আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ২ || লেখিকা: সুলতানা তমা
গান গাওয়ার মাঝখানে কখন যে হিমি উঠে চলে গেল বুঝতেই পারলাম না, উফফ এই মেয়েটা এমন কেন? গীটার রেখে উঠে দাঁড়ালাম চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি কিন্তু হিমি তো কোথাও নেই।
শান্ত: কাকে খুঁজছিস? (হঠাৎ কাধে শান্তর হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম)
আমি: কাউকে না।
শান্ত: রাত থেকে লক্ষ করছি তুই বারবার অন্য মনস্ক হয়ে যাচ্ছিস আমাদের এড়িয়ে চলছিস কি হয়েছে বলতো।
সিফাত: আরশান তুই আমাদের থেকে কথা লুকাচ্ছিস? আগে তো কখনো এমন হয়নি। চার বন্ধু সবসময় মিলেমিশে চলেছি কোনো প্রবলেম হলে চার বন্ধু একসাথে সমাধান করেছি।
আরিয়ান: তোর কি কোনো প্রবলেম হয়েছে? (ওদের দিকে তাকিয়ে ভাবছি হিমির কথা কি এখন ওদের বলা ঠিক হবে? আমি প্রপোজ করার পর যদি হিমি না বলে দেয় তখন? কিন্তু এটাও তো সত্যি ওদের থেকে লুকানো ঠিক হচ্ছে না)
শান্ত: কিরে কি ভাবছিস?
আমি: আমি একটি মেয়েকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি, জানিনা মেয়েটি রাজি হবে কিনা। কিন্তু বিশ্বাস কর তোরা আমি ওকে সত্যি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। (একদমে কথা গুলো বলে থামলাম, ওরা সবাই আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন তোরা আমি কি কাউকে ভালোবাসতে পারিনা?
শান্ত: আমাদের আরশান প্রেমে পড়েছে। (তিনজন একসাথে এসে হুড়মুড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
সিফাত: এই ভাবি দেখতে কেমন?
আরিয়ান: ভাবির নাম কি?
শান্ত: মেয়ে কি আমাদের গ্রামের?
সিফাত: ভাবিকে প্রথম কোথায় দেখেছিস? তোর দিকে প্রথম কিভাবে তাকিয়েছিল?
আরিয়ান: নিশ্চয় তোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল তাই না?
আমি: থামবি তোরা? এতো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি উত্তর দিবো কিভাবে?
সিফাত: বলনা ভাবি দেখতে কেমন?
আমি: মায়াবতী।
শান্ত: আমাদের দেখাবি না?
আমি: হুম দেখাবো।
শান্ত: মেয়ে কি আমাদের গ্রামের?
আমি: তাতো জানিনা তবে তারিনের বান্ধবী হবে।
শান্ত: তারিনকে হেল্প করতে বলবো?
আমি: এখন না আগে আমি হিমির সাথে কথা বলতে চাই।
আরিয়ান: নাম হিমি?
আমি: হ্যাঁ, ক্যামেরায় ছবি আছে তো।
সিফাত: এর মধ্যে ছবিও তুলে ফেলেছিস? (মৃদু হেসে ওদের দিকে ক্যামেরা এগিয়ে দিয়ে চারপাশে আবারো চোখ বুলিয়ে নিলাম, নাহ আশেপাশে কোথাও নেই মায়াবতী)
আরিয়ান: ওয়াও চুল গুলো কি সুন্দর।
আমি: এই শালা একদম নজর দিবি না।
সিফাত: কিন্তু আরশান মেয়ে তো কালো।
আরিয়ান: হ্যাঁ কালো তো।
শান্ত: ওকে আমি ছিনি তারিনের বান্ধবী। আরশান ও কিন্তু খুব সাধারণ একটা পরিবারের মেয়ে, তোর পরিবার মানবে তো? বিশেষ করে তোর আব্বু মানবে তো? তোর আব্বুকে যতটুকু ছিনি আমরা মনে হয় না কোনো কালো সাধারণ মেয়েকে তোর বউ হিসেবে মেনে নিবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
সিফাত: আরশান বুঝেশুনে পা বাড়াস, আমরা চাই না তুই কোনো কারণে কষ্ট পেয়ে কান্না কর।
আমি: যা হবার হবে আমি হিমিকেই চাই, হিমি ছাড়া আরশান আর কিচ্ছু বুঝে না বুঝতে চায়ও না।
শান্ত: ঠিক আছে তুই হিমির সাথে কথা বল আমরা সবসময় তোর পাশে আছি।
আমি: হুম।
হিমির সাথে কিভাবে কথা বলবো ও তো আমাকে দেখলেই ভয় পায়। হিমি কি আদৌ আমার প্রপোজে রাজি হবে? আচ্ছা হিমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয়? ভাবতে পারছি না কিছু সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সিফাত: কিরে রেডি হবি না?
