তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৬
গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে, ধমকা বাতাস আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে বারবার সাথে এলোমেলো করে দিচ্ছে আমার মনের ভিতরটা। বারবার একটা প্রশ্নই মনে জাগছে আদিলের সাথে কি আর কখনো দেখা হবে না? আব্বু ড্রাইভ করছেন, ইচ্ছে হচ্ছে প্রশ্নটা আব্বুকে করি কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। আব্বুর গোমড়া মুখ দেখতে খারাপ লাগছে তাই আবার বাইরের প্রকৃতির দিকে নজর দিলাম। মানুষের মনের অবস্থা আর কেউ না বুঝুক প্রকৃতি বুঝে, এইযে এখন আমার মনের আকাশের মতো প্রকৃতির আকাশও মেঘলা হয়ে আছে।
আব্বু: আনিশা? (আব্বুর ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, চলে এসেছি নাকি? দুদিকে চোখ বুলালাম বাসা তো এখনো অনেক দূর অনেকটা রাস্তা যেতে হবে, তবে কি আব্বু কিছু বলতে চান?)
আব্বু: কিরে কি ভাবছিস?
আমি: কিছু নাতো।
আব্বু: ভাবছিস তোদের কখনো শিরিনের কথা বলিনি কেন?
আমি: প্রশ্নটা ক্ষণিকের জন্য মনে এসেছিল কিন্তু পরে ভাবলাম আমরা কিছু মনে করতে পারি তাই বলোনি।
আব্বু: আসলে তোর আম্মু চায়নি আমি শিরিনকে নিয়ে ভেবে নিজেকে কষ্ট দেই। (আব্বুর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম)
আমি: আম্মু জানতো?
আব্বু: হ্যাঁ, শিরিনের প্রতারণার কথা মনে হলে বড়লোক হবার নেশা জাগতো পাগলের মতো ছুটতাম টাকার পিছনে আর দিনশেষে যখন রাতের আধার হতো তখন নেশা করে বাসায় ফিরতাম। তোর আম্মু কষ্ট পেতো বুঝতাম কিন্তু কখনো ওর মন খারাপটাকে পাত্তা দিতাম না। কারণ আমিতো বিয়েই করতে চাইনি তোর ফুফু আর চাচ্চু জোড় করে বিয়েটা করিয়েছিল।
আমি: তারমানে আম্মু কখনো তোমার ভালোবাসা পায়নি?
আব্বু: কে বললো? প্রথমে ওকে সহ্য হতো না কিন্তু যেদিন ও জানালো আমি বাবা হবো সেদিন থেকে কেমন যেন একটা লাগতো তোর আম্মুকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে হতো, ও প্রেগন্যান্ট ছিল বলে নয় ওর মায়াবী চেহারা টোল পড়া হাসি সবকিছু আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো টানতো। কিন্তু ওকে বেশিদিন ভালোবাসার সুযোগ আল্লাহ্ আমাকে দেননি, তোদের জন্ম দেওয়ার সময় ও... (আব্বু থেমে গেলেন, এখন আর আব্বুকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই চুপচাপ বসে রইলাম)
আব্বু: শিরিন নামের মরীচিকার জন্য তোর আম্মুকে একটা বছর আমি অবহেলা করেছিলাম তাই হয়তো অভিমান করে আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেছে।
আমি: আব্বু কাঁদছ কেন মানুষের মৃত্যুর উপরে কি কারো হাত আছে? না কেঁদে আম্মুর জন্য দোয়া করো।
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: আচ্ছা আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর মায়ের সাথে আর দেখা হয়নি তোমার? বা আমার আর আদিলের বিয়ের আগে মাঝখানে এতো গুলো বছরের মধ্যে কি মায়ের সাথে তোমার কোনো যোগাযোগ হয়নি?
আব্বু: হুম হয়েছিল।
আমি: কখন?
আব্বু: শিরিন আর আমি আলাদা হবার পাঁচ বছর পর।
আমি: মধ্যে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছিল?
