ছয় মাসের বউ || পর্ব-৩৯ ও ৪০
মিতু ডিভোর্স পেপার দেখে ওর কষ্টটা আরো বেড়ে গেছে।
ভাবতেই পারছে যার আজ মিতুর এই বাসায় শেষ দিন।
মিতু: না আমি মা বাবার সামনে থেকে এমন করে চলে যেতে পারবো না আর আমি কোথায় যাবো এখন।
আম্মু আব্বু যদি জানতে পারে আরিফ আমাকে ডিভোর্স দিছে তবে তারাও অনেক কষ্ট পাবে।
যা করার আমাকেই করতে হবে।
এরপর মিতু প্রতিদিনের মতো সব কাজ শেষ করে রেডি হয়ে নেয়।
এরপর আরিফের আম্মু কাছে আসে।
মিতু: মা আমার না একটু কাজ আছে তার জন্যে বাহিরে যেতে হবে।
আরিফের আম্মু: আচ্ছা যা মা আর সাবধানে যাইচ কিন্তু।
মিতু: আচ্ছা মা আপনি চিন্তা করবেন না আমি আসি।
মিতু আরিফের আম্মু কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে চলে আসে আর একটা রিকশা করে এয়ারপোর্টে চলে আসে।
এয়ারপোর্টে এসে মিতু ইমারজেন্সি টিকেট করে নেয়।
আগে থেকে পাসপোর্ট করা আছে মিতুর যার জন্যে টিকেট কাটতে মিতুর বেশি সমস্যা পরতে হয় নাই।
এয়ারপোর্টে সব কাজ শেষ করে মিতু বাসায় চলে আসে।
প্রতিদিনের মতো সব কাজ করতে থাকে বাসায় এসে।
কিন্তু এতোদিন আরিফ রাতে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতো কিন্তু আজ আরিফ এখনো বাসায় আসছে না।
মিতুর খুব কষ্ট হচ্ছে আরিফকে ছেড়ে যেতে আর সবাইকে ছেড়ে যেতো।
মিতু যে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে আরিফকে।
কিন্তু মিতুকে যে তবুও আজ চলে যেতে হবে।
মিতু নিজের সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে।
আর সাথে আরিফ আর মিতুর বিয়ের এলবাম নিয়ে নিলো।
ভেবেছিল আজ হয়তো মিতু আরিফকে শেষ বারের মতো দেখতে পারবে কিন্তু তা আর হলো না।
মিতুর ১১টায় ফ্লাইট যার জন্যে মিতু ১০টায় বাসা থেকে বাহিরে আসে।
কিন্তু কাউকে কিছু বলে নাই আসার সময় মিতু ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়ে আসে।
আর একটা চিঠি বিছানার পাশে টেবিলের উপর রেখে দেয়।
মিতুর ভিতরে দিয়ে যেনো কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
সবাইকে ছেড়ে এমন করে চলে যেতে মিতুর ও ভালো লাগছে না।
না গিয়েও মিতুর কোনো উপায় নেই এখানে থাকলে আরিফের কথা মনে পরবে।
ইচ্ছে করবে আরিফের কাছে ছুটে আসতে।
তার জন্য মিতু দেশের বাহিরে চলে আসে যাতে করে আরিফের স্মৃতি নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।
মিতু বাসা থেকে বাহিরে হওয়ার কিছু সময় পর আরিফ বাসায় আসে এসে সোজা নিজের রুমে চলে আসে।
এসে দেখে মিতু রুমে নেই তাই মিতুকে খুজতে শুরু করে।
কিন্তু কোথাও মিতুকে খুঁজে পেলো না।
তার জন্য আরিফ ওর আম্মুকে ডাকতে থাকে ভাবলো ওর আম্মু কাছে হয়তো আছে।
আরিফ: আম্মু কোথায় তুমি মিতুকে একটু আসতে বলো তো।
আরিফ আম্মু: কিরে এমন ডাকছিলি কেন।
আর মিতু তো আমার রুমে নেই ও তো এখন তোর রুমে থাকার কথা।
আরিফ: কি বলছো কি আম্মু মিতু তো কোথাও নাই আমি তো ওকে পুরো বাড়ি খুঁজে এলাম।
আরিফের আম্মু: কি বলিস কি তুই আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না মেয়েটা তো বাসায় ছিলো একটু আগেও তো আমার কি দরকার সব ঠিক করে দিয়ে গেলো এখন কোথায় যাবে।
তুই বরং ওকে তাড়াতাড়ি করে কল দিয়ে দেখ।
আরিফ মিতুর ফোনে কল দেয় দেখে যে তা রুমেই বাজছে টেবিলের উপর ।
