Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৩ || লেখিকা: সুলতানা তমা

রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুণগুন করছিলাম আর চুল ঠিক করছিলাম হঠাৎ আয়নায় হিমিকে দেখতে পেলাম, দরজায় দাঁড়িয়ে আমার চুলের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। পিছন ফিরে হিমির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।
আমি: মেডাম আমার চুলে নজর লেগে যাবে।
হিমি: আমার এত্তো লম্বা চুল থাকতে আপনার চুলে নজর লাগাতে বয়েই গেছে আমার।
আমি: এই তুমি চোখে কাজল দাওনি কেন?
হিমি: মনে নেই। (কিছু না বলে হিমির কাজলের কৌটো আর চুড়ি গুলো এনে ওর সামনে ধরলাম, হিমি অবাক হয়ে একবার এগুলোর দিকে তাকাচ্ছে তো আবার আমার দিকে তাকাচ্ছে)
হিমি: এগুলো এখনো আপনার কাছে আছে?
আমি: তোমার জিনিস আর আমি যত্ন করে রাখবো না তা হয়? যাও চোখে কাজল দিয়ে নাও।
হিমি: থাক না।
আমি: তোমার কাজল কালো চোখ দুটো দেখতে আমার ভালো লাগে। (হিমি আর কিছু না বলে চুপচাপ আয়নার সামনে গিয়ে চোখে কাজল টেনে নিলো। আমি চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে হিমির সামনে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: এগুলো আমি পড়িয়ে দেই?
হিমি: আমার কাজল কালো চোখ আপনার ভালো লাগে, আমার হাতের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ আপনার ভালো লাগে, আমার লম্বা চুল গুলো পিটময় ছড়িয়ে থাকলে আপনার ভালো লাগে, এক কথায় আমাকে পরিপাটি সাজসজ্জায় দেখতে আপনার ভালো লাগে। আচ্ছা যখন ব্যস্ততায় চোখে কাজল দিতে ভুলে যাবো, হাতে চুড়ি পড়তে ভুলে যাবো, চুল গুলো এলোমেলো হয়ে থাকবে কাজের চাপে কিংবা শত ব্যস্ততায় পরিপাটি থাকতে পারবো না তখনো কি আমাকে আপনার ভালো লাগবে? এভাবেই কি ভালোবাসবেন আমাকে? (হিমির কথা শুনে হাসি পাচ্ছে, কি ভাবনা এই পাগলীর)
হিমি: কি হলো হাসছেন কেন?
আমি: তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস তো?
হিমি: মানে? বাসি তো।
আমি: তাহলে এইটা কেন বুঝনা প্রিয় মানুষটিকে সবসময় যেকোনো অবস্থাতেই ভালোবাসা যায়। প্রিয়জনের ভালো দিক খারাপ দিক দুটো মেনে নিয়েই ভালোবাসতে হয়, আর যে এইটা পারে না সে আমার মতে সত্যিকারের প্রেমিক/প্রেমিকা নয়। সত্যি ভালোবাসলে প্রিয় মানুষটিকে যেকোনো অবস্থায় মায়াবী লাগে সুন্দর লাগে। (হিমি মৃদু হেসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, আমি চুড়ি গুলো ওর হাতে পড়িয়ে দিলাম)
হিমি: আমি সত্যি খুব ভাগ্যবতী যে আপনার মতো একজন মানুষকে আমার করে পেয়েছি। নাহলে আপনার মতো একজন মানুষ যার বিশালত্বার কাছে আমি অতি তুচ্ছ এক মানবী... (হিমির মুখ চেপে ধরলাম)
আমি: কি বলছ এসব?
