সিনিয়র বউ | পর্ব - ০১
বাসর ঘরে ঢুকে রুমের দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে থাকা নতুন বউয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো তামিম।। প্রথমে সে ভেবেছিল মেয়েটা তার আসা টের পেয়ে উঠে এসে তাকে সালাম করবে আর তখনই সে মেয়েটাকে কিছু কথা শুনিয়ে দিবে।। কিন্তু সে ভুল প্রমাণিত হলো, কারণ ২ মিনিট ধরে সে মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অথচ মেয়েটা নিজের জায়গা থেকে এক চুল পরিমাণও নড়ছে না।। মেয়েটার এমন আচরণে প্রচন্ড রাগ হলো ওর, রাগে কটমট করে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
তামিমঃ দেখেন এই বিয়েটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।।
কারণ এই বিয়েতে আমার একদমই মত ছিল না, শুধু আম্মুর জোরাজুরিতে আমায় আপনাকে বিয়ে করতে হয়েছে।।
তার উপর আপনি একজন বোরকা পরিহিত আনস্মার্ট মেয়ে,
আপনার সাথে তো যায়’ই না।।
তাই একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন, এই বাড়িতে থাকার হলে থাকবেন নাহলে চলে যাবেন কিন্তু কখনো আমার থেকে স্বামির অধিকার পাবেন না।।
আর ৬ মাস পর আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।।
বাসর রাতে কোনো বউ ই নিজের স্বামীর মুখ থেকে এমন কথা শুনতে চাইবে না বা শুনলেও তার অবাকের সীমা থাকবে না।। কিন্তু বিছানায় বসে থাকা নতুন বউটা তার স্বামীর মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর একটুও অবাক হয়নি বরং আগের মতোই হাটু মুড়িয়ে বিছানার উপর বসে আছে।।
মেয়েটার এমন আচরণে তামিমের এবারও ভিষণ রাগ হলো।।
তামিমঃ কি হলো কথা বলছেন না কেন.? নাকি আপনি বোবা কথা বলতে জানেন না.?
–তাহলে ওইদিন রাস্তার মধ্যে একটা মেয়েকে কেন বললে যে,
বোরকাওয়ালি মেয়ে দেখলেই মন চায় ধরে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি (মেয়েটা বললো)।।
তামিমঃ মেয়েটার এতো মিষ্টি কণ্ঠ শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম।। কারণ একটা মেয়ের কণ্ঠ যে এতো মিষ্টি হয় তা আমার আগে জানা ছিল না।। কিন্তু পরক্ষণেই মাথায় আসলো এই কণ্ঠটা মনে হয় আমি আগেও কোথাও শুনেছি।। কিন্তু কোথায় শুনেছি তা ঠিক মনে করতে পারছি না।।
তামিমের চুপ করে থাকায় মেয়েটা আবার বললো…
–কি হলো এবার তুমি কেন চুপ করে আছ.?
তামিমঃ আপনার কণ্ঠটা মনে হয় আমি আগে কোথাও শুনেছি।। আর আমি কবে বললাম যে বোরকাওয়ালি মেয়ে দেখলে বিয়ে করতে মন চায়.?
–৩ দিন আগে ভার্সিটি ছুটির পর তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে বসে এক জায়গায় আড্ডা দিচ্ছিলে, তখন তোমাদের পাশ দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছিল ওইসময় মেয়েটাকে কি বলেছিলে মনে করে দেখ তো।।
তামিমঃ মেয়েটার কথায় ৩ দিন আগের ঘটনাটা মনে পরে গেল।।
৩ দিন আগের কথা…
ভার্সিটির শেষ ক্লাস না করেই বন্ধুদেরকে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এসে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম।। প্রতিদিনই ভার্সিটির শেষ ক্লাস না করেই বন্ধুদেরকে নিয়ে ভার্সিটির বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে থাকি।। ভার্সিটি ছুটি হবে অনেক মেয়েরাই এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা করবে আর তাদেরকে আমরা সবাই মিলে টিজ করবো এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।। তো আমরা ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছিলাম এমন সময় আমার এক বন্ধু বললো, ওই দেখ একটা বোরকা পরা মেয়ে আসছে।। বন্ধুর কথা শুনে দেখলাম একটা বোরকা পরিহিত মেয়ে আমাদের দিকেই আসছে।। মেয়েটা যখন আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমি বললাম…
জানিস বন্ধু একটা বোরকাওয়ালি মেয়ে না আমার মন চুরি করে নিয়েছে।। এখন বোরকাওয়ালি মেয়ে দেখলেই মন চায় ধরে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি (কথাটা বলেই আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম)।।
আমার এমন কথা শুনে মেয়েটা আমাদের কাছে এসে দাড়ালো।। কিন্তু আমি বুঝতে পারি নি যে মেয়েটা আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে।।
–তাই নাকি তাহলে চলেন কাজী অফিসে আর বিয়ে করে নেন আমাকে।।
তামিমঃ হঠাৎ একটা মেয়ের এমন কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি ওই মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। চিনি না জানি না তাহলে আপনাকে কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাব.?
