Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ৯ || লেখিকা: সুলতানা তমা

ফ্লোরে বসে হিমির মাথা আমার কোলে নিয়ে ওকে ডাকছি কিন্তু হিমি সাড়া দিচ্ছে না, অজ্ঞান হয়ে আছে। আমিতো বুঝতে পারছি না এগুলো দেখে হিমি এতোটা ভয় কেন ফেলো? একেবারে সেন্স হারিয়ে ফেললো।
আমি: হিমি কথা বলো প্লিজ!
রোদেলা: ভাইয়া কি হয়েছে? (রোদেলা সহ বাসার সবাই আমার রুমে আসলো, হিমির আম্মু ফ্লোরে বসে হিমিকে ডাকছেন)
আম্মু: আরশান কি হয়েছে হঠাৎ মেয়েটা জ্ঞান হারালো কেন?
আপু: হিমির চিৎকার বাগান থেকে শুনা গেছে আমিতো আনিলাকে নিয়ে ওখানেই ছিলাম।
আমি: জানিনা কি হয়েছে আমিতো ওয়াশরুমে ছিলাম, হঠাৎ ওর চিৎকার শুনে এসে দেখি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। আমার মনে হচ্ছে ও খুব ভয় পেয়েছে।
ভাবি: কিছু হবে না, কেউ একটু পানি দাও তো। (রোদেলা পানির গ্লাস এনে দিতেই ভাবি হিমির চোখেমুখে পানির ছিটা দিলেন, সাথে সাথে হিমির জ্ঞান ফিরে আসলো। হিমি মিটমিট করে প্রথমে আমার দিকে তাকালো আর লাফ দিয়ে উঠে বসে আবারো চিৎকার করলো)
আমি: হিমি কি হয়েছে?
ভাবি: হিমি কি হয়েছে বলো।
আন্টি: হিমি কি হয়েছে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি কিভাবে?
আমি: হিমি? (আমার ডাক শুনে হিমি ভয়ে চুপসে গিয়ে ভাবির গলা জড়িয়ে ধরলো তারপর আমার দিকে তাকালো)
হিমি: কে তুমি? (আমাকে উদ্দেশ্য করে হিমি প্রশ্নটা করলো, ওর এমন প্রশ্ন শুনে সবাই বেশ অবাক হলাম)
আন্টি: হিমি ও এই বাসার ছেলে, আমরা ওদের...
হিমি: ও অভিনয় করছে সব অভিনয় করছে। (হিমি ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই পায়েল আর কানের দোল দেখে যদি হিমি ভয় পেয়ে থাকে তাহলে এখন আবার দেখলে ও আবারো ভয় পাবে। আমি পায়েলটা হিমির সামনে ধরলাম সাথে সাথে হিমি দুচোখ বন্ধ করে ভাবিকে জড়িয়ে ধরলো। হিমি চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে)
ভাবি: মা হিমিকে রুমে নিয়ে যেতে হবে।
আম্মু: আরশান তুই ওকে দিয়ে আয় তো বাবা।
আমি: ঠিক আছে আম্মু।
হিমিকে কোলে তুলে নিলাম, দুহাত ছড়িয়ে হিমি চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।

হিমির রুমে এনে ওকে বিছানায় শুয়ে দিলাম। হিমির মাথার পাশে বসে আছি অপর পাশে ভাবি বসা।
আপু: আমার মনে হয় এখানে ভীড় করা ঠিক হবে না, সবাই ড্রয়িংরুমে চলো। (আপু সবাইকে নিয়ে চলে গেলো। দুহাতে মাথা চেপে ধরে হিমির পাশে বসে আছি। কি যে হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছি না)
আনিলা: আম্মু ফুপির কি হয়েছে?
ভাবি: কিছু হয়নি মামুনি একটু পর ফুপি ঠিক হয়ে যাবে।
আনিলা: এই আঙ্কেলটা কে? (আনিলার প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকালাম, তিন-চার বছরের ছোট বাচ্চা মেয়ে দেখতে খুব মিষ্টি)
ভাবি: মামুনি তুমি খেলতে যাও।
আনিলা: আচ্ছা। (আনিলা দৌড়ে চলে গেলো। আমি হিমির দিকে তাকাতে গিয়ে ভাবির দিকে চোখ পড়লো, ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন)
ভাবি: কে তুমি?
আমি: মামামনেনে?
ভাবি: তুমি কি শুধু বাড়িওয়ালার ছেলে? নাকি আমি যা সন্দেহ করছি তা সত্যি?
