নোয়াখালী বাংলাদেশের একটি প্রাচীন জেলা, যা তার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, নদীমাতৃক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং দর্শনীয় স্থানগুলোর জন্য পরিচিত। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নোয়াখালী একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য যেখানে ইতিহাসের ছোঁয়া, প্রকৃতির নৈসর্গিক পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীর অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় এটি একটি সহজ ভ্রমণ স্থান। এখানে থাকা পর্যটকদের জন্য স্থানীয় খাবারের স্বাদ, ঐতিহাসিক স্থাপনা, এবং নদী ও সাগরের মনোরম পরিবেশ অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।
মেঘনা অববাহিকায় বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জন্ম নোয়াখালী জেলার। বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে বহুল পরিচিত জেলার মধ্যে এটি অন্যতম। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা ও আতিথেয়তার বেশ সুনাম। দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের মনেও জায়গা করে নিচ্ছে এ জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র।
নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলে চট্রগাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বর্তমানে নোয়াখালী জেলা আগে ফেনী, লক্ষীপুর এবং নোয়াখালী জেলা নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল ছিল, যা এখনও বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত। চট্রগ্রাম প্রশাসিনিক বিভাগের অধীন নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন ৪২০২ বর্গ কিলোমিটার। নোয়াখালী ৯টি উপজেলা, ১০টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ৯৩টি ইউনিয়ন, ৮৮২টি মৌজা, ৯৬৭টি গ্রাম ও ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
নোয়াখালী গেলে এই চার খাবার মিস করবেন না:
- সেমাই পিঠা
- নারিকেল পুলি পিঠা
- হাঁসের মাংসের মালাইকারি
- মরিচ খোলা
নোয়াখালী জেলার ভ্রমণ খরচ: ভ্রমণ খরচ নোয়াখালীতে ভ্রমণ সাশ্রয়ী।
- বাস/ট্রেন যাতায়াত: ঢাকা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বাস বা ট্রেনের খরচ প্রায় ৫০০-১০০০ টাকা।
- থাকা: গেস্টহাউস বা হোটেলের খরচ ১০০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- খাবার: স্থানীয় খাবারের দাম বেশ সাশ্রয়ী, প্রতিদিনের খাবার খরচ ৩০০-৫০০ টাকা।
- বিঃদ্রঃ : সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সকল কিছুর মূল্য পরিবর্তন হয়ে থাকে তাই এই ভ্রমণ খরচের সাথে আপনার খরচ নাও মিলতে পরে।
নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
- নিঝুম দ্বীপ= হাতিয়া, এটি নোয়াখালী জেলার দক্ষিন-পূর্বে অবস্থিত।
- শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম।
- বজরা শাহী মসজিদ- বজরা।
- লুর্দের রাণীর গীর্জা- সোনাপুর।
- গান্ধি আশ্রম – জয়াগ, সোনাইমুড়ি।
- ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল – চর জব্বর।
- নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ- মাইজদী।
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোঃ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর- সোনাইমুড়ী।
- শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের আশ্রম- চৌমুহনী।
- নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার- মাইজদী।
নিঝুম দ্বীপ: মায়াবী হরিণ, বিশাল কেওড়া বন, আর নরম বালুর মাঝে অপরূপ সুন্দর এক সৈকত নিঝুম দ্বীপ। হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের কোলে বালুচর বেষ্টিত ছোট্ট সবুজ ভূখণ্ড এটি। অগণিত শ্বাসমূলে ভরা কেওড়া গাছ দেয়াল বানিয়েছে দ্বীপের চারদিকে। সাগরের জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জনের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা লীলাভূমি এ দ্বীপে যেন সৃষ্টিকর্তা সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা আসেন এখানে ঘুরতে।
কমলার দীঘি: হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের মানুষ ঘুরাঘুরি বা অবসর সময় কাটানোর জন্য সবচেয়ে বেশি যে জায়গাটি ভ্রমণ করেন, তা হলো কাজির বাজার এলাকার কমলার দীঘি। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ জায়গাটির এক পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, আরেক পাশে রয়েছে ঝাউবন, সুবিশাল মাঠ, বনভূমি এবং অন্য পাশে রয়েছে সুবিশাল সমুদ্র। কমলার দিঘীর একপাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, আরেক পাশে রয়েছে ঝাউবন। ছবি: সংগৃহীত জোয়ারের সময় এখন থেকে উপভোগ করা যাবে সমুদ্রের গর্জন, আর ভাটার সময় বিস্তীর্ণ বালিরাশি ও সমুদ্রের সৌন্দর্য। তাছাড়া এখান থেকে সমুদ্র চলমান শত শত জাহাজের সারি দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় কমলার দীঘির চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শরীর ও মন জুড়ানো শীতল বাতাসের কারণে প্রতিদিন এখানে এ এলাকার লোকজনের ভিড় জমে।
বজরা শাহী মসজিদ: নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে নির্মিত ঐতিহাসিক মসজিদের নাম বজরা শাহী মসজিদ। দিল্লির শাহী জামে মসজিদের নকশার অনুকরণে বজরা শাহী মসজিদটি গড়ে তোলা হয়েছে।
বজরা শাহী মসজিদে কিভবে যাবেনঃ নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সাযোগে বজরা হাসপাতালের সম্মুখে নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছা যাবে।
গান্ধী আশ্রম- নোয়াখালী: ১৯৪৬ সালে জাতিগত সংঘাত রায়টের পর মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী জেলা এর বেগমগঞ্জ উপজেলা ভ্রমণ করেন এরং বর্তমান সোনাইমুড়ি পৌরসভার জয়াগ নামক স্থানে তিনি পরিদর্শনের জন্য গেলে সেখানকার তত্কালীন জমিদার ব্যরিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ তার সকল সম্পত্তি গান্ধীজির আদর্শ প্রচার এবং গান্ধীজির স্মৃতি সংরক্ষণের একটি ট্রাস্ট এর মাধ্যমে জন্য দান করেন এবং গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ট্রাস্টটি প্রথমে আম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যেরিটেবল ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধন কৃত হলেও ১৯৭৫ সালে এটি নাম পরিবর্তিত হয়ে গান্ধি আশ্রম ট্রাস্টে পরিনত হয়। গান্ধি আশ্রমে গান্ধিজির নামে একটি জাদুঘর ও আছে যাতে গান্ধিজির তখনকার নোয়াখালী সফরের একশতাধিক ছবি ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও প্রকাশিত লেখা সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে আশ্রমটি একটি ট্রাষ্ট হিসেবে পল্লি উন্নয়নের ব্রতে কাজ করে যাচ্ছে।
গান্ধী আশ্রমে কিভাবে যাবেনঃ নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সা যোগে সম্মুখে জয়াগ বাজার নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে আধা কিলোমিটার পুর্বে গেলে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছা যাবে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com