–তাহলে একটু আগে যে কথাটা বললেন ওই কথাটা কাকে বলেছেন.?
তামিমঃ একটা বোরকাওয়ালি মেয়েকে।।
–তো এইখানে আমি ছাড়া কি বোরকাওয়ালি কোনো মেয়ে আছে.?
তামিমঃ মানে কি বলতে চাচ্ছেন আপনি.?
–আপনিই তো বললেন বোরকাওয়ালি মেয়ে দেখলেই ধরে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে মন চায়।। তাহলে চলুন দুজনে বিয়ে করে ফেলি।।
তামিমঃ এই মেয়ে কি আজে বাজে কথা বলছেন মাথা ঠিক আছে তো আপনার.? আপনাকে আমি কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাব.? ওই কথাটা তো জাস্ট ফান করে বলেছি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন.?
–ফান করে যখন কথাটা বলেছেন তাহলে এই কথাটা বাস্তবে পরিণত করবো আমি, জাস্ট ওয়েইট এন্ড ওয়াচ (কথাটা বলে মেয়েটা আর ১ মিনিটও দাড়ালো না হনহন করে চলে গেল)।।
মেয়েটার কথা শুনে বোকার মতো সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।। মেয়েটা কি বলে গেল কিছুই বুঝতে পারলাম না।।
তামিমঃ এই ছিল ৩ দিন আগের ঘটনা।। কিন্তু মেয়েটা এইসব জানলো কি করে.?
আচ্ছা আপনি এইসব জানলেন কি করে.?
–কারণ ওই বোরকাওয়ালি মেয়েটা আমিই ছিলাম।।
তামিমঃ কিহহ.! কিন্তু আপনার সাথে আমার বিয়ে কীভাবে কি কিছুই তো বুঝলাম না (অবাক হয়ে)।।
–তোমার আম্মু নিশ্চয় বলেছেন যে উনার বান্ধবীর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে।। আমিই তোমার আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে।। তোমার সাথে আমার বিয়েটা অনেক আগেই ঠিক করা ছিল।।
তুমি এইসব কিছুই জানতে না কিন্তু আমি সবই জানতাম আর তোমাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম।।
কারণ তোমার আম্মু আমায় তোমার একটা ছবি দিয়েছিলেন দেখার জন্য।।
তো ওইদিন আমি বাসায় গিয়ে ভাবলাম একটা অচেনা মেয়েকে তুমি এইসব কথা বলতে পারলে ভার্সিটিতে আরও অনেক মেয়েরাই আছে, ওদেরকে না জানি কতকিছু বল।।
তাই আমি আমার আম্মু-আব্বুর কাছে তোমার বিষয়ে বলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে তোমাকে বিয়ে করবো।।
আম্মু-আব্বুও আমার কথায় রাজি হয়ে তোমার আম্মু-আব্বুর সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলে আমাদের বিয়ে করিয়ে দেন।।
তামিমঃ মেয়েটার কথা শুনে মাথা চক্কর দিতে শুরু করলো, মনে হচ্ছে এক্ষুণি মাথা ঘুরিয়ে পরে যাব।। আমার আড়ালে এতকিছু হয়ে গেল অথচ আমি কিছুই জানি না।। নাহ এই বিষয়ে গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।।
আম্মুর সাথে কথা বলার জন্য রুম থেকে বেরুতে যাব তখনই পিছন থেকে মেয়েটা বললো…
–আম্মু-আব্বু এখন ঘুমিয়ে পরেছেন, যা কথা বলার সকালে বলিও।।
তামিমঃ সত্যিই তো রাত প্রায় ১২টা বেজে গেছে এখন নিশ্চয় আম্মু ঘুমিয়ে পরেছেন।। এখন আর ডিস্টার্ব করে লাভ নেই, যা কথা বলার সকালে বলবোনে।।
তারপর আর কিছু না বলে বিছানার উপর উঠে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম…
তামিমঃ আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব আপনি গিয়ে সোফায় ঘুমান, এইখানে আপনার জায়গা নেই।।
–এতো ঠান্ডার মধ্যে সোফায় কীভাবে ঘুমাব.? আমার তো সোফায় ঘুমিয়ে অভ্যাস নেই।।
তামিমঃ তা আপনি ভালো জানেন।। আমি আপনাকে আগেই বলে দিয়েছি যে আপনাকে আমি কখনো স্বামীর অধিকার দিতে পারবো না।। সো আপনি আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমুতে পারবেন না, যান সোফায় গিয়ে ঘুমান।। আর ভুলেও বিছানায় আসবেন না।।
–আচ্ছা আমি সোফাতেই ঘুমাব, কিন্তু আজ তো আমাদের বাসর রাত, চল দুজন ২ রাকাত নফল নামায পড়ে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করি।।
তামিমঃ আপনার নামায আপনি পড়েন আমার এখন ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব।।
আশা করি আর ডিস্টার্ব করবেন না।।
কথাটা বলেই তামিম একটা কম্বল জড়িয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পরলো।।
