Breaking News

গল্পঃ আড়ালে || পর্ব-৩ ও ৪

 

-শুভ্র কিছু একটা ভেবে বলে চলেন.
-কোথায়? (নিশি)
-ফুচকা নাহ খাবেন?
-আপনি সত্যি খাওয়াবেন?
-আপনার কি মনে হয় আমি কিপটা??
-তা নাহ।
-তো??
-একটা চিমটি কাটেন তো?
-কেনো??
-স্বপ্ন দেখছি নাকি চিন্তা করছি?
-নামবেন নাকি বাসায় যাবো??
-নাহ নামছি তো ?
.
.
-দু’জন ফুচকার দোকানের সামনে। নিশিকে বসতে দিয়ে।শুভ্র ফুচকাওয়ালা কে বলে…
-মামা একটা ফুচকা দিও তো।।
-বসেন মামা দিচ্ছি (ফুচকাওয়ালা)
-আমায় ফুচকার পর আইসক্রিম খাওয়াবেন কি?
-পছন্দ করেন?
-হুম?
-ওকে।
-আপনি এখানে আরো এসেছেন?
-হুম অনেক রিয়াকে নিয়ে। ও ফুচকা আইসক্রিম পছন্দ করতো।
-মামা ফুচকা টা (ফুচকাওয়ালা)
-এই মামা বলো নাহ তোমার এখানে আমি আরো কতো এসেছি (শুভ্র)
-কই না তো মামা আপনি তো আগে কখনো আসেন নি।(ফুচকা ওয়ালা)
-আরে এসেছি তোমার মনে নেই। (শুভ্র)
-মামা আসলে আমার মনে থাকতো(ফুচকা ওয়ালা)
-বাদ দেন হয়তো মামার মনে নেই (নিশি)
-না গো মা এই মামা আসলে আমার মনে থাকতো(ফুচকা ওয়ালা)
-মামা আপনি আপনার জায়গায় যান?(নিশি)
-কি মনে করো তোমরা আমায় আমি পাগল আমি কি করি আমার মনে থাকে নাহ।।সব মনের ভুল।?(রেগে চিৎকার করে)
-আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?(নিশি)
-আমার ইচ্ছে আপনি বলার কে?(নিশিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে গাড়ির দিকে চলে যায়)
-নিশি ফুচকাওয়ালার কাছে গিয়ে বিল টা দেয়..
-মা সত্যি বলছি মামা আগে আসে নাই। হয়তো অন্য কোনা দোকানে গেছিলো।(ফুচকা ওয়ালা)
-হুম(মুচকি হেঁসে)
-মা মামা তো তোমায় ফেলে চলে গেলো(ফুচকা ওয়ালা)
-কিহ (অবাক হয়ে পাশ ফিরে দেখে শুভ্র গাড়ি ছেড়ে দিছে)
.
.
.
-নিশি দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে মুচকি হাঁটা শুরু করে।কারণ তার গন্তব্যে হেঁটে রাতের আগে পৌঁছাতে হবে তার সাথে নাহ আছে ব্যাগ নাহ ফোন সব গাড়িতে।তাও ভাগ্য ভালো শুভ্র ফুচকার বিলটা হাতে দিয়ে গেছে।নয় ফুচকার বিলই বাহ দিতাম কোথা থেকে।
.
.
.
.
–১ ঘন্টা ধরে পার্কে বসে আছে শুভ্র। ফুচকার ওখান থেকে সরাসরি এখানে এসে বসে আছে। এই পার্কে যেন সে অনেকটা শান্তি পায়।
রিয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পায়।রাগ বাহ মন খারাপ হলেই এখানে চলে আসে।
.
.
.
.
– এক ঘন্টা হাঁটার পর নিশির ও শরীর কিছুটা দূর্বল হয়ে গেছে। আগের মতো হাঁটাতে ও পারছে নাহ। তাই আস্তে আস্তে হাটঁতেছে।বাসায় ফিরতে কয়টা বাজে কে জানে।
.
.
.
-শিরিনা বেগম নিশি কে ফোন দেয়।নিশি ফোন নাহ তুলায় চিন্তা করেন হয়তো শুভ্রর সাথে ফোন সাইলেন্ট করা। তাই আর তাদের ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে নাহ চিন্তা করে।
.
.
.
শুভ্র আরো ১০ মিনিট বসে থেকে বাসায় যাবার উদ্দেশ্য পার্ক থেকে বের হয়।১৫ মিনিটের মধ্যে বাসায় চলে আসে। রহিম চাচা দরজা খুলে দেয়..
-রহিম চাচা গাড়িতে ব্যাগ গুলো আছে রুমে দিয়ে যাও। (শুভ্র) -রহিম ব্যাগ গুলো নিয়ে