হিমি: যা সত্যি তাই।
আম্মু: না মা এইটা সত্যি নয়। (পাশ ফিরে দেখি আম্মু হাসি মুখে রুমে ঢুকছেন)
আম্মু: তুমি ভুল ভাবছ মা, তুমি আমার আরশানের যোগ্য তাই তুমি ওকে পেয়েছ। নিজেকে তুচ্ছ মনে করো না, যে নিজেকে সম্মান না করে তুচ্ছ বলে তাকে কি অন্যরা সম্মান দিবে? নিজেকে নিজে সম্মান করতে শিখো তবেই অন্যদের থেকে তুমি সম্মান পাবে।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: আমি দরজায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সব কথা শুনেছি, আরশান তোমার হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছে সেটাও দেখেছি। (আম্মুর কথা শুনে হিমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো, আম্মু ওর তুথুনি ধরে ওর মুখ উপড়ে তুললেন)
আম্মু: লজ্জা পাচ্ছ কেন? আমিতো চাই তোমরা দুজন সারাজীবন এভাবে দুজন দুজনকে ভালোবাস আর সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকো।
আমি: আম্মু তুমি সত্যি পৃথিবীর সেরা মা। (আম্মুকে এসে জড়িয়ে ধরলাম, আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন)
আম্মু: তোরা কি কোথাও যাচ্ছিস?
আমি: হ্যাঁ হিমি ঘুরতে যাবে।
আম্মু: বেশি দূর যাবি না, দু ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবি, আর বাইক নেওয়া চলবে না।
আমি: ঠিক আছে আম্মু। (আম্মু হিমির মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে চলে গেলেন, হিমি আম্মুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি?
হিমি: আন্টি কতো ভালো কতো সুন্দর করে সব বুঝিয়ে দেন আর আপনার কতো কেয়ার করেন।
আমি: আমি ঘুরতে যাবো শুনলেই আম্মু এসব বলে দেন, আসলে আম্মু ভয় পান আমি যদি আবার এক্সিডেন্ট করি।
হিমি: এক্সিডেন্ট?
আমি: হ্যাঁ একবার এক্সিডেন্ট করে আমি মরতে বসেছিলাম।
হিমি: তাহলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
আমি: দূর পাগলী কিছু হবে না, চলো।
হিমি: হুম।

হিমি আর আমি ফুটপাত ধরে পাশাপাশি হাটছি। হিমি এক হাত নেড়েচেড়ে বকবক করছে আর অন্যহাতের আঙ্গুল বারবার আমার হাতের আঙ্গুলে লেগে যাচ্ছে, আমি সেদিকেই লক্ষ করছি আর মৃদু হাসছি। প্রিয় মানুষের আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে এভাবে পাশাপাশি হাটার অনুভূতি এতোটা ভালো হতে পারে জানা ছিল না। হিমির দিকে তাকালাম, এক হাত নেড়েচেড়ে বকবক করেই যাচ্ছে। আজ হিমিকে একটু বেশিই খুশি লাগছে, হয়তো হিমি ঘুরতে পছন্দ করে।
হিমি: জানেন তো...
আমি: তুমি ঘুরতে খুব পছন্দ কর তাই না?
হিমি: হ্যাঁ কিন্তু আপনি বুঝলেন কিভাবে আমিতো বলিনি। (হিমি বেশ খানিকটা অবাক হয়েই প্রশ্ন করলো)
আমি: অন্যদিনের তুলনায় তোমাকে আজ একটু বেশিই খুশি লাগছে।
হিমি: হ্যাঁ আমি ঘুরতে খুব পছন্দ করি। নদীর পাড়ে সাদা কাশবনে বা এমন ফুটপাত ধরে কিংবা রাতের নিস্তব্ধ নির্জন রাস্তায়।
আমি: আর কি কি ভালো লাগে তোমার?
হিমি: রাতের নিস্তব্ধ মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিতে ভেজা, পাহাড়-ঝর্না, সমুদ্র আরো অনেক কিছু।
আমি: কি কি খেতে ভালো লাগে?
হিমি: ফুচকা খাবো। (হিমির কথা শুনে সামনে তাকালাম, ফুচকাওয়ালাকে দেখেই হিমি ফুচকার কথা বলেছে)
আমি: কিন্তু হিমি এই রাস্তার খাবার...
হিমি: ধ্যাত!
হিমি দৌড়ে ফুচকাওয়ালার কাছে ছুটে গেলো। আজ হিমিকে অন্যরকম লাগছে একদম বাচ্চা মেয়েদের মতো। হিমি হাতের ইশারায় আমাকে ডাকছে তাই আমিও ফুচকাওয়ালার দিকে এগিয়ে গেলাম।

হিমি: বেশি করে জ্বাল দিবেন কিন্তু। (হিমিকে অবাক হয়ে দেখছি, এর আগে ওকে কখনো এতোটা খুশি হতে দেখিনি)
হিমি: তখন জানতে চেয়েছিলেন না আমি কি কি খেতে পছন্দ করি? আইসক্রিম আর ফুচকা।
আমি: আর?