মেয়েটা আর তামিমকে কিছু না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে ২ রাকাত নফল নামায পড়ে একটা চাদর নিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পরলো।।
(আমি তামিম মা-বাবার একমাত্র বখাটে সন্তান।।
বখাটে বললাম কারণ মা-বাবার কারও কথাই আমি শুনি না, সবসময় নিজের ইচ্ছামতো চলি।। তবে আম্মুকে আমি অনেক ভয় পাই যার কারণে আম্মুর অনেক কথাই শুনি।। এইবার অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ছি।।
আর যার সাথে এতক্ষণ ধরে কথা বললাম সে আমার বউ নামঃ তানিয়া।।
সেও তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান।। এইবার অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ছে।।
মেয়েটা নাকি ছোটবেলায় মাদরাসাতে পড়েছে তাই সবসময় পর্দা করে চলে।।
এখনো পর্যন্ত আমি তার চেহারা দেখি নি আর তার নামও জানি না (গল্পতে)।।
তামিম শুয়ে শুয়ে ভাবছে আম্মু এই মেয়েটার মধ্যে কি এমন দেখলেন যে এই বোরকা পরা আনস্মার্ট মেয়েকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলেন।।
তার উপর আবার মেয়েটা আমার এক বছরের বড় মানে আমার সিনিয়র (আম্মু নিজেই এটা বলেছেন)।।
এইতো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…
সন্ধ্যাবেলায় বাসায় আসতেই আম্মু আমায় দেখে বললেন…
আম্মুঃ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি।।
তামিমঃ রেডি হব মানে.? কোথাও যাব নাকি আমরা.?
আম্মুঃ এতো কথা না বলে যা বলছি তাই কর (ধমকের শুরে)।।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে (বলেই রুমে চলে আসলাম কারণ আব্বুর থেকে আম্মুকে আমি একটু বেশিই ভয় পাই)।।
তারপর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মু হাতে একটা পাঞ্জাবী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।। আমাকে দেখেই পাঞ্জাবীটা পরতে বলে বিছানায় রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।
আমিও বাধ্য ছেলের মতো পাঞ্জাবীটা পরে নিচে চলে আসলাম।।
এরপর সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমাদের গাড়ি নিয়ে কিছুক্ষণ পর একটা বাড়িতে চলে আসলাম।।
তারপর সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।। বাড়ির ভিতরে ঢুকে আম্মু আমায় একটা রুমে নিয়ে এসে বললেন যে…
আম্মুঃ আজ তোর বিয়ে তাও আমার বান্ধবীর মেয়ের সাথে।।
মেয়েটা তোর থেকে ১ বছরের বড়।।
ছোটবেলায় মাদরাসায় পড়াশোনা করেছে বিধায় মেয়েটা সবসময় পর্দা করে চলে।।
আশা করি তুই এই বিয়েতে অমত করবি না।।
তামিমঃ আম্মুকে কিছু বলতে যাব তার আগেই আম্মু বলে দিলেন যে বিয়ে না করলে আমার হাত খরচ আর দিবেন না, এমনকি বাসায়ও থাকতে দিবেন না কাজ করে খেতে হবে।।
আমি তো জীবনেও কোনো ধরণের কাজ করি নি আর প্রতিদিন ১-২ হাজার টাকা না ছাড়া আমার চলেই না।।
তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই আম্মুর কথায় এই বিয়েটা করতে হয়েছে।।
তারপর পারিবারিক ভাবেই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হলো আর মেয়েটাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হলো।। অনেক কথা হয়েছে, বাকি কথা সকালে হবে আল্লাহ হাফেজ ।।
সকালবেলা…
ঘুমের মধ্যে বুকের উপর ভারি কিছু একটার অনুভব পেতেই ঘুমটা ভেঙে গেল।।
চোখ মেলে তাকাতেই দেখি একটা মেয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।।
মেয়েটার মুখের সামনে সব চুল এসে পরেছে তাই মেয়েটার চেহারা দেখতে পাচ্ছি না।।
কে এই মেয়ে কিছু বুঝতে না পেরে হালকা ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে নিজের থেকে সরিয়ে নিলাম।।
ধাক্কা দেওয়াতে মেয়েটারও ঘুম ভেঙে গেল।।
মেয়েটা চোখ কচলাতে কচলাতে আমার দিকে তাকালো, আমিও মেয়েটার দিকে তাকালাম।।
মেয়েটাকে দেখেই তো আমি অবাক.!
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com