Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১২ || লেখিকা: সুলতানা তমা

হিমির কোলে শুয়ে ওর হাতের চুড়ি গুলোতে রিনিঝিনি শব্দ করাচ্ছি, হিমি আকাশের চাঁদ দেখতে ব্যস্ত আর আমি ব্যস্ত আমার আকাশের চাঁদ দেখতে। সত্যি হিমি আমার জীবনে এসে সবকিছু আলোকিত করে দিয়েছে, ওকে পূর্ণিমার চাঁদ বললে ভুল হবে না কারণ এই মায়াবতীটা যে চাঁদের চেয়েও সুন্দর। হিমির কোলে শুয়ে আনমনা হয়ে ওর হাতের চুড়ি গুলো নাড়ছিলাম আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম এক দৃষ্টিতে হঠাৎ হিমি আমার দিকে তাকালো, আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হিমি ভ্রু কু্ঁচকালো। আমি এক চিলতে হাসি দিয়ে হিমির হাতের মধ্যে চুমু দিলাম।
হিমি: কি হচ্ছে দুষ্টু কোথাকার?
আমি: এভাবে সবসময় তোমার পাশে থাকতে ইচ্ছে করে।
হিমি: তাহলে বিয়েটা করে নিন।
আমি: সত্যি বলছ? চলো কালই বিয়ে করে ফেলি।
হিমি: আপনি না বড্ড পাগল।
আমি: তুমিই তো পাগল বানিয়েছ। (হিমি হাসছে, এটাই সময় সজিবের ব্যাপারে সবকিছু জানার, হিমির মন ভালো আছে যেহেতু অবশ্যই বলবে। উঠে হিমির পাশে বসে হিমির একটা হাত আমার দুহাতের মুঠোয় আনলাম)
আমি: হিমি?
হিমি: হুম।
আমি: তুমি সজিবকে ভয় পাও কেন?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: সজিব কোথায় থাকে, তুমি কেন ওকে ভয় পাও, সবকিছু আমাকে না বললে আমি কিছু করবো কিভাবে?
হিমি: আপনাকে কিছু করতে হবে না, সজিব খুব খারাপ মানুষ ও আপনার ক্ষতি করতে দুবার ভাববে না।
আমি: কিন্তু তুমি ওকে ভয় পাও কেন?
হিমি: অতীত কি না জানলেই নয়? আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন তাহলে অতীত জানতে চাচ্ছেন কেন? নাকি অতীত জেনে আমাকে ভুলে যাবেন?
আমি: না না হিমি তুমি আমাকে ভুল বুঝছ, আমি তোমাকে ভুলবো কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমার ভালো দিক খারাপ দিক মেনে নিয়েই ভালোবাসি। একটা মানুষের জীবনে অতীত থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তাই বলে মানুষটাকে ভালবাসবো না?
হিমি: অতীতটা যদি হয় খুব ভয়ংকর?
আমি: তাতে কি? আমি তোমার অতীত মেনে নিয়েই তোমাকে ভালবাসবো।
হিমি: বলা সহজ কিন্তু বাস্তবে সেটা করা খুব কঠিন।
আমি: একবার বলেই দেখো না।
হিমি: বলার পর হয়তো ছেড়ে চলে যাবেন আর তখন তো আমার কিছু করার থাকবে না।
আমি: প্রমিস করছি কখনো ছেড়ে যাবো না।
হিমি: যতোই প্রমিস করুন আমি জানি আপনি আমার অতীত জানার পর আর ভালোবাসবেন না, এইযে এতো মায়া এতো কেয়ার এসব কিছুই তখন আর থাকবে না। আমি আপনাকে ভালোবাসি, আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হউক আমি তা চাই না। আর ঠিক এই কারণেই ভালোবাসা সত্ত্বেও সেদিন আমি আপনার প্রপোজ একসেপ্ট করিনি, ভেবেছিলাম কিছুদিন কেটে গেলে ভুলে যেতে পারবো আর আপনিও আমাকে ভুলে যাবেন। কিন্তু তারিন আর শান্ত ভাইয়া সব উলটপালট করে দিলো, আমাকে একেবারে আপনার কাছে নিয়ে আসলো। ভালোবাসা প্রকাশ না করতে চাইলেও প্রিয় মানুষের সামনে প্রকাশ হয়ে যায়, আমি ফেঁসে গেছি তাই একসেপ্ট করতে হলো। আমার অতীত না জেনে যদি আমাকে ভালোবাসতে পারেন তাহলে বাসুন নাহলে ভুলে যান।
আমি: হিমি এখানে ভুলে যাওয়ার কথা আসছে কেন?
