Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৮ || লেখিকা: সুলতানা তমা

আরশান আরশান? (কে যেন আমার চুলে খুব যত্ন করে হাত বুলাচ্ছে আর আমাকে ডাকছে। এতো সকালে উঠতে ইচ্ছে করছে না, নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ আঙ্গুলে গরম কিছু অনুভব করে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলাম)
আমি: আমার আঙ্গুল পুড়ে গেছে।
হিমি: হিহিহি! (হাসি শুনে হিমির দিকে তাকালাম ওর হাতে চায়ের কাপ, তারমানে এতক্ষণ ও ডাকছিল আর আমি উঠিনি বলে আমার আঙ্গুল পুড়িয়ে দিয়েছে, ফাজি মেয়ে বুঝাচ্ছি)
আমি: আঙ্গুল পুড়ে গেছে, খুব যন্ত্রণা করছে। (একটু কান্নার ভাব করে হিমির দিকে আড়চোখে তাকালাম, হিমি ভয় পেয়ে গেছে)
হিমি: আমিতো দুষ্টুমি করেছিলাম এতোটা লেগে যাবে বুঝিনি, সরি। (হিমি আমার হাত ধরে আঙ্গুলটা ওর মুখে পুরে নিলো, আমি মিটিমিটি হাসছি আর ওকে এক দৃষ্টিতে দেখছি। হঠাৎ হিমি আমার দিকে তাকালো আর আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো)
হিমি: ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন, আসছি আমি।
আমি: দাঁড়াও। (হিমি উঠে চলে যাচ্ছিল ওর হাত ধরে টেনে ওকে আবার বসিয়ে দিলাম। হিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে দেখে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম)
হিমি: কি করছেন কেউ দেখলে কি ভাববে?
আমি: চুপ করে বসে থাকো নাহলে আমি সবাইকে গিয়ে বলবো তুমি আমার আঙ্গুল পুড়িয়ে দিয়েছ।
হিমি: আসলে আমি বুঝতে পারিনি চা'টা যে এতো গরম আর এতোটা লেগে যাবে।
আমি: কই লাগেনি তো তেমন।
হিমি: তাহলে যে...
আমি: দুষ্টুমি করেছি।
হিমি: ফাজিল কোথাকার।
আমি: সাতসকালে আমার রুমে কি হ্যাঁ? মতলব কি?
হিমি: কিসের মতলব? রোদেলা চা নিয়ে আসছিল তাই ওকে পাঠিয়ে দিয়ে আমি আসলাম। কেন অন্যায় করেছি?
আমি: ঘুম থেকে উঠে প্রথমে তোমার মুখ দেখা এইটা তো আমার জন্য...
হিমি: বাকিটা বলতে হবে না, উঠে নিচে আসুন সবাই কত ব্যস্ত কাজ নিয়ে আর আপনি বেলা দশটা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছেন।
আমি: কিসের কাজ?
হিমি: আগামীকাল আপুর বিয়ে ভুলে গেছেন? আজ তো গায়ে হলুদ। কতো কা...