আমি: কি?
ভাবি: হিমি তোমার রুমে কেন গিয়েছিল? ভয় ফেলো কেন হিমি?
আমি: ভাবি...
ভাবি: আমি দেখেছি হিমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়াতে তুমি খুব ভয় পেয়েছিলে আর এই ভয়টা এখনো তোমার চোখেমুখে ফুটে আছে। হিমির মাথা তোমার কোলে নিয়ে ওকে পাগলের মতো ডাকছিলে, হিমির এই অবস্থা দেখে তুমি অস্থির হয়ে পড়েছিলে আর এই অস্থিরতাটা এখনো তোমার মাঝে আছে। কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
ভাবি: শুধু বাড়িওয়ালার ছেলে হলে তুমি হিমির কষ্টে কষ্ট পেতে না, তুমি হিমিকে ভালোবাস আর তোমার ভালোবাসা সত্যি। (ভাবির কথা শুনে চমকে উঠে উনার দিকে তাকালাম)
ভাবি: সত্যিকারের ভালোবাসা নাহলে তুমি এতোটা অস্থির হতে না। ভালোবাস?
আমি: হ্যাঁ।
ভাবি: ঠিক ধরেছি আমি। হিমি বাসে?
আমি: এখনো মুখে কিছু বলেনি। ভাবি প্লিজ এই কথাটা এখনি কাউকে জানাবেন না।
ভাবি: ঠিক আছে। কিন্তু হিমির ভাইয়া হয়তো মেনে নিবে না।
আমি: তখন নাহয় দেখা যাবে, আপনি আমাকে এইটা বলুন হিমির কি আগে কখনো এমন হয়েছিল?
ভাবি: মাঝেমাঝে হিমি ভয় পায়, অনেক সময় একা বসে থাকে কি যেন ভাবে চোখমুখে ভয়ের চাপ থাকে। কিন্তু এতোটা কখনো হয়নি।
আমি: কি যে হচ্ছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আচ্ছা ভাবি ভাইয়া কোথায়?
ভাবি: ও তো দুপুরেই রাঙামাটি চলে গেছে।
আমি: ওহ!
হিমি: পানি পানি... (হিমি পানি চাইতেই ভাবি পানির গ্লাস এনে আমার হাতে দিলেন, আমি হিমিকে পানি খাওয়ালাম। হিমি চোখ খুলে তাকিয়ে আমাকে দেখে কেঁপে উঠলো)
আমি: হিমি ভয় পেয়ো না প্লিজ! আমি আরশান তোমার আরশান।
ভাবি: হিমি কেন ভয় পাচ্ছ ও তো তোমাকে ভালোবাসে। (হিমি আমার দিকে তাকালো তারপর উঠে বসার চেষ্টা করলো, হিমি আধশোয়া হতেই ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথাটা আমার বুকে রাখলাম। হিমির এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে, ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদি)
ভাবি: তোমরা কথা বলো আমি হিমির জন্য দুধ গরম করে নিয়ে আসি।
আমি: ভাবি ডক্টর ডাকবো?
হিমি: না আমি ঠিক আছি। (হিমির কথা শুনে ভাবি চলে গেলেন, হিমি মাথাটা আমার বুকে আরো গুঁজে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
আমি: হিমি?
হিমি: হুম।
আমি: তখন এতো ভয় পাচ্ছিলে কেন? আমাকেও ভয় পাচ্ছিলে, কই এখন তো আর আমাকে ভয় পাচ্ছ না।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: আমাকে সবকিছু বলো প্লিজ!
হিমি: বলবো কিন্তু এখন নয়।
আমি: ঠিক আছে।
হিমি বাচ্চা মেয়েদের মতো আমার বুকের সাথে মিশে আছে। কিছুক্ষণ আগের হিমি আর এখনের হিমির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। এখনের হিমিটা শান্তশিষ্ট হয়ে আমার বুকে শুয়ে আছে, যেন আমিই ওর সবকিছু। হিমির চুলে হাত বুলাচ্ছি আর ভাবছি কি করবো কিভাবে জানবো সবকিছু? হিমির এমন কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারছি না, আমারো বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

হঠাৎ হিমি আমাকে ছেড়ে উঠে বসলো, আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি: কিছু বলবে?
হিমি: পায়েল আর কানের দোল আপনি কোথায় পেলেন? তাহলে কি সেদিন আপনিও...
আমি: কি?