হিমি: এ দুটোই বেশি প্রিয়। মাঝরাতে বা বৃষ্টির সময় আইসক্রিম খাওয়ার মজাটাই আলাদা। আর এভাবে ফুটপাতে বসে বেশি করে জ্বাল দিয়ে ফুচকা খাওয়ার মজাই আলাদা। ওহ আমার আরো একটি পছন্দ আছে।
আমি: কি?
হিমি: চুড়ি, আমার চুড়ি পড়তে খুব ভালো লাগে। দুহাত ভরতি চুড়ি থাকবে আমার হাত নড়াচড়া করার তালে তালে চুড়ি গুলো রিনিঝিনি শব্দে ভেজে উঠবে উফফ দারুণ একটা অনুভূতি।
আমি: চোখে গারো করে কাজল দিতে ভালো লাগেনা? (হিমি ফুচকা খাচ্ছিল আমার প্রশ্ন শুনে আমার দিকে তাকালো)
আমি: তোমার কাজল কালো গভীর চোখ দুটো আমার খুব ভালো লাগে, ইচ্ছে হয় তোমার মায়া ভরা গভীর চোখ দুটোতে ডুব দিয়ে কাটিয়ে দেই হাজারটা শতাব্দী।
হিমি: ফুচকা খাবেন?
আমি: না।
হিমি: খেতে আপনাকে হবেই। (হিমি জোড় করে আমাকে ফুচকা খাইয়ে দিলো, এই মেয়ে এতো জ্বাল খায় কিভাবে আমার মুখ তো পুড়ে যাচ্ছে)
হিমি: আপনি জ্বাল খান না আগে বলবেন না? খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? (হিমি দৌড়ে গিয়ে ফুচকাওয়ালার কাছ থেকে পানি নিয়ে এসে আমাকে খাইয়ে দিলো)
হিমি: আপনার দ্বারা এসব খাওয়া হবে না, আপনি দাঁড়ান আমি খেয়ে নেই। (হিমিকে মুগ্ধ হয়ে দেখছি, এই মেয়েটা এতো পাগলামি করে কেন? আমার জ্বাল লেগেছে বলে একটু আগে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল আর এখন আবার বাচ্চাদের মতো ফুচকা খাচ্ছে)
হিমি: আরশান? (আনমনা হয়ে হিমিকে দেখছিলাম হঠাৎ হিমির চিৎকারে চমকে উঠলাম, হিমির হাত থেকে ফুচকার প্লেট নিচে পড়ে গেছে আর হিমি ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে)
আমি: হিমি কি হয়েছে?
হিমি: এখান থেকে চলুন আমি বাসায় যাবো।
আমি: কেন কি হয়েছে?
হিমি: বাসায় চলুন প্লিজ! (হিমিকে জড়িয়ে ধরে রেখেই চারপাশে চোখ বোলালাম কিন্তু এমন কিছুই দেখতে পেলাম না যা দেখে হিমি ভয় পেতে পারে)
হিমি: চলুন না।
আমি: কি হয়েছে বলো আমাকে।
হিমি: বললাম তো আমি বাসায় যাবো।
আমি: হ্যাঁ যাবো তো চেঁচামেচি করো না।
ফুচকাওয়ালার টাকা দিয়ে হিমিকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি কিন্তু বুঝতে পারছি না হিমি কি দেখে এতোটা ভয় পেলো।

বাসায় পৌঁছেই হিমি দৌড়ে ওদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো। কিছুই বুঝতে পারছি না কি হয়েছে হঠাৎ হিমির, কি দেখে এতোটা ভয় পেলো।
আম্মু: আরশান? (কখন যে কলিংবেল চেপেছিলাম বুঝতেই পারিনি আম্মু দরজা খুলে ডাক দিলেন)
আম্মু: এতো হাসিখুশি ভাবে দুজন বের হলি আর এখন মুখটা এমন মলিন। ঝগড়া হয়েছে?
আমি: না আম্মু।
আম্মু: তাহলে?