আম্মু: ও কি আর এসব চিন্তা করে? ওর চিন্তাভাবনায় তো শুধু হিমি আর হিমি। (আম্মু আসছেন দেখে আমাকে সরিয়ে দিয়ে হিমি তাড়াতাড়ি সরে গেলো)
আম্মু: ভাবছি ফারিয়ার বিয়ের পর পরই তোদের বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে। (আম্মুর মুখে বিয়ের কথা শুনে হিমি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো)
আম্মু: আমার বৌমাটা না বড্ড লাজুক। (আম্মুর কথা শুনে মুচকি হাসলাম, আম্মু এসে আমার পাশে বসলেন)
আম্মু: হিমির পুরো পরিবারকে বিয়ে উপলক্ষে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি, বলতো কেন? (আম্মুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম)
আম্মু: সারাক্ষণ ওরা আমাদের বাসায় থাকবে আর তোর ব্যস্ততার মাঝেও হিমি তোর চোখের সামনে থাকবে তাই। (আম্মু মুচকি হেসে আমার মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিলেন)
আমি: তোমার মতো একজন মা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
আম্মু: হয়েছে হয়েছে এবার যা ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয়।
আমি: যাও আসছি।
আম্মু চলে গেলেন, আমি চুপচাপ বসে আছি। মাঝখানে কেটে গেছে এক সপ্তাহ, কিভাবে কেটেছে বুঝতেই পারিনি। হিমির সাথে দুষ্টুমি, খুনসুটি, ঘুরে বেড়ানোতে কেটে গেছে। এর মধ্যে সজিব বা অধরা কেউ কোনো ঝামেলা করেনি, সত্যিই হয়তো ওরা ভালো হয়ে গেছে। আগামীকাল আপুর বিয়ে সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেই হয়। একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।

পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছি, ফুল আর আলোয় আলোয় সাজিয়ে তুলা হয়েছে পুরো বাসা। এতো আলো, এতো সাজসজ্জা, এতো মেহমান, এতো আয়োজন তবুও এই বিয়েতে কেন যেন আমার মন সায় দিচ্ছে না। বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম, আব্বু মৃদু হাসছেন।
আব্বু: তোমার বোনের বিয়ে, সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা কোনো কিছুতে ত্রুটি আছে নাকি সবকিছু তো তুমিই দেখবে। কিন্তু তুমি তো এসবে কোনো লক্ষই রাখছ না কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে আছ। (আব্বুর কথা শুনে মুচকি হাসলাম)
আমি: শহরের বড় ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেনের মেয়ের বিয়ে তাও আবার তারই পছন্দ করা ছেলের সাথে, কোনো কিছুতে ত্রুটি কি থাকতে পারে?
আব্বু: তুমি কি এই বিয়েতে রাজি নও? নাকি অসীমকে তোমার পছন্দ হয়নি?
আমি: এখনো বুঝতে পারছি না। তাছাড়া তুমি তো একবারের জন্যও আমাদের কারো মতামত জানতে চাওনি।
আব্বু: জানতে চাইনি কারণ আমি তোমাদের জন্য সবসময় সবচেয়ে বেস্ট জিনিসটাই পছন্দ করি।
আমি: আচ্ছা তোমার এমন কেন মনে হয় যে তুমি যা পছন্দ কর সেটাই বেস্ট? এমনো তো হতে পারে তোমার পছন্দের জিনিসটা আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে।
আব্বু: কখনো তো এমন হয়নি।
আমি: হবে কিভাবে তুমি তো কখনো আমাদের পছন্দ জানতে চাওনি, সবসময় তুমি নিজের পছন্দটা আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছ।
আব্বু: আরশান তুমি ভুল করছ আমি তোমাদের উপর কখনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেইনি। আর এই বিয়েতে তো ফারিয়ার মত আছে।
আমি: সেটা এখনো আমার কাছে ক্লিয়ার না, আপু তো কিছু বলছেই না। একটা কথা জেনে রেখো যদি আমি জানতে পারি তুমি জোর করে আপুর এই বিয়েটা দিচ্ছ তাহলে এই বিয়ে হবে না। আর যদি বিয়ের পর জানতে পারি তাহলে আপুকে আমি ডিভোর্স করিয়ে নিয়ে আসবো।
আব্বু: আরশান?
আমি: চিৎকার না করে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আমি চুপচাপ চলে আসলাম।

আপু: আমি আমার ভাইয়ের সুখের জন্য সব মেনে নিয়েছি তুমি কেন কাঁদছ? (আপুর রুমের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আপুর মুখে এসব কথা শুনে দরজার সামনে থমকে দাঁড়ালাম। ফোনের অপর পাশ থেকে কেউ কিছু বললো, আপু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে)
আপু: আমি যদি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি তাহলে তুমি কেন আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না? দেখো সবকিছু কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে এতে তো আমাদের কোনো দোষ নেই। মেনে নাও সব। (সবকিছু নীরব হয়ে গেলো শুধু আপুর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে রুমের ভিতরে ঢুকলাম, আপু আমাকে দেখে চমকে উঠলো)
আপু: তুই কখন আসলি?