হিমি: কোথায় পেয়েছেন বলুন।
আমি: আসলে হিমি...
হিমি: পায়েল আর কানের দোল দুটো আমার আর এগুলো ছিনতে আমি তিল পরিমাণও ভুল করিনি। যেহেতু এগুলো আমার তাই আমার থেকে কিছু লুকাবেন না প্লিজ!
আমি: হিমি আমার কাছে দুটো পার্সেল এসেছিল।
হিমি: পার্সেল?
আমি: হ্যাঁ, প্রথম পার্সেলে ছিল একটি চিঠি আর পায়েল আর দ্বিতীয় পার্সেলে ছিল একটি চিঠি আর কানের দোল।
হিমি: চিঠিতে কি লেখা ছিল? (হিমির এই প্রশ্নে আমি থমথম খেয়ে গেলাম, ভাবছি বলবো কিনা। হিমি অল্পতেই খুব ভয় পায়, এখন যদি জানতে পারে চিঠির লোকটা আমাকে হুমকি দিয়েছে হিমিকে মেরে ফেলবে বলেছে তাহলে তো হিমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাবে)
হিমি: বলবেন কিনা তাই ভাবছেন? জিনিসগুলো যেহেতু আমার তারমানে চিঠির সাথেও আমার নাম জড়িয়ে আছে, আমার থেকে না লুকিয়ে বলুন প্লিজ!
আমি: হুম।

হিমিকে চিঠিতে যা যা লেখা ছিল সব বললাম, হিমি সব শুনে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।
আমি: তুমি ভয় পেয়ো না আমাকে সবকিছু বলো আমি সব সামলে নিবো।
হিমি: কি বলবো?
আমি: এইযে তুমি সবসময় এতো ভয় পাও কেন? আর আজ পায়েল আর কানের দোল দেখে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে কেন? কে তোমাকে এভাবে ভয় দেখা...
হিমি: আপনাকে এসব বলতে যাবো কেন? আপনি কে?
আমি: মানে?
হিমি: আপনি তো আমার কেউ না তাহলে আপনাকে আমার ব্যক্তিগত কথা বলতে যাবো কেন? হ্যাঁ মানছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আমিতো বাসি না। আপনি আমাকে ভালোবাসেন বলে যে আমার সবকিছু আপনাকে বলতে হবে এর তো কোনো মানে নেই। এমন এক তরফা ভালোবাসা অনেকেই বাসে, তাই বলে কি সবাইকে সবকিছু বলতে হবে? (হিমির মুখে এসব কথা শুনে আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম, কি বলছে হিমি এসব? আমার ভালোবাসা এক তরফা?)
ভাবি: হিমি এসব কি হচ্ছে? তুমি জানো ও তোমাকে কতোটা ভালোবাসে? তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে বলে ও কতোটা অস্থির হয়েছিল আমি দেখেছি।
হিমি: তো? আমি কি বলেছি আমার জন্য ভাবতে বা অস্থির হতে?
ভাবি: হিমি তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
আমি: ভাবি বাদ দিন। হিমি তো ঠিকই বলেছে আমার ভালোবাসা এক তরফা, হিমি তো একবারের জন্যও আমাকে ভালোবাসি শব্দটা বলেনি। আমিই ভুল ছিলাম, আমি অধিকার দেখিয়ে ওর কাছে সবকিছু জানতে চেয়েছিলাম। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম যেখানে ভালোবাসাটা এক তরফা সেখানে অধিকার শব্দটা বেমানান।
ভাবি: দিলে তো ছেলেটাকে কাঁদিয়ে?
