সিনিয়র বউ | পর্ব -৮
ঘুমিয়ে আছি এমন সময় মনে হলো কেউ একজন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।।
আহ্ একদম নরম তুলতুলে হাত তার।।
হঠাৎ অনুভব করলাম আমার মুখের মধ্যে কারও গরম নিশ্বাস পরছে।।
তারপর হঠাৎ আমার ঠোঁটের সাথে একটা মিষ্টি জাতীয় নরম জিনিস লেগে যায়।।
আমি আর শ্বাস নিতে না পেরে চোখটা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা পরীর মতো মেয়ে আমার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁট জোড়া এক করে রেখেছে।।
আরে ঘরের মধ্যে পরী এলো কোথা থেকে.! এই মেয়েটা সত্যিই কোনো পরী নাকি.? নাহ কিছুই বুঝতে পারছি না। এদিকে আমার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে কারণ এই মেয়েটা এখনো তার ঠোঁট জোড়া দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরে আছে।। আমারও কেন জানি এই মূহুর্তটা খুব ভালো লাগছে।।
মনে হচ্ছে এমন মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়া আমি আগেও কয়েকবার পেয়েছি, কিন্তু কার থেকে.?
হে মনে পরেছে এমন মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়া তো আমি তানিয়ার থেকে পেয়েছি কয়েকবার।।
আর আমার ওইসময়ের অনুভূতিও এখনকার অনুভূতির মতোই লাগছে।।
তার মানে কি এই মেয়েটা তানিয়া.?
আর কিছু না ভেবে আমার উপর থেকে মেয়েটাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম।।
হে আমার ধারণাই তাহলে ঠিক।। এই মেয়েটাই তানিয়া।।
কিন্তু তানিয়াকে আজ এতো সুন্দর লাগছে কেন.?
সত্যি বলতে ওকে আজ একদম পরীর মতো লাগছে।।
সমস্ত শরীর কালো বোরকা দিয়ে ঢাকা শুধু চেহারা বাদে।।
তানিয়াকে আজ এতোই সুন্দর লাগছে যে মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে সারাটা জীবন পার করে দিতে পারবো।।
তানিয়াঃ কি গো আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন, আমার বুঝি লজ্জা করে না.? (লাজুক ফেস + লাজুক কন্ঠে)
তামিমঃ এম না মানে ককই আমি আপনার দিকে তাকিয়েছি
(তানিয়ার থেকে নিজের চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কোনোরকমে বললাম কথাটা)।।
তানিয়াঃ থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না আমি দেখেছি যে তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে।।
আচ্ছা এবার উঠ আর অজু করে এস নামায পড়বো।।
তামিমঃ মানে এখন আবার কীসের নামায.!
আর এখনো তো সকালই হয়নি তাহলে আপনি আমার ঘুম ভাঙালেন কেন.?
তানিয়াঃ আরে ফজরের নামায পড়বো।।
তামিমঃ ফজরের নামায কি.?
তানিয়াঃ ওহ সরি ভুলেই গেছিলাম তুমি তো আবার নামায সম্পর্কে কিছুই জান না।। আচ্ছা তারপরও উঠ, তোমাকে এখন নামাযের নিয়তগুলো শিখাব।।
তামিমঃ কিহ এখন.! নাহ আমি পারবো না আমি এখন ঘুমাব।।
তানিয়াঃ না উঠলে কিন্তু শাস্তি আছে।।
তামিমঃ একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবেন না নাকি.?
তানিয়াঃ তুমি উঠবে নাকি আমি ঝালি বেতটা
তামিমঃ এই নাহ উঠছি তো এই যে উঠলাম (বলেই শুয়া থেকে উঠে বসলাম)।।
তানিয়াঃ এইতো আমার ভালো স্বামী (গাল টেনে), যাও এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে আস।।
তামিমঃ কয়টা বাজে এখন.?
তানিয়াঃ ৬টা
তামিমঃ এই ঠান্ডার সময় এতো সকাল না উঠালে কি হতো.?