হিমি: সেই তো অতীত জানার পর ভুলে যাবেন, অতীত জানার আগেই নাহয় ভুলে যান। আমি চাই না আমার প্রতি আপনার যে ভালোবাসাটা আছে সেটা ঘৃণায় পরিণত হউক।
আমি: হিমি আমি শুধু তোমার অতীত জানতে চাচ্ছি সজিবকে...
হিমি: আসি। (হিমি উঠে চলে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না কি এমন লোকাচ্ছে হিমি?)
আমি: দাঁড়াও হিমি। (আমার ডাক শুনে হিমি দাঁড়িয়ে পড়লো কিন্তু পিছন ফিরে তাকালো না। আমি এসে হিমির সামনে দাঁড়ালাম)
আমি: আমি আর কখনো তোমার অতীত জানার আগ্রহ দেখাবো না যেমন ভালোবাসি সবসময় বাসবো, তুমি শুধু কখনো তোমাকে ভুলে যেতে বলো না।
হিমি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে হনহন করে চলে গেলো। আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হিমি কিছু লোকাচ্ছে কিন্তু কি সেটা? অতীত জানতে চাওয়াতে হিমি ওকে ভুলে যেতে বলেছে তারমানে ও কখনোই অতীতটা বলবে না, আমাকেই সব খুঁজে বের করতে হবে। হিমির অতীত জানার চেষ্টা করবো হিমিকে ভুলে যাওয়া বা ভুল বুঝার জন্য নয় সজিবকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।

এক সপ্তাহ পর...
জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে উদাসীন হয়ে বিকেলের মেঘলা আকাশ দেখছি। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে আজ, এই এক সপ্তাহ আমি সজিবকে খুঁজার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আর ব্যর্থ হওয়াটা তো স্বাভাবিক, যাকে চিনি না জানিনা কখনো দেখিনি তাকে কিভাবে খুঁজে বের করবো? এদিকে হিমি কেমন যেন বদলে গেছে, সেদিন রাতে ওর অতীত জানতে চাওয়াটা ছিল আমার জীবনের চরম ভুল। সেদিনের পর থেকে হিমি বদলে গেছে, আগের মতো আর হিমি হাসে না, আমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয় না, পুরো একদিন কথা না বলে দেখা না করে কাটিয়ে দিতে পারে, কলেজে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় কথা বলার প্রয়োজন মনে করে না। এসব আর নিতে পারছি না আমি, হিমির এই বদলে যাওয়া আমাকে তিলেতিলে শেষ করে দিচ্ছে। ওদিকে অধরা আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করে না সারাক্ষণ কেমন যেন ভয়ের মধ্যে থাকে, আমি সত্যি বুঝতে পারছি না কি করবো। হঠাৎ ফোনের রিংটোন আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো, বিছানার উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
সিফাত: কিরে হসপিটালে আসবি না? আজ তো শান্তকে রিলিজ করে দিবে।
আমি: আসছি।
ফোন রেখে রেডি হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।

আরিয়ান: কিরে তোর মন এখনো ভালো হয়নি? (শান্তর কেবিনে ঢুকতেই আরিয়ান প্রশ্ন করলো, ওর প্রশ্ন শুনে মৃদু হাসলাম। মন, এই মনের খবর যার রাখার কথা সেতো বদলে গেছে)
শান্ত: নিজের কি অবস্থা করেছিস একবারো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছিস?
