Breaking News

ইন দ্যা ডার্কনেস- পর্বঃ ০৪

(দ্যা মিস্ট্রিরিয়াস মার্ডার) রিফাত স্থানীয় পুলিশের নিকট যায়। পুলিশ রিফাতকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াল,যা রিফাতের চোখ এড়ালো না।রিফাত আঁড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে তার সামনের চেয়ারে এসে বসে পড়ল।‘আমি গোয়েন্দা রিফাত।’ বলল রিফাত।রিফাত তার দু’হাতের ডগাগুলি একত্রিত করে পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসা করল,‘আচ্ছা ভাতৃত্ব দ্বয় স্যামরিন এবং স্যামরনের মৃত্যুটা হলো কী করে?’‘বিষ খেয়ে তারা আত্মহত্যা করেছে।এটা তো প্রায় সবাই জানে।’ 
ঢোক গিলে বললেন পুলিশ অফিসার।রিফাত তাকে একবার ভালো করে দেখতে লাগল।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম স্পষ্ট।তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ‘তা বিষের বোতলটা কোথায়?’পুলিশ অফিসার তার একজন কনস্টেবল কে ডাক দিয়ে কিছু একটা আনতে বলল।কনস্টেবলটি পাশের একটি ড্রয়ার থেকে ছোট একটি বোতল বের করে আমার পাশে রাখল।রিফাত বোতলটাকে নাড়িয়ে দেখতে লাগল। 
বোতলটার কম্পানির নাম, ‘LIOL’ লিখা।মূলত এই নামের কোন সংস্থা আছে বলে তার কোন ধারণা নেই।পুলিশ অফিসারের দিকে তাকাল।পুলিশ অফিসারও রিফাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো দু’জনের চোখাচোখি হতেই পুলিশ অফিসারটি চোখ সরিয়ে নিলেন। ‘এতো বড় একটা জেলখানা।তাও দেশের নামকরা পাঁচটির একটি।সেখানে আবার টাইট সিকিউরিটি ছিলো।তবুও তারা বিষ পেল কোথা থেকে?’‘তা তো আমরা জানি না।’‘তার মানে আপনাদের সিকিউরিটি খুবই দূর্বল।
বলতে কষ্ট হচ্ছে যে এটা নিয়ে আমাকে উপর মহলের কাউকে নোটিশ দিতে হবে।’ একটি বাঁকা হাসি টেনে বলল রিফাত।‘প্লিজ তা করবেন না।তাহলে যে আমার চাকরি চলে যাবে!’ কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন অফিসারটি।চোখ দুটো ছল ছল হয়ে এলো।রিফাত আবারো জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে বলুন তারা বিষ পেল কোথায়?’অফিসারটি কোন উপায় না পেয়ে সত্যিটা বলে দিলো। ‘আসলে কাল একজন লোক এসেছিলো।আমার পকেটে বিশ হাজার ভরে দিয়ে বলে আমি যেন চুপ থাকি।এর পর সে দুই ভাতৃত্ব দ্বয়ের সাথে দেখা করতে গেল।বিশ মিনিট পরে ফেরত চলে এলো।তবে বিশ্বাস করুন তারপর কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।প্লিজ এই কথা কাউকে বলবেন না…।’
রিফাত তার ডান হাতটি গালে নিয়ে অফিসারটির পুরো কথা শুনল।‘লোকটি দেখতে কেমন ছিলো?’ জিজ্ঞাসা করল রিফাত।‘লোকটি…’ কিছুক্ষণ ভেবে অফিসারটি উত্তর দেয়, ‘লোকটি ছিলো লম্বা হাত দুটো ফরসা।মাথায় একটা ক্যাপ,মুখে মাস্ক আর চোখে কালো চশমা।তাই তার মুখটি আমি ভালো মতন শনাক্ত করতে পারিনি।রিফাতের তখন ইচ্ছে করছিলো অফিসারটির গালে একটা চড় মারতে।