আমি: (নিশ্চুপ)
সিফাত: মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? হিমির সাথে আর দেখা হয়নি?
আমি: না সকালের পর আর ওকে দেখিনি।
সিফাত: চলে যায়নি তো?
আমি: কোথায় যাবে?
সিফাত: হতে পারে তুই ওকে ফলো করছিস বুঝতে পেরে বিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছে।
আমি: কি বলছিস এসব?
সিফাত: বাইরে গিয়ে দেখ সব মেয়েরা পরীর মতো সেজে কতো আনন্দ করছে, কই তোর হিমিকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না। (সত্যিই তো হিমি যদি চলে গিয়ে থাকে তাহলে আমি ওকে কোথায় খুঁজবো?)
সিফাত: আরশান শুন।
সিফাতের ডাকে সাড়া না দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
সবখানে হিমিকে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না, কোথায় যেতে পারে মেয়েটা? আচ্ছা যেখানে কনে সাজানো হচ্ছে সেখানে নয়তো হিমি? কিন্তু কোন রুমে কনে সাজানো হচ্ছে সেটাই তো জানিনা। এক এক করে সব রুম খুঁজতে শুরু করলাম হঠাৎ একটা রুমে চোখ আটকে গেলো, এইতো আমার মায়াবতী। চুলে বেলী ফুলের মালা দিচ্ছিল, আয়নায় আমাকে দেখে চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকালো। বাহ্ আজ আরো বেশি সুন্দর লাগছে মায়াবতীকে। গোলাপি পাড়ের কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি, কপালে গোলাপি রঙের ছোট একটি টিপ, হরিণী চোখ দুটুতে গাড়ো করে কাজল টানা, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক, নাকে নোলক, কানে ঝুমকো, হাতে গোলাপি রঙের কাঁচের চুড়ি আর চুলগুলো পিটময় ছড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে ফেললাম, কোনো মানবী এতো সুন্দর হয়? সত্যি ও কোনো মানবী তো? নাকি...
"আপনি এখানেও" হিমির প্রশ্নে চোখ খুলে তাকালাম, হরিণী চোখ দুটুতে ভয় ফুটে উঠেছে। বেলী ফুলের মালাটা হিমির হাত থেকে ফ্লোরে পড়ে গেছে দেখে মালাটা তুলে নিয়ে বিছানায় এসে বসলাম।
আমি: কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? আমি তোমাকে কতো খুঁজেছি জানো? খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছি। (হিমি কিছু না বলে দৌড়ে চলে যেতে চাইলো তাড়াতাড়ি উঠে এসে ওর সামনে দাঁড়ালাম)
আমি: যেওনা তোমার সাথে আমার কথা আছে।
হিমি: কি কথা? (মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো, আমি কি কথা বলবো খুঁজে পাচ্ছি না ওর মিষ্টি কন্ঠ শুনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে)
হিমি: কি কথা তাড়াতাড়ি বলুন আমাকে যেতে হবে।
আমি: তোমার নাম কি? (আমার প্রশ্ন শুনে হিমি মাথা তুলে আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো তারপর একটুখানি হেসে বললো...)
হিমি: হিমাদ্রিতা হিমি। (কাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হিমিকে একবারের জন্যও হাসতে দেখিনি, এখন ওর একটুখানি হাসি দেখে আমার সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কারো হাসি এতো সুন্দর হয়? হিমি হাসলে ওর বা গালে টোল পড়ে যা ওর মায়াময় মুখটাকে আরো বেশি মায়াবী করে তুলে)
হিমি: এবার আমি যাই।
আমি: তুমি আমাকে এতো ভয় পাও কেন আমি বাঘ না ভাল্লুক?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: যেতে দিবো এক শর্তে। (হিমি আমার কথা শুনে কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেলো)
হিমি: কি শর্ত?