চুপচাপ হিমির রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। হিমি আমার সাথে এভাবে কথা বলবে আমি কখনো ভাবিনি। হিমির আচরণে মনে হয়েছিল ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম, হিমির মনে আমার জন্য এতটুকুও ভালোবাসা নেই। আমি এতোদিন ভুলের জগতে বাস করছিলাম, সব ভুল সব মিথ্যে মনে হচ্ছে এখন।

রুমে এসে ঢুকতেই ফ্লোরে পড়ে থাকা পায়েল আর কানের দোল দেখতে পেলাম, এগুলো হাতে নিয়ে ভাবছি কি রহস্য আছে এগুলোর আড়ালে? হঠাৎ টেবিলে রাখা চিঠির দিকে নজর পড়লো, আজকের চিঠিটা তো পড়া হয়নি। চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।
"আবারো তোকে চিঠি লিখতে হবে ভাবিনি। সেদিনের হুমকিতে কাজ হয়নি না? সব মিথ্যে মনে হচ্ছে? শেষ পর্যন্ত হিমিকে তোর বাসায় নিয়ে গেলি, এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। হিমির জন্য আমি সব করতে পারি আর আজকে এর একটা নমুনা তোকে আমি দেখাবো, তৈরি থাকিস কষ্ট সহ্য করার জন্য। আজকের পর হিমির দিকে নজর দিলে পরের ঝড়টা তোর উপর দিয়ে যাবে"
রাগে চিঠিটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললাম। আজকের চিঠি পড়ে তো এইটা নিশ্চিত হলাম যে এসব করছে সে হিমিকে ভালোবাসে আর আমাদের উপর সবসময় নজরও রাখছে। কিন্তু ও এইটা কেন বললো আজ একটা নমুনা দেখাবে আমি যেন কষ্ট সহ্য করার জন্য তৈরি থাকি? কি করবে ও কার ক্ষতি করবে? হঠাৎ শান্তর এক্সিডেন্ট এর কথা মনে পড়লো, তবে কি শান্তর এক্সিডেন্ট... দৌড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে ছুটলাম, যে মেয়ে আমাকে ভালোবাসে না তার জন্য আমার বন্ধু গুলো কষ্ট পাবে তাতো হতে পারে না।
চাঁচি: আরশান কোথায় যাচ্ছিস এভাবে?
আমি: আসছি চাঁচি।
চাঁচি: তোর আম্মু বকবে তাড়াহুড়ো করে যাস না।
আমি: কিছু হবে না।
চাঁচি: ঠিক আছে যা কিন্তু বাইক নিস না ভয় হয়।
আমি: আম্মুকে বলো না প্লিজ! আমি সাবধানে যাবো আর শান্তকে দেখেই ফিরে আসবো।
চাঁচি: এই সন্ধ্যাবেলায়...
চাঁচির বাকি কথা না শুনে বেরিয়ে আসলাম।

শান্ত শুয়ে আছে পাশে তারিন আর আরিয়ান বসা। শান্তর পাশে এসে চেয়ার টেনে বসলাম।
তারিন: ভাইয়া আরশান ভাইয়া এসেছে। (তারিনের কথা শুনে শান্ত চোখ মেলে তাকালো, আমাকে দেখে একটুখানি হাসলো)
শান্ত: এসেছিস?
আমি: সরি এতক্ষণ আসতে পারিনি আসলে হিমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
তারিন: হিমি? কি হয়েছে হিমির?
আমি: এসব অনেক কথা পড়ে বলবো, শান্তর সাথে প্রয়োজন আছে তুমি একটু বাইরে যাও তো।
তারিন: ঠিক আছে।
শান্ত: কি হয়েছে রে?
আমি: এখন কেমন আছিস?
শান্ত: পা'টা বোধহয় ভেঙ্গেই গেছে।
আরিয়ান: ওকে জিজ্ঞেস কর এক্সিডেন্ট কিভাবে হয়েছে।
আমি: হ্যাঁ সেটা জানতেই এসেছি।
শান্ত: আমি তোদের সকালেই বলতাম কিন্তু আব্বু আম্মু থাকার কারণে বলতে পারিনি কারণ এসব শুনলে আব্বু তোদের সাথে থাকতে নিষেধ করবে, জানিসই তো তোদের ছাড়া থাকা সম্ভব না।
আমি: কি হয়েছিল বল।
শান্ত: গতকাল আমি টিউশনিতে যেতে পারিনি, আজ ভাবলাম সকালে পড়িয়ে আসি। বাসা থেকে বের হতেই মনে হয়েছিল কেউ আমাকে ফলো করছে, দুটো বাইক প্রায় আমার পিছু পিছু যাচ্ছিল। আমি ছোট গলিতে যাওয়া মাত্র একটা বাইক আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর একটা বাইক আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। আমার মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে এইটা করেছে।
আরিয়ান: কিন্তু কে করবে আমাদের তো কোনো শত্রু নেই।
আমি: আছে, হিমির শত্রু এখন আমাদের শত্রু হয়ে গেছে। আমি হিমিকে ভুলে যাবো।
আরিয়ান: ভুলে যাবি মানে?
