Breaking News

কালবৈশাখী রাত || পর্ব -২

মুহিবের দম বন্ধ হয়ে আসছে। সামনে আবার এই পিচ্ছি মাথায় বিছানা অবধি ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আল্লাহ গো কেমন বও আমার ঘোমটা কই পর্যন্ত দিতে হয় এটাও যানে না।
মুহিবের কান্না শুনে মেয়েটি ঘোমটার ফাক দিয়ে আড়চোখে মহিব কে দেখছে৷ মুহিব কান্না বন্ধ করেছে কিন্তু এখনো ফোফানী রয়ে গেছে। মেয়েটি বিছানা থেকে নেমে মুহিবের কাছে আসল তারপর টুপ করে মুহিবের পা ছুয়ে দিল।মুহিব মেয়েটার কান্ডকারখানা দেখে অবাক। মেয়েটি যে নাদান বচ্চা মাএ এটা বুজতে মুহিবের সময় লাগল না।গায়ে গতরে কিছুটা বাড়ন্ত হলেও, বুজের দিক দিয়ে যে অবুজ সেটা ভাবভজ্ঞিমা দেখেই বুঝা যাচ্ছে,নিতান্তই বাচ্চা। বাবা কি করে পাড়ল এমন একটা বাচ্চাকে তার হাতে তুলে দিতে। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে,মেয়েটি অবুজ তার তো কোন দোষ নেই, বাচ্চার সাথে বকাঝকা করে কি লাভ, যা কাহিনী করার সব করেছে তার বাবা। মেয়েটির থেকে চোখ সরিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
__ "নাম কি তোমার? "
__ "নিশ্চুপ "
__ "নাম জিজ্ঞেস করেছি তো! "
__ " জি আঁখি মুনতাহা"
__  "আমাকে বিয়ে করেছ কেন?"
__ " জানিনা"
__  "কি জানো? "
__ " আংকেল বলল তাই। "
__ "বললেই বিয়ে করে নিবা? "
__ " নিশ্চুপ"
__ দেখ আমি তোমাকে বও হিসাবে মানতে পারব না। বুজতে পারছ। আর আমাদের মাঝে যা কথা হবে এই কথাগুলা যেন কাকপক্ষী ও না যানে। "
__ "আচ্ছা।"
__  "যাও শুয়ে পড়। "
__  "কিছু দিবেন না? "
মুহিব কিছুটা ভেবাচেকা খাওয়া চোখে বলল, 
__ "মানে?"
__ "আমার কাজিনদের বর তাদের প্রথম রাতে কত গিফট দিয়েছে। আমাদের ও তো প্রথম রাত কি দিবেন আমাকে?? "
__ "আমার কাছে কিছু নাই। "
__ "ওওওও  "
মুহিব বুজতে পারল বাচ্চাটা মন খারাপ করেছে। সে পরমূহূর্তে আবার চোখ খোচ করে জিজ্ঞাসা করল 
__ "কি চাই তোমার?? "
__  "কি দিবেন? "
__ "আপাতত আমার কাছে কিছু নাই দেবার মত।"
__  "তাহলে পরে একদিন চেয়ে নেব৷ "
__  "আচ্ছা। যাও ঘুমাও।"
আঁখি কিছু না বলে ঘাপটি মেরে বিছানায় সুয়ে পড়ল।কিছুহ্মন পরে হয়ত ঘুমিয়ে পরবে।কিন্ত মুহিবের চোখে যে ঘুম নেই।চাতক পাখির মত  তাকিয়ে আছে অন্ধকার রাস্তার দিকে৷ এই রাত নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল দুজনের।নিশাত প্রায় বলত প্রথম রাতে দুজনে ছাদে জোছনাবিলাস করবে আর রোমান্স। দুজনের টোনাটুনির সংসার করবে,আর তাদের গুল্টুস মুল্টুস বাচ্চা হবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাচ্চার বাবা হওয়ার আগে বাচ্চার বর হয়ে গেল। কি কপাল।
বাহিরে খুব জোড়ে হাওয়া বইছে,সাথে ঝুম বিষ্টি পড়ছে। হাওয়ার তোড়ে নিজের কথা নিজে ভাল ভাবে শুনা যাচ্ছে না।কিভাবে শুনা যাবে, এযে কালবৈশাখী ঝড়। এই ঝড় হয়ত বুজতে পেরেছে মুহিবের জন্য আজকের রাতটা কালবৈশাখী রাত, তাইত মুহিবের কষ্টে তাল মিলাতে হুড়মুড় করে চলে এসেছে। আজকে নিশাত তার পাশে থাকলে রাতটা কতই না মধুর হত৷ এসব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে তার বোধ নেই। কিছুহ্মন পরে বুজতে পারল, আঁখি উঠেছে,বাথরুমে গেল,মুহিব যেভাবে শুয়ে ছিল ঠিক সেভাবেই আছে। তার নেই কোন ভাবান্তর। 