আমি: বাদ দে তো।
সিফাত: যে নিজেকে ভালোবাসে না সে নাকি আবার অন্যকে ভালোবাসে, তুই তো নিজেকেই ভালোবাসিস না তাহলে হিমিকে ভালোবাসবি কিভাবে?
আমি: জ্ঞান দিস নাতো ভালো লাগেনা এসব।
আঙ্কেল: শান্ত চল এখানকার সব কাজ শেষ।
শান্ত: হুম।

শান্তকে নিয়ে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। শান্ত সুস্থ হলেও ভালোভাবে হাটতে পারে না তাই ওকে আমরা তিনজন ধরে ধরে বাসার ভিতর নিয়ে আসলাম, ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই হিমির দিকে আমার চোখ আটকে গেলো, হিমিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারিন: এখানে বসিয়ে দাও ভাইয়াকে। (শান্তকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আমরাও বসলাম, হিমির নজর এখনো আমার দিকে)
তারিন: তোমরা বসো রাতে খাওয়াদাওয়া করে যাবে, আম্মু রান্না করছেন তোমাদের জন্য।
হিমি: তারিন আমি যাচ্ছি।
আন্টি: কেন মা চলে যাবি কেন? আমিতো সবার জন্য রান্না করছি।
হিমি: সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
তারিন: তাতে কি হয়েছে আরশান ভাইয়ার সাথে রাতে চলে যাস। (হিমি আমার দিকে তাকালো, কিছু না বলে চোখ নামিয়ে নিলাম)
শান্ত: তোদের কি হয়েছে বল তো দুজনের মন খারাপ কেন?
সিফাত: দুজনের মনে মেঘ জমেছে।
ওরা সবাই হাসি ঠাট্টা করছে, ভালো লাগছে না এসব চুপচাপ উঠে ছাদের দিকে চলে আসলাম।

গোধূলি সন্ধ্যা, ছাদে দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে সন্ধ্যার রক্তিম আকাশ দেখছি আর নিজের মনকে প্রশ্ন করছি সত্যি কি আমি কোনো অন্যায় করেছি? সামান্য অতীত জানতে চাওয়াটা কি এমন অন্যায় হলো আমার যে হিমি এমন বদলে গেলো?
হিমি: আরশান? (হঠাৎ হিমির ডাকে ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম, পিছন ফিরে তাকালাম হিমি দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: তুমি?
হিমি: কেন আসতে পারিনা?
আমি: তুমি তো আজকাল আমার সাথে কথা না বলে দিব্যি থাকতে পারো।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: এখানে এসেছ আন্টি বকবে না রাত করে ফিরলে?
হিমি: না আম্মুকে বলে এসেছি ফিরতে দেরি হবে।
আমি: ওহ!
হিমি: আরশান?
আমি: কিছু বলবে?
হিমি মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দিয়ে চলে গেলো। এই হিমিকে আমি একদম ছিনতে পারছি না, বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। কেন এমন করছে হিমি? ও কি বুঝেনা আমি ওর অবহেলায় তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি? বুকের ভিতরটা আজকাল কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে, মাঝেমাঝে মনে হয় সব বুঝি শেষ হয়ে গেলো।

ঘড়ির কাটায় রাত নয়টা পনেরো, রাতের খাওয়াদাওয়া করে শান্তদের বাসা থেকে বের হলাম। হিমি আমার সাথে যাবে অথচ দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।
সিফাত: সাবধানে যাস, আসছি।
আরিয়ান: এসব রাগ অভিমান সম্পর্কে ফাটল ধরায়, ভুলে যা এসব রাগ অভিমান।
আমি: হুম। (সিফাত আর আরিয়ান চলে গেলো, আমি চুপচাপ হিমির পাশে দাঁড়িয়ে আছি কি বলবো বা কি করবো বুঝতে পারছি না)
হিমি: আমরা রিকশাতে যাই?