আমি: কার সাথে ফোনে কথা বলছিলি?
আপু: কেউ নাতো।
আমি: ফোনটা দেখি।
আপু: আশ্চর্য তুই আমার ফোন নিচ্ছিস কেন?
আমি: দেখতে হবে আমাকে কার সাথে কথা বলছিলি।
আপু: ফোন দে বলছি। (আপু আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে এক আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো, আমি নির্বাক হয়ে ভাঙ্গা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি)
আপু: আরশান এমন করিস না।
আমি: ফোন ভেঙ্গে ফেলেছ তারমানে কোনো একটা রহস্য আছে।
আপু: তুই যা ভাবছিস তা না, বিশ্বাস কর আমি এই বিয়েতে খুশি। (আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথা গুলো বললো, আপুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

পরন্ত বিকেল, ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। এতো আয়োজন বিয়ে বাড়ির আমেজ কিছুই ভালো লাগছে না। বারবার একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আপুর থেকে কিভাবে সব জানবো? আমি কি করলে আপু সব সত্যি নিজ থেকে বলবে?
রোদেলা: এদিকে বস। (হঠাৎ রোদেলার কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, রোদেলা আর হিমি ছাদে এসে বসেছে। ওদের থেকে চোখ সরিয়ে উদাসীন হয়ে আকাশ দেখায় মন দিলাম। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে পাশে তাকালাম, হিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
হিমি: মন খারাপ?
আমি: নাতো।
হিমি: হুম বুঝতে পারছি।
আমি: (নিশ্চুপ)
হিমি: চলুন।
আমি: কোথায়?
হিমি: আমার হাতে মেহেদী দিয়ে দিবেন।
আমি: কি?
হিমি: অবাক হচ্ছেন কেন? চলুন বলছি।

হিমি আমাকে টেনে এনে রোদেলার পাশে বসিয়ে দিলো, এই পাগলী যে কি করে আমি নাকি মেহেদী দিয়ে দিবো।
হিমি: মেহেদী দিয়ে দিন। (হিমি আমার পাশে বসে হাত বাড়িয়ে দিলো, আমি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি ওর দিকে)
রোদেলা: হিমি নিজের হাতটা নষ্ট করিস না, ভাইয়া পারবে না উল্টো তোর হাতে আঁকাবাঁকা কিছু এঁকে দিবে।
হিমি: তাতেও যদি ওর মন ভালো হয় আমি তাতেই খুশি। (হিমির কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম, আমার মন খারাপ বলে মন ভালো করার জন্য এমন পাগলামি করছে? এতোটা ভালোবাসে হিমি আমায়?)
হিমি: কি হলো মেহেদী দিয়ে দিবেন না?
আমি: দিচ্ছি। (হিমির হাতে সুন্দর করে আমার নাম লিখে দিলাম, ও হাতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো)
আমি: এবার যাই?
হিমি: না। (হিমি আমার কাধে মাথা রেখে বসলো, মুচকি হেসে এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরলাম)
রোদেলা: একটু কম রোমান্স করো দুজনে আমি কিন্তু এখানে। (রোদেলা হাসছে আর হিমির হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে)
"রোদেলা রোদেলা" (হঠাৎ কারো ডাকে সবাই ছাদের দরজার দিকে তাকালাম, রোদেলা আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো)
রোদেলা: ভাইয়া কে ডাকছে বলতো।
আমি: এইটা রাইসা না? এদিকেই তো আসছে।
রোদেলা: এসেই জিজ্ঞেস করবে আরশান কোথায়? ওকে কেন কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। (রোদেলা হাসছে আর হিমি আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। রাইসা আমার ফুফাতো বোন, আমার ধারণা ওর মাথার তার একটা ছেঁড়া। ও আসার আগে আমাকে লুকাতে হবে)
হিমি: এই রাইসাটা কে?