কিছুহ্মন পরে আঁখি বের হয়ে এল। আর এসে মুহিবের পাশে দাড়িয়ে বলল,
__  "আচ্চা, আমি কি গোসল করব?"
মুহিব অবাক হয়ে চোখ বাকা করে বলল,
__  "কেন গোসল করবা?"
__  "না মানে আমার সব কাজিনরা বিয়ের পর প্রতি সকালে গোসল করত।"
__  "তারা যা যা করেছে তোমাকেও তাই তাই করতে হবে নাকি।।"
__  "জানিনা"
__  "তোমার কিছু হয় নি।গোসল করতে হবে না।তুমি খুব ছোট তাই এসব নিয়ম মানতে হবে না। 
__  "আচ্ছা।"
.
আঁখি আবার বাথরুমে ঢুকে গেল,খানিকবাদে আবার ফিরে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ শুরু করল।মুহিব আড়চোখে মেয়েটির নামায পড়া দেখছে। মেয়েটি নামাজ, কালামে ভালই যানে।কই কখনো তো নিশাত নামায পড়ত না বা তাকেও পড়তে বলত না। কিন্তু পিচ্চি বও নামায পরে পরহ্মনেই আবার আপনমনে বলতে লাগল মুহিব তুই কিসের সাথে কিসের তুলনা করছিস বল তো, কই নিশাত আর কই এই নাদান বাচ্চা।ধুর,,,, মাহিন বিছানা ছেড়ে বাহিরে চলে যায়।

কানাডা থেকে লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে সেখানের এক ব্রিটিশ বন্ধু হয়েছিল,সে জানিয়েছে যে কিছুদিন পর সে বাংলাদেশে, ব্রিটিশ এম্বিসিতে শিফট হবে। মুহিবের কাগজ পএ চেয়ে নিয়েছিল। বলেছে চাকরি হতে পারে।মুহিব এসব না ভেবে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে যখন দেশে আসল, তার ঠিক দুদিন পরেই মেইল আসল যে তার চাকরির জন্য সেই ব্রিটিশ বন্ধু তাকে ডাকিয়েছে।বাবার কাছে অনুমতি নিয়ে গেল ঢাকা। যাওয়ার পরে ইন্টারভিউ পর চাকরি কনফ্রাম করেই বাড়িতে ছুটে আসে।তারপর থেকে এখানেই চাকরি করে, অন্য চাকরি পেয়েছে তাও এটা ছাড়তে চাইছে না।বেতন ভাল , আবার সুযোগ সুবিধা ব্যাপক।
কালকে নাইট করে এসেছে তার মানে আজকে বন্ধ আগামীকাল খোলা।কিন্তু মুহিব আজকেই চলে যাবে। আঁখিকে দেখলেই নিশাত এর কথা মনে পরে যায়,  বুকের ভিতরের কান্না দলা পাকিয়ে আসে। আর সবাইকে দেখে মুহিবের অসহ্য লাগছে। সবাই খারাপ তার আর নিশাত এর ছাড়াছাড়ির পেছনে সবাই যুক্ত। তাই তাড়াতাড়ি করে ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে নিয়ে  বের হবার সময় আঁখির দিকে তাকাল, মেয়েটা কেন যানি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এখনি বুজি বাধ ভেজ্ঞে জল ছুটবে। মুহিব দুর থেকেই বলল, "আসি ভাল থেক।সাবধানে থাকবা।"