হিমির আবদার শুনে ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে একটা রিকশা ডাক দিলাম।

রিকশাতে দুজন পাশাপাশি বসে আছি অথচ কারো মুখে কোনো কথা নেই। আজ প্রথম রাতের বেলা এভাবে দুজন একসাথে বাইরে আছি, রিকশায় পাশাপাশি বসে আছি, রাগ অভিমান নাহলে হয়তো মুহূর্তটা খুব সুন্দর হতো।
হিমি: আরশান?
আমি: হুম।
হিমি: এভাবে জড়সড়ভাবে বসে আছেন কেন?
আমি: এমনি।
হিমি: আমি শুনেছিলাম কেউ যদি তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে রিকশায় ছড়ে তাহলে তাকে আগলে...
আমি: থেমে গেলে কেন? (হিমির পিছনে আমার হাত দেখে ও থেমে গেলো, হিমি যদি পরে যায় বা ব্যথা পায় তাই পিছনে হাত দিয়ে রেখেছি। আমি ওকে আগলেই রাখছি এইটা বুঝতে পেরেই হয়তো থেমে গেছে আর লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে)
আমি: তোমার লজ্জামাখা মুখ দেখতে দারুণ লাগে।
হিমি: সরি আসলে...
আমি: ভয় নেই আমি থাকতে তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।
হিমি বেশ অবাক হয়েই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হাসলাম, হিমিও মুচকি হেসে আমার কাধে মাথা রাখলো।

রিকশা থেকে নেমে হিমি বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো, আমি পিছু ডাকলাম।
আমি: হিমি?
হিমি: কিছু বলবেন?
আমি: হুম।
হিমি: বলুন।
আমি: সজিব আমাকে হুমকি দিচ্ছে, শান্তর ক্ষতি করিয়েছে, অধরাকেও সম্ভবত ভয় দেখিয়েছে তাই আমি তোমার কাছে সজিবের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম, তোমার অতীত জানার কোনো আগ্রহ আমার নেই। তবুও যদি অতীত জানতে চাওয়াতে আমার ভুল হয়ে থাকে তাহলে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। বিশ্বাস করো হিমি আমি তোমার অবহেলা গুলো নিতে পারছি না, বড্ড কষ্ট হয়। (হিমি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে বাসায় চলে গেলো। আমি এসে কলিংবেল চাপলাম)
রোদেলা: কি ব্যাপার কি? খুব প্রেম করছ দুজনে।
আমি: মানে?
রোদেলা: রাতের রোমান্টিক ওয়েদারে দুজন একসাথে রিকশা দিয়ে আসলে, প্রেম খুব জমেছে তাই না?
আমি: চুপ কর তো।
রোদেলা: আমি ছাদ থেকে দেখেছি বলেই তো বললাম, রেগে যাচ্ছ কেন?
আপু: রোদেলা ফাজলামো বন্ধ কর। ভাই কি হয়েছে বলতো তোর?
আমি: কি হবে?
আপু: কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছিস, নিজের কি অবস্থা করেছিস দেখেছিস একবারো?
আমি: রুমে যাচ্ছি আমি।
আপু: দাঁড়া। (চলে যাচ্ছিলাম আপুর ডাক শুনে দাঁড়ালাম, জানি এখন হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আমাকে)
আপু: হয়তো হিমির সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই এসব ব্যাপারে কোনো কথা বলবো না, শুধু এইটুকু বলি সম্পর্কে রাগ অভিমানের প্রয়োজন আছে কিন্তু তাই বলে এতোটা বেশি নয়। বেশি কিছুই ভালো না, বেশি রাগ অভিমানে সম্পর্ক নষ্ট হয়।
আমি: হুম।
আপু: খাবি না?