আমি: বলো আমি ছাদে আসিনি।
দৌড়ে চিলকোঠোর ঘরে এসে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম। রাইসা কিছুটা পাগলাটে হলেও আমি বুঝতে পারি ও যে আমাকে পছন্দ করে। তাছাড়া ফুফু একবার আমাদের বিয়ের কথা বলেছিলেন তারপর থেকে তো ও আমাকে চোখে হারায়। হিমি যদি কিছু বুঝতে পারে কি করবে কে জানে।

কিছুক্ষণ পর সব নীরব হয়েছে মনে হতেই বের হতে গেলাম তখনি হিমি এসে রুমে ঢুকলো, রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি?
হিমি: মেয়েটা কে?
আমি: রাইসা, ফুফাতো বোন।
হিমি: আপনাকে এভাবে পাগলের মতো খুঁজছে কেন?
আমি: আসলে ওর মাথায় একটু সমস্যা আছে।
হিমি: মিথ্যে কথা, ও আপনাকে পাগলের মতো খুঁজছে। আর মাথায় সমস্যা থাকলে এভাবে খুঁজত না। (হিমির হাতের দিকে লক্ষ করলাম দু হাত ভরতি মেহেদী, মুচকি হেসে হিমিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম। মেহেদী হাতে আমাকেও সরাতে পারছে না নিজেও সরে যেতে পারছে না)
হিমি: সরুন।
আমি: এতো সন্দেহ করো কেন?
হিমি: হারানোর ভয়ে। (হিমি আমার চোখের দিকে শান্তভাবে তাকিয়ে উত্তর দিলো, আমি মুচকি হেসে ওর কপালে আসা চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিলাম)
আমি: ভয় নেই আমি কখনো তোমার থেকে দূরে যাবো না।
হিমি: কখনো ছেড়ে গেলে আমি মরে... (হিমির ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলাম, ও নিশ্চুপ হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: বললাম তো ছেড়ে যাবো না, আর কেউ তোমার থেকে আমাকে কেড়েও নিতে পারবে না।
হিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক ভাবে। আমি মৃদু হেসে ওর আরো কাছে এগিয়ে গেলাম। হিমির দু ঠোঁটের কাছে আমার ঠোঁট নিয়ে চোখ বুজে ফেললাম, হঠাৎ হিমি দুহাতে আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিলো। হিমি হাসতে হাসতে দৌড়ে পালিয়ে গেলো, আমি বুকের দিকে তাকিয়ে শার্টে মেহেদীর দাগ দেখে মুচকি হাসলাম, পাগলী একটা।
আন্টি: কোথায় ছিলি? (চিলকোঠোর ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে আসতেই ভয়ে আতকে উঠলাম, আন্টি হিমিকে প্রশ্ন করছেন। হিমি আর রোদেলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি আন্টি কিছু বুঝতে পেরেছেন?)
আন্টি: কোথায় ছিলি বলছিস না কেন?
রোদেলা: আন্টি ও তো আমার সাথেই ছিল আমরা হাতে মেহেদী দিচ্ছিলাম।
আন্টি: তাহলে ও ওই ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো কেন যে ঘর থেকে তোমার ভাই বেরিয়ে এসেছে? (আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, কি করবো বা বলবো বুঝতে পারছি না)
রোদেলা: আন্টি আ... (আন্টি হিমির গালে পরপর দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন)
আন্টি: তুই তোর ভাইদের কথা দিয়েছিলি অতীতের ভুল পুনরায় আর করবি না। তুই কি করে পারলি আবারো একই ভুল করতে?