আব্বু: রাগে অভিমানে শিরিনের কোনো খুঁজ রাখিনি, কিন্তু টাকার পিছনে ছুটে এই টাকা সম্পদ ব্যাংক ব্যালেন্স এসবের পাহাড় ঠিকি তৈরি করেছিলাম। তুই আর রাইমা তখন তিন বছরের, সেদিন রাইমা খুব অসুস্থ ছিল। সায়মা ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলেছিল। আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম হঠাৎ রাস্তায় মানুষের ভীড় দেখে কাছে যাই আর গিয়ে দেখি শিরিনের ভাই ভাবি আর তাদের ছোট বাচ্চা রাস্তায় পরে আছে। ভুলে যাই পাঁচ বছর আগের শত্রুতা, তাদের নিয়ে হসপিটালে ছুটে যাই। রক্ত আর ওষুধপত্রের জন্য ছুটাছুটি করি এর মধ্যে শিরিন হসপিটালে চলে আসে ব্যস দেখা হয়ে যায় দুজনের।
আমি: তারপর?
আব্বু: শিরিনকে আমি কিছু বলার আগেই ও ধরে নেয় আমি ইচ্ছে করে ওর ভাই ভাবির এক্সিডেন্ট করেছি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। কথা কাটাকাটি হয় দুজনের মধ্যে, এক পর্যায়ে শিরিনকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে চলে আসি আমি হসপিটাল থেকে।
আমি: আর কখনো দেখা হয়নি?
আব্বু: না, আমিও চেষ্টা করিনি। তুই আর রাইমা ছিলি সাথে ছিল তোদের মায়ের স্মৃতি বেশ কাটছিল জীবন। আবির যেদিন মারা যায় সেদিন ও ঘোমটা সরানোর পর আবার দেখা এতো গুলো বছর পর।
আমি: হুম।
আব্বু: ভালোবাসা শব্দটা মাত্র চার অক্ষরের কিন্তু এর কষ্টের পরিমাণ অনেক বেশি, এই শব্দটা কখনো হাসায় কখনো কাঁদায়। আমি ভাগ্যে খুব বিশ্বাস করি ভাগ্য চাইলে তোর আর আদিলের কান্নার সমাপ্তি হবে, সেদিন আদিল ওর মায়ের নিষেধ অমান্য করে ঠিক তোর কাছে চলে আসবে।
আমি: আসবে না আব্বু কারণ ও ওর ফুফুকে কষ্ট দিতে চায় না তাছাড়া আমিও চাই না এভাবে ও আমার কাছে ফিরে আসুক। আমি চাই মা আমাকে মেনে... (আব্বুর দিকে নজর পড়লো আব্বু কি যেন অবাক হয়ে ভাবছেন)
আমি: আব্বু কি ভাবছ?
আব্বু: ফুফু বললি তুই? নাকি আমি ভুল শুনেছি?
আমি: ভুল শুনবে কেন উনি তো আদিলের মা নন ফুফু হন।
আব্বু: মানে? (আব্বু গাড়ি থামিয়ে দিলেন, বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে)
আমি: আব্বু তুমি এতো অবাক হচ্ছ কেন তুমি জানতে না মা মানে আদিলের ফুফু কখনো বিয়ে করেননি?
আব্বু: বিয়ে করেনি শিরিন...
আমি: হুম বিয়ে করেননি, উনি আদিলদের মা হয়ে আছেন কারণ ওরা যেন মায়ের অভাব বুঝতে না পারে বিশেষ করে মিতু।
আব্বু: তাহলে আদিল কে?
আমি: আবির, আদিল, মিতু ওরা সবাই উনার ভাইয়ের ছেলেমেয়ে।
আব্বু: মিতু সেই ছোট বাচ্চা যে সতেরো বছর আগে এক্সিডেন্ট এর সময় রাস্তায় পড়ে ছিল?