আমি: যদি তোমার দীঘল কালো চুল গুলোতে এই মালাটা আমাকে পড়িয়ে দিতে দাও। (হিমি মাথা নিচু করে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো)
হিমি: মালাটা দিন আমি পড়ে নিবো।
আমি: তখন তো দেখলাম চেষ্টা করেও পারছিলে না, আমি পড়িয়ে দিলে সমস্যা কোথায়? (হিমি চলে যেতে চাইলো আবারো ওর সামনে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: যতক্ষণ না মালা পড়িয়ে দিতে দিচ্ছ ততক্ষণ যেতে দিবো না।
হিমি: এইটা বিয়ে বাড়ি অনেক মানুষ আছে, কেউ যদি আমাদের দুজনকে এই ফাঁকা রুমে দেখে তাহলে...
আমি: কথা দিচ্ছি মালাটা পড়িয়েই চলে যাবো। (হিমি কিছুটা বিব্রত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, আমি ইশারায় ওকে আয়নার সামনে যেতে বললাম)
হিমি আয়নার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমি মালা হাতে ওর পিছনে দাঁড়ানো। মালা কি পড়াবো এতো কাছ থেকে ওর লম্বা চুলগুলো দেখে হা করে তাকিয়ে আছি। হিমি আমার দিকে দুটু ক্লিপ এগিয়ে দিলো, ক্লিপ হাতে নিয়ে ভাবছি কিভাবে মালা দেয় আমিতো জানিনা।
হিমি: পারেন না আবার নিজের জিদও ছাড়ছেন না। (হিমি মিটিমিটি হাসছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে আয়নায় ওর হাসি দেখছি। আমার হাত থেকে একটা ক্লিপ নিয়ে মালার এক পাশ কানের পাশে গেঁথে নিলো, মালাটার অপর পাশ টেনে নিয়ে অন্য কানের পাশে ধরলো, বুঝলাম এখানে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে হবে। ক্লিপ দিয়ে বেলী ফুলের মালাটা মায়াবতীর চুলে আটকে দিলাম, এই বেলী ফুলের মালা যেন ওর চুলের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিলো। আমি আয়নায় হিমিকে দেখছি আর ও মাথা নিচু করে মৃদু হাসছে। হঠাৎ মনে পড়লো হিমিকে কথা দিয়েছিলাম মালাটা পড়িয়েই চলে যাবো, তাই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। দরজার কাছে এসেই আবার পিছন ফিরে তাকালাম, হিমি আমাকে আবার দেখে ভয় পেয়ে গেলো। এক পা দু পা করে হিমির কাছে এসে ওর কানেকানে বললাম "এই দীঘল কালো চুল গুলো এভাবে ছেড়ে রেখো না কারো নজর লেগে যাবে" মুচকি হেসে বেরিয়ে আসলাম, হিমি হয়তো আমার চলে আসার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর মনেমনে ভাবছে এ কেমন পাগল? হাহাহা।
গোধূলি সন্ধ্যা, বিয়ে মিটে গেছে এবার কনের বিদায়বেলা। সবাই জেরিন আপুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে কাঁদছে। শান্ত খুব কাঁদছিল তাই ওকে নিয়ে আমরা পুকুরপাড়ে চলে এসেছি, শান্ত বসে বসে কেঁদেই চলেছে।
সিফাত: শান্ত আর কাঁদিস না প্লিজ!
আরিয়ান: আচ্ছা জেরিন আপুকে কি একেবারে শশুড় বাড়ি দিয়ে দিয়েছিস নাকি? আপু তো আসবেই আবার বিয়েই তো দিয়েছিস।
শান্ত: তোদের বোনের যখন বিয়ে হবে তখন বুঝবি কতোটা কষ্ট হয়, বুকটা কেমন শূন্য শূন্য লাগে।
আমি: তুই কি বলতে চাইছিস জেরিন আপু আমাদের বোন না?
শান্ত: আমি কি সেটা বলেছি? আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।
আরিয়ান: আচ্ছা তারিন তো তোর কাছেই আছে তাহলে এতো কাঁদছিস কেন?