তানিয়াঃ তুমি ফ্রেশ হতে যাবে নাকি আমি
তামিমঃ আরে যাচ্ছি তো বলেই বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে আবার ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি তানিয়া রুমে নেই।।
আরে তানিয়া কোথায় গেল.? গেছে ভালো হয়েছে এই সুযোগে আবার ঘুমিয়ে পরি।।
তারপর আবার বিছানায় গিয়ে কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে দিলাম ঘুম, আহ্ কি আরাম।।
এদিকে তানিয়া তার শাশুড়ী মাকে মানে তামিমের আম্মুকে নামায পড়ার জন্য ডাকতে গিয়েছে।।
তানিয়া তামিমকে ডাকার আগেই নামায পরে নিয়েছে।।
তার শাশুড়ীকে জাগিয়ে দিয়ে তানিয়া আবার রুমে এসে ঢুকলো।।
রুমে এসে তানিয়া দেখল তামিম আবার ঘুমিয়ে পরেছে।।
এটা দেখে তানিয়ার কিছুটা রাগ হলো।।
সে টেবিলে থাকা ঝালি বেতটা নিয়ে তামিমের কাছে এসে দাড়ালো তারপর তামিমের কম্বলটা টান মেরে সরিয়ে ফেললো।।
তামিমের চোখে মাত্রই ঘুম এসেছিল কিন্তু হঠাৎ তার মনে হলো কে যেন তার গা থেকে কম্বলটা টান মেরে সরিয়ে ফেলেছে।। তাই সে চোখ বন্ধ রেখেই হাত এদিক সেদিক নিয়ে কম্বলটা খুজতে লাগলো।।
তখনই তানিয়া ঝালি বেতটা দিয়ে তামিমের হাতের মধ্যে একটা মেরে দিল।।
ব্যস কাজ হয়ে গেল, তামিম বারি খেয়ে লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে বসলো।।
আর বিছানার পাশে তাকিয়ে দেখে তানিয়া তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।।
তানিয়ার চেহারা দেখে তামিম একটু ভয় পেয়ে গেল।।
তানিয়াঃ তোমাকে না বলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে আসতে।। তা না করে তুমি আবার শুয়ে পরেছ কেন.?
তামিমঃ না মানে আসলে
তানিয়াঃ যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আস (ধমকের শুরে)।।
তামিমঃ ফ্রেশ হয়েছি তো।।
তানিয়াঃ সত্যি.?
তামিমঃ হুম
তানিয়াঃ আচ্ছা যাও এবার টেবিলে গিয়ে বস।।
তামিমঃ কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে টেবিলে গিয়ে বসলাম।।
তারপর তানিয়াও আমার পাশে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো।।
তানিয়াঃ নামাজের নিয়তগুলো জান.?
তামিমঃ নাহ
তানিয়াঃ আচ্ছা এই নাও এইখানে ফজরের নামাজের নিয়ত আছে, শিখ আগে।।
তামিমঃ কিছু না বলে বইটা নিয়ে নিয়ত গুলো পড়তে শুরু করলাম।।
তানিয়াঃ ১০ মিনিট সময় দিলাম, যদি ১০ মিনিটের মধ্যে নিয়ত গুলো শিখতে না পার তাহলে কিন্তু শাস্তি পেতে হবে।।
তামিমঃ কি শাস্তি.?
তানিয়াঃ সেটা সময় হলেই বলবো।। আমি এখন নিচে যাচ্ছি, ১০ মিনিট পর আবার আসবো এসে যেন দেখি নিয়ত গুলো শিখে ফেলেছ।। বলেই তানিয়া রুম থেকে চলে গেল।।
তামিম আর কিছু না ভেবে মন দিয়ে নিয়ত গুলো পড়তে লাগলো।। যে করেই হোক তাকে ১০ মিনিটের মধ্যে নিয়ত গুলো শিখতে হবে নাহলে সত্যিই কপালে দুঃখ আছে।। এতো সকাল ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে প্রথমে অনেক কষ্ট হয়েছিল।। কিন্তু এখন অনেক ভালোই লাগছে, এই ভালো লাগার কারণটা কি বলতে পারবো না।।
এদিকে তানিয়া নিচে গিয়েছে সবার জন্য নাস্তা বানাতে।। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে দেখল তামিমের আম্মু নাস্তা বানাচ্ছেন।। তখন তিনি তানিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন…
আম্মুঃ তামিম ঘুম থেকে উঠেছে নাকি মামনি.?