আমি: হ্যাঁ।
আব্বু: শিরিন বিয়েই করেনি অথচ আমি এতোদিন ভেবে এসেছি আদিল ওর সন্তান।
আমি: আব্বু বোকা হয়ে গিয়েছ নাকি? তোমাদের ব্রেকআপ হয়েছে বাইশ বছর আর আদিলের কিছুদিন পর সাতাইশ তম বার্থডে, ইশ কি যে ভাবো তুমি।
আব্বু: সত্যি বোকা হয়ে গিয়েছি। কিন্তু শিরিন বিয়ে করেনি কেন ও তো... (বুঝতে পারছি আব্বুর মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, যেভাবে হউক এই বিষয়টা বাদ দিতে হবে)
আমি: আব্বু তুমি কি রাস্তায় থাকবে নাকি? যেকোনো সময় বৃষ্টি আসবে ফুফু টেনশন করছেন, বাসায় কি যাবে?
আব্বু: হ্যাঁ যাচ্ছি।
আব্বু গাড়ি স্টার্ট দিলেন, আবারো মেঘলা আকাশ দেখায় মন দিলাম।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে, আমি ফুফুর কোলে মাথা রেখে সোফায় শুয়ে আছি। আদিলের সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভেবে কখনো মন খারাপ হচ্ছে তো কখনো আনমনেই হেসে উঠছি, বড্ড বেশি মিস করছি আদিলকে।
চাঁচি: আনিশা? (হঠাৎ চাঁচির ডাকে আমার ঘোর কাটলো)
আমি: হ্যাঁ চাঁচি।
চাঁচি: সিহাব কোথায় আছে জানিনা আমার সাথে কোনো যোগাযোগ...
আমি: চাঁচি আমার সংসার তো ভেঙ্গেই গেছে এখন আর ওকে খুঁজে লাভ কি? বাদ দাও তো এসব।
চাঁচি: না ওর শাস্তি প্রয়োজন। তুই হয়তো ভাবছিস আমি সিহাবের কোনো শাস্তি দেইনি, বিশ্বাস কর ও ফিরে আসলে...
আমি: চাঁচি প্লিজ ভালো লাগছে না এসব।
আব্বু: আনিশা তুই কি আদিলের কথা ভাবছিস তোর মেজাজ এতো কিটকিটে কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: মনকে কখনো পাহারা দেওয়া যায় না আর আমি চাইছিও না তোকে কড়া শাসন করি, আদিলের কথা ভাবছিস সমস্যা নেই কিন্তু ভুলেও ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস না। তুই বড় হয়েছিস তোকে তো বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই, আজ যা হয়েছে সব তোর চোখের সামনে হয়েছে। এতোকিছুর পর যদি তুই...
আমি: করবো না যোগাযোগ কথা দিচ্ছি।
চেঁচিয়ে কথাটা বলে রুমের দিকে চলে আসলাম, সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ফোন থাকলে আদিল আমাকে ফোন করবে আমি জানি তাই ফোনটা ফ্লোরে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললাম। ফ্লোরে নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়লাম, দুচোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। কেন হচ্ছে আমার সাথে এরকম আমিতো আদিলকে ভালোবাসি, ভালোবাসায় কি এতো পরীক্ষা দিতে হয়? এতো কষ্ট কেন ভালোবাসায়? আদিল আর আমি কি কখনো এক হতে পারবো না?
বারান্দার চেয়ারে চোখ দুটু বন্ধ করে বসে আছি আর সকালের মৃদু বাতাস উপভোগ করছি। মধ্যে দুটু দিন কেটে গেছে, যন্ত্রণায় চটপট করে দুটু দিন কেটেছে আমার। প্রিয় মানুষকে মিস করার কষ্টের চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট বোধহয় আর কিছুতে নেই।
চাঁচি: আনিশা আনিশা... (চাঁচির ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
আমি: হ্যাঁ চাঁচি।
চাঁচি: এই সকালবেলা একা একা এখানে বসে আছিস যে?
আমি: এমনি সকালের ঠান্ডা বাতাস ভালো লাগছে।
চাঁচি: তোর ফোন এসেছে একবার ড্রয়িংরুমে চল তো। (কে ফোন দিল? তবে কি ও বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছে? আদিল নয়তো, হয়তো আমার ফোন সুইচড অফ পেয়ে ল্যান্ড লাইনে ফোন করেছে)
চাঁচি: কি ভাবছিস চল।
আমি: হুম।
অনেকটা তাড়াহুড়ো করে এসে ফোন হাতে নিলাম।
আমি: হ্যালো।
তানিয়া: আমি জানতাম তুই আমার বিয়ের কথা ভুলে যাবি। (ইশশ কি ভুলটাই না করলাম সত্যিই তো তানিয়ার বিয়ের কথা মনে নেই)
তানিয়া: হয়েছে এখন আর চুপ হয়ে থাকতে হবে না।
আমি: সরি রে আসলে...