শুভ্র রুমে ঢুকবে তখন রহিম তুমি এখানে?(শিরিনা বেগম)
– শুভ্র বাবা ব্যাগ গুলো তার রুমে দিয়ে আসতে বললো(রহিম)
-নিশি এসেছে কখন?
-নিশি মা কে তো দেখি নি শুভ্র বাবা একাই এসেছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে ব্যাগ রেখে যাও।
-জ্বী।(ব্যাগ রেখে রহিম চলে যায়)
-রহিম চলে যেতেই শিরিনা বেগম রুমে ঢুকে..

.
-শুভ্র(শিরিনা বেগম)
-আম্মু কিছু বলবা(শুভ্র)
-নিশি কোথায় রহিম বললো নিশি আসে নি?
-আসে নি মানে?
-সেটাই তোকে জিজ্ঞেস করছি তোর সাথে মেয়েটা গেছে।
-নিশি আসে নি। আমি তো মনে করেছি..ফোন দাও.
-শিরিনা বেগম তারাতাড়ি করে ফোন দেয়। কিন্তু ফোনটা শুভ্র রুমে বাজে।
-শুভ্র বুঝতে পারে কেনো এখনো নিশি আসতে পারে নি।কারন নিশির ব্যাগ ফোন সব গাড়িতে ছিলো।রহিম গাড়ি থেকে সব ব্যাগ আনার সময় নিশির ব্যাগ ও নিয়ে এসেছে।মেয়েটার কোনো বিপদ নয় নি তো। সব দোষ আমার কেনো নিজের রাগের ওপর কন্ট্রোল করতে পারি নাহ কে জানে।শুভ্র নিজেকে নিজে গালি দিতে থাকে?
-আম্মু আমি আসতেছি
-শুভ্র তাড়াতাড়ি করে ফোন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নিশিকে খোঁজার জন্য…
-শুভ্র কোথায় যাচ্ছিস দাঁড়া। নিশি কোথায় বলে যা(শিরিনা বেগম)
-নিশিকেই আনতে যাচ্ছি(শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়
-নিচে গিয়ে দরজা খুলেই শুভ্রর চোখ বড় হয়ে যায়..

শুভ্র দরজা খুলতেই সামনে নিশিকে দেখতে পায়।

ফুটন্ত গোলাপ ফুল প্রচন্ড রৌদে যেমন একটু দূর্বল হয়ে পরে।

পানিতে সে আবার আগের রুপ পায়।

নিশিকে ঠিক তেমন লাগছে কপালে ঘাম গাল বেয়ে আছে ঘাম।

মুখে এক হ্রাস ক্লান্তি ছেয়ে আছে।

যেন একটু পানির অপেক্ষা পানি পেলে আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে।

আগে কখনো নিশিকে এভাবে দেখা হয় নি।চেহারায় এক অদ্ভুত মায়া।
-নিশি মা এ কি অবস্থা তোর।তোকে এমন ক্লান্ত লাগছে কেন?আর কোথায় ছিলি?ভিতরে আয়(শিরিনা বেগম দরজার কাছে গিয়ে নিশিকে ভিতরে নিয়ে আসে)
.
-মা আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।খুব ক্লান্ত লাগছে(নিশি)
-হুম যা।আমি রহিম কে তোর জন্য কফি বনাতে বলি(শিরিনা বেগম)
-হুম(মুচকি হেসে উপরে চলে যায়)
-এতটা কষ্ট করে এসে ও মুখে হাসি। (শুভ্র মনে মনে)
-শুভ্র? (শিরিনা বেগম)
.
-আমি রাগে ওকে রেখে চলে এসেছিলাম বুঝতে পারি নি। ওর ব্যাগ ফোন সব গাড়িতে ছিলো। (এই বলে শুভ্র বাসা থেকে বের হয়ে যায়)
.
-নিশি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় কফি নিয়ে বসে আছে। খুব ক্লান্ত লাগছে হঠাৎ এতো সময় হাঁটার জন্য। কিন্তু তা ছাড়া উপায় ছিলো নাহ নাই টাকা তার উপর সন্ধ্যা কোন গাড়িতে উঠবে।তাছাড়া রিকশা ও পায় নি।
.
-১ ঘন্টা পর শুভ্র বাসায় ফিরে । সবাই খেলেও নিশি আর রাতে খায় নি।শুভ্র রুমে এসে দেখে নিশি বিছানায় আধা শুয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে।পাশে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির একটা বই,জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের ২ টি বই।।শুভ্র জানে নাহ নিশি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তাবে বই পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।।শুভ্র নিশিকে আর ডাক নাহ দিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পরে। ক্লান্ত থাকায় নিশির ঘুম ভোরে ভাঙ্গে। নিজেকে বিছানায় আর শুভ্র কে সোফায় দেখে। কখন ঘুমিয়ে গেছে তাও মনে করতে পরছে নাহ হয়তো ঘুমিয়ে ছিলো দেখে শুভ্র ডাক দেয় নি।