সিফাত: আরশান এই আরশান দেখ তোর হিমি। (সিফাতের আঙ্গুল অনুসরণ করে পুকুড়ের অন্য পাড়ে তাকালাম, হিমি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে)
আমি: আসছি আমি।
আরিয়ান: দাঁড়া আরশান, এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? হয়তো ছেলেটা ওর কোনো আত্মীয় হবে।
সিফাত: আরশান এখানে ঝামেলা করার প্রয়োজন নেই।
শান্ত: আরে অজতা রাগ করছিস এই ছেলে তো হিমির চাচাতো ভাই। ঐ বাড়িটা হিমিদের। (শান্তর কথা শুনে দুহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ধ্যাত অজতাই হিমিকে ভুল বুঝে রেগে গিয়েছিলাম)
সিফাত: ভাই তুই ফেঁসে গেছিস, এইটুকুতেই এতো রেগে গেলি? তুই তো মেয়ের প্রেমে পাগল হয়ে গেছিস।
ওরা হাসছে আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি, সত্যিই আমি হিমির প্রেমে পাগল হয়ে গেছি। হিমিকে অন্যকারো সাথে দেখলে খুব রাগ হয় বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়, জানিনা কেন এমন হয়।
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই রুমে আসলাম। শান্তরা গীটার নিয়ে বসেছে, আমি জানালার কাছে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি হিমির সাথে কথা বলার আগে আম্মুর সাথে একবার কথা বলা প্রয়োজন, আম্মুকে হিমির ছবি পাঠানো প্রয়োজন। আমার সবকিছু বলতে তো আম্মু আর আপু, এখন নাহয় ওরা দুজন হিমিকে পছন্দ করলে আমার সবকিছুর তালিকায় হিমিকে যুক্ত করবো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে হিমির ছবি গুলো আপুর হোয়াটস এ্যাপে পাঠিয়ে দিলাম তারপর আপুকে কল দিলাম।
আপু: হ্যাঁ ভাই বল কেমন আছিস?
আমি: পরে বলবো, হোয়াটসএ্যাপে কিছু ছবি পাঠিয়েছি আম্মুকে দেখা তো।
আপু: কার ছবি।
আমি: আগে দেখ।
আপু: ঠিক আছে।
রুম থেকে বেরিয়ে এসে উঠোনে দাঁড়িয়ে আম্মুর ফোনের জন্য অপেক্ষা করছি, হঠাৎ অপক্ষার অবসান ঘটিয়ে আম্মু ফোন দিলো।
আমি: আম্মু দেখেছ?
আম্মু: এটাই হিমি?
আমি: হ্যাঁ।
আম্মু: মাশাআল্লাহ্ খুব সুন্দর।
আমি: আম্মু তোমার পছন্দ হয়েছে?
আম্মু: হ্যাঁ হবে না কেন? আর আমার ছেলের পছন্দ কি খারাপ হতে পারে?
আমি: আপুর পছন্দ হয়েছে?
আম্মু: হ্যাঁ হয়েছে।
আমি: কিন্তু কিভাবে সম্ভব? আম্মু আমিতো ভয় পাচ্ছিলাম কারণ হিমি কালো।
আম্মু: গাধা ছেলে এইটাকে কালো বলে না শ্যামলা বলে, আর শ্যামলা মেয়েরা খুব লক্ষী হয় মায়াবতী হয়। আমিতো চাই আমার বৌমা লক্ষী হবে।
আমি: আম্মু তুমি পছন্দ করে ফেলেছ আমি আর কাউকে পরোয়া করিনা।
আম্মু: আমাদের চোখে হিমি শ্যামলা হলেও এই শহরের চাকচিক্যতার ভীড়ে হিমিকে সবাই কালোই বলবে আর তোর আব্বু...
আমি: আম্মু প্লিজ ওই লোকটার সিদ্ধান্ত আমি জানতে চাই না। আমি হিমিকে ভালোবাসি আর তুমি হিমিকে পছন্দ করেছ এর চেয়ে বেশি কিছু জানার বা বুঝার প্রয়োজন আমার নেই।
আম্মু: রাগ করছিস কেন, এমন হুটহাট রেগে গেলে হিমি তো তোকে ভয় পাবেই। (আম্মু কষ্ট লুকিয়ে দিব্বি হাসছেন দেখে একটুও অবাক হলাম না কারণ আমি ছোট থেকেই আম্মুকে এভাবে কষ্ট লুকিয়ে হাসতে দেখছি)
আপু: আম্মু আমার কাছে দাও, ভাই?
আমি: হুম আপু বল।
আপু: প্রপোজ করবি না?