তানিয়া: আনিশা বিয়েটা আজ, প্লিজ এখন আর কোনো বাহানা শুনাস না।
আমি: কিন্তু...
তানিয়া: তোর ফোন সুইচড অফ বলছে তাই বাধ্য হয়ে ফারজানা তোকে আনতে গেছে।
আমি: কি?
তানিয়া: তাড়াতাড়ি চলে আসিস রাখছি।
আমি: তানিয়া শুন...
ধ্যাত ও তো ফোন রেখে দিল কিন্তু আমার তো অনুষ্ঠানে যেতে ইচ্ছে করছে না তাছাড়া আব্বু হয়তো যেতে দিবে না।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি পাশে ফারজানা, ওকে সবকিছু বলেছি। ফারজানা বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছে সব শুনে।
আমি: ফারজানা তুই বল আমি এখন কি করবো।
ফারজানা: এতো কিছু ঘটে যাবে আমিতো ভাবতেই পারিনি। আর আসল কাহিনী হলো তোর আব্বু আর তোর শাশুড়ির মধ্যে সম্পর্ক ছিল আর সেটা ব্রেকআপ হয়ে দুজনের মধ্যে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল, আমিতো বুঝতে পারছি না এতো বছর আগের ভুল বুঝাবুঝির জন্য তোর শাশুড়ি তোদের কেন কষ্ট দিচ্ছে।
আমি: প্রতিশোধ নিচ্ছে।
ফারজানা: প্রতিশোধ? তুই কি একা কষ্ট পাচ্ছিস? তাতো নয় আদিলও কষ্ট পাচ্ছে তাহলে উনি কার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন নিজের ছেলে মানে ভাইয়ের ছেলের উপর? এই মহিলাটা না বেশি বাড়াবাড়ি করছে।
আমি: আদিলের সাথে দুদিন ধরে কথা হয় না খুব কষ্ট হচ্ছে।
ফারজানা: আমার কি মনে হয় জানিস ভাইয়াকে তোর প্রেগনেন্সির খবরটা দেওয়া উচিত।
আমি: কিন্তু...
ফারজানা: আমি নিশ্চিত এই খবর শুনলে ভাইয়া তোর কাছে ফিরে আসবে।
আমি: আমিতো ওকে এভাবে চাই না। আমি মা, দাদু, মিতু, নীরব সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটা সংসার সাজাতে চাই।
ফারজানা: আপাতত ভাইয়াকে জানিয়ে রাখ দেখবি তোর শাশুড়ি একদিন ঠিক বুঝবে আর তোর সুন্দর একটা সংসারও হবে। অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন চল তো।
আমি: আমার না অনুষ্ঠানে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না।
ফারজানা: তানিয়া কিন্তু খুব রেগে যাবে, তানিয়া এতো বছর রিলেশনের পর বিয়ের পিড়িতে বসতে চলেছে আর ওর এই খুশির দিনে আমরা থাকবো না তা হয়? চল বলছি।
ফুফু: আনিশা তুই যা, অনুষ্ঠানে গেলে তোর মন কিছুটা হলেও ভালো হবে। (ফুফু এসেছেন দেখে ফুফুর দিকে তাকালাম, আব্বুকে কি বলবো তাই ভাবছি)
আমি: কিন্তু ফুফু...
ফুফু: ভাইয়ার কথা ভাবছিস তো ভাইয়াকে আমি বলবো।
আমি: ঠিক আছে।
বিয়ে বাড়ির জাঁকজমক আমার একদম ভালো লাগছে না, চারদিকে শুধু আলোর ছড়াছড়ি। মন খারাপ থাকলে বুঝি এসব আলো ভালো লাগে?