আমি: কিছু হয়নি তুমি টেনশন করো না।
আম্মু: আমিতো ভেবেছিলাম দুজন একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসায় ফিরবি।
আমি: ইচ্ছে তো ছিল কিন্তু হিমি হঠাৎ করে...
আমি: কি? (আম্মুকে বলা ঠিক হবে না, হিমি এভাবে হঠাৎ ভয় পায় শুনলে আম্মু টেনশন করবেন)
আমি: বাসায় ফিরতে চেয়েছিল আরকি, তুমি যাও তো খাবার দাও টেবিলে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আম্মু: ঠিক আছে।

রুমে এসে মাথাটা দুহাতে চেপে ধরে বিছানায় বসলাম। হিমির এতো ভয় পাওয়ার কারণটা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। কি দেখেছিল হিমি? এতোটা ভয় কেন পেলো? হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, পকেট থেকে ফোন বের করলাম। সজিব ফোন করেছে, তাহলে কি হিমির আজকের ভয় পাওয়া আর সজিবের মধ্যে কোনো কানেকশন আছে?
আমি: হ্যালো।
সজিব: বলেছিলাম হিমির থেকে দূরে থাকতে, আর তুই কি করলি? হিমিকে নিয়ে ফুটপাত ধরে আঙ্গুলে আঙ্গুল ঠেকিয়ে হাটা হচ্ছে। হিমি তোকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে আ...
আমি: তারমানে আমার ধারণা ঠিক, ওখানে তুই ছিলি আর তোকে দেখেই হিমি ভয় পেয়েছিল।
সজিব: ভয় তো পাবেই।
আমি: তুই যে কাপুরুষ আজ আবার প্রমাণ করে দিলি।
সজিব: এই?
আমি: কাপুরুষ বলেই আমার সামনে না এসে আড়াল থেকে হিমিকে ভয় দেখিয়েছিস। হিমিকে যতোই ভয় দেখাস আমি ওকে আগলে রাখবো।
সজিব: তাহলে এবার হিমির ক্ষতি করবো। (ফোনটা কেটে দিলো, আশ্চর্য একটা লোক। সবকিছু বরবাদ করে দিচ্ছে)
আম্মু: আরশান কোথায় তুই?
আমি: আসছি আম্মু।
আম্মুর ডাক শুনে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসলাম। আপু আর রোদেলা খাচ্ছে দেখে রোদেলার মাথায় টোকা দিলাম।
রোদেলা: চাঁচি দেখেছ এসেই আমাকে মারলো।
আমি: টোকা দেওয়া মাইর হয়ে গেলো?
আম্মু: আরশান খাবার খাওয়ার সময় দুষ্টুমি না।
আমি: ওকে।
রোদেলা: আজ নাকি দুজন ঘুরতে গিয়েছিলে?
আমি: তোকে বলবো কেন?
রোদেলা: হুহ আমার শুনতে বয়েই গেছে।
আপু: আম্মু আজ নাকি আদিত্য আসছে?
চাঁচি: হ্যাঁ আজ আমার ছেলেটা বাড়ি আসবে, কতদিন পর ছেলেটা আসবে। (চাঁচি এসে চেয়ার টেনে বসলেন। আদিত্য নাকি হোস্টেলে থেকে পড়াশুনো করে কিন্তু আমার তো সন্দেহ হ...)
চাঁচি: এখন আসলে আর হোস্টেলে যেতে দিবো না। আমার ছেলেটা ওখানের খাবার খেয়ে একদম শুকিয়ে যায়।
রোদেলা: তোমার ছেলেকে তো কেউ হোস্টেলে যেতে বলেনি, কলেজ তো কাছেই। আসলে কি জানো আম্মু ভাইয়া বাসায় থেকে তো নিজের ইচ্ছেমত চলতে পারেনা তাই হোস্টেলে থাকে। আর ভয় পেয়ো না তোমার ছেলে বলে কথা হোস্টেলের খাবার ও ভুলেও মুখে তুলবে না।
চাঁচি: চুপ শুধু পাঁকা পাঁকা কথা।
রোদেলা: উচিত বললে সবাই অপছন্দ করে।
আমি: চুপ কর না।
রোদেলা: আদিত্য ভাইয়া আসলে তো আমার কোনো স্বাধীনতা থাকে না, সারাক্ষণ চেঁচামেচি করে। (রোদেলা আস্তে আস্তে আমাকে কথাটা বললো আমি মুচকি হাসলাম, এই আদিত্যকে তো আমারও ভালো লাগেনা)
চাঁচি: আমার ছেলেটাকে এই বাসার কেউ সহ্য করতে পারে না।
আপু: ভুল বলছ চাঁচি আদিত্য তো আমাদের ভাই, হ্যাঁ ও একটু অন্যরম তাই...