আমি: আগে হিমির মনের কথা বুঝার চেষ্টা করি তারপর।
আপু: কিন্তু তুই তো আগামীকাল চলে আসবি।
আমি: হ্যাঁ তাই তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
"হিমি সাবধানে যাস" হঠাৎ তারিনের কন্ঠ শুনে সামনে তাকালাম, তারিন হিমিকে এগিয়ে দিয়ে ঘরে চলে গেল। মাঝখানে একটা পুকুর, আর এতোটা জায়গা হিমি একা যাবে এই রাতের বেলা?
আমি: আপু পরে ফোন করছি।
আপু: ভাই কি হয়েছে?
ফোন কেটে দিয়ে হিমির পিছু পিছু পুকুরপাড়ে আসলাম।
আমি: হিমি? (আমার ডাক শুনে হিমি ভয়ে আতকে উঠে পিছন ফিরে তাকালো, মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেওয়া। চাঁদের আলোতে হিমির ভয়ার্ত মুখ দেখে খুব হাসি পেলো, আচ্ছা ও আমাকে এতো ভয় পায় কেন?
হিমি: কেন আমার পিছনে পড়ে আছেন?
আমি: বুঝনা?
হিমি: বুঝতে চাই না, প্লিজ যান এখান থেকে।
আমি: চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।
হিমি: আমার বাড়ি কাছেই আর আমি একা যেতে পারি অভ্যাস আছে, আপনি প্লিজ যান এখান থেকে।
আমি: কেন ভয় পাচ্ছ? আচ্ছা তুমি আমাকে এতো ভয় পাও কেন?
হিমি: আপনি খুব খারাপ মানুষ তাই।
আমি: কি করলাম আমি?
হিমি: এতো কথা বলার সময় নেই আপনি রুমে যান, এই রাতের বেলা কেউ আমাদের দেখলে সমস্যা হবে। (হিমি চলে যেতে চাইলো তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে ফেললাম)
আমি: হিমি আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি খারাপ নই, তুমি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝছ।
হিমি: আমার হাত ছাড়ুন প্লিজ!
আমি: আগামীকাল আমি চলে যাচ্ছি হিমি, আমি তোমার সিদ্ধান্ত জানতে চাই। আগামীকাল আমি সবার সামনে তোমাকে প্রপোজ করবো। আজ সারারাত তোমায় সময় দিলাম ভাবো ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। তুমি রাজি হলে ভালো আর রাজি না হলে আমি আমার নিজের ক্ষতি করবো যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। (হিমি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, মৃদু হেসে ওর হাত ছেড়ে দিলাম)
আমি: এবার তুমি যেতে পারো, তবে আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো তুমি বাড়ি না পৌঁছানো পর্যন্ত।
হিমি বারবার পিছন ফিরে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দুজন মানুষের কথা শুনতে পেলাম, হিমি ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকালো। এইটা গ্রাম এখানে দুটু ছেলেমেয়েকে রাতেরবেলা একসাথে দেখা মানে অনেক কিছু ঘটে যাবে, কি করবো এখন? আমার জন্য হিমির গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগবে? হিমির দিকে তাকালাম ভয়ে কাঁদতেছে হাটতে পারতেছে না। হিমির হাত ধরে টান দিয়ে ওকে বড় একটি গাছের আড়ালে নিয়ে আসলাম। হিমি ভয় পেয়ে দুহাতে আমার টিশার্ট খামছে ধরে আমার বুকে মুখ গুঁজে দিলো, আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। বুঝিনা পাগলীটা অল্পতেই এতো ভয় পায় কেন।
কিছুক্ষণ পর হিমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।
হিমি: সরি আসলে তখন বড় ভাইয়া এদিকে আসছিল তাই খুব ভয় পেয়ে... (হিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসলাম, ওর তুথুনি ধরে মুখটা উপরে তুললাম। হিমি ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: আমিতো খারাপ ছেলে তাহলে আমার উপর এতোটা ভরসা করো কিভাবে? ভালোবাসা না থাকলে ভরসা করা যায় বুঝি?
হিমি দুচোখ বুজে মাথা নিচু করে ফেললো, ওর ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলাম। হিমি আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এক চিলতে চাঁদের আলো এসে হিমির মায়াবী মুখে পড়ে ওর মুখটা আরো বেশি মায়াবী করে তুলেছে আর আমি মুগ্ধ নয়নে ওর মায়াবী মুখ দেখছি...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com