তানিয়া: আনিশা? (চারদিকে আনমনা হয়ে চোখ বুলাচ্ছিলাম কখন যে তানিয়ার রুমে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি, তানিয়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
আমি: শেষ পর্যন্ত তোর আর হানিফের ভালোবাসা সাকসেসফুল হতে যাচ্ছে।
তানিয়া: হুম আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত, আমিতো ভাবতেই পারিনি আব্বু মেনে নিবেন।
আমি: অবশেষে বিয়েটা হচ্ছে এটাই যথেষ্ট।
তানিয়া: আজ আমি অনেক খুশি কারণ চার বছর রিলেশনের পর হানিফের সঙ্গে কিছুক্ষণ পর আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে। আর আমার এই খুশির দিনে তোর গোমড়া মুখ একদম দেখতে চাই না তোকে হাসিখুশি দেখতে চাই। (তানিয়ার কথা শুনে মৃদু হাসলাম, কি করে হাসিখুশি থাকবো ভালোবাসার মানুষ যে পাশে নেই)
ফারজানা: তানিয়া ওকে জোড় করিস না ওকে ওর মতো থাকতে দে।
তানিয়া: কেন ওর মতো থাকতে দিব? ও কি জানে না...
ফারজানা: আমি তোকে সব বলবো পরে।
তানিয়া: আমি সব জানি।
ফারজানা: কি জানিস?
তানিয়া: চল তোরা আমার সাথে।
ফারজানা: কোথায়?
তানিয়া: আনিশা চল।
আমি: কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস? একটু পর হানিফ বর সেজে তোকে নিতে আসবে আর তুই এখন আমার মন ভালো করার জন্য পড়ে আছিস, তানিয়া এইটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
তানিয়া: আমার বিয়ের দিন আমার বেষ্টুর মন খারাপ থাকবে আর আমি হাসতে হাসতে বিয়ে করে নিবো তা কি করে সম্ভব?
ফারজানা: কিন্তু কোথায় যাচ্ছি বলবি তো আমাদের।
তানিয়া: যেখানে গেলে আনিশার মন ভালো হবে যার কাছে গেলে আনিশা প্রাণ খুলে হাসবে।
আমি: মানে?
তানিয়া আমার হাত ধরে টেনে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে আসলো, ফারজানা আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তানিয়ার দিকে।
আমি: কিরে এই ফাঁকা রুমে কেন... (জানালার কাছে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম, আদিল এখানে? কিন্তু ও পিছন ফিরে আছে কেন আমার কন্ঠ শুনেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না কেন?)
ফারজানা: ও এই ব্যাপার।
তানিয়া: ভাইয়ার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল আমি সব জানি আর এইটাও জানি দুদিন ধরে দুজনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই, তাইতো আনিশা মহারাণীর মন এতো খারাপ। (আমি এখনো অবাক হয়ে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছি, আমি এসেছি বুঝেও আদিল একবারের জন্য আমার দিকে তাকাচ্ছে না দেখে আরো বেশি অবাক হচ্ছি)
তানিয়া: কথা বল আমরা আসছি।
ফারজানা: আনিশা আজ ভাইয়াকে তোর প্রেগনেন্সির কথাটা বলে দিস।
ফারজানা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে কথাটা বলে চলে গেল। তানিয়া আর ফারজানা চলে যেতেই আদিল আমার দিকে ঘুরে তাকালো, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি দুজন দুজনের দিকে।
কতোটা সময় দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম জানিনা, আদিল আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে ওর থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। আদিল দরজা বন্ধ করে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো, আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আদিল এক হাতে আমার তুথুনি ধরে আমার মুখ উপরে তুললো, আদিলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ওর দুচোখে পানি টলমল করছে মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে। আচমকা আদিল আমাকে ঝাপটে ধরলো, আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আদিল কাঁদছে আর আমাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছে বুকের সাথে আমাকে পিষে ফেলবে। আদিলের শার্ট খামছে ধরে চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম, কেন হচ্ছে এরকম? দুজনের এক হওয়া যদি নিয়তিতে না থেকে থাকে তাহলে কেন বারবার দেখা হচ্ছে কেন একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারছি না? ভালোবাসা কি এরকমই হয়...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com