ঘুশ নিয়ে ভেতরে যেতে দিলো অথচ চেহারা দেখল না।নিজের ক্ষোভ সামলে টেবিলে একটা চাপড় মেরে থানা থেকে বেরিয়ে এলো।তার বেরিয়ে যাওয়া দেখে অফিসারটি তার মাথাটি ঝুঁকিয়ে নিয়ে রিফাতের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল।রিফাতের চলে যাওয়ার পরপরই তিনি কাকে যেন ফোন লাগালেন। 
ফোনটা রিং হচ্ছে শুধু রিসিভ হবার অপেক্ষা।রিসিভ হতেই অফিসারটি বলতে লাগলেন, ‘স্যার একজন গোয়েন্দা এসেছিলো আপনার খোঁজে।’‘কিহহ!কে সে?’ ঝাঁঝাল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল ওপাশে থাকা অজ্ঞাত লোকটি।‘স্যার গোয়েন্দাটি হলো পাঁচ গোয়েন্দা সংস্থার গোয়েন্দা রিফাত।’‘ওহ আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না।ওকে আমি দেখে নিব…।’ কথাটি শেষ হতেই ফোনটা কেঁটে গেল।‘ওহ তা এই ব্যাপার!’ মিনমিন করে বলল বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা গোয়েন্দা রিফাত।‘ভাগ্যিস কথা বলার এক ফাঁকে তার টেবিলের নিচে স্মল মাইক্রো চিপ লুকিয়ে রেখেছিলাম।নয়ত তাদের প্লান সম্পর্কে অবগত হতে পারতাম না।’
নিজের মনেই বলে উঠল রিফাত।একবার সিদ্ধান্ত নেয় সে ফের থানায় যাবে।পরে কিছু একটা মনে করে নিজের বাসার দিকে হাঁটা ধরে।বাসায় পৌঁছে তার ল্যাপটপটি অন করে।গুগলে গিয়ে সার্চ করে, ‘LIOL’ তবে বিস্মিত নয়নে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই নামের কোন কম্পানিই খুঁজে পায়না সে।তবে কি সেই কম্পানির বিষ গুলো ই-লিগেল!ল্যাপটপ স্ক্রোল করতেই একটি জিনিসে তার চোখ আটকে যায়।
‘LIOL=Lusifar Is Our Lord’ এটার দিলে সেকেন্ড কয়েক বিস্তারিত নয়নে তাকিয়ে থাকে রিফাত।..নিজেদের দেশে ফিরে তুষার সাফিকে লাথি মারে।‘কিরে লাথি মারলি কেন?’ জিজ্ঞাসা করল সাফি।‘আমাদের নাকি ভুতুড়ে দ্বীপে নিয়ে যাবি!সেখানে তো কোন দ্বীপই দেখতে পেলাম না।’ রাগান্বিত কন্ঠে জবাব দেয় তুষার।‘আরে ভাই আমার জানামতে সেখানে একটা ভুতুড়ে দ্বীপ ছিলো।তবে একন কোথায় গেল তা বলতে পারছি না।দেখলি না,শুধু আমরা নয় আরো একদল সেখানে গিয়েছিলো
কথাটি শুনে তুষার থমকে গেল।তারা নাহয় সেখানের ভুতুড়ে দ্বীপে থাকতে গিয়েছিল কিন্তু গোয়েন্দারা সেখানে কেন গিয়েছিলো?..রিফাত এখনো ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরাতে পারছে না।এটা কি সত্য না-কি গুগল তাকে ভুল দেখাচ্ছে?কোন এক কম্পানির নাম শয়তানের নামে।চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ইলুমিনাতির কথা ভাবতে লাগল।‘পৃথিবীতে স্রষ্টা যেমন আছে তেমনি শয়তানও আছে।পৃথিবীতে যেমন স্রষ্টার ইবাদত পালন করা হয় তেমনি শয়তানের ইবাদত ও পালিত হয়।
