সংসার । পর্ব - ০৪
এমন সময় কোলিংবেল বেজে উঠলো। আচমকা এক ভয়ে মুনতাহার মন কেপে উঠলো।কেউ ও অর্ধেয্য হয়ে কোলিংবেল টিপে যাচ্ছে। মনে হয় সে পাড়লে এ বিড়াট সদর দরজা ভেঙ্গে ভিতরে চলে আসবে।
কাজের মেয়ে টুলি টা কাজ করছিলো বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে গেলো।
দরজা খুলতে এক শাড়ী পরিধান কারী মহিলা হনহন করে বাসায় ঢুকে পড়লো
তাঁর সাথে কালো কোর্ট আর সাদা শার্ট পরা এক মধ্যবয়স্ক আসছে।
মহিলা এসে চেঁচিয়ে বললো, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে এসেছি।
আমার মেয়েকে আমার সাথে যেতে কেউও বাধ্য দিতে পারবে না।
মহিলা টি অশ্রু বির্সজন দিয়ে মিষ্টি এর কাছে হাটু গেড়ে বসে বলছে আমি তোর মা রে।
মিষ্টি মহিলাকে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো কিন্তু এই কথা শুনে রেগে গিয়ে বললোআপনি আমার মাম্মা না।
মুনতাহাকে উদ্দেশ্য করে বললো এই যে ওনি আমার মাম্মা আমাকে ওনেক ভালোবাসা
আমার মা।মুনতাহাকে দৌড়ে গিয়ে মিষ্টি জরিয়ে ধরলো মুনতাহা মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো।
মুনতাহা জানে মিষ্টির ওর রক্ত কি না কিন্তু মিষ্টি ওর দুনিয়া ওর সব যাকে ছাড়া এক মিনিট ও থাকতে পারবে না সে।
মিষ্টি এর এমন ব্যবহারে মহিলা খুব রেগে গেলো।
.
মিষ্টি কে আর কিছুই না বলে আয়মনের সামনে গিয়ে বললোঅনেক ঠকিয়েছে আমায় আর না।
এখন তোমার এই সম্পত্তি এর ৫০% এর মালকিন আমি হবো আরপ্লিজ মিষ্টিকে নিয়ে যাবেন না।
পাড়লে আমি এই সম্পত্তির ৭০% এ লিখে দিবো তবু মিষ্টিকে নিয়ে যাবেন না।মহিলা তাচ্ছিল্য হাসি হেসে।
লোকটির কাছ থেকে একটা পেপার নিলো আর তা আয়মনের সামনে ধরলো
আর বলতে লাগলো,দুনিয়ার কোনো শক্তি আজ আমার মেয়েকে এখান
থেকে নিয়ে যেতে আটকাতে পারবে না। ইসরাত চৌধুরী একবার যেটা
ভেবে নেয় সেটা সে করে দেখায়।আয়মন কোনো কিছুই বলতে পারছে না।
আজ তার কোনো শক্তি নেই আজ সে পরাস্ত সৈনিকের ন্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে ময়দানে।
সালেহা বেগম এগিয়ে এসে বললোবউমা আমাদের থেকে মিষ্টিকে কেড়ে নিউও না মা ও
আমাদের জান আমরা কেমনে থাকবো?আমি এতোদিন কেমনে ছিলাম মা?
৪ ৪ টা বছর আপনারা আমার মেয়ের থেকে আমাকে দূরে রেখেছেন আমায়
আসতে দেননি ওর কাছে আপনারা আমার প্রতি অন্যায় করেছেন অবিচার করেছেন।
.
সালেহা বেগম ইসরাত কে থামিয়ে দিয়ে বললো এইসব বলতে তোমার লজ্জা লাগছে না?
কোথায় ছিলে তুমি ৪ ৪ টা বছর? সেইদিনের পর কোথায় হারিয়ে গেছিলে নাকি পালিয়ে গেছিলে?
৪ বছর পর মার অধিকার দাবি করতে এসেছো??