আমি: একটা মেয়ের ভালোবাসার জন্য আমি তোদের হারাতে পারবো না।
শান্ত: পাগল হয়ে গেছিস কি বলছিস এসব? আমরা তো জানি তুই হিমিকে কতোটা ভালোবাসিস।
আমি: কিন্তু হিমি তো বাসে না, যে মেয়ে আমাকে ভালোই বাসে না তার জন্য আমার বন্ধুরা বিপদে পড়বে কেন? আজ চিঠিতে লোকটা ইঙ্গিত দিয়েছিল আর সেটাই করেছে ও।
শান্ত: তোর জীবনে যেমন আমাদের প্রয়োজন তেমনি হিমিকেও প্রয়োজন কারণ তুই হিমিকে ভালোবাসিস। আর ভালোবাসায় বাধা থাকবেই অজতা...
আমি: বাধা? পরিবারের বাধা হলে মানা যেতো, ছিনি না জানিনা অচেনা অজানা এক লোক আমার ক্ষতি করে যাচ্ছে আর হিমি কিছু বলছে না আমাকে। হিমি আমাকে উল্টো কি বলেছে জানিস? আমার ভালোবাসা নাকি এক তরফা, আমার নাকি অধিকার নেই ওর সবকিছু জানার।
আরিয়ান: হয়তো রেগে গিয়ে বলেছে। সামান্য একটা ঝড়ে ভালোবাসা ভুলে যাবি?
আমি: শান্তর পা ভেঙ্গে গেছে ও হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে এইটাকে সামান্য ঝড় বলছিস?
শান্ত: হ্যাঁ সামান্যই। আর তো কারো ক্ষতি করেনি আমার ক্ষতি করেছে কারণ হিমিকে তোর কাছে এনে দিতে আমি হেল্প করেছি। আরশান বন্ধুর জন্য এইটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারবো না?
আরিয়ান: পাগলামি করিস না যা হবার তো হয়েই গেছে, তুই হিমিকে ভুলে গেলে তো শান্ত সুস্থ হয়ে যাবে না। আমরা জানি তুই হিমিকে অনেক বেশি ভালোবাসিস ওকে ভুলতে পারবি না উল্টো কান্নাকাটি করবি।
শান্ত: আর আমরা তোর কান্না সহ্য করতে পারবো না। বললি না হিমি অসুস্থ? বাসায় যা এখানে তারিন আর আরিয়ান আছে।
আরিয়ান: হিমি এখনো রাজি হয়নি তুই যদি এভাবে হুটহাট রেগে যাস তাহলে তো প্রেমটাই হবে না। আমরা তো তোদের বিয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
শান্ত: হ্যাঁ আমরা তিনজন মিলে তোদের বাসর সাজাবো।
আমি: হসপিটালের বেডে শুয়েও ফাজলামি ছাড়িস নি।
শান্ত: হ্যাঁ এবার যা।
আমি: ঠিক আছে।
শান্ত আর আরিয়ানের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।

হিমির পাশে বসে আছি, হিমি ঘুমুচ্ছে। আমি মুগ্ধনয়নে ওর ঘুমন্ত মায়াবী মুখ দেখছি। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে পিছন ফিরে তাকালাম।
আমি: ভাবি?
ভাবি: দেখা হয়েছে এবার যাও মা দেখে ফেললে প্রবলেম হবে। (মুচকি হাসলাম, ভাবি যদি আসার সুযোগ করে না দিতো তাহলে আজ আর হিমিকে দেখা হতো না। বাসায় ফিরেই ভাবির কাছে এসে পারমিশন নিয়েছিলাম)
আমি: ঠিক আছে চলে যাচ্ছি, হিমিকে দেখে রাখবেন কিন্তু।
ভাবি: বিয়ের আগেই এতো কিছু? আমার ননদ তো খুব ভাগ্যবতী।
মৃদু হেসে চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম, হঠাৎ হিমির পড়ার টেবিলে চোখ আটকে গেলো। দুটো ডায়েরী রাখা, সাদা রঙের ডায়েরীটার ভিতরে কলম রাখা তারমানে আজ বা গতকাল এই ডায়েরীতে হিমি কিছু লিখেছিল।
আমি: ভাবি ডায়েরীটা নিয়ে যাচ্ছি হিমি যেন না জানে।
ভাবি: ডায়েরী দিয়ে কি করবে?
আমি: আমি যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজছি সেগুলো হয়তো এই ডায়েরীতে পেয়ে যাবো।
ভাবি: ঠিক আছে।
ডায়েরীটা হাতে নিলাম, হতে পারে এই ডায়েরী থেকে সব রহস্য জানতে পারবো...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com