যারা শয়তানের পূজো করে তারা নিজেকে এমন কি নিজেদের আত্মাকেও শয়তানের নিকট বিক্রি করে দেয়।তারা চয় দজ্জালকে শীঘ্রই পৃথিবীতে আনতে।এজন্য তারা লুসিফার নামক শয়তানের পূজো করে।’‘তাহলে কী এই কোম্পানিও তাদের মধ্যে একটা!’ নিজের মনে বলে উঠল রিফাত।সে লুসিফার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কিছু জানতে এটা নিয়ে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করল।লুসিফারের মাঝে রুহানি শক্তি আছে।
সে চাইলে মানুষকে অমরত্বও দিতে পারে।ল্যাপটপটি বন্ধ করে বিছানার উপরে বসে পড়ল।লুসিফারের পূজো হচ্ছে।কেউ একজন অমরত্ব পেতে যাচ্ছে এটা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে।আচমকাই মাটি কাঁপতে লাগল।রিফাত তড়িঘড়ি করে উঠে বসল।মাটি কাঁপুনি থামতেই সে বাহিরে বেরিয়ে এলো।বাহিরে এসে সে থমকে গেল।মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুদূর মিশরের গ্রেট পিরামিড।
এটা দেখে সে থমকে গেল।আচমকা পিরামিডের চূড়া হতে আলোর ঝিলকি ছড়াতে লাগল।এক ধরনের সবুজ আলো।রিফাত নিজের চোখের সামনে হাত দিয়ে হাতের আঙুলের ডগার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল আলোটি সোজা আকাশের দিকে উঠে গেছে।তৎক্ষনাৎ আকাশ থেকে নিচে নেমে এলো তুষার!
তুষারকে দেখতে পেরে রিফাত সেদিকে বিস্মিত নয়নে চেয়ে রইল।হঠাৎ তুষার নিজের চোখটা খুলল।চোখ থেকে সবুজ আলো বিদ্যুতের গতিতে রিফাতের দিকে ছুটে এলো।স্ব জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে বসল রিফাত।হাঁপাতে হাঁপাতে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।নিজেকে নিজের রুমে দেখতে পেয়ে যেন প্রাণটা ফিরে পেল।
তার মানে আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম!’ নিজেকে প্রশ্ন করল রিফাত।পাশের গ্লাসে থাকা পানিটুকু খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল।তবে ঘুমাতে পারল না।সারাটা রাত এপাশ ওপাশ করে কাঁটিয়ে দিলো।ভোরের আলো ফুটতেই সে নিচে গিয়ে এককাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বিগত স্বপ্নের কথা ভাবতে লাগল।এটা যে কোন স্বপ্ন নয় বরং সংকেত তা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারল।
তবে এটা কিসের সংকেত তা সে বুঝে উঠতে পারছে না।তবে এটা নিশ্চিত যে তুষারও এটার সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত।আর যেটা বাকি আছে সেটা হলো মিশরের গ্রেট পিরামিড।পিরামিডের ব্যাপারটা তাকে খুব ভাবাচ্ছে।পিরামিড তো মিশরে তাহলে এটার সাথে কি সম্পর্ক?কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে রিফাত সিদ্ধান্ত নেয় আগে তুষারকে খুঁজে বের করবে।তখনি তার ল্যান্ড লাইনটি রিং হতে থাকে।
রিফাত উঠে গিয়ে ফোনটা উঠায়।ওপাশ থেকে একজন বলে উঠে,‘হাই আমি তুষার,আর আমি নিশ্চয়ই এখন পাঁচ গোয়েন্দা সংস্থার গোয়েন্দা রিফাতের সাথে কথা বলছি?’রিফাত পুরো তাজ্জব হয়ে যায়,তুষার তার নম্বর পেল কোথায়? পরবর্তীতে মুচকি একটা হাসি দেয়।যাকে খুঁজতে চেয়েছিলো সে নিজ থেকেই ফোন দিয়েছে।আগ বাড়িয়ে কথা বলছে মানে ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়।