আমি: খেয়ে এসেছি।
আপু: ঠিক আছে যা ঘুমিয়ে পড় তোকে দেখে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে।
আমি: হুম।
চুপচাপ রুমের দিকে চলে আসলাম।

রুমের ভিতর ঢুকতেই ফোন বেজে উঠলো, পকেট থেকে ফোন বের করলাম। অচেনা একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে, রিসিভ না করে বিছানার উপর ফোন রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠলো, খানিকটা বিরক্তি নিয়েই রিসিভ করলাম।
আমি: হ্য...
"সজিব" (নামটা শুনে চমকে উঠলাম কোন সজিব? হিমির এক্স বয়ফ্রেন্ড নয়তো?)
সজিব: এতোদিনে নিশ্চয় হিমির থেকে নামটা জেনে নিয়েছিস?
আমি: জানিস তো অনেক খুঁজেও তোর কোনো ঠিকানা জানতে পারলাম না, বলতে পারিস আমি তোর ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম।
সজিব: কেন মরার পাখনা গজিয়েছে বুঝি?
আমি: মরার পাখনা কার গজিয়েছে সেটা তো তখনি জানতে পারবি যখন দুজন মুখোমুখি হবো।
সজিব: খুব সখ আমাকে দেখার?
আমি: কাপুরুষকে দেখার সখ হতেই পারে এইটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেন করছিস এসব? কেন কাপুরুষের মতো পিছন থেকে আমাকে আঘাত করছিস?
সজিব: শান্ত তো বেঁচে গেছে তাই আঘাতটা কম পেয়েছিস, মেরে ফেললে ভালো হতো।
আমি: এই একদ...
সজিব: আরে আস্তে রেগে যাচ্ছিস কেন? তোকে পার্সেলে করে চিঠি দিয়ে লাভ হয়নি তাই ফোন দিতে হলো, একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ হিমি আমার ছিল আর আমারই থাকবে সারাজীবন, হিমি চাইলেও থাকবে আর না চাইলেও।
আমি: তোদের তো ব্রেকআপ হয়ে গেছে, কেন হিমিকে ডিস্টার্ব করছিস?
সজিব: ব্রেকআপ তো আমি করিনি হিমি করেছে। আর ডিস্টার্ব? হিমিকে কখনো আমি ডিস্টার্ব করিনি তবে ওর দিকে যে নজর দিয়েছে তাকে ডিস্টার্ব করেছি।
আমি: তুই খারাপ তাই হিমি ব্রেকআপ করেছে, কেন মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস?
সজিব: কই কষ্ট দিচ্ছি নাতো, আমিতো হিমিকে ভালোবাসি। সাফ শুনে রাখ হিমির কাছ থেকে দূরে সরে যা তোর মঙ্গল হবে।
আমি: তাই নাকি?
সজিব: যখন মারবো তখন এসব ঠাট্টা থাকবে না। হিমির পড়াশুনা শেষ হবার অপেক্ষা করছি আমি, হিমিকে ভুলে যা।
ফোন কেটে দিলো। বড্ড হাসি পাচ্ছে, আজকাল এমন পাগলও আছে? হুমকি দিচ্ছে আমাকে, ওর হুমকিতে ভয় পেয়ে নাকি আমি আমার মায়াবতীকে ভুলে যাবো, এইটা কখনো সম্ভব?

বুকের মধ্যে ভারী কিছু অনুভব করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম, হিমি আমার বুকে শুয়ে আছে দেখে এক চিৎকার দিলাম, হিমি আমার মুখ চেপে ধরলো।
হিমি: কি হচ্ছে চিৎকার করছেন কেন?
আমি: এইটা কি হচ্ছে? তুমি এই সকালবেলা আমার রুমে আর এইভাবে আমার বুকে... আম্মু দেখলে আমার বারোটা বাজাবে।
হিমি: হুহ আমি শাশুড়ি মায়ের অনুমতি নিয়েই আপনার রুমে এসেছি।
আমি: তুমি তো খুব চালাক মেয়ে। (হিমি মুচকি হেসে আলমারির দিকে গেলো)
হিমি: আজ আপনার সাথে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো। (হিমির কথা শুনে আমি হা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, এইটা কোন হিমি? এক সপ্তাহ ধরে অবহেলা করছে আর আজ বলছে ঘুরতে যাবে, এতো পরিবর্তন?)