তানিয়াঃ হে আম্মু উঠেছে।।
আম্মুঃ তাহলে তুমি রান্নাঘরে এসেছ কেন.? যাও তামিমকে গিয়ে পড়াও।।
তানিয়াঃ এসেছি সবার জন্য নাস্তা বানাতে আর ওকে আমি পড়া দিয়ে এসেছি আম্মু, ওকে আর পড়াতে হবে না।।
আম্মুঃ ও একা একা পড়বে নাকি.?
তানিয়াঃ হুম পড়বে না পড়লে শাস্তি আছে বলে এসেছি।।
শাস্তির ভয়ে অবশ্যই পড়বে।।
আর আম্মু জান ওকে গতকাল রাতে অজুর নিয়ত আর দোয়া শিখে ফেলেছে।।
তারপর আমি ওকে অজু করার পদ্ধতিটাও শিখিয়ে দিয়েছি।।
আম্মুঃ তাই নাকি যাক আলহামদুলিল্লাহ, ও এই অল্প সময়ের মধ্যেই যে সে অজুর নিয়ত আর দোয়া শিখে ফেলেছে এতেই অনেক।। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তুমি যেন আমার ছেলেটাকে খারাপ পথ থেকে ভালো পথে আনতে পার।।
তানিয়াঃ হুম আর আপনি গিয়ে শুয়ে পরেন আমি নাস্তা বানাতে পারবো।।
আম্মুঃ না আমি পারবো তোমার কিছু করতে হবে না।।
তানিয়াঃ এটা বললে তো হবে না, আমিও আপনাকে কাজে হেল্প করবো।।
আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে, ওইখান থেকে ময়দার বক্সটা নিয়ে আস যাও।।
তানিয়াঃ আচ্ছা আনতেছি।।
তারপর তানিয়া তামিমের আম্মুকে অনেক সময় কাজে হেল্প করে আবার রুমে চলে আসলো।। তানিয়া রুমে এসে দেখলো তামিম টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।। এটা দেখেই তানিয়ার মাথা গরম হয়ে গেল।। তার মানে এতক্ষণ ধরে সে কিছুই পড়েনি.? আমি যাওয়ার পরেই ও আবার ঘুমিয়ে পরেছে.? তানিয়া টেবিলের কাছে এসে ঝালি বেতটা হাতে নিল আর তামিমকে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো।। তামিমও এক ধাক্কা খেয়েই উঠে পরলো আর উঠে দেখলো তানিয়া ঝালি বেতটা নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।।
তামিমঃ আপনি কখন রুমে আসলেন.? (কিছুটা ভয় নিয়ে)
তানিয়াঃ যখন তুমি ঘুমিয়েছিলে তখন।।
তামিমঃ আসলে আমি
তানিয়াঃ নিয়ত গুলো শিখেছ.? (স্বাভাবিক গলায়)
তামিমঃ হুম
তানিয়াঃ তো সুন্নতের নিয়ত বল।।
তামিমঃ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুন্নতের নিয়ত বললাম।।
তানিয়াঃ ফরজের নিয়ত।।
তামিমঃ ফরজের নিয়ত বলতে গিয়ে হঠাৎ আটকে পরলাম।।
একটু সময় পর আবার নিয়তটা মনে পরলো।। তারপর সম্পূর্ণ বললাম।।
নিয়ত বলা শেষে তানিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি সে আমার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।।
এই রে কোথাও ভুল হলো নাকি.? ভুল হলে তো এখন কপালে দুঃখ আছে।।
এদিকে তানিয়া কিছুক্ষণ তামিমের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ তার একদম
কাছে চলে গেল আর তামিমের গালে ১টা চুমু খেল।।
তামিম তো তানিয়ার এমন কাজে অবাক.!
একটু আগেই তো তানিয়া আমার দিয়ে রাগী লুক নিয়ে
তাকিয়ে ছিল তাহলে এখন আবার আমার গালে কিস করলো কেন.?
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com