-দেখতে দেখতে ৩ দিন কটে গেছে।। নিশি শুভ্রর সাথে কথা বলে নাহ খুব জরুরি দরকার ছাড়া ।


-একদিন নিশি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ কারো শব্দের পিছনে ফিরে..
.
.
-সরি(শুভ্র)
.
-সরি কেনো?(নিশি)
.
.
-আসলে আমার সে দিন এমন করা ঠিক হয় নি। আমার রাগ উঠলেই নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি?
.
-ও
.
.
-ও??আমি সরি বললাম.
.
-আপনি বলছেন আমি শুনছি।
.
.
-দেখুন আমি আপনার জন্য ফুচকা এনেছি। সাথে আসক্রিম।
.
-ও ?
.
.
-হুম নিন।
.
-ইচ্ছে নেই,
.
.
-প্লিজ ?
.
-এক শর্তে নিবো.
.
.
-শর্ত?কি শর্ত শুনি?
.
-আমায় আপনার আর রিয়ার কথা বলতে হবো।বলবেন?


-নিশির কথা শুনে শুভ্র অনেকটা অবাক হয়ে যায়। কোন মেয়ে তার স্বামীর অন্য বউ এর কথা শুনতে চায়…
.
.
-কি হলো?
.
.
-আপনি সত্যি শুনতে চান?(অবাক হয়ে)
.
-হুম(মুচকি হেঁসে)
-শুনলে সবার মতো আপনিও তো বলবেন নাহ রিয়া আমার হ্যা..( কথা শেষ করার আগেই নিশি তার হাত দিয়ে শুভ্রর মুখে ধরে ফেলে)
.
-কে কি ভাবে? কি বলে?তাতে আমার কিছু আসে যায় নাহ।আপনি কি বলেন?আপনার অনুভূতি কি তা আমার জন্য আসে যায়।আমি আপনার রিয়ার কথা শুনতে চায়(কথাটা বলে নিশি শুভ্রর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়)
.
-শুভ্র নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই চোখের গভীরতা অনেক।ইচ্ছে করলেও নিজেকে ফিরিয়ে রাখতে পারছে নাহ। রিয়ার পরে হয়তো এই মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়েছে।কিন্তু রিয়ার চোখের দিকে ও কি এভাবে তাকিয়ে কখনো। নাহ মনে পরছে নাহ। সত্যি কি কখনো তাকিয়েছে ছিলো এভাবে। কিছু সময় এভাবে থাকার পর নিশি চোখ সরিয়ে নেয়।আর শুভ্রর জ্ঞান ফিরে ..
.
.
-দু’জনই কিছুটা লজ্জা পায়।
.

.
-৫ মিনিট নিরবতা


-আপনি সত্যিই আমার আর রিয়ার কথা জনতে চান?
.
-কোন ডাউট?? ??
.
-হুম।নাহ মানে আচ্ছা আমি বলবো?
.
-এক মিনিট . নিশি রুম গিয়ে খাতা কলম নিয়ে আসে..
.
-হুম এবার বলুন। চোখ বন্ধ করে ফাস্ট থেকে।ওকে?(নিশি)
.
.
-খাতা কলম দিয়ে কি করবেন? (অবাক হয়ে)
.
-লিখবো। আর রিয়াকে খুঁজে বের করবো(মুচকি হেসে)


চলবে……

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com