হিমি: যান তো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি আপনার ড্রেস বের করে রাখছি। (হিমি আলমারি থেকে শার্ট বের করতে গিয়ে ওর পায়ের কাছে আমার টিশার্ট পড়ে গেলো, টিশার্ট তুলতে গিয়ে লিপস্টিক এর দাগ দেখে হিমি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো, আমি ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম..)
আমি: কি?
হিমি: কি সেটা তো আমি জিজ্ঞেস করবো। টিশার্টে লিপস্টিক এর দাগ কেন? কোন মেয়ের ঠোঁটের...
আমি: হবে হয়তো আমার আগের কোনো প্রেমিকার ঠোঁটের...
হিমি: আপনাকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো আমাকে ঠকানো হচ্ছে। (হিমির সেদিন রাতের পুকুড়পাড়ের কথা মনে নেই তাই দুষ্টুমি করে অন্য মেয়ের কথা বলেছিলাম, এখন তো এই মেয়ে আমার গলা টিপে ধরেছে)
আমি: হিমি ছাড়ো মরে যাবো তো।
হিমি: আপনার মরে যাওয়াই উচিত আমাকে ঠকাচ্ছেন এভাবে। (হিমি আমাকে ছেড়ে মুখটা মলিন করে বিছানার এক কোণে গিয়ে বসলো)
আমি: এমন দজ্জাল জিএফ মনে হয় আর কারো নেই। এই তুমি তো শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে হঠাৎ এমন দজ্জাল হলে কিভাবে?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: রাগ করেছ? (হিমির পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম, এতোটা মন খারাপ করবে বুঝতেই পারিনি)
আমি: আমিতো দুষ্টুমি করেছি।
হিমি: সত্যি তো?
আমি: হ্যাঁ সত্যি।
হিমি: সরি, আমি আর কখনো আপনাকে অবহেলা করবো না। কাল আমি তারিনদের বাসায় আপনাকে লক্ষ করেছি কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছেন, নিজের যত্ন নেন না, রোগা হয়ে গেছেন, চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে গেছে। আমি আর আপনাকে কষ্ট দিবো না। আসলে সেদিন আমার কিযে হয়েছিল...
আমি: সেদিনের কথা আর মনে করো না, তুমি আগের হিমি হয়ে গেছ এতেই আমি খুশি।
হিমি: কিন্তু এই লিপস্টিক এর দাগ?
আমি: পুকুরপাড়ে যে আমার বুকে মুখ গুঁজেছিলে তখন লেগে গিয়েছিল, তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া আমি কি ধুয়ে ফেলতে পারি? যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। (হিমি নিশ্চুপ হয়ে আমার দুচোখের দিকে তাকিয়ে আছে, আমি একটা হাত হিমির গালে রাখলাম)
আমি: সেদিন তো না জেনে লাগিয়ে দিয়েছিলে আজ নাহয় জেনেশুনে লিপস্টিক এর দাগ লাগিয়ে দাও।
হিমি: ধ্যাত আপনি খুব দুষ্টু।
হিমি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল, আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছি। এইতো হিমি কতো হাসিখুশি আছে কিন্তু অতীত মনে পড়লেই ও কেমন যেন চুপসে যায়, কিন্তু কেন? হিমির অতীত কি সেটা আমাকে জানতে হবে আর সেটা সজীবের থেকেই জানবো। সজিবের এই ফোনের সূত্র ধরেই ওকে আমি খুঁজে বের করবো। হিমির অতীত জানবো আর ওর সব ভয় দূর করে দিয়ে ওকে সবসময় এভাবে হাসিখুশি রাখবো, হিমির হাসিমাখা মুখ দেখতেই যে আমার পরম শান্তি...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com