চাঁচি: কি করেছে আমার ছেলে?
রোদেলা: প্রশ্নটা নিজেকেই করো না।
চাঁচির সাথে আদিত্যকে নিয়ে কথা বলা মানে উনার কান্নাকাটি শুরু করে দেওয়া তাই সবাই আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলাম।

বাগানে বসে আছি আর হিমির রুমের দিকে তাকাচ্ছি, হিমি কি করছে একবার দেখা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যাবো কিভাবে? হিমির আম্মু যদি সন্দেহ করেন?
"এইযে" আনমনা হয়ে হিমির রুমের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কেউ ডেকে উঠলো, পাশ ফিরে দেখি ভাবি।
আমি: আপনি?
ভাবি: এতো উঁকিঝুঁকি যে মারছ মা দেখলে সন্দেহ করবেন।
আমি: হিমির সাথে দেখা করাটা খুব প্রয়োজন ছিল।
ভাবি: হিমির কি হয়েছে?
আমি: জানিনা, আজ আবারো ভয় পেয়েছে।
ভাবি: চিন্তা করো না দু এক ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: ভাবি আমাকে সত্যিটা বলুন প্লিজ! হিমি সবসময় এতো ভয়ে ভয়ে থাকে কেন? 
ভাবি: আমি কি বলবো বলো, হিমিকে জিজ্ঞেস করো।
আমি: হিমিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম হিমি বলেনি উল্টো রেগে গিয়ে এক সপ্তাহ আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলেনি।
ভাবি: হিমি যেহেতু বলতে চায় না আমি বলবো কিভাবে? আমি বললে তো হিমি রেগে যাবে।
আমি: হিমি জানতে পারবে না, আমি কখনো হিমিকে আপনার কথা বলবো না।
ভাবি: দুবছর আগে হিমির জীবনে একটা ঝড় এসেছিল আর এর প্রভাব এখনো কাটেনি, তখন যে হিমি ভয় পেয়েছিল আজো ভয় পায়। মাঝেমাঝেই হিমি ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। কখনো তো ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে।
আমি: সেদিন তো এসব আমাকে বলেননি?
ভাবি: সেদিন মা পাশে ছিলেন, তুমি তো হিমিকে ভালোবাস তাই তোমার জানার অধিকার আছে। তাছাড়া আমি জানি তুমিই পারবে হিমির এই ভয় দূর করতে। ইদানীং হিমি একটু বেশিই ভয় পাচ্ছে এই কথাটা ওর ভাইরা জানলে টেনশন করবে। হিমি ঘুরতে খুব পছন্দ করে, ওর ভাইরা তো মাঝেমাঝেই ওকে নিয়ে এখানে সেখানে যায় হিমির মন ভালো রাখার জন্য হিমিকে হাসিখুশি রাখার জন্য। তুমি চাইলে ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারো, তাতে যদি হিমির মন ভালো হয়।
আমি: হিমি এখন কি করছে?
ভাবি: গায়ে বিছানা টেনে দিয়ে শুয়ে আছে, ভয় পেয়ো না ও এমন করেই। দু এক ঘন্টার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে আর হিমিও আগের মতো হয়ে যাবে।
আমি: কিন্তু ভাবি কি ঝড় সেটা তো...
ভাবি: আমি চাইনা হিমির মতের বিরুদ্ধে তুমি এই কথাটা জানো, হিমি কখনো বললে শুনো।
আমি: ঠিক আছে।
ভাবি: আসছি।
ভাবি চলে গেলেন, আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। হিমি তো কিছু বলতেই চায় না সবকিছু আমি জানবো কিভাবে?

বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, আমি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছি, পাশেই আম্মু কাজ করছেন। সন্ধ্যার সময় বৃষ্টি হওয়াটা আমি একদম পছন্দ করিনা, এই সময়টায় দুনিয়ার সব মন খারাপ যেন এসে ভর করে তার উপর যদি আবার বৃষ্টি হয় তাহলে তো...
হিমি: আরশান? (আনমনা হয়ে বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ হিমির কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম, হিমি হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। যাক পাগলীটার ভয় তাহলে কেটেছে)
হিমি: চলুন বৃষ্টিতে ভিজবো। (হিমি আমার হাত ধরে টানছে আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি, আম্মু তো হিমির পাগলামি দেখে মিটিমিটি হাসছেন। আমার তাকানো দেখে হিমিও তাকালো আর আম্মুকে দেখে জিহ্বায় কামড় দিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো, ভালোই লজ্জা পেয়েছে মায়াবতীটা)
আম্মু: আমার ছেলেটাকে খুব ভালোবাসিস তাই না? (আম্মু হিমির গালে হাত রেখে হাসছেন হিমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে)
আম্মু: কিন্তু মা আরশান তো... (আম্মুকে ইশারা দিয়ে বলতে নিষেধ করলাম, বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর হবে ঠান্ডা লাগবে আম্মু এটাই বলে দিচ্ছিলেন। একটু ঠান্ডা লাগলে সমস্যা কি হিমি তো হাসিখুশি থাকবে)
আম্মু: যা।

আমাকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে হিমি বৃষ্টিতে ভিজছে, ছাদের এপাশ থেকে ওপাশে ছুটাছুটি করছে। আমি মুগ্ধ নয়নে হিমির বাচ্চামি গুলো দেখছি আর মিটিমিটি হাসছি।
"ভাইয়া" হঠাৎ কারো ডাক শুনে চমকে উঠলাম, হিমি দুহাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছিল হিমিও ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালো। আদিত্য? ছাদে কেন? আমাকে খুঁজে এসেছে নাকি?
আমি: তুই?
আদিত্য: তোমাকে রুমে না পেয়ে ছাদে আসলাম ভাবলাম তুমি হয়তো চিলকোঠোর ঘরে। কিন্তু তুমি তো ভাবিকে নিয়ে ভিজতে ব্যস... (হিমি আমার কাছে আসতেই আদিত্য হিমিকে দেখে চমকে উঠলো, হিমিও আদিত্যকে দেখে চমকে উঠলো)
আদিত্য: ও?
আমি: হিমি, তোর হবু ভাবি।
আদিত্য: ওহ! ভাবি কেমন আছেন? (আদিত্য বৃষ্টিতে ভিজেই হিমির কাছে এগিয়ে আসলো, হিমি ভয় পেয়ে আমার বুকে মুখ গুঁজে দিলো)
আদিত্য: ভাবি এতো ভয় পাচ্ছেন কেন? (আদিত্য যতো এগুচ্ছে হিমি ততো বেশি ভয় পেয়ে আমার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছে, হিমি এক হাত দিয়ে আমার শার্ট খামছে ধরেছে আর ভয় পেয়ে এতো জোড়ে ধরেছে যে ওর হাতের নোখ গুলো আমার বুকে গেঁথে যাচ্ছে)
আমি: আদিত্য হিমি তোকে দেখে এতো ভয় পাচ্ছে কেন?
আদিত্য: জানিনা তো আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।
হিমি: ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলুন।
আমি: আদিত্য প্লিজ তুই নিচে যা।
আদিত্য: ঠিক আছে।
আদিত্য যেতেই আমার বুক থেকে হিমির হাতটা সরে গেলো, ওকে ডাকতে গিয়ে দেখি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি হিমিকে কোলে তুলে নিলাম, ওকে নিয়ে রুমের দিকে এগুচ্ছি আর ভাবছি হিমি আদিত্যকে দেখে এতো ভয় পেলো কেন? এইতো মেয়েটা কতো হাসিখুশি ছিল বাচ্চা মেয়েদের মতো বৃষ্টিতে এপাশ থেকে ওপাশে ছুটাছুটি করছিল। হঠাৎ আদিত্যকে দেখে হিমি এতোটা ভয় কেন পেলো?  আচ্ছা এমন নয়তো আদিত্যই সজিব? সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com