেখালেই বিপদ।
-“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। সবসময় কথায় কথায় তর্ক করো। কী এমন লাভটা হচ্ছে শুনি? বাড়িতেও কাজ করছো। আবার সামান্য কয়টা টাকার জন্য বাইরে গিয়েও কাজ করতে হচ্ছে। সমুও তোমার উপর খুশি না। ছেলেটা প্রায় প্রায়ই মদ খেয়ে বাড়িতে ফেরে। আচ্ছা! তোমরা আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছো না কেন বলো তো? আমি আর কয়দিন বাঁচবো বলো? তোমাদের সংসার। তোমাদেরকে সুখে থাকতে দেখে যেতে পারলেই আমার শান্তি।”
বরাবরের মতো ঠাম্মি বোধহয় মাকে আরো কথা শোনাতো।
কিন্তু অসুস্থ শরীরে এর চেয়ে বেশি কটু কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি সেদিন। এর কয়েকদিন পর অবশ্য ঠাম্মি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল না ফেরার দেশে। এর মধ্যে অবশ্য মায়ের কয়েকবার কনসিভ করেছিল। কিন্তু প্রত্যেকবারই কোনো এক অজানা কারণে এক/ দুই বা তিন মাসের মাথায় মায়ের গর্ভপাত হয়ে যেত। বাবার ভাষ্যমতে মায়ের খেয়ালীপনার কারণে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের জন্য বাবা বরাবরই মাকে দোষারোপ করে আসছিল। তবে ডাক্তারের ভাষ্যমতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করার জন্যই এমনটা হয়েছিল। যাইহোক, সেই কঠিন সময়গুলো অতিক্রম করে বাবা-মায়ের সম্পর্কটা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছিল; ঠিক তখনি একটু সুখের মুখ দেখার আগেই বাবার অ্যাক্সিডেন্ট হলো।
বাবা একটা গার্মেন্টস কোম্পানিতে ট্রাক ড্রাইভারের কাজ করতো। একদিন শিপমেন্টের সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছিল দেখে দ্রুত ড্রাইভ করতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট হলো। বাবার নামে বাড়ির যে অংশটা ছিল বাবার চিকিৎসার খরচ দেওয়ার বিনিময়ে জেঠু এবং কাকু সেটা লিখিয়ে নিয়েছিল। বাবা প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়ে গেল। ওদিকে বাড়ি থেকেও আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো। ভাগ্যিস! মামার বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলাম আমরা।
আমার মামা মামী খুব আন্তরিক হলেও মা চায়নি কারোর ওপর বোঝা হয়ে থাকতে। তাছাড়া, মামাও তো আহামরি ধনী হয়। আমাদের মতোই মধ্যবিত্ত। একটা ছোটখাটো চাকরি করে কোনোমতে নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খায়। তার উপর আমরা! তবুও অসময়ে মামা যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এটাই বা কম কি! এখন আমাদের মাথার উপর একটা ছাদ অন্তত আছে।
মা কয়েকটা মেসে রান্নার কাজ করে টুকটাক আয়রোজগার করে। আমার পড়ালেখার খরচ এবং সংসারের খরচ হয়ে যায়। মায়ের কষ্ট দেখে আমি দুই একটা টিউশনি করতে চাইলে মা বলতো, “টিউশনি! কেন? আমি তো এখনো আছি; না…..কি? অতিরিক্ত টাকার দরকার হলে আমাকে বলিস; আমি ব্যবস্থা করে দেব। তোর টিউশনি করার দরকার নেই। টিউশনির সময়টা নিজের পড়ালেখার জন্য ব্যয় কর।
মায়ের উপর খুব বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছিল দেখে মাকে না বলে হাতখরচ এবং প্র্যাকটিকাল ক্লাসের অতিরিক্ত খরচ চালানোর জন্য একটা টিউশনি শুরু করলাম।
এতদিন অনেক বিপদ এসেছে, অনেক প্রতিকূলতা, বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বেও দাদুর দেওয়া গয়নাগুলো বিক্রি করেনি মা। একসময় নিজের সেই গয়নাগুলোও বিক্রি করার প্রয়োজন পড়লো। আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করানোর জন্য মা নিজের গয়নাগুলো মামার হাতে তুলে দিল বিক্রি করার জন্য। মামা বললো, “বাবার দেওয়া গয়নাগুলোও বিক্রি করে দিবি দিদিভাই? মেয়ের বিয়ের সময় মেয়েকে কি দিয়ে বিদায় করবি?
-“আমার মেয়েই তো আমার গয়না রে ছোট। তুই যত দ্রুত সম্ভব গয়নাগুলো বিক্রি করে টাকা নিয়ে আয়।”
মায়ের গয়না বিক্রি করা টাকা দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলাম। অ্যাক্সিডেন্টে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর থেকে বাবা তেমন কোনো কথা বলতো না। কিন্তু সেদিন বাবাও বলেছিল, “এত কষ্ট করে এত টাকা খরচ করে মেয়েকে ডাক্তার বানিয়ে কি হবে আঁখি?” বাবার কথার উত্তরে মা বলেছিল, “আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।
সত্যিই! আজকে এত ভাল লাগছে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে। আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনটা যেদিন আমাকে আয়নার সামনে বসিয়ে মা জিজ্ঞেস করেছিল, “আয়নার প্রতিচ্ছবিতে কাকে দেখতে পাচ্ছিস; বলতো?” মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম, “আমাকেই দেখছি! আর কাকে দেখবো?”