আরিফ টেবিলের কাছে গিয়ে দেখে তার উপর ডিভোর্স পেপার আর একটা চিঠি আছে।
আরিফ চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে।
প্রিয় আরিফ,
তোমাকে যে কখন ভালোবাসতে শুরু করেছি তা আমি নিজেও জানি না।
সাথে তোমার পরিবার কে ও সবাই যে এতো তাড়াতাড়ি আমাকে আপন করে নিবে ভাবিনি।
সবার সাথে থাকতে থাকতে ভুলেই গেছি আমার এ বাড়ি ছাড়তে হবে আর তোমার থেকে দুরে যেতে হবে।
আমি চাই তুমি ভালো থাকো আর নতুন করে যাকে জীবন সাথী করবে তাকে নিয়ে ভালো থাকো।
আমি তোমার জায়গায় নতুন কাউকে আনতে পারবো না তার জন্যে অনেকটা দূরে চলে যাচ্ছি।
তোমার কাছাকাছি থাকলে তোমার কাছে আসতে ইচ্ছে হবে তার জন্যে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
ভেবেছিলাম শেষ বারের মতো তোমাকে দেখে যাবো কিন্তু তা আর হলো না।
১১টায় আমার ফ্লাইট তার জন্যে চলে যেতে হলো।বাবা মায়ের ঠিক মতো দেখে রেখো।
আর ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি।
তুমি নতুন করে জীবন শুনতে করো।
আর আমি না হয় তোমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো।
ভালো থেকো তুমি।
ইতি,
মিতু
আরিফ: আম্মু মিতু আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ও আমাকে ভুল বুঝে চলে গেছে।
আম্মু আমি এখন কি করবো আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি যে মিতুকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
আরিফের আম্মু: তুই আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি যা মিতুকে ফিরিয়ে আন।
আর দেরি না করে যা তুই।
আরিফ তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় আজ যেনো রাস্তা শেষ হচ্ছে না।
যতো দ্রুত গাড়ি চালানো সম্ভব চালাতে থাকে।
অবশেষে এয়ারপোর্টে এসে পৌছায়।
কিন্তু এয়ারপোর্টে এসে দেখে ১১টার ফ্লাইট অলরেডি ছেড়ে দিয়েছে।
আরিফ কি করবে বুঝতে পারছে না কি করে ও মিতুকে ছাড়া থাকবে।
ও যে মিতুকে ছাড়া একমুহূর্তের জন্য থাকতে চায় না।
এয়ারপোর্টে বসে আরিফ কান্না শুরু করে।
বেশ কিছু সময় পর আরিফ এয়ারপোর্টে থেকে উঠে বাসায় চলে আসে।
এসে নিজের রুমে চলে আসে আর কান্না করতে হবে আবার।
আরিফের রুমে টিভিটা ওপেন করা ছিল হঠাৎ করে ওর কানে যা শুনলো তা শুনে ও আর স্থির থাকতে পারলো না।
১১টা বাজে যে ফ্লাইট ছিল তা নাকি এক্সিডেন্টে করেছে মাঝ সমুদ্রের।
পর্ব-৪০
এ কথা শুনে আরিফ এক চিৎকার করে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
আরিফের চিৎকার শুনে আরিফের আম্মু সাথে সাথে আরিফের রুমে আসে।
এসে দেখে আরিফ মাটিতে পড়ে আছে আর টিভিতে খবর দিতেছে আরিফের আম্মু তা শুনে তাড়াতাড়ি করে আরিফের কাছে যায় আর আরিফ কে ডাকতে থাকে আরিফের কোনো সাড়া না পেয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তার কে কল করে।
মিতুর এমন খবর শুনে আরিফ পুরো পাগলের মতো হয়ে গেছে।
ওর অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে গেছে যার জন্যে আরিফকে হাসপাতালে এডমিশন করতে হয়েছে।
২মাস পর আরিফ মোটামুটি সুস্থ হয়ে যায়।
তার জন্য আরিফ কে বাসায় নিয়ে আসে।
মিতুর জন্য কষ্ট হতো যার জন্যে আরিফ নিজেকে সারাক্ষণ কাজে ব্যাস্ত রাখতো।
আর রাতে বাসায় এসে নিজেকে রুমে বন্দী করে রাখে আর মিতুর কথা মনে করে কাদতো।
১বছর পর..…...............
আরিফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
আরিফ মন খারাপ থাকলে গান গায়।
তাই নিজের গিটার নিয়ে বারান্দায় বসে গান গাইতে শুরু করে।
কেন আসে দিন তোকে
কাছে না পাওয়ার,
কেন আসে দিন তোকে
চোখে হারাবার।
কি উপায় ফেরা যায়
তোর স্বপ্নতে আবার,
ওরে মন উদাসী,
একা ফেলে পালালি কোথায়....
ওরে পরবাসী
ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়।
হাসিতে হাসিতে ভুল
ফুরিয়েছে আজ সব,
চলে গেছে ঢলে গেছে
কালকের কলরব।
কথা ছিল সাথে তোর
বলা হোলো শেষ না,
খালি খালি চারিপাশ
এ আমার দেশ না।
কি উপায় ফেরা যায়
তোর স্বপ্নতে আবার,
ওরে মন উদাসী
একা ফেলে পালালি কোথায়....
ওরে পরবাসী
ওরে বন্ধু আমার ফিরে আয়।
আরিফ গান গাইছে আর পিছনে আরিফের আম্মু দাঁড়িয়ে আরিফের গান শুনতে থাকে।
গান শেষ করলে আরিফের আম্মু আরিফের কাদে হাত রাখলে আরিফ পিছনে ফিরে তাকায়।
আরিফ: আম্মু তুমি কখন আসলে?
আরিফের আম্মু: তুই যখন গান গাইতে শুরু করছচ তখন।
আর কতো কষ্ট পাবি বল।
মিতু চলে গেছে আর যে চলে গেছে তার জন্যে তো জীবন কে এমন করে শেষ করে দিলে হয় না।
নতুন করে জীবন শুরু কর না বাবা।
আরিফ: (কথা পাল্টিয়ে ফেললাম কিছু না বলে)আম্মু তুমি এখানে আর আব্বু একা রুমে আছে কই গিয়ে আব্বু কে সময় দিবে তা না করে এখানে আছো।
সারাদিন এতো ব্যাস্ত থাকো আব্বুকে তো সময়ই দেও না তুমি।
আরিফের আম্মু: আজও তুই কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
নানান অজুহাত দেখিয়ে এই কথা সব সময় এড়িয়ে যাছ।
কেনো বুঝতে চাছ না তুই মিতুর জন্য তুই বসে থাকলে হবে না।
নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে তোকে।
আরিফ: আম্মু এটা কখনো পারবো না আমি।
আমি শুধু মিতুকে ভালোবাসি আর আমার বাকিটা জীবন আমি মিতুর সাথে কাটানো সময়ের কথা ভেবে কাটিয়ে দিবো।
আমি নতুন করে আর কিছু শুরু করতে চাই না।
আর এ বিষয় নিয়ে আর কোনো কিছু আমি তোমাকে বলতে চাই না।
আরিফের আম্মু আর কিছু না বলে চলে যায়।
আর আরিফ ও গিয়ে শুয়ে পরে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আরিফ রেডি হয়ে অফিসে চলে আসে।
মিতু চলে যাওয়ার পর থেকে আরিফ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না কারো কথাও শুনতে চায় না।
আরিফ অফিসে এসে নিজের কেবিনে চলে আসে।
আসার পর আরিফের রুমে ওর পিয়ে আসে।
আঁখি: আসবো স্যার?
আরিফ: হুম আসো।
আঁখি:স্যার নতুন একটা প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে হবে আর যার জন্যে আমাদেরকে আমেরিকা যেতে হবে প্রজেক্টের ব্যাপারে।
আরিফ: কবে যেতে হবে?
আঁখি:স্যার পরশুদিন যেতে হবে।
আরিফ:আচ্ছা তবে তুমি সব কিছু ঠিক করো।
চলবে.........
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com