হিমি: আম্মু আরশান সজীবের মতো নয়, আরশান খুব ভালো।
আন্টি: প্রথমে সবাই ভালো থাকে, চল। (আন্টি হিমির হাত ধরে টেনে ওকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন, হিমি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর কাঁদছে। আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি আর আমার দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে)
রোদেলা: ভাইয়া এবার কি হবে?
আমি: জানিনা।
রোদেলা: আন্টি তো খুব রেগে গেছেন। (রোদেলার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম)
রোদেলা: আরে কাঁদছ কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
রোদেলা: যার বোন আছে, ভাই আছে, এতোগুলো ভালো বন্ধু আছে তার চোখে কি কান্না মানায়? কেঁদো না, সবাই মিলে কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিবো।
রোদেলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুপচাপ চলে আসলাম।

রাত আনুমানিক দশটা, রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে বসে আছি। তখন ছাদ থেকে আর বাসায় যাইনি সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আন্টি হয়তো আমাদের বাসায় সব বলে দিয়েছেন, বাসার পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা ভেবেই বাসায় যাচ্ছি না। আমার চোখের সামনেই আন্টি হিমিকে দুটো থাপ্পড় মেরেছিলেন, বাসায় নিয়ে হয়তো অনেক বকেছেন মেরেছেনও, ভালো লাগছে না কিছু আমার জন্য হিমির শরীরে আন্টি আঘাত করলেন। আন্টি জেনে গেছেন তারমানে তো হিমির ভাইয়েরাও এখন জেনে যাবে, ওরা মেনে নিবে তো? যদি না মেনে নেয় কি করবো আমি? আমিতো হিমিকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। তাহলে কি হিমিকে নিয়ে পালিয়ে যাবো? না না এইটা ঠিক হবে না সবাই খুব কষ্ট পাবে। উফফ কিছু ভাবতে পারছি না মাথাটা বিষণ ব্যথা করছে। দুহাতে মাথা চেপে ধরলাম সাথে সাথে কে যেন পিছন দিক থেকে আমার মাথায় আঘাত করলো। মাথা থেকে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে, আমি বসা থেকে উপুড় হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলাম। আস্তে আস্তে চোখ মেলে সামনে তাকালাম, ল্যাম্পপোস্ট এর আলোতে সজিবের মুখে হাসিটা খুব বিদঘুটে লাগছে। মাথা যন্ত্রণায় একহাতে মাথা চেপে ধরলাম সাথে সাথে কে যেন আমার পায়ে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করলো, ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলাম। সজিব আমার হাতে লাতি মেরে বেশ জুড়ে হেসে উঠলো।
সজিব: এক সপ্তাহ ধরে ডিস্টার্ব করছি না বলে খুব নিশ্চিন্তে বসে ছিলি তাই না? বোকা, খুব বোকা তুই।
আমি: কেন করছিস এসব?
সজিব: এইযে তোকে মারলাম আরো মারবো, তুই মরে যাবি আর আমি হিমিকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।
আমি: কাপুরুষের মতো পিছন দিক থেকে আঘাত করে আবার বড় বড় কথা বলছিস?
--সজিব ওর তেজ তো এখনো কমেনি। (অন্য একজন কথাটা বললো তারমানে সজিব একা না ওর সাথে আরো কেউ আছে)
সজিব: মাথায় আরেকটা আঘাত কর ডাইরেক্ট উপাড়ে চলে যাবে।
--মেরে ফেললে ফেঁসে যাবো, এভাবেই থাকুক।
সজিব: যদিও বেঁচে যাস বাসায় ফিরে হিমিকে আর পাবি না মনে রাখিস।
সজিব আমার পিটে ভারী কিছু একটা দিয়ে আঘাত করে চলে গেলো। রক্তে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে, আমার চোখ ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসছে। উঠার চেষ্টা করতেই আবার রাস্তায় লুটিয়ে পড়লাম, আস্তে আস্তে আমার চোখ দুটো বুজে আসলো...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com