এটা বলে আর দাড়াল না তার কেন যানি মনে হচ্ছে দাড়ালেই আঁখি কেদে দিবে। মা- বাবার কাছে বিদায় নিতে গেলে বাবা বাধ সাধলেন,
__ " আঁখি কে নিয়ে যাও।তোমার সাথেই ভাল থাকবে।"
__  "আব্বা আমি ব্যাচালার বাসায় থাকি৷ কিভাবে নিব বলেন।আগে বাসা ঠিক কিরি তারপর নিব। "
জহির সাহেব আর কিছু বললেন না৷ 
মুহিব হাটছে, বাড়ি থেকে পাচ মিনিট হাটলেই স্টেশন।  আপনজন হারিয়ে মেয়েটা নিঃস্ব, স্বামী কাছে থাকা তার অধিকার, কিভাবে এই অন্যায় করছি আমি, এইটুকুন মেয়ে কি বা বুজে। আবার নিজের মন নিজেকে উত্তর দিচ্ছে আমি কেন অন্যায় করব অন্যায় করেছে বাবা অবুজ মেয়েকে  তার নামে করে দিয়ে। খানিক বাদেই নিজের মনকে নিজেই সাসাচ্ছে কিভাবে মিথ্যা বললি,তুই নিজে একা একটা ফ্লাটে থাকিস, কিন্তু বললি ব্যাচ্যালার।আচ্ছা আঁখি কে কি আমি মেনে নিতে পারি নাই?? ধুর কিভাবে মেনে নিব এত বাচ্চা বাচ্চা মেয়েকে, শান্তি লাগছেনা কিছু, সাথে না এনেই ভাল করেছি।সাথে থাকলে কেমন অশান্তি অশান্তি লাগে। শান্তি থাকার জন্য এতটুকু মিথ্যা বলতেই পারি।
�.
.
.
বিকাল 3 টায়� মুহিব তার বাসায় পৌছায়। গেইটের ভিতরে ডুকে দেখে, নিশাত বসে আছে।নিশাতকে দেখে বুকের ভিতরের চিনচিন ব্যাথাটার পরিমান বেড়ে গেছে।। মনে হচ্ছে এখনই কলিজা ছিড়ে যাবে। মুহিবকে দেখে নিশাত দৌড়ে আসে, আর এসেই মুহিবকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু মুহিবের থেকে কোন রেস্পন্স না পেয়ে নিশাত মাথা তুলে তাকায়। 
__ "এই কি হইছে?"
__ "নিশ্চুপ"
__  "মুহিব আমি দম আটকে মরে যাইতেছিলাম। তুমি ফোন কেন বন্ধ করছ৷ জান অঘটন কিছু হয় নাই তো, অই ছেলে চুপ কেন।বল কি হইছে?এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?? "
__ "সব শেষ নিশাত।"
__ " কি শেষ?, মানে কি? "
__ "তোমার বিয়ে কবে নিশাত?"
__ " বিয়ে সামনের সপ্তাহে হবার কথা ছিল কিন্তু  ছেলের নাকি আমেরিকায় একটা কাজ আছে, তাই তারা চাচ্ছে আজকে রাতেই বিয়ের ঝামেলা শেষ  করে ফেলতে।"
__  "করে ফেল বিয়ে।"
__  "যাহ!  কি বলে৷ তাহলে তোমার বও হব কেমনে গো জান??"
__  "অন্য কেও বও হয়ে গেছে। "
__  "মানে!! "
__ "নিশাত আমি বিয়ে করে ফেলেছি।"
__........ 
.....~চলবে........😣😣

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com