৪ বছর পর মনে হয়েছে তুমি মা??ইসরাত সালেহা বেগমের কথা রাগে গিয়ে।
মুনতাহার থেকে মিষ্টিকে ছিনিয়ে নিলো। মিষ্টি অনেক শক্ত করে মুনতাহাকে ধরেছে
ইসরাত কোনোভাবে ছাড়াতে পাড়ছিলো না অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিজে কোলে তুলে নিলো।
মিষ্টি অনেক শক্ত করে মুনতাহার আঁচল ধরে থাকলো। ইসরাত মিষ্টিকে নিয়ে
যাচ্ছে আর মুনতাহা পিছুই পিছুই যাচ্ছে। মিষ্টি শুধু বলে যাচ্ছে।
মাম্মা আমি তোমায় ছাড়া যাবো না মাম্মা। আমায় বাঁচায় মাম্মা।মিষ্টি বলে মুনতাহা
শুধু কেঁদে যাচ্ছে।গাড়ি সামনে এসে ইসরাত যখন দেখলো মিষ্টি মুনতাহার
শাড়ি ছেড়ে দেয়নি তখন ইসরাত মুনতাহার শাড়ি আঁচলের অংশটুকু ছিঁড়ে দিলো।
মুনতাহা বললোআমি আমার মেয়েকে ফিরেয়ে নিতে আসবোই।
আমার মেয়ের থেকে আমাকে কেউও আলাদা করতে পারবে না কেউ ও না।
ইসরাত মুনতাহার কথায় কান না দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।
মিষ্টি গাড়ির জানালা দিয়ে বের হয়ে চেঁচিয়ে বললোমাম্মামুনতাহা গাড়ির
পিছু ছুটতে ছুটতে বললো পাখি আমি আসবো তোমায় নিতে তুমি ভয় পেয়েও না
তোমার মাম্মা আসবে।এক পর্যায় গাড়ি মুনতাহার নাগালের বাহিরে চলে গেলো।
.
মুনতাহা দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার মাঝে পড়ে গেলো।মুনতাহার চিৎকার করে
কান্না করতে ইচ্ছা করছে আর খোদাকে বলতে ইচ্ছা করছে তার একমাত্র
ভালোবাসার মানুষ টাকে কেন এভাবে ছিনিয়ে নিলো সে কেন। কে ওই মহিলা?
কি সম্পর্ক তার মিষ্টির সাথে। সব জানতে হবে তাকে সব।
মুনতাহা উঠে দাঁড়ালো বাসায় এসে বললো কে উনি মিস্টার হাজবেন্ড??
আপনার সাথে তার কি রিলেশন?আয়মন মুনতাহার দিকে এক
নজর তাকিয়ে তাকলো কিন্তু কিছুই বলছে না ধপ করে সে ফ্লোরে বসে পড়লো।
তার বলার কোনো ভাষা নেই।আমি বলছি তোমায় বউমা ইসরাত কে?
আমার দুই ছেলে বড় ছেলে আরমান চৌধুরী আর ছোট ছেলে আয়মন চৌধুরী।
আরমান এর স্ত্রী ইসরাত চৌধুরী। এই বাড়ির বড় বউ মিষ্টির মা।
মিষ্টির যখন ৩ বছর তখন মিষ্টিকে আমার কাছে রেখে বউমা বাপের বাড়ি চলে
যায় বউমাকে আনতে গিয়ে আমার বড় ছেলে এক্সিডেন্ট করে আর সেই এক্সিডেন্ট এ তার মৃত্যু হয়।
ইসরাত ওর স্বামীর মৃত্যু তে এতো শোকে ছিলো যে ওর বাবা মা ওকে নিয়ে যায় আমরা ভেবেছিলাম সব
একটু ঠিক হলে ইসরাত ফিরে আসবে কিন্তু পড়ে শুনি ওর বাবা মা ওকে বিদেশে নিয়ে গেছে।
আমি ও আর মিষ্টিকে সামলাতে পারছিলাম না এক আমার ছেলে অকালে আমায় ছেড়ে চলে
গেছে তারউপর প্রান প্রিয় বউমার এই রূপ আমি আর পারছিলাম না। আয়মন
কে দেখতে অনেকটা আরমানের মতোতাই মিষ্টি আয়মনকে নিজের পাপ্পা
বলে ডাকে মিষ্টির মুখে পাপ্পা ডাক শুনে আয়মন ওকে
নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছে বড় করেছে আর দিয়েছে নিজের মেয়ের পরিচয়।
মিষ্টি জানে না কে তার আসল পাপ্পা কিন্তু এটা জানে আয়মন তার পাপ্পা।
সালেহা বেগম আর বলতে পারলেন না তার গলা ধরে আসলো কান্না থামিয়ে তিনি আর কিছুই বলতে পারলেন না।
আয়মন বসা থেকে উঠে নিজের রুমে যেতে লাগলো মুনতাহা আয়মনের পিছুই পিছুই যাচ্ছেরুমে এসেই
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com