-“আয়নার প্রতিচ্ছবিতে যেদিন তুই শুধু তোকে নয় তোর স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি দেখতে পারবি সেদিনই তুই তোর আপন সত্ত্বাকে খুঁজে পাবি।
সেদিনের পর থেকে প্রতিদিনই আমি খানিকটা সময় আয়নার সামনে গিয়ে বসে থাকতাম। নিজের স্বপ্নকে দেখতে চেষ্টা করতাম। হাতড়ে খুঁজে বেড়াতাম আমার আপন সত্ত্বাকে। একদিন সত্যি সত্যিই নিজের প্রতিচ্ছবিতে আমার স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম, খুঁজে পেলাম আমার আমিকে। ব্যস! লক্ষ্য স্থির করে ফেললাম। তারপর………! তারপর শুধুই ছুটে চলা…. স্বপ্ন পূরণের পথে।
বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললাম, “হুম। এটা সত্যি যে একটা সময় তোমার উপর ভীষণ রাগ হতো; প্রচন্ড অভিমান হতো। এখন আর তোমার উপর আমার কোনো অভিমান নেই বাবা। কোনো অভিযোগ নেই। বাবার চোখের জল গড়িয়ে দু’ফোঁটা জল আমার হাতের উপর পড়লো। বাবাও ভারমুক্ত হলো আর আমিও।
ততক্ষণে মা রেডি হয়ে এসে পড়েছে। নিতান্তই কমদামি একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে মা। মেকাপের আস্তরণ নেই, গায়ে কোনো গয়না নেই। বুঝতে পারছি মায়ের ইতস্তত লাগছে। হয়তো লজ্জাও লাগছে। অনুষ্ঠানে সবাই সেজে গুজে আসবে। আর মা……!
অনুষ্ঠানটাতো মূলত আমাকে ঘিরে। বিগত দশ বছরের মধ্যে কলেজের সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করা ছাত্রী আমি। সেজন্য আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া করা হবে।
সুসজ্জিত মঞ্চ। সামনে সারি সারি চেয়ারে বসে আছেন গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দ, আমার পরম পূজনীয় শিক্ষকবৃন্দ, সাংবাদিক, অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীরা। মা আমার হাত ধরে বসে আছে। ভয় তো আমার পাওয়ার কথা অথচ এত যাবতকাল যে মা আমাকে সাহস যুগিয়ে এসেছে সেই মা ই আজকে ভয় পাচ্ছে। এসির মধ্যে বসেও ঘামছে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সকল পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে ফার্স্ট হওয়া মেয়েটির নাম ঘোষণা করা হলো ‘পারমিতা ভৌমিক’। একদিকে মাইকে আমার নাম ঘোষিত হচ্ছে অন্যদিকে মায়ের চোখের আনন্দাশ্রুতে ভাসছি। আমি মায়ের হাত ধরে মঞ্চে উঠলাম। প্রিন্সিপাল স্যার আমার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিলেন। স্যারকে বললাম, “আমি মায়ের হাতে মেডেল পরতে চাই।” মা কাঁপা কাঁপা হাতে আমার গলায় মেডেল পরিয়ে দিল। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এই দৃশ্যটা সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হলো।
ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মানিত করা হলো আমার অতি সাধারণ মাকে। এরপর আমাকে কিছু বলতে বলা হলো। আমার সফলতার পেছনে থাকা মানুষটি সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলো। মাইক হাতে নিয়ে শুধু এইটুকু বললাম, “আমার আজকের এই প্রাপ্তি শুধু আমার নয়; আমার মায়েরও। আজকে আমি যা কিছু হয়েছি সবটাই আমার মায়ের আশীর্বাদ। আমার মা ই আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে এবং নিজ হাতে আমার স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছে।
মাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছে সবাই। মাইক মায়ের হাতে তুলে দিলাম। মায়ের হাত কাঁপছে, গলা কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা গলায় মা বললো, “একজন নারীর কাছে তার গয়না যেমন প্রিয় তেমনি একজন মায়ের কাছে তার সন্তান সবচেয়ে প্রিয়। আর সেই প্রিয় সন্তানটি যখন তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে তখন সেটাই একজন মায়ের সার্থকতা এবং নারী জীবনের পরম প্রাপ্তিও বটে। আপনারা আপনাদের সন্তানকে স্বপ্ন দেখতে শেখান হোক সে ছেলে অথবা মেয়ে; হোক সে ফর্সা অথবা কালো। দেখবেন, একদিন আপনার সন্তানের স্বপ্নই আপনার গয়না হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসবে।
হাততালিতে মুখরিত হচ্ছে চারদিক। এরমধ্যেই আমি আমার গলা থেকে মেডেলটা খুলে মায়ের গলায় পরিয়ে দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। এই স্বপ্নটাই তো দেখেছিলাম সেদিন আয়নার সামনে বসে। আজকে বাস্তবে দেখছি; চোখের সামনে। মায়ের গলায় পরিয়ে দিয়েছি মায়ের প্রিয় গয়না।।
সমাপ্ত
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com