এদিকে রিফাতের কোন সাড়া না পেয়ে তুষার বলে চলছে,‘হ্যালো…হ্যালো…’রিফাত তড়িঘড়ি করে ফোনটা কানের কাছে ধরে জবাব দেয়, ‘জ্বী হ্যাঁ আমি গোয়েন্দা রিফাত বলছি।’‘ওহ,তা কেমন আছেন?’‘আলহামদুলিল্লাহ,তুমি কেমন আছো?’‘এই কোন রকম।’‘তা আপনি আমার ফোন নম্বর পেলেন কোথায়?’‘আপনারা হলেন গোয়েন্দা।আপনাদের নাম ঠিকানা জোগাড় করতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়না।
’‘বাহ!আমাদের চেয়ে বড় গোয়েন্দা দেখছি আপনারা।যাই হোক তা হঠাৎ কী মনে করে ফোন করলেন আমায়?’‘কিছু নাহ,এমনি।তা আপনারা কি ভুত প্রেত এসবে বিশ্বাস করেন?’ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই কথাটি বলল তুষার।‘হঠাৎ এই কথা?’ কিছু একটা আঁচ করতে পেরে জিজ্ঞেস করল রিফাত।‘আগে আমার কথার উত্তর দিন।’ গলায় কিছুটা জোর দিয়ে জিজ্ঞেস করল।‘শরীরের মৃত্যু হয় আত্মার নয়।
বাকিটা বুঝে নিন।’‘ওহ তার মানে আপনিও ভুতে বিশ্বাসী!তা ওই ভুতুড়ে দ্বীপে গিয়েছিলেন কেন?’‘কেন সেখানে কি যাওয়া মানা।আর আপনাকে বলে দিই যে সেখানে কোন দ্বীপ ছিলো না।’‘সেটাই তো আমি জানতে চাই।দ্বীপটা গেল কোথায়…?’‘আমি তো জাদুকর তাইনা,যে দ্বীপটাকে ভেনিস করে দিলাম!’‘ঠিক তাই।’‘আমাকে যদি এজন্য ফোন দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বলে রাখি আমার হাতে সময় নেই আমাকে যেতে হবে।
ওকে যাওয়ার আগে আপনার ঠিকানাটা দিয়ে যান।’‘কেন আমার ঠিকানা দিয়ে কী করবেন,বরং আপনারটাই দিন।’‘ওকে চট্টগ্রাম,ক্রসিং, বাড়ি নম্বর 0171266****।ফোন নম্বর ০১*********।’‘আমি মজা করে বলেছিলাম আর আপনি সিরিয়াসলি বলে দিলেন!’ওপাশ থেকে আর কিছু শোনা গেল না।রিফাত বুঝে গেল ফোনটা কেঁটে গিয়েছে।যাক একটি কাজ ভালোই হলো তার ঠিকানা আর ফোন নম্বর পেয়ে গেল।রিফাত বাহিরে বেরিয়ে তার দলের বাকি সবাইকে ফোন করে নিকটবর্তী পার্কে আসতে বলল।
সবাই কথা মতন সল্প সময়ে পার্কে এসে হাজির হলো।রিফাত একটি বেন্ঞ্চে বসে ছিলো।তাদেরকে আসতে দেখে বাকিদের বসার জন্য বলল।‘তা আমাদেরকে ডাকা হলো কেন?’ জিজ্ঞেস করল গোয়েন্দা মোস্তফা। 
আসলে আমাদের রহস্যের মোড়টা ঘুরে গেছে।’‘মানে?’ জিজ্ঞাসা করল বকুল।‘মানে ভাতৃত্ব দ্বয় আমাদের মিথ্যা কথা বলেছিলো।তারা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’‘কিভাবে বুঝলে?’ জিজ্ঞাসা করল বকুল।‘কারণ এটা ছিলো আমাদেরকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার একটি চক্রান্ত।’‘কী করে বুঝলে?’‘তা একন বলতে পারবো না।তবে এটা মাথায় রেখো সৃষ্টিকর্তা থাকলে শয়তানও আছে।’ বলেই রিফাত চলে গেল।তবে রিফাত কী বোঝাতে চেয়েছে তা তারা বুঝতে পারছে না।
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com